জীবনে সফলতা পেতে হলে যা করা উচিত
আমরা স্বভাবতই ধনীদের অনুসরণ করতে পছন্দ করি। একজন সফল লোক দেখলে তাঁকে দেখে অনুসরণ করার ইচ্ছা জাগা স্বাভাবিক।
তাঁদের জীবন-যাপন করার ধরণ কিংবা পোশাক-পরিচ্ছদের ধরণ অনুসরণ করে থাকি আমরা অনেকে। তবে শুধু অনুসরণ করলে কি তা যথেষ্ট?
চলুন, আমরা এমন ১০টি অলিখিত অভ্যাসের ব্যাপারে জানি যা আমাদের অনুসরণ করা উচিত।
১। বলতে হবে কম, শুনতে হবে বেশি
আমাদের বাঙালিদের চিরায়ত স্বভাব হচ্ছে কথার মাঝে কথা বলা। আমরা কথা বলি বেশি, শুনি কম। সামনের লোক কি বলছে সেটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথাই থাকে না।
মাথাব্যথা শুধু নিজের সমস্যা নিয়ে। কিন্তু আপনি একদিন এই নিয়মটি অনুসরণ করে দেখেন, সেটা যে ক্ষেত্রেই হোক। হতে পারে ব্যবসা কিংবা সম্পর্কে। একদিন মন দিয়ে সবার কথা শুনেন, তাঁদের দিক দিয়ে চিন্তা করতে শিখুন। জীবনকে সহজ মনে হবে।
২। অফিসের ভিতরে নিজের কাজ সীমাবদ্ধ রাখবেন না
টানা কিছুদিন অফিসের ভেতরে বসে কাজ করলে দেখা যায় এক ধরনের অনীহা এসে পড়ে কাজের প্রতি। কাজ করার জন্য কোনো উদ্যম থাকে না।
তবে এই সমস্যা মেটানোর উপায় আছে। অফিসের চৌহদ্দির মধ্যে কাজকে সীমাবদ্ধ না রেখে কাজগুলোকে বাইরে নিয়ে যান। ক্লায়েন্টকে অফিসে না ডেকে অন্য কোথাও দেখা করুন।
কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ বাড়ান। এতে যেমন আপনার গন্ডি বড় হবে, তেমনি এর সুবিধাও পাবেন ধীরে ধীরে। আপনি শুধু একটি ডেস্কে বসে আপনার গন্ডিকে বড় করতে পারবেন না।
৩। বন্ধু বানান বুঝে শুনে
বন্ধু এমন একটা মানুষ যে আপনার জন্য মাঝে মধ্যে জীবনে এমন সব ভূমিকা পালন করবে যার জন্য আপনি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ বোধ করবেন।
কিন্তু বন্ধু বানাতে হতে হবে সাবধান। এমন কাউকে বন্ধু বানাবেন না যে নিজের স্বার্থের জন্য যেকোনো সময় আপনারই ক্ষতি করে বসতে পারে।
যদি সফল হতে চান, তাহলে আপনার মতই এমন একজনকে নিজের বন্ধু বানান যে জীবনে সফল হতে চায়। তাই বন্ধু তৈরিতে সাবধান।
ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাড়াতে চান? জেনে নিন যে ১০টি সিদ্ধান্ত আপনার নেওয়া প্রয়োজন
৪। জানুন কখন নিজেকে থামাবেন
মাঝে মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য আমরা মরিয়া হয়ে যাই। রাত-দিন কাজ করা শুরু করি। হয়তো এর উপকারিতা আপনি পান কিন্তু তা সাময়িক ভাবে।
এর অপকারিতাই বেশি। নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝে উঠা গুরুত্বপূর্ণ। রাত জেগে কাজ করলে কিংবা অফিসের কাজকে ঘরে নিয়ে আসলে শুধু আপনার রক্তচাপই বাড়বে, আখেরে আপনার লাভ কিছু হবে না। নিজের ব্যক্তিগত জীবন এবং কর্মজীবনকে আলাদা রাখতে শিখুন।
৫। শিখতে থাকুন
শেখার কোনো শেষ নাই। বিশেষ করে, এখনকার এই ফাস্ট ট্র্যাক দুনিয়াতে তো আপডেটেড না থাকলে পিছিয়ে পড়বেন। প্রতিদিন কিছু না কিছু নতুন আসছে আমাদের এই দুনিয়াতে।
নতুন প্রযুক্তি আলিঙ্গন করুন কিন্তু পুরোনো সংস্কারকে ফেলে দিবেন না। নিজেকে যদি সফল করতে চান তাহলে বেশি বেশি বই পড়ুন। জানুন কি কি হচ্ছে নতুন। বইয়ের চেয়ে ভালো বন্ধু আপনার জন্য কেউ হতে পারে না।
৬। অতি অপচয় করবেন না
সফল ব্যক্তিদের একটা ব্যাপার লক্ষ্য করবেন। যেমন মার্ক জুকারবারগ কিংবা স্টিভ জবসদের দিকে তাকান। তাঁরা কি সবসময় জাক-জমক ভাবে নিজেদের কি উপস্থাপন করতেন কিংবা করেন?
