জন্ডিস হলে করনীয় কি | উপসর্গ জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ

Published:

Updated:

জন্ডিস হলে করনীয় কি

Disclaimer

As an affiliate, we may earn a commission from qualifying purchases. We get commissions for purchases made through links on this website from Amazon and other third parties.

জন্ডিস শব্দটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। প্রতিটি মানুষই জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। জন্ডিসে আক্রান্ত হয়নি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। জন্ডিসকে আমরা একটি রোগ ভাবলেও আসলে এটি কোন রোগ নয়। জন্ডিস হচ্ছে বড় কোন রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ। আমাদের শরীরে জন্ডিসের প্রভাবে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। যার কারণে প্রসাব, চোখের সাদা অংশ, ত্বক ও শরীর অনেকটা হলুদ হয়ে যায়।

সাধারণত একজন স্বাভাবিক মানুষের শরীরে বিলিরুবিনের ঘনত্ব ১.২ এমজি/ডিএল এর নিচে থাকে। আর যখনই এর থেকে উপরে উঠবে তখনই শরীরে জন্ডিসের উপসর্গগুলো প্রকাশ পাবে। রক্তে যখন বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় তখন রক্তের লৌহ কণিকা গুলো ভেঙে যায়। পরবর্তীতে তা লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তরসের সাথে পিত্তনালীর মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে প্রকাশ পায়।

আর যখনই বিলিরুবিনের স্বাভাবিক পথ পরিক্রমায় অসঙ্গতি কোন কিছু সংস্পর্শে আসে তখনই এর মাত্রা শরীরে বৃদ্ধি পায় ও তা জন্ডিস হিসেবে প্রকাশ পায়। আক্রান্ত হওয়ার পর প্রতিটি মানুষই জন্ডিস হলে কি করনীয় সেই সম্পর্কে জানতে চায়। চলুন তাহলে আজ জেনে নেই জন্ডিস হলে করনীয় কি:

জন্ডিসের কারণ:

জন্ডিসের আসল কারণ হচ্ছে যকৃতের যেকোনো ধরনের সমস্যা। আমরা যা খাই তা সবকিছু আমাদের যকৃতিতে প্রসেসিং হয়। নানা কারণে যকৃত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হেপাটাইটিস যকৃৎ প্রদাহ তৈরি করে। জন্ডিসের মেইন কারণ হচ্ছে এই হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলো। এছাড়াও অতিরিক্ত মধ্যপান যারা করে তাদের লিভারে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর কারনেও জন্ডিস হয়ে থাকে। এছাড়াও একটি ডিজিজ আছে যা হল, autoimmune liver disease এর কারণে বংশগত জন্ডিস হতে দেখা যায়।

বংশগত কারণে যাদের লিভারে ক্যান্সারের বীজ রয়েছে তাদের প্রায়ই জন্ডিসে ভুগতে দেখা যায়। এছাড়াও কিছু ঔষুধের সাইড ইফেক্ট হিসেবে জন্ডিস হয়ে থাকে। Hemoglobin e Disease এর কারণে পিত্তে কিংবা পিত্ত নলিতে স্টোন তৈরি হয়। এটাও জন্ডিসের অন্যতম কারণ । টিউমার ও ক্যান্সারের কারণেও জন্ডিস হতে পারে।

দৈনন্দিন জীবনযাপনে অনিয়ম এর কারণেও জন্ডিস হয়। সাধারণত আমাদের ব্লাডে যখন বিলিরুবিনের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায় তখন জন্ডিস হয়ে থাকে। তাহলে চলুন জেনে নেই কি কারনে ব্লাডে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যায় ও জন্ডিস দেখা যায়:

১)পিত্ত থলিতে প্রদাহ: পিত্তথলিতে কোন প্রকার প্রদাহ থাকলে লিভার বিলিরুবিন শোষণ করতে পারে না। এই কারণে বিলিরুবিনের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পায়, এর ফলস্বরূপ জন্ডিস হয়।

২) লিভারে প্রদাহ: যকৃতে কোন প্রদাহ সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথেই ব্লাডে বিলোরুবিনের উৎপাদন পরিমাণ বেড়ে যায়। যার কারণে সাময়িক সময়ের জন্য জন্ডিস হতে পারে। কিন্তু, পেটের প্রদাহ কমার সাথে সাথে জন্ডিসও কমে যায়।

