পেটের মেদ কমানোর উপায় | ডিমই একমাত্র উপায় !

Author:

Published:

Updated:

পেটের মেদ কমানোর উপায়

বর্তমানে প্রায় সহস্রাধিক মানুষ বাড়তি ওজন নিয়ে প্রচুর শংকায় ভোগেন এবং অনেকেই হন্নি হয়ে পেটের মেদ কমানোর উপায় খুঁজেন। দেহের স্থূলতার কারণে মানুষ অনেক ক্ষেত্রে অবমূল্যায়িতও হয়ে যান। পরিসংখ্যান মতে, ওজনহীনতায় ভোগা মানুষের থেকে ওজনস্থূলতায় ভোগা মানুষের সংখ্যাই বেশি।

একই ধরণের আরো পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পিতা-মাতা যদি বাড়তি ওজনের সমস্যায় ভোগেন তাহলে তার সন্তানের এই রোগে ভোগার সম্ভাবনা প্রায় ৮০%। এছাড়াও শরীরের বাড়তি ওজনের কারণে প্রায় ১৫ টির মত রোগে ভোগার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ১৫টি রোগের মধ্যে রয়েছে, জয়েন্ট পেইন, ক্যান্সার আর স্ট্রোকের মত বড় ধরণের রোগ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪৫ লাখ মানুষের ওজন ১৩০ কেজির বেশি অর্থ্যাৎ বাড়তি ওজন সমস্যায় তারা আক্রান্ত। এছাড়াও প্রতি ৩ জন টিনেজারের মধ্যে একজন এই ওভারওয়েট বা বাড়তি ওজন নিয়ে দিনযাপন করছে। ৫০ বছর আগেও পুরো যুক্তরাষ্ট্রে ফাস্টফুডের পেছনে ব্যয় করা হতো ৩ বিলিয়ন ডলারের মত।

কিন্তু এই সীমিত সময়ের মধ্যে এ ব্যয় বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ বিলিয়ন ডলারে। এই বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়া ওজন বেড়ে যাওয়ার পেছনে অনেকাংশে দায়ী।


আজকে অভিযাত্রী আপনার জন্যে এনেছে এমন কিছু মেদ কমানোর কার্যকরী পদক্ষেপ যাতে আপনি খুব সিম্পল একটি ডায়েট চার্ট ফলো করে মাত্র তিন দিনে আপনার মেদকে কমিয়ে ফেলতে পারবেন। আর এর জন্যে কোন মেডিক্যাল প্রসেস কিংবা না খেয়ে থাকার মত দুঃসাধ্য কাজটিও করতে হবে না। তো আপনি প্রস্তুত তো?

পেটের মেদ কমানোর উপায়

১) যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। এসব খাবারকে কার্ব ডেন্স বলা হয়ে থাকে। আবার এর মানে এই না যে যেসব প্রোডাক্টে কার্ব রয়েছে তার সবগুলোর কার্ব ডেন্স। কার্ব ডেন্স আমরা শুধু সেগুলোকেই বলতে পারি যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে এবং যেসব বেশি পরিমাণে খেতে হয়।

যেমনঃ আপনি যদি একটি মাঝারি সাইজের আলু খান তাহলে তাকে কার্ব ডেন্স নয়, ব্যাড কার্ব বলতে পারেন। কারণ ৬ আউন্সের এই আলুতে মিনারেলের পরিমাণই থাকে বেশি। আর এই ছয় আউন্সের মধ্যে মাত্র ২৩% থাকে কার্বোহাইড্রেট। এই পরিমাণ তুলনামূলকভাবে খুব একটা বেশি নয়। সুতরাং আলু নিঃসন্দেহে খেতে পারেন।


