ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যা উচ্চতর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের প্রজননের জন্য অভিযোজিত হয়। সাধারণত নারীদের যোনিপথে প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ে মাসিক হয়। যা-কে ইংরেজিতে পিরিয়ড বলা হয়। এক কথায় মাসিক, ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড হল একটি মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর প্রাকৃতিকভাবে তার দেহের হরমোনের প্রভাবে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মেয়েটির যোনিপথে যে রক্ত, স্রাব বের হয় তাকে মাসিক, ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড বলে।
মেয়েদের যখন বিয়ে হয় এবং তার স্বামীর সাথে সহবাস করে তখন মেয়েদের ডিম্বাণু তার স্বামীর শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয় ও ডিম্বানুটি তার ফ্যালোপিয়ান টিউবে থাকা অবস্থায় এন্ডোমেট্রিয়ামের সাথে সংযুক্ত হয়, তখন এই মাসিক বা পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। এটাও একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়ম। কারণ মেয়েটি তখন তার পেটে একটি শিশু জন্ম দিতে যাচ্ছেন। অর্থাৎ সহবাসের পর মেয়েদের মাসিক বা ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে এটিকে গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে, এই মাসিক অন্য কোন কারণে বন্ধ হয়ে গেলে মেয়েরা চিন্তায় পড়ে যায় ও অনিয়মিত মাসিক হলে বিভিন্ন টেনশন করে থাকে। মাসিক না হওয়ার কারণ অনেক রকম হয়ে থাকে। আজ আমরা জানব, এ কারণ ও প্রতিকারের উপায়।
সাধারণত ১২ বছর থেকে মেয়েদের ঋতুস্রাব শুরু হয় আর ৪৫ বছর অতিক্রম করলে মাসিক হয় না। এটাও প্রাকৃতিক নিয়ম। একজন মেয়ের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে এই মাসিক, পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব। কারণ মাসিক হচ্ছে মাতৃত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
পিল খাওয়ার পর মাসিক না হওয়ার কারণ
পিল যা জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্যতম জনপ্রিয় এবং কার্যকর পদ্ধতি। এটি সাধারণত ডিম্বস্ফোটন প্রতিরোধে কাজ করে। মানে হল, মাসিক চক্রের ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম নিঃসৃত হয় না। এই কারণে একটি মেয়ের মাসিক চক্র পরিবর্তন হতে পারে, যার মধ্যে পিরিয়ড মিস হয়। পিল না খাওয়ার পর পিরিয়ড মিস হওয়া সাধারণ ব্যাপার হলেও পিল খাওয়ার পর মাসিক না হওয়ার কারণ গুলো জেনে রাখা ভালোঃ
১) গর্ভাবস্থায়: পিল খাওয়ার পর একজন মেয়ের পিরিয়ড না হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হচ্ছে গর্ভাবস্থা। যদিও পিল গর্ভাবস্থায় না খাওয়ার জন্য কার্যকর; তবুও গর্ভবতী হওয়ার একটি সম্ভাবনা থাকে। পিল খাওয়ার পর যদি কোন মহিলার পিরিয়ড মিস হয় তাহলে সন্দেহ দূর করার জন্য গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করা জরুরী।
২) পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম: এটি একটি হরমোন জনিত ব্যাধি, যার কারণে অনিয়মিত পিরিয়ড বা পিরিয়ড একেবারে নাও হতে পারে। এতে আক্রান্ত মহিলাদের মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পিলটি প্রায় নির্ধারিত হয়। পিসিওএস, দ্বারা সৃষ্ট অন্তর্নিহিত হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে পিল খাওয়ার সময় কিছু মহিলা পিরিয়ড মিস অনুভব করতে পারে।
৩) হরমোনের পরিবর্তন: ডিম্বস্ফোটনকে দমন করতে কাজ করে জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়িগুলো অর্থাৎ মাসে একটি ডিম নিঃসরণ হয় না। এই হরমনের পরিবর্তন মাসিক চক্রে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে হালকা পিরিয়ড বা পিরিয়ড সম্পূর্ণভাবে নাও হতে পারে।
৪) চিকিৎসা শর্ত: কিছু কিছু ঔষধ জন্মনিয়ন্ত্রণ ঔষুধের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং তাদের কার্যকারিতা প্রভাবিত করতে পারে। আপনি যে ঔষধ গ্রহণ করছেন সে সম্পর্কে আপনার ডাক্তারকে জানানো উচিত।
৫) থাইরয়েড ব্যাধি: গ্রন্থির মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি আন্ডারএকটিভ থাইরয়েড গ্রন্থি অনিয়মিত পিরয়ড বা পিরয়ড না হওয়ার কারণ হতে পারে। যে মেয়ে পিল খাচ্ছে তার থাইরয়েড ডিসঅর্ডার থাকলে পিরিয়ড মিস হতে পারে।