৩) পিত্তনালীতে ব্লক সৃষ্টি হওয়া: কিছু কিছু সময় পিত্তনালীর মধ্যে থেকে ব্লক হয়ে যায়। যার ফলে যকৃত বিলিরুবিন অপ্রসারণ করতে পারেনা। এর কারণে জন্ডিস হয়।

৪) ডুবিন-জনসন সিনড্রোম: এই রোগ যকৃতকে বিলিরুবিন অপসারণ করতে বাধা দেয়। যার কারণে জন্ডিস হয়।

৪)গিলবার্ট’স সিনড্রোমের কারণে: গিলবার্ট’স সিনড্রোম থাকলে শরীরে এনজাইনের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। যার কারণে পিত্ত রেচন কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এর ফলে বিলিরুবিনের পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যায়, যার ফলস্বরূপ জন্ডিস হয়।

জন্ডিসের লক্ষণ:

জন্ডিসের অনেক লক্ষণ আছে যে লক্ষণগুলো অন্য রোগের লক্ষণের সাথে মিলে যায়। তাই কয়েকটা লক্ষণ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর তারপর বোঝা যায় যে জন্ডিস হয়েছে কিনা। চলুন জেনে নেই জন্ডিসের লক্ষণ গুলো, জন্ডিস হলে করনীয় কি:

১) চোখের রং পরিবর্তন: জন্ডিসে আক্রান্ত হলে আপনি প্রথমেই লক্ষ্য করবেন চোখের রং পরিবর্তন হচ্ছে। শুরুর দিকে হালকা চোখ জ্বালাপোড়া করবে, যা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে। অনেকে মনে করেন হাইড্রেশনের জন্য চোখ জ্বালাপোড়া করছে । চোখ ব্যথার সাথে সাথে যদি চোখের রং পরিবর্তন হয় তাহলে সেটা ঝুঁকির বিষয়। প্রথম অবস্থায় চোখ হলুদ থাকে এবং ধীরে ধীরে তা গাঢ় হলুদ বর্ণ ধারণ করে। এমন অবস্থা দেখলে সাথে সাথেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা নেওয়া উচিত। তা না হলে পরবর্তীতে গুরুতর অবস্থা হতে পারে। শেষে, চোখ একদম রক্ত লাল বর্ণ ধারণ করে, যা রেচনতন্ত্র, লিভার ও অন্ত্রের ক্ষতি করে।

২) শরীরের রং পরিবর্তন: জন্ডিস দেখা দিলে চোখের সাথে সাথে শরীরের রঙও পরিবর্তন হয়। শুরুর দিকে চোখে ও মুখে হালকা হলুদ ভাব দেখা যায়। চোখে মুখে ক্লান্তি ও দুর্বল ভাব দেখা যায়। চোখ মুখ ও শরীরের সেনসিটিভ পার্ট হলুদ হয়ে যায় ও শরীরে ফুসকুড়ি ওঠে। যদি এসব আপনার শরীরের লক্ষ করেন তাহলে বুঝবেন আপনার জন্ডিস হয়েছে। আর এমন অবস্থায় দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।

৩) প্রসাব হলুদ হয়ে যাওয়া: প্রসাব হলুদ হয়ে যাওয়া জন্ডিসের প্রধান লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি। মানুষের প্রসাব হলুদ হতেই পারে, তা নির্ভর করে প্রসাবে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রার ওপর। কিন্তু যখন জন্ডিস হয় তখন শরীরে বিলিরুবিন বেশি হয় ও রেচন তন্ত্রের সমস্যা হয়, যার কারণে রক্তে বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায় ও ক্রিয়েটিনের মাত্রা বেড়ে যায়। এ কারণে জন্ডিস হলে প্রস্রাবের রং অতিরিক্ত হলুদ দেখায়। মূত্রনালীতে প্রদাহ হলে সেটা ঝুঁকি বাড়ায়। খুবই গুরুতর  পর্যায়ে গেলে প্রসাবের রং হলুদ থেকে লাল বর্ণ ধারণ করতে পারে। এমন অবস্থায় দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরী। অপরদিকে খেয়াল রাখতে হবে প্রসাবের রং লাল হলে এর সাথে রক্ত যায় নাকি, তাহলে এটা টিউমার ও ক্যান্সারের লক্ষণ।