২) আনহেলদি ফ্যাটওয়ালা খাবার গ্রহণ থেকে দূরে থাকুন। আমাদের পেটের মেদ বাড়াতে বিভিন্ন ধরণের ফ্যাট কাজ করে। এগুলোর মধ্যে স্যাচুরেটেড, ট্র্যান্স, ওমেগা-৬ ইত্যাদি। গরুর দুধ, সয়াবিন, প্রসেসড মাংস ইত্যাদি খাবারে এমন ফ্যাট প্রচুর পরিমাণে থাকে। তাই পরের বার যখন খাবার কিনতে যাচ্ছেন তখন এসব খাবার কেনা থেকে বিরত থাকুন।


৩) মেদ বাড়াতে আরেকটি খাবার খুব ভূমিকা রাখে। তা হলো আর্টিফিশিয়াল বা ন্যাচারাল মিষ্টি কিংবা চিনি। কেননা এগুলো শরীরের ইনসুলিন নির্গত করে। ফলে শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে থাকে যা আপনাকে মুটিয়ে দেয়। তাই যেকোন ধরণের সফট ড্রিংকস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এমনকি তা যদি ডায়েট ড্রিংকস হয় তবুও।

৪) এবার তাহলে চলুন পরিচিত হই, এমন একটি উপাদানের সাথে যা আমাদের মেদকে কমিয়ে দিবে মাত্র তিনদিনেই। এই উপাদানটি হলো ডিম। জ্বী, ডিম আপনার পেটের মেদকে কমিয়ে দিতে পারে রাতারাতি।

কিন্তু ডিম কেন এই কাজটি করতে পারে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।

প্রথমত ডিম খুবই পুষ্টিকর একটি খাবার। পৃথিবীর যত পুষ্টিকর খাবার রয়েছে তার মধ্যে ডিমের অবস্থান সবচেয়ে উপরে। একটি সেদ্ধ ডিম থেকে আপনি পেতে পারেন ভিটামিন এ, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি ও এ, ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়াম, জিংক, ফসফরাস, ফোলেট।

এটা একদমই অবাক করার বিষয় নয়, কারণ একটা ডিমের সেল থেকেই পরে একটি পুরো মুরগি হয়ে উঠে। ডিমের এসব ভিটামিন

  • চোখের জন্যে উপকারী
  • স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
  • এটি শরীরের উপকারী কোলেস্ট্ররল দেয়
  • সবথেকে বড় ব্যাপার হলো – মাত্র একটি ডিম থেকে আপনি ৭৭ ক্যালরি, ০.২ আউন্স প্রোটিন, ০.১৭ আউন্স হেলদি ফ্যাট পেতে পারেন।

ডিমের পুষ্টিগত দিক তো জানা হলো। তাহলে এবার চলুন দেখে নেই ডিমের সাহায্যে ডায়েট করে কিভাবে পেটের মেদ কমানো সম্ভব!!!

ডিম দিয়ে মেদ উপশমের উপায়

অনেকেই ডিম খেতে চান না। তবে ডিম শরীরকে ফিট রাখার জন্য কার্যকরী ভূমিকা রাখে। স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ৩ দিনে পেটের মেদ কমানোর উপায় হিসেবে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিম রাখতে পারেন

প্রথম দিন


সকালের নাস্তায় খাবেন

  • চিনি ছাড়া এক কাপ গ্রিন টি
  • ২টি টমেটো
  • ২টি সেদ্ধ ডিম

দুপুরের খাবারে খাবেন

  • ২টি ডিমের সাদা অংশ
  • চার আউন্স অর্থ্যাৎ ১১৩ গ্রাম সেদ্ধ কিংবা বেকড মাছ
  • এক কাপ চিনি ছাড়া গ্রিন টি
  • লাঞ্চ আর দুপুরের খাবারের মাঝে একবার নাস্তা করে নিতে পারেন একটি গ্রিন আপেল দিয়ে।

