কিডনি রোগ হচ্ছে একটি নীরব ঘাতক। যার জীবনে কিডনি রোগ আছে তার যাতনার শেষ নেই। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনযাপন ও খাদ্যাভাসে অনেক পরিবর্তন আনতে হয়। কোন কারনে যদি কিডনির কার্যকারিতা কমে যায় তাহলে একজন মানুষ নানান রকমের শারীরিক সমস্যার মুখে পড়েন। আর কিডনি যদি একবারে অকেজো হয়ে পড়ে তাহলে তো মৃত্যু সুনিশ্চিত।
কিন্তু কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় গুলো জানা থাকলে সুস্থভাবে জীবন যাপন করা সম্ভব। আমাদের দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো কিডনি (বৃক্ক)। কিডনি মানবদেহের রক্তে উপস্থিত দূষিত পদার্থগুলোকে পরিশোধন করে এবং মূত্র আকারে তা দেহ থেকে বের করে দেয়। একটি অকার্যকর বা অসুস্থ কিডনির কারণে মানুষ দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। এজন্য শরীরে অন্যান্য অঙ্গের পাশাপাশি কিডনি সুস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরী। চলুন কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা যাক।
কিডনি রোগের লক্ষণ
কিডনি আমাদের দেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিডনি রোগ গোপনে শরীরের ক্ষতি করে। খুব কঠিন পর্যায়ে না গেলে সাধারন লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না। তাই কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানা খুবই প্রয়োজন। চলুন তাহলে কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার গুলো সম্পর্কে জানা যাক:
১) বেশি বেশি ক্লান্ত লাগা। আপনি সারারাত পুরোপুরি ঘুমিয়েছেন এবং খুব ভালোভাবে ঘুমিয়েছেন। কিন্তু তারপরও যদি আপনার ক্লান্ত লাগতে থাকে তাহলে এটি একটি কারণ হতে পারে যে, আপনার কিডনি ড্যামেজ হচ্ছে। নিশ্চিত করে বলা যায় না, আসলে যখন কিডনি খারাপ হতে থাকে তখন সেটি পুরোপুরি ভাবে ব্লাডকে পিউরিফাই করতে পারে না। ফলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমতে শুরু করে, যার কারণে সেই টক্সিক রক্ত আপনার মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় এবং পুরো শরীর সবসময় ক্লান্ত থাকে। যদি আপনি এমন কোন লক্ষণের ভিতর দিয়ে গিয়ে থাকেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন কিডনি ভালো না খারাপ তা সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে হবে।
২) কিডনি খারাপ হওয়ার দ্বিতীয় লক্ষণ হচ্ছে আপনার সবকিছুতেই অতিরিক্ত রাগ বা বিরক্ত লাগে। যত সুন্দর পরিবেশে আপনি থাকুন না কেন, আপনার মন শান্ত থাকে না। সবকিছুতে আপনার অনেক বেশি রাগ এবং বিরক্ত লাগতে থাকবে। এর মূল কারণ হচ্ছে, কিডনির কাজ করা বন্ধ হয়ে যাওয়া। এই সময় শরীরের রক্ত পরিষ্কার হতে পারে না এবং এই রক্ত যখন মস্তিষ্কে পৌঁছায়, তখন সেখানে অক্সিজেনের মাত্রা অনেক কমে যায়। এই অক্সিজেনের কমতির কারণে সবসময় বিরক্তি অনুভব হতে থাকে। এটা কিডনি খারাপ হওয়ার একটি লক্ষণ।
৩) যদি আপনার বারবার বমি আসে এবং ক্ষুদা না লাগে, তাহলে এটাও কিন্তু কিডনি নষ্ট হওয়ার একটি অন্যতম লক্ষণ। আপনার কিডনি ড্যামেজ হচ্ছে রক্ত পিউরিফাই না হওয়ার কারণে। এতে আপনার পুরো শরীরে বিষাক্ত পদার্থ ছড়িয়ে পড়তে পারে। যার কারনে আপনার পাচন প্রক্রিয়া এবং পুরো বডি ফাংশন ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে।
