বলছি দীপিকা পাড়ুকোন কথা। কিভাবেই না দিন পরিবর্তন করে ফেললেন নিজের। কঠোর পরিশ্রম, সাফল্যের পেছনে লেগে থাকা এবং সবচেয়ে বড় কথা, সঠিক স্ক্রিপ্ট বাছাই। এখন তো এগিয়ে চলছেন আরো সাফল্যের দিকে।
জন্মগ্রহণ করেছেন ১৯৮৬ সালের ৫ই জানুয়ারি কোপেনহেগেনে এবং পরবর্তীতে তাঁর পিতা শিফট হোন ব্যাংগালোরে। তাঁর পিতার নাম প্রকাশ পাড়ুকোন, যে কিনা ছিলেন আন্তর্জাতিক শাটলার। মা ছিলেন ট্রাভেল এজেন্ট এবং বোন গলফার।
তাঁর দাদা রমেশ ব্যাডমিন্টন অ্যাসোশিয়েসনের সেক্রেটারি। সোফিয়া হাই স্কুলে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করেন এবং মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন দিল্লি কারমেল কলেজ থেকে। পরবর্তীতে সোশিয়োলজিতে ইন্দিরা গান্ধী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও পরে ড্রপ-আউট হোন মডেলিং ক্যারিয়ার কন্টিনিউ করার জন্য।
দীপিকার ইচ্ছা কখনোই ছিল না নায়িকা হওয়ার। তিনি তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন একবার, ব্যাডমিন্টন ছিল তাঁর ফেভারিট গেম এবং তাঁর ধ্যানজ্ঞান। এমন কি জাতীয় পর্যায়েও অংশ গ্রহন করেন তিনি। বেসবলের টিমেও সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। রাজ্য পর্যায়ে ম্যাচ খেলেছিলেন বেসবল টিমের হয়।
দীপিকা পাড়ুকোন | অভিনয় জগতে দীপিকা
দীপিকার অভিনয় ক্যারিয়ারের শুরু হয় এক কান্নাড়া চলচ্চিত্রে অভিনয় মধ্য দিয়ে। তবে বলিউড তারকা হিসেবে পরিচিত হোন হিমেশের এক ভিডিও গানে মডেলিং করে।
২০০৭ সালে অভিনয় করেন ‘ওম শান্তি ওম’-এ যেখানে সিনেমা সুপারহিট হলেও তাঁর রোল ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না! দীপিকা নায়িকা হলেও এ মুভি শুধুমাত্র শাহরুখের। আহামরি গল্প ছিল না, হিট খেয়েছিল শুধুমাত্র শাহরুখের স্টারডমের কারণে। সেবার দীপিকা সেবা নবাগতার পুরষ্কার জিতলেও তাঁর এক টোনের অভিনয়ের জন্য হয়েছিলেন সমালোচিত।
এর পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০০৮ সালে ‘বাচনা অ্যা হাসিনো’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি, যা অনেক বেশি সমালোচিত হয়েছিল। বাজে অভিনয়, বাজে গল্প দিয়ে এই চলচ্চিত্র ছিল একটি মুখ থুবড়ে পড়া প্রজেক্ট।
কিন্তু ২০০৯ সালে ‘লাভ আজ-কাল’ এবং ‘লাফাঙ্গে পারিন্দে’ দিয়ে নিজের অভিনয় প্রতিভার পরিচয় দেন। যদিও প্রমাণ করার ছিল অনেক কিছুই। ২০১০ সালে আবার ‘হাউসফুল’-এ অভিনয় করে সমালোচনার শিকার হোন। ব্রেইনলেস সংলাপ, ন্যাকামি, ওভারএক্টিং এর কারণে বাজে ভাবে সমালোচিত হোন।
দীপিকার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট চলচ্চিত্র ছিল ‘ককটেল’ যা সমালোচকরা পছন্দ করেছিল এবং সেবার অনেক অ্যাওয়ার্ড শোতেই সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়ন পান।
২০১৩ সালে দর্শকদের দেন দুইটি বিগ হিট। ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ এবং ‘ইয়ে জাওয়ানি হে দিওয়ানি’। পরের বছর যদিও আবার সমালোচিত হোন। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ করে আবার নিজের উপর প্রশ্ন তোলাতে বাধ্য করেন তিনি।
কিন্তু ২০১৩ তে ‘রামলীলা’, ২০১৫ তে ‘বাজিরাও মাস্তানি’ এবং ২০১৮ তে ‘পদ্মাবত’ অভিনয় করে নিজের ক্লাস অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন তিনি।
রানী পদ্মাবতীর চরিত্রে এত সাবলীল, চোখের ইশারা দিয়ে পুরো কথা বলার অভিব্যক্তি; চরিত্রের মধ্যে একদম ঢুকে গিয়েছিলেন দীপিকা। সত্যি বলতে, এরকম অভিনয় করার মতো একটি অভিনেত্রীও নেই এই মুহূর্তে বলিউডে।
‘পদ্মাবত’ এ তো বেশিরভাগ ডায়লগই দিয়েছেন শুধুমাত্র চোখের ইশারা দিয়ে, বুঝিয়ে দিয়েছেন শত কথা। হরিণের মতো টানা চোখ তাঁর। পিরিডিওক সিনেমাগুলো মানিয়ে নেওয়া খুবই টাফ, তবে দীপিকা যেনো এটাতেই পিএইচডি করে বসে আছেন।
ব্যক্তিগত জীবন
অন স্ক্রিনে যতটা শক্ত চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন, অফ স্ক্রিনে তিনি ততটাই সেরকম। কেউ অন্যায় করলে সহজে ছাড় দেন না। মেয়েদের শিক্ষা, সুবিধার জন্য খুলেছেন ফাউন্ডেশন। নিজের সাবেক প্রেমিক রনবীর কাপুরকেই ছাড়েননি তিনি।
রনবীর কাপুর বলিউডে তাঁর প্রথম প্রেম করেন দীপিকার সাথে এবং দীপিকারো এক ঘটনা ছিল। তবে রনবীর কাপুর মেয়ে ঘেষা চরিত্রের জন্য দীপিকা তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হোন, এই ভাঙ্গন নিয়ে বলিউডে আলোচনা হয়েছিল অনেক।
সবাই মনে করেছিল এই সম্পর্ক টিকে যাবে। তিনি তাঁর ভাঙ্গনকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছেন। এই ভাঙ্গন তাঁকে আরো ম্যাচিউর এবং সামাজিক করে তুলেছে বলে দাবী করে ছিলেন তিনি।
রণবীর সিংয়ের সাথে গত বছরের বিয়ে নিয়ে ছিল সবারই মাথাব্যথা। কই বিয়ে করবেন, কিভাবে করবেন তা নিয়ে সবার মনে ছিল আগ্রহ। তিনি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। কিভাবে জীবনে হার না মেনে এগোতে হয়।
টানা ফ্লপ কিছু মুভি দেওয়ার পরেও হাল ছাড়েননি। চালিয়ে গিয়েছেন। নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করে গিয়েছেন। শুধু শুধু তো আর এখন নায়কদের সমান পারিশ্রামিক পান না!
ব্যর্থতার মাঝেও দীপিকা নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছেন। তাই, মাঝে মধ্যে জীবনে ব্যর্থ হলে দীপিকার কথা মনে করা উচিত। এক টোনের অভিনেত্রী থেকে নিজেকে বানিয়েছেন বলিউডের রাণী। আজ তিনি ভারতের একজন নামকরা অভিনেত্রী।
Leave a Reply