রাতের খাবারে খাবেন

  • সেদ্ধ করা সবজি যেমনঃ ফুলকপি, শিম, মটরশুটি, গাজর
  • চিনিছাড়া এক কাপ গ্রিন টি

এবার দ্বিতীয় দিনের ডায়েটে চোখ রাখা যাক


দ্বিতীয় দিন সকালের নাস্তায় খাবেন

  • চিনি ছাড়া এক কাপ গ্রিন টি
  • ২টি সেদ্ধ ডিম
  • ১টি কলা

লাঞ্চে খাবেন

  • ২টি ডিমের সাদা অংশ
  • .২ আউন্স অর্থ্যাৎ ১২৯ গ্রাম চামড়া ছাড়া সেদ্ধ মুরগি
  • এক কাপ চিনি ছাড়া গ্রীন টি  

রাতের খাবারে খাবেন

  • একটি রুটি
  • চার আউন্স অর্থ্যাৎ ১১৩ গ্রাম ঘরে বানানো চিজ
  • এক কাপ লো ফ্যাট দুধ

সবশেষ দিন অর্থ্যাৎ তিন নাম্বার দিনে আপনি কি রাখবেন খাবারের লিস্টে

সকালের নাস্তায় খাবেন

  • এক ক্লাস টমেটো জুস
  • দুটো সেদ্ধ ডিম

দুপুরের খাবারে খাবেন

  • এক কাপ চিনি ছাড়া গ্রিন টি
  • দুটো ডিমের সাদা অংশ
  • ৪.২ আউন্স অর্থ্যাৎ ১২৯ গ্রাম রান্না করা লাল মাংস

রাতের খাবারে খাবেন

  • গ্রিন সালাদ
  • দুটো বেকড আলু
  • চিনি ছাড়া এক কাপ গ্রিন টি

বেশি করে গ্রিন টি এই ডায়েট চার্টে রাখার কারণ হলো

  • গ্রিনটি আপনাকে বেশি স্মার্ট করে তোলে
  • ফ্যাট কমিয়ে দেয়
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
  • অ্যালজাইমার ও পার্কিসন রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে
  • দাঁতের ইনফেকশন দূর করে
  • কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধ করে
  • ডায়াবেটিকস কমায়
  • গ্রীনটিতে বায়ো অ্যাকটিভ কম্পাউন্ড রয়েছে যা শরীরকে চাঙ্গা রাখে
  • মেটাবলিজম প্রসেসকে ত্বরান্বিত করে

ওজন কমাতে যা করা যাবে না

কম ক্যালরির ডায়েট কিংবা না খেয়ে থাকা আপনার ওজন কমাতে পারে ঠিকই কিন্তু এর প্বার্শ-প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারেও আপনার জানা প্রয়োজন। এমনকি এভাবে ওজন কমিয়ে মুখে হাসি রাখার কোন বিশেষ কারণ নেই। কারণ আপনি যখন ওজন কমাচ্ছেন, তার পুরোটার প্রভাব পড়ে আপনার শরীরের মাংসপেশীতে।

আপনার মাংসপেশী দুর্বল হয়ে পড়ে এর কারণে। ফলে এটা মেটাবলিজম বা বিপাকক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। এছাড়াও ডায়াবেটিকস টাইপ ২তে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে, ভুঁড়ি কমানোর জনপ্রিয় মাধ্যম হলো সাপলিমেন্ট সেবন করা। কিন্তু তারও যে কোন পাশ্বপ্রতিক্রিয়া নেই তা ভাবাও ভুল।

তাই এমনটি করলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। অনেকে ওজন সমস্যার জন্য ডিটক্স প্রোগ্রাম বা শরীরের বাড়তি চর্বি কমানোর উপায় ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এখানেও আছে অপকারীতা।

কারণ এই ধরণের পন্থায় আপনার শরীর থেকে পানি অপসারণ হয়। ফলে আপনি ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতায় পড়ে যেতে পারেন। আর ডিহাইড্রেশন থেকে শরীর দুর্বলসহ নানান রোগের উদ্ভব হতে পারে।