৪) যদি আপনার বারবার প্রস্রাব হয়, তাহলে ধরে নিন আপনার সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষার সময় এসে গেছে। বলা হয়ে থাকে এটি কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেম নষ্ট হওয়ার অন্যতম লক্ষণ। আপনি যখনই খাবার খান অথবা কিছু পান করেন, তখনই কিডনি সেটা পিউরিফাই না করে মূত্র হিসেবে পাঠিয়ে দেয়। যার কারনে আপনার বারবার প্রসাব লাগে। তবে ইউরিনের ইনফেকশন এর কারণেও হতে পারে। তবে যাই হোক সতর্ক থাকবেন। সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হবেন আপনার কিডনির কন্ডিশনটা।
৫) গরমের মৌসুমেও যদি আপনার ঠান্ডা লাগতে থাকে, কোন পিপাসা না লাগে, আর অনেক বেশি ঘুম আসে, তাহলে আপনি বুঝে নিতে পারেন যে আপনার কিডনি অনেক দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তাই তৎক্ষণাত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অনেক জরুরী। এছাড়াও শরীর ফুলে যাওয়া, এটিও কিডনি খারাপ হয়ে যাওয়ার অন্যতম একটি লক্ষণ। আপনার চেহারা বা পা যদি আকর্ষণীয়ভাবে ফুলে যায়, তাহলে হতে পারে আপনার কিডনিতে কোন সমস্যা হচ্ছে। এমন হওয়ার কারণ হচ্ছে, আপনার দেহের অতিরিক্ত পানি ও লবণ শরীর থেকে বের হতে পারছে না। যার কারনে শরীরে ব্যথাও হতে পারে এবং ফুলেও যেতে পারে। শরীরে ব্যথা অন্য কোন কারণেও হয়ে থাকে। কিন্তু এমন কোন লক্ষণ যদি আপনার সঙ্গে ঘটে, তাহলে সেটা চিকিৎসা করানো অথবা পরীক্ষা করানো জরুরী।
কিডনির সমস্যার লক্ষণ
কিডনির সমস্যার লক্ষণ বের করা খুবই কঠিন। কারন আমাদের মানব দেহে দুটি কিডনি একটি অকেজ হয়ে গেলে আমরা তেমন একটা বুঝি না। কিন্তু যখন দুটি অকেজ হয়ে যায় তখন কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে,
১) খুব বেশি হাই ব্লাড প্রেসার কিডনি খারাপ হওয়ার অন্যতম লক্ষণ। তবে ব্লাড প্রেসারের সমস্যা অনেক লোকের মধ্যেই দেখা যায় এবং বয়সের সাথে সাথে হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যাও বাড়তে থাকে। কিন্তু আপনার বয়স যদি বেশি হয় এবং বারবার এই হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যা হতেই থাকে, আগে ছিল না এখন হঠাৎ করে অনেক বেশি হচ্ছে তাহলেও কিডনি পরীক্ষা করাতে পারেন।
২) সাম্প্রতিক রিসার্চে দেখা গেছে, কিভাবে কিডনি খারাপ হতে থাকে এবং তার সাথে রোগ-শোক শরীরে বাসা বাধতে থাকে। এরকম একটি রোগ হচ্ছে অ্যানিমিয়া। যখন কিডনি খারাপ হয়ে যায় তখন মানুষ অ্যানিমিয়া রোগের শিকার হয়। এ রোগে খুব দ্রুত শরীরের রক্তের কমতি দেখা দেয়। যদি এর দ্রুত চিকিৎসা না করানো হয়, তাহলে রোগী অনেক দ্রুত ফাইনাল স্টেজে গিয়ে মৃত্যু শরণাপন্ন হতে পারে।
৩) শরীরে যদি দাউদ চুলকানির মাত্রা অনেক বেড়ে যায়, এটাও অনেক ক্ষেত্রে কিডনি খারাপ হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। সাধারণত এমনটা হয় যখন আপনার কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং আপনার শরীরের রক্ত পিউরিফাই হতে পারে না, তখনই বডির ডি- টক্সিকেটেড হয়ে দাউদ বা চুলকানির সৃষ্টি হয়। মনে রাখবেন অনেক সুস্থ সবল মানুষেরও কিন্তু দাউদ বা চুলকানি হয় এলার্জি বা অন্যান্য সমস্যা থেকে। তাই এটাকে মেজর সমস্যা বলা যাবে না। এটা ছোটখাটো একটা লক্ষণ বলতে পারেন। আপনার এই দাউদ বা চুলকানির সমস্যা যদি দীর্ঘদিন থেকে থাকে তাহলে কিডনি টাও টেস্ট করে নিবেন।
৪) প্রস্রাবের সময় যদি অনেক বেশি জ্বালাপোড়া করতে থাকে বা ব্যথা হয়, এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হয় তাহলেও এই সংকেত বলে দিচ্ছে আপনার কিডনি ঠিকভাবে কাজ করছে না। রক্ত ঠিকভাবে পিউরিফাই না হওয়ার কারণে পুরো শরীরের টক্সিন জমতে শুরু হয়েছে এবং এর ফলে আপনার প্রসাব ইনফেক্টেট হয়ে গেছে। এমন সমস্যা হলে খুব দ্রুত আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