যতটুকু সাধারণ থাকা সম্ভব ততটুকুই থাকেন তাঁরা। নিত্য নতুন পোশাক, দামি গাড়ি কিংবা দামি প্রযুক্তির পেছনে আমরা যতটুকু খরচ করে থাকি তা যদি কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগ করি তাহলে কোনটা আমাদের জন্য বেশি উপকারি?
নিজেরাই বুঝে নেন। অপচয় করা সফল ব্যক্তিদের গুণ নয়।
ব্যর্থতার সাগর পাড়ি দিয়ে পৃথিবী সেরা ওয়াল্ট ডিজনী | পড়তে ক্লিক করুন
৭। সময়কে মূল্য দিন
নিজের সময়ের মূল্য বুঝতে পারাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যতটুকু সময় আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার পেছনে নষ্ট করি , ততটা সময় অন্য কোথাও বিনিয়োগ করা শিখতে হবে।
যে সময় সোশ্যাল মিডিয়াকে দেই আমরা, সেই সময়টাতে আমরা অন্য কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা করতে পারি। খেলার শখ থাকলে নিয়মিত মাঠে খেলতে পারি, সুঠাম দেহ চাইলে জিমে যাইতে পারি। এতে যে শুধুমাত্র বিনোদন হবে সেটা সত্যি নয়, আপনার যোগাযোগ করার স্কিলও বৃদ্ধি পাবে।
৮। বেশি করে বই পড়ুন
এখনকার ই-বুকের যুগে বই যেন এক পশলা বৃষ্টি। বই পড়ার মত সুখ অন্য কোথাও আপনি পাবেন না। সাহিত্যের বই আপনাকে আরো মানবিক করে তুলবে। সফলদের আত্মজীবনী আপনাকে আরো উদ্যমী করে তুলবে।
বিষয়ভিত্তিক বই আপনাকে সেই সম্পর্কে আপনাকে আরো জ্ঞানী করে তুলবে। সবশেষ কথা, বই পড়ুন, নিজেকে জানুন। একটি ভালো বই আপনার চরিত্র গঠন সবচেয়ে বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
৯। শরীর এবং মনের প্রতি খেয়াল রাখুন
শরীরের প্রতি খেয়াল রাখাটা খুবই জরুরি। আপনার শরীরই যদি দুর্বল হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য যদি খারাপ হয়ে যায় তাহলে কিভাবে চলবে আপনার অগ্রযাত্রা?
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াটা অতীব জরুরি নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য। শুধু শরীর নয়, মনের দিকে খেয়াল রাখাটাও জরুরি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে মনের ভালো থাকাটা। নিজের কোনো শখ পূর্ণ করুন অথবা প্রিয়জনের সাথে সময় কাটান। বিচ্ছেদ হলে সময় নিন দরকার হলে। নিজেকে গুছিয়ে তুলেন তারপর কাজে মনোযোগ দিন।
১০। ডায়েরি লিখার অভ্যাস গড়ে তুলুন
লেখা হচ্ছে এমন একটি ব্যাপার যার মাধ্যমে আপনি নিজের কোনো স্মৃতিকে খাতার মাধ্যমে আটকে ফেলতে পারেন। হয়তো একসময় আপনি থাকবেন না কিন্তু আপনার লেখা অমর হয়ে থাকবে।
নিজের ছোট ছোট কাজের তালিকা করুন, নিজের স্বপ্নকে লিখে রাখুন। অনেক সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমরা ভুলে যাই।
সেগুলো তখনই লিখে রাখলে পরে আপনার মনে রাখতে সুবিধে হবে। রেহাই পাবেন ভুলে যাওয়া রোগ হতে। নিজের সবচেয়ে ভালো স্মৃতিকে ডায়েরির পাতায় আটকে ফেলুন, কখনো মন খারাপ হলে তা বের করে পড়তে থাকুন।
এই ১০টি অভ্যাস যে আপনাকে মেনে চলতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। হয়তো এই ১০টি অভ্যাস মেনে চললে আপনি ধনী হতে পারবেন না। কিন্তু আপনি একটি নিয়ন্ত্রিত জীবন ব্যবস্থার মধ্যে আসবেন।
এই নিয়ন্ত্রিত বা নিয়মতান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থা আপনাকে সফলতার সিড়ি বেয়ে উঠতে সাহায্য করবে তা হলফ করে বলা যায়।
এই ১০টি অভ্যাসকে আয়ত্ত করুন দেখুন কি হয়? হয়তো এই ১০টি অভ্যাস আপনাকে ব্যক্তি হিসাবে পরিবর্তন করে দিবে, এনে দিবে সাফল্য।