৬) মেনোপোজ: এটি একটি প্রাকৃতিক জৈবিক প্রক্রিয়া, যা একজন নারী প্রজনন বছর শেষ করে। একজন নারীর মেনোপেজ এর কাছাকাছি আসা মাত্রই মাসিক অনেক হতে পারে এবং একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যে নারী পিল খাচ্ছে এবং মেনোপোজ কাছাকাছি আসছেন তাদের এই সময় পিরিয়ড মিস হতে পারে।
৭) স্ট্রেস: স্ট্রেস একজন মহিলার মাসিক চক্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। স্ট্রেস শরীরের হরমোনের ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে পিরিয়ড মিস বা অনিয়মিত পিরিয়ড হয়। পিল খাচ্ছেন এবং উচ্চমাত্রার মানসিক চাপ নিচ্ছেন তাদের এই ফলস্বরুপ পিরিয়ড মিস হতে পারে।
দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ
সাধারণত ২৮ থেকে ৩৫ দিন পর পর মেয়েদের মাসিক হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে একজন নারী প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে। ব্যক্তি ভেদে ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত মাসিক স্থায়ী হয়। সাধারণত ১২-৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত মেয়েদের মাসিক দেখা যায়। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে এতে অনিয়ম হতে পারে। চলুন জেনে নেই দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ গুলো:
ওজন হ্রাস: মাত্রা অতিরিক্ত ওজন কম হলে সময় মত মাসিক নাও হতে পারে।
স্ট্রেস: মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে অনিয়মিত মাসিক দেখা যায়।
টিউমার: জরায়ুতে টিউমারের কারণে নিয়মিত মাসিক নাও হতে পারে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি: জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির পিল, ইঞ্জেকশন ইত্যাদি নিলে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে।
ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির ফলেও অনিয়মিত মাসিক হতে পারে।
সহবাসের পর মাসিক না হওয়ার কারণ
প্রত্যেক মাসের একটা নির্দিষ্ট সময় মেয়েদের অবুলেশন বা ডিম্বপাত হয়। এই ডিম্বপাত হয় যখন একটি মেয়ের পিরিয়ড হয় তারপর থেকে। আর এই ডিম্বপাতের সময় সহবাস করলে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু একসাথে মিলন হয়ে গর্ভধারণ হয়। আর যে সকল নারীদের মাসিক হয় না তাদের ডিম্বাশয়ে কোন ডিম্বাণু সৃষ্টি হয় না। আর ডিম্বাণু না থাকলে কোন নারীর পক্ষেই গর্ভধারণ করা সম্ভব নয়।
একটি মেয়ে বিয়ের পর অনেক দুশ্চিন্তায় ভোগেন, যেমন- সামাজিক চিন্তা, পারিবারিক চিন্তা, মানসিক চিন্তা, অর্থনৈতিক চিন্তা। আর এই ধরনের চিন্তাই হতে পারে মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ। বেশিরভাগ নারীদেরই বিয়ের পর মাসিক অনিয়মিত হয়ে যায়। ২, ৩ মাস পর পর যে মাসিক হয়ে থাকে তাকে অনিয়মিত মাসিক বলা হয়। এটা মোটেও গর্ভধারণের লক্ষণ না। গর্ভধারণের সময় মেয়েদের শরীরে বেশ কিছু হরমোনাল পরিবর্তন হয়। যেমন,
1) Estrogen
2) HCG(human chorionic gonadotropin)
3) Relaxin
4) Progesterone
5) Human Chorionic Somatomammotropin
এগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম মেয়েদের শরীরে human chorionic gonadotropin হরমোন মিশ্রিত হয়ে থাকে। ডিম্বাণু ও শুক্রাণু মিলিত হওয়ার ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে রক্তে ও প্রসাবে human chorionic gonadotropin হরমোন পাওয়া যাবে। estrogen ও progesterone এর কারণে সহবাসের পর গর্ভধারণ হলে মাসিক বন্ধ থাকে। গর্ভধারণের পর human chorionic gonadotropin হরমোন মেয়েদের শরীরে কয়েকগুণ বাড়তে থাকে এবং বারো সপ্তাহ পর এটি আস্তে আস্তে পুনরায় কমতে থাকে।
তাই মাসিক বন্ধ হওয়ার 10 থেকে ১২দিন পর প্রসাবের মাধ্যমে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর প্রেগনেন্সি পরীক্ষায় যদি নেগেটিভ আসে তাহলে আরো ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে; মোট ৪৫ দিন পর আবারো প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে হবে। যদি পজিটিভ আসে তাহলে গর্ভবতী আর নেগেটিভ আসলে সে গর্ভবতী না। তখন বুঝে নিতে হবে মাসিক বন্ধ হওয়ার অন্য কোন কারণ আছে। এমনটা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