৫) পেটে ব্যথা করা বা পেটে ব্যথা হওয়া সাধারণ কথা। আর বেশিরভাগ সময় আমরা এটাকে এড়িয়ে চলি মনে করি আমরা কোন ভুলভাল খেয়ে নিয়েছি এজন্য এমনটা হচ্ছে। ব্যথা যদি পেটের ডানদিকে অথবা বাম দিকে হয় আর অসহনীয় হয়, তাহলে এটিকে এড়িয়ে যাবেন না। কারণ এটা কিডনি খারাপ হওয়ার একটি লক্ষণ হতে পারে। যখন কিডনি ঠিকমতো কাজ করে না, শরীর থেকে ময়লা বের হতে পারে না, তখন কিডনির পাশে এই সমস্ত ময়লা গুলো জমা হয়ে যায়। আর যার ফলেই কিডনির কাছে হঠাৎ করে ব্যাথা হয়ে থাকে। এটিকে গ্যাসের ব্যথা মনে করে ভুল করবেন না এবং এমন ব্যাথা হলে অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
কিডনির সমস্যার প্রতিকার
যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে অথবা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন তাদের মুক্তির জন্য কয়েকটা ব্যবস্থা রয়েছে। একটু সতর্কভাবে চললেই কিডনি অকেজো থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
১) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন: ডায়াবেটিস এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। বেশি ওজন শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস এসব শুরু হয় অতিরিক্ত ওজন থেকে। শতকরা ৩০ শতাংশ কিডনির সমস্যা হয় ওজন বৃদ্ধি জনিত কারণে।
২) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের রাখুন: যাদের উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা আছে তারা সব সময় উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখবেন। কারণ কিডনির সমস্যা রোগীদের জন্য উচ্চ রক্তচাপ ভয়ংকর।
৩) ধূমপান পরিহার করুন: ধূমপান যেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর তেমন উচ্চ রক্তচাপকে বাড়িয়ে তোলে এবং শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। এছাড়াও ডায়াবেটিস বাড়িয়ে ব্রেনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে তোলে এবং ক্যান্সারের সৃষ্টি করে।
৪) পরিমাণ মতো পানি পান করা: পরিমাণ মতো পানি পান করতে হবে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত পানি পান করা যাবে না। কম পানি পান করা যেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর, ঠিক তেমনি অতিরিক্ত পানি পান করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
৫) অতিরিক্ত পেইনকিলার এবং গ্যাস্টিকের ওষুধ খাবেন না ।
৬) অতিরিক্ত আমিষ জাতীয় খাবার খাবেন না।
কিডনি রোগের ঔষুধের নাম
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা হলো কিডনি রোগের আদর্শতম চিকিৎসা। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের জন্য খুবই কার্যকর। সকল ধরনের রেচন রোগের জন্য হোমিওপ্যাথিক নিরাময় আছে। প্রাকৃতিক পদ্ধতি দ্বারা এ রোগের সমস্ত সমস্যা নিবারনের চেষ্টা করা হয়। এই চিকিৎসা উপসর্গ সবসময় প্রাধান্যতা পায়। উপসর্গের মাধ্যম দেখে এখানে সর্বাপেক্ষা ভালো ঔষধের দ্বারা চিকিৎসা করা হয়।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবনের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে কিছু এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম জেনে রাখা ভালো। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, যেকোন একটি ঔষধ সেবন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। অন্যথায়, হিতে বিপরীত হতে পারে।
কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার
খাবার আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাবার না খেলে আমরা বাঁচবো না। বেঁচে থাকার জন্য খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই খাবারে আবার হতে পারে আপনার মৃত্যুর কারণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক আমাদের শরীরের কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার গুলো সম্পর্কে,
সিম, করোলা, ছোলা বুট এগুলো অত্যাধিক অক্সালেট জাতীয় খাবার হওয়ায় আপনার কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যদি আপনি খুব বেশি পরিমাণে এ সকল খাবার খেয়ে ফেলেন তাহলে ভেতরে ভেতরে আপনার কিডনি ডেমেজ হতে থাকবে অথবা পাথর জমে যেতে পারে। পানির পরিবর্তে কখনো সফট ড্রিঙ্কস পান করবেন না। কারণ এটি কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
লবণ দেহের জন্য উপকারী কিন্তু কখনো প্রতিদিন এক চা চামচের বেশি লবণ খাবেন না। যেকোনোভাবে আপনি লবণ খান না কেন, এটি যেন এক চা চামচের বেশি না হয়। বাদাম দেহের জন্য উপকারী, কিন্তু সব সময় বাদাম ভিজিয়ে খেতে হবে। অন্ততপক্ষে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পর সেই বাদাম আপনি খেতে পারবেন।
মজা লাগছে আর বাদামে ভালো ফাইবার এবং গুণাগুণ থাকায় অনেকে প্রচুর পরিমাণে বাদাম খেয়ে ফেলেন। কিন্তু এই বাদাম খাওয়ার নির্দিষ্ট মাপ রয়েছে। কাঠবাদাম, কাজুবাদাম চার-পাঁচটির বেশি নয়। আর চিনাবাদাম ১৫ থেকে ২০ টির বেশি নয়। অতিরিক্ত কফি খাবেন না, এটাও কিডনির জন্য ক্ষতিকর। দীর্ঘক্ষণ পর সব চেপে রাখা আপনার কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। গ্যাস্ট্রিকের জন্য ঘন ঘন অমিপ্রায়াজল ওষুধ খাওয়াও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি কিডনিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। হালকা ঠান্ডা লাগলে বা শরীরের যে কোন সমস্যায় একটু ব্যাথা হলে অনেকে নাপা খাওয়াকে একটা ফ্যাশন বানিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু খুব বেশি পরিমাণে প্যারাসিটামল অর্থাৎ নাপা এইসব জাতীয় খাবার গুলো খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া ঠিক নয়। একান্তই অসুস্থ না হলে নাপা খাওয়ার প্রয়োজন নেই। এগুলো বেশি খেলে কিডনি নষ্ট হয়ে যায়।
কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
একজন মানুষের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে কিডনি। যা রক্ত থেকে সকল ধরনের বর্জ্য পদার্থ সেকে দূর করে দেয়। কিডনির যেকোনো ধরনের সমস্যা হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন, তার আগে ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা আছে। চলুন সেগুলো জেনে নিই,
১) প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন:
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে দেহ থেকে সংক্রমক জীবাণু সহ ক্ষতিকারক অনেক পদার্থ ধৌত হয়ে দেহ থেকে বের হয়ে যায়। তাছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে রেচনতন্ত্রের পরিচ্ছন্নতার কাজেও সহায়তা করে। এইজন্য আপনাকে দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস করতে হবে ।
২) মদ্যপান পান থেকে বিরত থাকুন:
আমাদের শরীরে কিডনির কাজ হচ্ছে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করে বা সেকে দেহ থেকে বের করে দেওয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে অ্যালকোহল কিডনির ওপর অনেক চাপ তৈরি করে। ফলে কিডনির রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আরো বেড়ে যায়। তাই দ্রুত মদ্যপান পরিহার করুন।
৩) ভিটামিন ‘সি’ সংগ্রহে রাখুন:
ভিটামিন ‘সি’ শক্তিশালী একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দেহের কোষ গুলোর সুরক্ষায় কাজ করে। এছাড়া কিডনি কার্যকারিতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। তাই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল, শাক-সবজি অধিক পরিমাণে খাবারের অভ্যাস করুন।
৪) আপেল এবং আপেলের জুস:
আপেল অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি ফল। এতে এসিডের পরিমাণ বেশি থাকায় মূত্রের এসিডিটি দূরে রাখতে সহায়তা করে। অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে বাধা প্রদান করে। এর মধ্যে প্রদাহ নাশক গুন আছে। তাই ইনফেকশনের কারণে কিডনির প্রদাহ সৃষ্টি হলে তা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। এজন্য বেশি বেশি আপেল ও আপেলের জুস খান।
৫) ক্র্যানবেরি জুস পান করুন:
যদিও আমাদের দেশে ফলটি পাওয়া দুষ্কর, তাও সম্ভব হলে এটি সংগ্রহ করে জুস খেতে পারেন। কারণ আমাদের দেশে বর্তমানে অনেক দূর দেশ থেকেও ফলমূল আমদানি করা হয়। এটি অনেক উপকৃত। এই ফল আপনার মূত্রথলি, মূত্রনালীতে ইনফেকশন হলে সেটি কমিয়ে দেওয়ায় কাজ করে।
কিডনির পয়েন্ট কমানোর উপায়
১) ক্রিয়েটিন আছে এমন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার না করা: ক্রিয়েটিন হচ্ছে একটি জৈবিক পদার্থ, যা আমাদের পাকস্থলীতে তৈরি হয়। পরবর্তীতে পেশিতে যায় এবং যে জায়গায় শক্তির প্রয়োজন এটি ব্যবহার করা হয়। এবং যেটি ব্যবহারিত হয় না সেটা ক্রিয়েটিন এর বর্জ্য পদার্থে পরিণত হয়। প্রাকৃতিক উৎস ছাড়া ক্রিয়েটিন ওরাল সাপ্লিমেন্ট হিসেবে পাওয়া যায়। কিছু কিছু মানুষ ক্রিয়েটিন যুক্ত সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করে থাকে। কিডনির কার্যক ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাইলে ক্রিটিনের সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
২) অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়া বন্ধ করতে হবে: অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে রান্না করা গরুর গোশতের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা বেশি ঘটে। গোশতে থাকা ক্রিয়েটিন তাপের প্রভাবে ক্রিয়েটিনিন উৎপাদন তৈরি করে। অতিরিক্ত দুগ্ধজাত প্রোটিন ও গোশত যারা খাদ্য তালিকায় রাখেন তাদের ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ এমনিতেই বেশি হয়।
৩) প্রচুর পরিমাণে ফাইবার খেতে হবে: ফাইবার যুক্ত খাবার খেলে ক্রিয়েটিনিনের পরিমান কমানো সম্ভব। বিভিন্ন সবজি, ফল, দানা শস্য ইত্যাদিতে অধিক পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়।
৪) লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে: অতিরিক্ত লবণ খাওয়া হাই প্রেসারের কারণ হয়ে দাঁড়ায় । লবণে সোডিয়াম ও ফসফরাসের পরিমাণ বেশি থাকায় কিডনির সমস্যা তৈরি করে। তাই কাঁচা লবণ খাওয়া বাদ দিতে হবে।
৫) ধূমপান বন্ধ করতে হবে: ধূমপানের ফলে শরীরে নানা ধরনের ক্ষতি হয়। ধূমপান কিডনি রোগের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে। ধুমপান বন্ধ করলে কিডনির সমস্যা কমে যায় এবং ক্রিয়েটিনিনের লেভেলও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কিডনি আমাদের শরীরের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। আর তাই কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে রাখা ভালো। যদি কিডনি ডেমেজ হয়ে যাওয়ার আগেই এর সমস্যাগুলো ধরা পড়ে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব, ইনশাআল্লাহ। তাই ছোটখাটো কোন লক্ষণ দেখা দিলেই সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করিয়ে নিন। অথবা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
Leave a Reply