রতন টাটা ভারতীয় উদ্যোক্তাদের জন্য একজন রোল মডেল। তিনি টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান। তাঁর স্বীয় কর্মদক্ষতায় টাটা গ্রুপের বিস্তৃতি ঘটেছে বিশ্বের ১০০টি দেশে। কাজের স্বীকৃতিসরূপ ২০০০ সালে পেয়েছেন ‘পদ্মভুষণ’ পুরষ্কার ও ২০০৮ সালে পেয়েছেন ‘পদ্মবিভূষণ’ পুরষ্কার।
২০১২ সালে টাটা গ্রুপ ছাড়ার আগে প্রতিষ্ঠানটিকে একটি মিলিয়ন ডলার কোম্পানিতে পরিণত করে গেছেন। পারিবারিক কলহ, কর্মক্ষেত্রে পদমর্যাদা নিয়ে সমালোচনাসহ বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সাফল্যকে আলিঙ্গন করেছেন এই ৮০ বছর বয়সী ভারতীয়।
২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে হায়দ্রাবাদে ইন্ডিয়ার ক্রমবর্ধমান সার্চ ইঞ্জিন “টি-হাব” উদ্বোধনকালে রতন নতুন উদ্ভাবন ও তরুণ যুবসমাজ নিয়ে অনুপ্রেরণামূলক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। সে বক্তব্যের কিছু অংশ থাকছে আজ অভিযাত্রীর পাঠকদের জন্য।
রাষ্টপতি ভবনে বক্তব্য রাখছেন রতন টাটা।
রতন টাটার পরিচয়
টাটা ১৯৯১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং গ্রুপটিকে অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন।
সারা ভারত জুড়ে যে গুটিকয়েক শিল্পপতি নিজের সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে কাজ করে চলেছেন, তাঁদের মধ্যে টাটার নাম সর্বাগ্রে। তিনি ফোর্বসের ধনী তালিকায় স্থান পান নি বটে, তবে সমগ্র আসমুদ্র হিমাচল ভারতবাসীর মনে স্থান করে নিয়েছেন খুব সহজেই।
তিনি শুধুমাত্র ব্যবসায়ী হিসেবে যে দেশবাসীর মনেই জায়গা করে নিয়েছেন এমনটা নয়। তিনি এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি দেশ ও বিশ্বে টাটা গ্রুপকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন।
তিনি সবসময় নিজেকে মাটির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের তালিকাতেই রেখেছেন। ভারতীয় শিল্পপতি তথা টাটাগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এমিরেটাস রতনের বিকল্প কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন।
সিঙ্গুর আন্দোলনও কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি তাঁর ভাবমূর্তিতে। ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর নাভাল এবং সুনি টাটার ঘরে জন্ম হয় এই মহান ব্যক্তির।
তরুণদের উদ্দেশ্যে রতনের বক্তব্য | একজন সফল উদ্যোক্তা টাটা’র অনুপ্রেরণারমূলক কথামালা
“মানুষজনকে প্রায়ই বলতে শুনি, এটা হবে না। আপনার দায়িত্ব ওসব ধারণাকে দূর করে কাজটি শেষ করা। আমাদের দেশে কি হচ্ছে, কি হচ্ছে না এটা নিয়ে আমরা অনেকভাবে মনঃক্ষুণ্ণ হই, সমালোচনা করি। “আমরা এটা পারবো না” কিংবা “এটা হবে না” এই নিয়মটা আমাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।
“কোনকিছু হবে না এবং তাই কাজটি করা উচিৎ নয়” এমন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বেড়ে উঠবেন না। আপনি আর কয়েক বছর পরে, দেশের নেতা হবেন এবং দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবেন।
আপনার চারপাশে তাকান এবং প্রশ্ন করুন ভাবনার উৎপত্তি কোথায়? কোথায় একজন স্ব-উদ্যোগে গ্যারেজ দিচ্ছে? মাইক্রোসফট, অ্যাপল, অ্যামাজন, গুগল, ফেসবুকের ভাবনা কোথা থেকে আসছে?
জীবন সম্পর্কে সন্ন্যাসী গৌর গোপাল দাসের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য, পড়তে ক্লিক করুন
এগুলো আসছে সেখান থেকে যেখানে মানুষ অনুভব করছে “কিছু একটা করতে হবে”, “কিছু একটা করা উচিৎ”। টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা করতে বিলিয়ন ডলার কিংবা ১০০ একর জমি লাগে না। নিজের মনের থেকে কিছু উদ্ভূত হলে, নতুন কিছু চেষ্টা করলে কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়।
এটিই আগামীর বিশ্বে অনেক বড় বড় পার্থক্য তৈরী করে দিবে।
যদি আপনি একজন নোবেল বিজয়ীর পাশে বসে থাকেন তাহলে সে কখনো বলবে না যে সে নোবেল প্রাইজ জিতেছে; বলবে আরেকজন। সুতরাং নম্রতা হবে নিজের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা।
“কিছু একটা করতে হবে” এই ধারণাটি অনুভব করে কেউ যদি কাজ করতে পারে তাহলে তারা পরিবর্তন আনতে পারবে। যদি আপনি মনে করেন পরিবর্তন আনতে পারবেন না, তাহলে ‘আমি বলছি ইচ্ছা থাকলেই আপনি পরির্তন আনতে পারবেন’। শুধু আপনার চিন্তা চেতনাকে পরিবর্তন করে প্রসারিত করতে হবে। প্রয়োজন হবে কঠোর পরিশ্রমের।
অন্তত একটি পরিবর্তনের আত্মতৃপ্তি নিয়ে রাতে বাসায় ফিরতে না পারলে নিজেকে কখনো সফল মানুষ হিসেবে ভাববেন না। পরিবর্তন এমন একটি বিষয়, যা আমরা যে কেউ করতে পারি।
আমাদের জীবনে ব্যর্থতা থাকবে, হতাশা থাকবে। কিন্তু এটাই আমাদের চারপাশে পৃথিবীর সাথে প্রতিশ্রুতি। তাই ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে, তবেই সফলতা। এটাই বাস্তব জীবনের বড় উদাহরণ।
এই অবস্থান থেকে আগামীকালের নতুন ইন্ডিয়ার জন্য আমার বক্তব্য হবে – “আমি সর্বদাই উদ্যোমী ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়ার ও বিজ্ঞানীদের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন অনুভব করি”।
এমনকি আমাদের সবার এই ভূমিকা পালন করা উচিত এবং এটাকে সমর্থন দেয়া উচিত। কারণ ইন্ডিয়ান বাঘকে ছড়িয়ে দিতে আমাদের সবার সক্রিয় হতে হবে যেহেতু আমরা এখনো এটা করিনি।
তাই চলুন আমরা এই সত্যটুকু আমাদের মাথা থেকে আত্মা পর্যন্ত ধারণ করি এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন ইন্ডিয়া গড়ি”।
Leave a Reply