সহবাসের পর মাসিক না হলে করণীয়
পিরিয়ড হলো নারীদের স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। নির্দিষ্ট একটি সময়ে প্রত্যেক মেয়েরই প্রতি মাসেই মাসিক হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক সময় পার হওয়ার পরও মাসিক হয় না যার কারনে মেয়েরা অনেক চিন্তিত বোধ করেন। বিশেষ করে সহবাসের পর যদি মাসিক না হয় তখন অনেক চিন্তিত হন। কারণ তারা ভাবে হয়তো তারা সন্তান সম্ভাবনা যে কারণে তাদের মাসিক হচ্ছে না। তাহলে চলুন জেনে নেই সহবাসের পর মাসিক না হলে করণীয়:
সহবাসের পর মাসিক না হলে সর্বপ্রথমে আপনাকে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করে নিতে হবে। গর্ভবতী কি না তা প্রেগনেন্সি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাবে। গর্ভধারণের সময় human chorionic gonadotropin এর হরমোন নিশ্রিত হয় এবং প্রস্রাব পরীক্ষা করার মাধ্যমে human chorionic gonadotropin এর উপস্থিতি দেখা যায়। এর মাধ্যমে বোঝা যায় গর্ভধারণ হয়েছে নাকি হয়নি।
মাসিকের সময় ১০ দিন পার হয়ে গেলে প্রেগনেন্সি টেস্ট করে নেওয়া উচিত। আর প্রসাব পরীক্ষার জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম প্রসাব দিয়ে পরীক্ষা করলে সঠিক ফলাফল আসবে। প্রথম বর্ষ বলতে রাতে ঘুমানোর পর সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর যে প্রস্রাব হয় সেটি। আর প্রসাব যে পাত্রে রাখবেন অবশ্যই সেই পাত্রটি পরিষ্কার হতে হবে। আর পাত্রটি পরিষ্কার করার জন্য সাবান বা পাউডার ব্যবহার করবেন না। এতে সঠিক ফলাফল নাও আসতে পারে এবং প্রেগনেন্সি টেস্ট করার জন্য ভালো মানের টেস্ট কিট ব্যবহার করুন তাহলেই সঠিক ফলাফল আসবে। অনেক সময় ভালো মানের টেস্ট কিট ব্যবহার না করার কারণে সঠিক ফলাফল আসে না। ভালো মানের টেস্ট কিট সাধারণত বাজারে 40 থেকে 50 টাকায় পাওয়া যায়।
মাসিক না হলে কি প্রেগন্যান্ট
কোন নারীর যখন পুরুষের সাথে মিলন ঘটে, তখন পুরুষের শুক্রানু নারী ডিম্বানুর সাথে নিশিক্ত হয়। নারীর যোনী পথের ফ্যালোপিয়ান টিউবে এই নিশিক্ত ডিম্বাণু শুক্রাণু মিলিত হয় আর তখনই একজন নারী গর্ভবতী হয়। যার কারণে গর্ভের সন্তান নিশিক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তার মাসিক হবে না।
তাই সাধারণত ভেবে নেওয়া হয় মেয়েদের মাসিক না হলে মেয়েটি গর্ভধারণ হয়েছে। সে এখন বাচ্চা জন্ম দেওয়ার অপেক্ষা করবে। তবে অন্যান্য কারণে মাসিক বন্ধ হতে পারে। তাই মাসিক বন্ধ হলে ঠিক কি কারণে মাসিক বন্ধ হয়েছে তা জানার জন্য অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাবেন। গর্ভধারণের প্রধান লক্ষণ মাসিক বন্ধ হলেও এর আরো বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। সেই লক্ষণগুলো পুরোপুরি প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না মেয়েটি গর্ভধারণ করেছে কিনা। তাই মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে, এর মানে মেয়েটি গর্ভধারণ করেছে এটা ভুল ধারণা।
পিরিয়ড না হলে করণীয়
মাসিক বন্ধ ও অনিয়মিত মাসিক হওয়া পুরো ব্যাপারটাই মেয়েরা লুকোচুরির মধ্যে রাখতে চায়। যেহেতু বিষয়টি মেয়েরা গোপন রাখতে চায়, তাই তারা ঘরোয়া উপায়ে এটার সমাধান খোঁজে। মাসিক নিয়মিত করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় প্রাচীনকাল থেকেই চালু আছে। চলুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেই:
১) আদা চা: আদা অনিয়মিত পিরিয়ড নিরাময়ে বেশ উপকারী। কাঁচা আধা নিয়মিত সেবন আপনার পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আদার মধ্যে আছে জিঙ্চেরল, যা শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি হরমোনের ভারসাম্যকে সহজ করে ও জরায়ুর পেশি সংকুচিত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত মাসিক হতে সাহায্য করে। এজন্য সকাল বেলা খালি পেটে এক গ্লাস পানির সাথে কয়েক টুকরো আদা, লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে পান করুন। এতে শরীরের মেটাবলিজম বাড়বে।