৪) শারীরিক দুর্বলতা: জন্ডিস হলে শারীরিক দুর্বলতা হয়ই জন্ডিস সেরে যাওয়ার পরও এটা থাকতে পারে। জন্ডিস হলে শারীরিক যেসব লক্ষণ দেখা দেবে- অল্প কাজে হাঁপিয়ে যাওয়া, ভারী কাজ না করতে পারা, কাজে অনীহা ও সামান্য কাজে বুক ধরফর করা ইত্যাদি।

৫) ক্ষুধামন্দা:‌ জন্ডিসের একটি লক্ষণ হচ্ছে ক্ষুধামন্দা। জন্ডিস হলে খাবারের প্রতি প্রচুর অনীহা জন্মায়। এ সময় খাবার খেতে মন চায় না, খাবার দেখলে বমি আসে, অল্প খেলেই সারাক্ষণ পেট ভরা থাকে, ক্ষুদা লাগে না। আবার অনেক সময় গালের মধ্যে ঘা হতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের এটা হয়। যার কারণে শিশুরা মায়ের বুকের দুধ খেতে চায় না। এমন অবস্থায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

৬) জ্বর জ্বর অনুভূতি হওয়া ও কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা: জন্ডিস হলে শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যাবে। কোন কারণ ছাড়াই জ্বর আসবে। অথবা শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে অনেক কমে যাবে। অনেকের ক্ষেত্রে আবার এমনটা হয় না। আবার অনেক রোগীর ক্ষেত্রে হঠাৎ করে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসবে এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। জন্ডিসের সাথে সাথে জ্বর আসা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

৭) বমি হওয়া: জন্ডিস হলে কোন কারণ ছাড়াই খাবারের প্রতি অনীহা হয়। সারাদিন  বমি বমি ভাব হতে পারে ‌। কোন খাবার খেতে পারে না, খেলেই বমি হয়। মসলার গন্ধে বমি হওয়াও জন্ডিসের আভাস।

৮) পেটে ব্যথা: কোন কিছু খাওয়ার সাথে সাথেই পেটে ব্যথা হওয়া ও পেট জ্বালাপোড়া করা জন্ডিসের জন্য হয়ে থাকে। এ সময়ে খাবারের প্রতি অনীহা থাকে, তাই দীর্ঘক্ষন না খাওয়ার ফলে পেটে ব্যথা হতে পারে। জন্ডিস হলে বিলিরুবিন বেড়ে যায়, লিভার থেকে পিত্ত অপসারিত হতে পারে না। এর কারনে পেটে ব্যথা শুরু হয়। জন্ডিস দেখা দিলে প্রয়োজনতন্ত্রের সমস্যা হয় ও প্রসাব পায়খানা সমস্যা সৃষ্টি হয়, যার কারণেও পেটে ব্যথা হয়।

৯) চুলকানি: শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকানি ও ফুসকুড়ি হওয়া জন্ডিসের উৎপত্তি। হাতে, পায়ে, মুখে, মাথায় ছোট ছোট গোটা হতে দেখা যায়, যেগুলো পরবর্তীতে চুলকানোর সৃষ্টি করে। অনেক সময় ফুসকুড়ি গুলো বড় হতে পারে।

১০) অনিদ্রা: জন্ডিস হলে ঘুম কমে যায়, রাতে একদমই ঘুম হয় না। এ সময় শরীরের অবস্থা ঠিক না থাকায় ঘুম কম হয়। আবার ঘুম হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না একটু পর ভেঙে যায়।

১১) ওজন কমে যায়: জন্ডিসের কারণে হঠাৎ করে ওজন কমে যেতে পারে। এ সময় খাবারের প্রতি অনীহা জাগে, যে কারণে খাবার খেতে পারে না। যার ফলে দ্রুত ওজন কমে যায়।

জন্ডিসের চিকিৎসা

জন্ডিস আসলে কোন রোগ নয়, এটা হল অন্য রোগের উপসর্গ। আপনার যদি ঘন ঘন জন্ডিস হয় তাহলে বুঝে নিবেন মারাত্মক কোন রোগের ইঙ্গিত এটা। সাধারণত জন্ডিস হলে ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যেই কমে যায়। এতটুকু সময়ের মধ্যেই আমাদের শরীর অটোমেটিক বিলিরুবিনের পরিমাণ ব্যালেন্স করে। তাও জন্ডিস থেকে মুক্তির জন্য চিকিৎসকরা কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকেন সেগুলো হল:

১) পেটে চাপ সৃষ্টি করে এমন কোন ভারী কাজ করবেন না।

২) বিশ্রাম নিবেন ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাবেন।

৩) অ্যাসপিরিন, প্যারাসিটামল ও ব্যথার ঔষুধ ইত্যাদি সেবন করবেন না।

৪) সহজে হজম হয়ে যায় এমন খাবার খাবেন।

৫) লিভারে চাপ পড়ে এমন কোন কাজ করবেন না।

৬) অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করবেন।

জন্ডিসের প্রতিকার

১) হেপাটাইটিস- বি এর  ভ্যাকসিন নিবেন।

২) সব সময় পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন থাকবেন ও পরিষ্কার পরিবেশে খাবার প্রস্তুত করবেন।

৩) রক্ত নিলে অবশ্যই স্ক্রিনিং করিয়ে নিবেন।

৪) দূষিত পানি পান করবেন না।

৫) সব সময় পানি ফুটিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন অথবা ভালোভাবে ফিল্টার করে নিন।

৬) অন্য কারো ব্যবহৃত খুর, ব্লেড, রেজার ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না।

৭) ডিসপোজাল সিরিজ ছাড়া শরীরে কোন ইনজেকশন নিবেন না।

৮) অধিক পরিমাণে তরল খাবার খাওয়ার চেষ্টা করন।

জন্ডিস হলে করনীয় কি | জন্ডিসের ঘরোয়া চিকিৎসা

জন্ডিসের ঘরোয়া চিকিৎসা

আপনার শরীরে যদি জন্ডিস দেখা দেয় এবং তা গুরুতর না হয় তাহলে ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে জন্ডিস দূর করা যাবে। জন্ডিস প্রতিরোধে সাধারণত চিকিৎসকরা ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঘরোয়া চিকিৎসা করা ভালো। চলুন তাহলে জেনে নেই জন্ডিসের ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো:

১) পানি: জন্ডিসে আক্রান্ত হলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন। এতে শরীরের ইমিউনিটি বাড়বে ও ডিহাইড্রেশন হওয়ার ঝুঁকি কমবে। এছাড়াও রেচন ক্রিয়ায় পানি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এ কারণেই জন্ডিস হলে প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন । আরো ভালো হয় যদি পানির সাথে স্যালাইন অথবা গ্লোকজ মিশিয়ে পান করেন।

২) দ্রুত হজম হয় এমন খাবার: দ্রুত হজম হয় এমন খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। যেমন- তরল খাবার, ভেজিটেবল, জুস, স্যুপ ইত্যাদি। এ সময় রান্নায় হলুদ দিবেন না। কারণ জন্ডিস রোগীরা হলুদের গন্ধ সহ্য করতে পারেনা।

৩) ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: যেকোনো রোগেই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এটা দ্রুত হজমে সাহায্য করে। জন্ডিস রোগীরা বাদাম, ওটমিল, সবজি ইত্যাদি খাবার খেতে পারেন।

৪) ইমিউনিটি বাড়ায় এমন খাবার: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এই জাতীয় খাবারগুলো খেতে হবে। এ সময়ে শরীরে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই এগুলো মোকাবেলা করতে প্রয়োজন পড়ে শক্তির। তাই জন্ডিস রোগিরা দুধ, ডিম, প্রোটিন, ফল, মধু, শাকসবজি ইত্যাদি খাবেন।

৫) হারবাল টি: এটি জন্ডিস রোগীদের জন্য খুব উপকারী। হারবাল টি হজমের জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়াও এতে আছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার অনেক উপাদান।

৬) চিনি: জন্ডিস রোগীদের জন্য চিনি বেশ উপকারী। তবে সেটা সরাসরি চিনি খাওয়া নয়, চিনির বদলে আখের গুড়, আখের রস, গুড়ের শরবত ইত্যাদি খাবেন।

৭) লেবু: জন্ডিস রোগীদের জন্য লেবু বেশ উপকারী। এটি ইউনিটি বাড়ায় ও মুখে রুচি আনতে সাহায্য করে। এছাড়াও যকৃতে জমে যাওয়া পিত্তরস পরিশুদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন লেবুর শরবত অথবা ভাতের সাথে লেবু খেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এতে প্রেসার লো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৮) পুদিনা পাতা: জন্ডিস থেকে মুক্তি পেতে পুদিনা পাতা বেশ কার্যকর। যকৃতের বিভিন্ন কাজে পুদিনা পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটি পুদিনা পাতা খাওয়ার চেষ্টা করবেন অথবা কোন জুসের সাথে পুদিনা পাতা খাবেন।

