প্রিয়জনের কাছে ভালোবাসা পেতে কি করতে হয়?
ওয়াসিক সৈকত
লেখাটি শুরু করছি খুব পরিচিত একটি গল্প দিয়ে, “২০ ডলার বেতনে চাকুরী করা জিম ও ডেলার অভাবের সংসারে তাদের কাছে কেবল দু’টি দামী সম্পত্তি ছিল; একটি হলো জিমের সোনার ঘড়ি, যেটি এক সময় তার দাদার ছিল। পরে তার বাবার হাত ঘুরে এখন জিমের কাছে আছে। এই ঘড়ির আবার একটি চেইন নেই।
আর অপর দামী জিনিসটি হলো ডেলার মাথার লম্বা চুল। সামনে ক্রিসমাস ডে। তাই জিমের ঘড়ির চেইনটি গিফট করে সেরা উপহারটি দিতে পারে ডেলা। কিন্তু সেটা করতেও তো টাকার প্রয়োজন। কাছে রয়েছে কেবল ১ ডলার ৮৭ সেন্ট। চেইনটি কেনার জন্যে একটি দোকানে গিয়ে নিজের চুলগুলো ২০ ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দিলো আর সেই টাকা দিয়ে জিমের জন্যে কিনলো একটি প্লাটিনামের চেইন।
অফিস শেষে বাসায় ফেরার পর ডেলার ছোট চুল দেখে ভীষণ কষ্ট হলো জিমের। কারণ সে তার সেই ঘড়িটি বিক্রি করেই ডেলার চুলের জন্যে একটি চিরুনী এনেছিলো। যদিও দুজনের কারো দেওয়া গিফটই কাজে লাগবে না। কিন্তু একজনের জন্যে আরেকজনের যে সেক্রিফাইস তাই-ই সবচেয়ে মূল্যবাদ উপহার হয়ে গেল”।
আসলে সত্যিকার ভালোবাসাকে কোন সংজ্ঞা কিংবা কিছু বিষয়ে আটকে রাখা কঠিন। কেবল কিছু সত্য ঘটনা আপনাকে সে বিষয়ে একটা ধারণা দিতে পারে কেবল। অন্যদিকে, আপনার কাছে সত্যিকারের ভালোবাসার সংজ্ঞাটি আপনি নিজেই। আর তাই এই শাশ্বত বিষয়টি আমাদের কাছে চির আকাঙ্ক্ষার বিষয়। কারণ জীবনের সব সুখ উপহার দিতে পারে এই একটি বিষয়। আপনার পকেটে কেবল দশ টাকা থাকতে পারে, কিন্তু দিনশেষে আপনি যদি সেই দশটাকা পকেটে নিয়ে হাসিমুখে ঘুমাতে পারেন তবেই আপনি সুখী। আচ্ছা, সুখ নিয়ে আপনার উপলব্ধিও কি এ রকমই? জানাতে পারেন আমাদের কমেন্ট বক্সে।
তবে সবকিছুর পরেও একটি কথা থেকেই যায়। পৃথিবীতে সবকিছুকেই অর্জন করে নিতে হয়। সেটা ভালোবাসা হোক, কিংবা সুখই হোক।
অভিযাত্রীতে আমরা আপনাদের এমন পাঁচটি বিষয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো, যা আপনার জীবনেও সত্যিকারের ভালোবাসা এনে দিবে-
ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠার পাঁচটি উপায়
১) শর্তহীন ভালোবাসা
ভালোবাসার ধরণটা ঠিক কেমন হওয়া উচিৎ? এমন প্রশ্নের উত্তরে মাদার তেরেসা বলেছেন, “শক্তিশালী ভালোবাসায় কোন পরিমাপ থাকে না, কেবল শর্ত ভুলে একজন আরেকজনকে ভালোবেসে যায়”। ভালোবাসার শক্তিটা ঠিক এই জায়গাতেই। যার কারণে মানবতার সেবায় নিজেকে কোন শর্ত ছাড়া বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি। কখনো কি পাবেন তা ভেবে কিংবা মেপে মানুষকে ভালোবাসেন নি। যার কারণে দশকের পর দশক মানুষ মাদার তেরেসাকে স্মরণ করে যাচ্ছে, ভালোবেসে যাচ্ছে। সুতরাং সব শর্তকে একপাশে ফেলে রেখে ভালোবেসে যান। আর শর্তহীন এমন ভালোবাসা সবচেয়ে বেশিদিন স্থায়ী হয়। এমনটাই বলছেন বিখ্যাত হলিউড অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক স্টিফেন কেন্ড্রিক। তার ভাষায়, “The only way love can last a lifetime is if it unconditional” অর্থাৎ ভালোবাসা আজীবন স্থায়ী হয় যদি তা শর্তহীন হয়।
২) আমি থেকে আমরা হয়ে উঠুন