পেটের চর্বি কমানোর উপায়

আপনি যে পন্থাই অবলম্বন করুন না কেন, মনে রাখবেন প্রতিদিন আপনার শরীরের ১২০০ ক্যালরি প্রয়োজন হয়। অর্থ্যাৎ ডায়েট চার্ট অনুসরণ করলেও আপনাকে ১২০০ ক্যাররি নিতে হবে প্রতিদিন। নাহলে আপনি পুষ্টিহীনতা ও দুবর্লতায় ভুগবেন যা আপনার প্রতিদিনের কাজে ভালো রকমের একটা প্রভাব ফেলবে।

অন্যদিকে, আপনি যত তাড়াতাড়ি মেদ কমাবেন তত তাড়াতাড়ি তা ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। আর তখন আবার আপনার মাংশপেশীর থেকে চর্বি বেড়ে যাবে।

পেটের চর্বি কমানোর উপায়

তাহলে মেদ কমানোর ডায়েট শুরু করে দিন আজই। ডিম খেয়ে পেটের মেদ কমানোর উপায়ে নিজেকে আরও আকর্ষনীয় করুন এবং আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনুন। এবং সবশেষে এই আর্টিক্যালটি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করলো আমাদেরকে কমেন্টে জানিয়ে দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Latest posts

  • সর্দি থেকে মুক্তির উপায়, নাকের এলার্জি দূর করার উপায় | দ্রুত উপশম পেতে ঘরোয়া চিকিৎসা

    সর্দি থেকে মুক্তির উপায়, নাকের এলার্জি দূর করার উপায় | দ্রুত উপশম পেতে ঘরোয়া চিকিৎসা

    নাকের এলার্জি হচ্ছে নাকের ঝিল্লি প্রদাহের কারণে নাকের একটি সমস্যা। এটি সারা বিশ্বব্যাপী একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ নাকের এই রোগে আক্রান্ত। নাকের এলার্জি কোন মারাত্মক ক্ষতিকর রোগ না হলেও এ রোগের কারণে দৈনন্দিন জীবন প্রবাহ ব্যাহত হয়। এলার্জিজনিত সর্দি এবং হাঁচি জীবনকে অতিষ্ট করে তোলে। এই রোগে হঠাৎ…

    Read more

  • কফ, কাশি দূর করার উপায় | সঠিক চিকিৎসাই হতে পারে কাশি দূরীকরণের মাধ্যম

    কফ, কাশি দূর করার উপায় | সঠিক চিকিৎসাই হতে পারে কাশি দূরীকরণের মাধ্যম

    গলায় বুকে কফ জমে থাকা বেশ বিরক্তিকর একটি সমস্যা। ঋতু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়। আর আবহাওয়ার এই দ্রুত পরিবর্তন আমাদের শরীর খাপ খাওয়াতে পারে না, যার কারণে সৃষ্টি হয় ঠান্ডা জ্বর ও সর্দি-কাশির। ঠান্ডা সর্দি কাশি এগুলো আমাদের কাছে খুব পরিচিত রোগ হলেও এই ঠান্ডা সর্দি কাশি থেকে আমাদের দেহে অনেক বড় বড় অসুখ…

    Read more

  • ওজন কমানোর উপায় ডায়েট চার্ট | সুস্থ স্বাভাবিক জীবন

    ওজন কমানোর উপায় ডায়েট চার্ট | সুস্থ স্বাভাবিক জীবন

    সুস্থ স্বাভাবিক এবং রোগমুক্ত জীবন আমরা কে না চাই। আর এই সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করার একমাত্র উপায় হচ্ছে শারীরিক ওজন ঠিক রাখা। কেননা ওজন বেড়ে গেলে যে কোন রোগের ঝুঁকি ও বেড়ে যায়। এজন্য বাড়তি ওজন অনেকের মানসিক অসুস্থির প্রধান কারণ। তাই রোগ প্রকোপ কমাতে এবং মানসিক শান্তির উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের উচিত শারীরিক ওজন…

    Read more