৯) টক দই: জন্ডিস হলে টক দই খাবেন। কারণ এটি হজমে সাহায্য করে ও রেচন ক্রিয়া সচল রাখতে সাহায্য করে। তবে কোনোভাবেই মিষ্টি দই খাবেন না। তাহলে পেট খারাপ বা ডিসেন্ট্রি হয়ে যেতে পারে।

১০) আনারস: আনারস লিভার থেকে পিত্তরস রূপে জমে থাকা বিলিরুবিন বের করে দিতে সাহায্য করে। তাই জন্ডিস হলে বেশি বেশি আনারস খাবেন। চাইলে আনারসের জুসও খেতে পারেন।

শেষ কথা, আমরা জেনেছি জন্ডিস কোন রোগ নয়, তবে জন্ডিস হলে অবহেলা করা একদম উচিত হবে না। এই জন্ডিসের মধ্যেও লুকিয়ে থাকতে পারে মরণব্যাধির রোগের বীজ। তাই জন্ডিস নিয়ে মোটেও অবহেলা না করে জন্ডিস হলে করনীয় কি তা জেনে চিকিৎসার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে জন্ডিস বেশ মারাত্মক। তাই শরীরে জন্ডিসের লক্ষণ ও উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।

About the author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Latest Posts

  • সর্দি থেকে মুক্তির উপায়, নাকের এলার্জি দূর করার উপায় | দ্রুত উপশম পেতে ঘরোয়া চিকিৎসা

    সর্দি থেকে মুক্তির উপায়, নাকের এলার্জি দূর করার উপায় | দ্রুত উপশম পেতে ঘরোয়া চিকিৎসা

    নাকের এলার্জি হচ্ছে নাকের ঝিল্লি প্রদাহের কারণে নাকের একটি সমস্যা। এটি সারা বিশ্বব্যাপী একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ নাকের এই রোগে আক্রান্ত। নাকের এলার্জি কোন মারাত্মক ক্ষতিকর রোগ না হলেও এ রোগের কারণে দৈনন্দিন জীবন প্রবাহ ব্যাহত হয়। এলার্জিজনিত সর্দি এবং হাঁচি জীবনকে অতিষ্ট করে তোলে। এই রোগে হঠাৎ…

    Read more

  • কফ, কাশি দূর করার উপায় | সঠিক চিকিৎসাই হতে পারে কাশি দূরীকরণের মাধ্যম

    কফ, কাশি দূর করার উপায় | সঠিক চিকিৎসাই হতে পারে কাশি দূরীকরণের মাধ্যম

    গলায় বুকে কফ জমে থাকা বেশ বিরক্তিকর একটি সমস্যা। ঋতু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়। আর আবহাওয়ার এই দ্রুত পরিবর্তন আমাদের শরীর খাপ খাওয়াতে পারে না, যার কারণে সৃষ্টি হয় ঠান্ডা জ্বর ও সর্দি-কাশির। ঠান্ডা সর্দি কাশি এগুলো আমাদের কাছে খুব পরিচিত রোগ হলেও এই ঠান্ডা সর্দি কাশি থেকে আমাদের দেহে অনেক বড় বড় অসুখ…

    Read more

  • ওজন কমানোর উপায় ডায়েট চার্ট | সুস্থ স্বাভাবিক জীবন

    ওজন কমানোর উপায় ডায়েট চার্ট | সুস্থ স্বাভাবিক জীবন

    সুস্থ স্বাভাবিক এবং রোগমুক্ত জীবন আমরা কে না চাই। আর এই সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করার একমাত্র উপায় হচ্ছে শারীরিক ওজন ঠিক রাখা। কেননা ওজন বেড়ে গেলে যে কোন রোগের ঝুঁকি ও বেড়ে যায়। এজন্য বাড়তি ওজন অনেকের মানসিক অসুস্থির প্রধান কারণ। তাই রোগ প্রকোপ কমাতে এবং মানসিক শান্তির উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের উচিত শারীরিক ওজন…

    Read more