কোন সম্পর্কে আমিতে আবদ্ধ থাকা সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই আমিকে ভেঙে আমরা করে ফেলুন। আপনার শরীরের একটি জায়গা কেটে গেলে আপনি যেভাবে যত্ন নেন তার ক্ষেত্রেও তেমনটি নিন। একটা সম্পর্কে কেয়ারিং করা কিংবা না করা সম্পর্কের ধরণ বুঝিয়ে দেয়। গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কে ধরণ নিয়ে এমনটিই বলেছেন। তিনি বলেন, “আপনি যখন একটি ফুলকে পছন্দ করবেন তখন তা তুলে নিয়ে নিজের কাছে রাখবেন। কিন্তু যখন আপনি ফুলটিকে ভালোবাসবেন, তখন সে গাছে প্রতিদিন পানি দিবেন, পরিচর্যা করবেন”। তাই যখন আপনি ভালোবাসার মানুষটিকে কেয়ার করবেন, তখন আপনার ভালোবাসা আরো বেশি জোরালোভাবে প্রকাশ পাবে। একই সাথে আপনি তাকে একটি সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারবেন আপনার ভালোবাসা দিয়ে।
আচ্ছা, এমন করে আপনাকে কেউ যদি ভালোবাসে তাহলে আপনি কি তাকে ভালো না বাসতে পারবেন? কমেন্ট করুন।
৩) বন্ধু হয়ে উঠুন
পৃথিবীর সবচেয়ে দামী সম্পর্কগুলোর মধ্যে একটি বন্ধুত্ব। নিজের দোষ-গুণ সবকিছু নিদ্বিধায় বলে দেওয়া যায় একজন বেস্ট ফ্রেন্ডের কাছে। আর তাই এই সম্পর্কে কোন দেয়াল থাকে না। ভিয়েতনামের প্রখ্যাত সন্ন্যাসী “থিক নাহাত হানহ” তার “Teaching on love”. বইটিতে ভালোবাসার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে নিজের ভেতরের সত্ত্বাকে ভালোবাসার মানুষটির কাছে উন্মুক্ত করতে বলেছেন। মূলত তিনি ভালোবাসার সম্পর্কটিতে বন্ধুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। কারণ এতে করে একজন আরেকজনের কাছে নিজের সব কথা বিনা সংকোচে বলে দিতে পারেন। এর ফলে দুজনের সম্পর্ক আরো গাঢ় হয়। সাথে সাথে সম্পর্ক বোরিং হবার ভয়টিও থাকে না।
লেখাটির ভিডিও দেখুন
৪) বর্তমান সময়টিকে সুন্দর করে তুলুন
সম্পর্ক আর বর্তমান সময় নিয়ে কথা বলতে গেলে খ্যাতিমান রুশ লেখক লিও টলস্টয়ের একটি উক্তি মনে পড়ে যায়। তিনি বলেছেন, “অতীত বা ভবিষ্যৎ বলে কিছুই নেই বতর্মান টাই সব। আমাদের কিছু বলার থাকলে এখনি বলতে হবে, করার থাকলে এখনি করতে হবে, ভালোবাসতে হলেও এখনি বাসতে হবে ভবিষ্যৎ একটা মরিচীকা”। সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ বলা খুব কঠিন। বর্তমান সময়টাই তাই সবচেয়ে দামী। বর্তমান সময়টাকে রাঙিয়ে তুলুন, সুখ আর খুশি মিশিয়ে। ভালোবাসার মানুষটাকে উপহার দিন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।
৫) কাছে থাকুন, পাশে রাখুন
ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে, “Out of sight, out of mind”। এর অর্থ চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল। চোখের সামনে রাখুন ভালোবাসার মানুষটিকে। নিজেও তার চোখের সামনে থাকুন। দূরে গেলে আপনাদের কাছাকাছি থাকার যে স্মৃতি তা গড়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা একটা মানুষের সাথে কানেক্টেড থাকি, ভালোবাসি তার গড়া স্মৃতির জন্যে। কাছাকাছি থেকে একটা মানুষকে যতটা ভালোভাবে নিজের করে নেওয়া যায়, দূরে থেকে তা অনেকটাই অসম্ভব। যেমনঃ একটা প্রশ্ন করা যাক, আপনার কাছে স্কাইপের একটা ভিডিও কল বেশি স্বস্তির? নাকি ১০ মিনিট সামনাসামনি কথা বলা? তাই যতটা সময় কাছে থাকা যায় কাছে থাকুন।
সবশেষে বলতে চাই, অধরাকে ধরা যায় নিজের প্রচেষ্টার মাধ্যমে। প্রিয় মানুষটিকে একটু নিঃশর্ত ভালোবাসায় ভাসিয়ে দিন। কাছে থাকুন, ভালো বন্ধু হয়ে উঠুন। যাতে করে সে সব কিছুতে আপনার উপর চোখ বুজে ভরসা করতে পারে। সব দ্বিধা ভুলে বিচরণ করতে পারে আপনার হয়ে। সবমিলিয়ে, ভালোবাসা শাশ্বত সুবাসে সুবাসিত হতে পারে আপনারই কারণে। শুভকামনা রইল আপনার জন্যে, আপনার ভালোবাসার জন্যে পাই ফিংগারস পরিবারের পক্ষ থেকে।
কমেন্টে লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে আপনার মতামত জানান
আরও লেখা পড়ুন:
জীবনে সফলতা পেতে হলে যা করা উচিত
জেনে নিন ১০টি শখ যা আপনার কর্মজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে
Leave a Reply