২) পাকা পেঁপে: অনিয়মিত পিরিয়ড নিরাময়ের পাকা পেঁপে বেশি পরিচিত। এটি জরায়ুর সংকোচন বাড়ায়, যা আপনার মাসিক নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে। মাসিক নিয়মিত না হলে কয়েক মাস কাঁচা পেঁপের রস খান। দেখবেন মাসিক আর বন্ধ হবে না। তবে মাসিক চলাকালীন সময়টি পান করবেন না।
৩) হলুদ: হলুদ যে কোন রোগের ঘরোয়া প্রতিকার, যা আমরা যেকোন অবস্থায় ব্যবহার করতে পারি। প্রতিদিন নিয়ম করে হলুদ গুঁড়া খেলে আপনার অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হবে। এতে থাকা এন্টি ইনফ্লেমেটরি এবং এন্টি স্পাসমেডিক জরায়ুর ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি পিরিয়ড নিয়মমিত করতে চান তাহলে, এক গ্লাস গরম দুধের সাথে হলুদ ও মধু মিশিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন, যতদিন পর্যন্ত আপনার মাসিক না হয় ততদিন পর্যন্ত এটা খাবেন।
৪) গুড়: গুড় প্রচুর ঔষধি গুণসম্পন্ন। এটি জরায়ুর ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করে। গুড় অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হতে সাহায্য করে।
৫) আ্যালোভেরা: আ্যালোভেরা রস মাসিক নিয়ন্ত্রণ ও অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি বিপাকেও সাহায্য করে ও অন্ত্রের সিস্টেমকে সুস্থ রাখে। এটি হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দূর করে। যে কারণে আপনার পিরিয়ড স্বাভাবিক হতে শুরু করে। পিরিয়ডের সময় এলোভেরা ব্যবহার করবেন না।
৬) অ্যাপেল সিডার ভিনেগার: এটি পলেস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রমে আক্রান্ত নারীদের পিরিয়ড ও হরমোন নিয়মিত করতে সাহায্য করে। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আপনার ওজন, রক্তের শর্করা ও ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। আপনি চাইলে এর সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
৭) দারুচিনি: দারুচিনি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এটি জরায়ুতে রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং অনিয়মিত মাসিক নিরাময় করতে পারে। এটা মাসিকের সময় বমি ও পেট ব্যথা কমাতে পারে।
৮) বিটরুট: বিটরুট অনিয়মিত পিরিয়ড সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড এবং আয়রন, যা রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
৯) স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অনিয়মিত পিরিয়ডের অন্যতম কারণ হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। ফাস্টফুড, অ্যালকোহল, শরীরের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে, যার কারণে অনিয়মিত মাসিক ও মাসিক বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তাই মাসিক চক্র ঠিক রাখার জন্য খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসবজি, শুকনো ফল, ফল, লাল মাংস, মাছ ইত্যাদি রাখুন।
১০) নিয়মিত ব্যায়াম ও যোগব্যায়ম: নিয়মিত ব্যায়াম করা অনেক উপকারী। এটি পিরিয়ড নিয়মিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ব্যায়াম আপনার হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ও ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে। পলিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম একজন নারীর অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির জন্য হরমোনের ভারসাম্যহীনতায় হয়। নিয়মিত ব্যায়াম করলে সমস্যা সমাধান হতে পারে। আপনার মন ও শরীরের বাসনা বজায় রাখতে যোগ ব্যায়াম অনেক উপকারী। যোগব্যায়াম শরীর ও মনকে শান্ত রাখে। যোগব্যায়াম মাসিকের ব্যথা ও মাসিকের সাথে সম্পর্কিত মানসিক উপসর্গ, যেমন- বিষন্নতা এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
সবশেষে, আপনার মাসিক না হওয়ার কারণ অনেক হতে পারে। আপনার পক্ষে তা খুঁজে বের করা অনেক কষ্টসাধ্য, আবার তা সঠিক নাও হতে পারে। তাই মাসিক বন্ধ হলে বা নিয়মিত মাসিক না হলে লজ্জা বা সংকোচ বোধ না করে একজন ভালো গাইনি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন এবং সব সময় মনে রাখবেন সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ভালো লাইফ স্টাইল আপনার মাসিকের নানা জটিলতা থেকে মুক্তি দিবে।
Leave a Reply