এলার্জি দূর করার উপায় | জেনে নিন ঘরোয়া সকল সমাধান

Author:

Published:

Updated:

এলার্জি দূর করার উপায়

সারা বিশ্বে এলার্জি আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। ন্যাশনাল হেলথ ইন্টারভিউ সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, এলার্জির মাধ্যমে দেহে সহযোগী নানা ধরনের রোগের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। আমাদের মানব শরীরে এলার্জি খুবই বিব্রতকর একটি সমস্যা। পৃথিবীতে খুব কম মানুষই রয়েছেন যারা এলার্জি সমস্যায় ভুগে নি। এলার্জি শুরু হলে আমাদের শরীরে চুলকানি শুরু হয় এবং চুলকানি ত্বক পর্যন্ত চলে যায় এবং শরীরে লালচে দাগ হয়ে যায় কিন্তু চুলকানি বন্ধ হয় না। এলার্জির জন্য দায়ী প্রধান পদার্থ হল অ্যালার্জেন। এটি একটি মাইক্রোওর্গারিজম।

এলার্জি হলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে, যাতে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি না হয়। তবে, ঘরোয়াভাবে এলার্জি দূর করার উপায় মেনে চললে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।

অ্যালার্জেন শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বা খাবারের মাধ্যমে বা কিছুর সাথে ত্বকের স্পর্শের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যা আমাদের শরীরে চুলকানি এবং এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা মনে করেন এলার্জি থাকলে শুধু বেগুন, ইলিশ, মাছ, পালং শাক, চিংড়ি ইত্যাদি খাবার খাওয়া যাবে না তাহলেই এলার্জির সমস্যা দূর হবে। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।

মুখে এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়

অনেকে মনে করেন ব্রন ও  এলার্জির সমস্যা এক। কিন্তু ব্রণ এবং এলার্জি সম্পূর্ণ আলাদা । মূলত, এলার্জি যুক্ত স্থানটি লালচে হয়  এবং ফুলে যায়। যা আমাদের মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে। সাধারণত গরমকালে বেশি মুখে এলার্জির সমস্যাটি দেখা দেয়। আসুন এবার জেনে নেই, মুখে ত্বকের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো। আপনার হাতের নাগালে আছে এমন কিছু উপাদান ব্যবহার করেই আপনি মুখের এলার্জি সারাতে পারেন:

নিমপাতাঃ নিমপাতার মধ্যে অনেক ঔষুধি গুন থাকে। তাই নিম পাতা বেটে তার সাথে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মুখে লাগান। সপ্তাহে অন্তত ১ বার করে হলেও ব্যবহার করুন। আপনার মুখের এলার্জি দূর হয়ে যাবে। মুখে এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় হিসেবে এই উপাদানটি ব্যবহারে আপনি উপকৃত হবেন,

হলুদঃ হলুদে বিপুল পরিমান অ্যান্টিবায়োটিক প্রপারটিস থাকে। যা সংক্রমন জাতীয় কোন রোগ হতে খুব সহজেই মুক্তি দেয়। এক্ষেত্রে পানিতে সামান্য হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে তুলোর বল দিয়ে এলার্জির জায়গায় লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে দিন, তারপর হালকা ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করে ফেসওয়াশ দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এলার্জি দূর হয়ে যাবে। সপ্তাহে অন্তত ৩ বার ব্যবহার করুন ।

পেঁপেঃ অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যের কারণে এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে পেঁপের চেয়ে ভালো আর কিছু নেই। মুখের আক্রান্ত স্থানে এক টুকরো পেঁপে নিয়ে ১৫ মিনিট ঘষতে থাকুন এবং কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত একবার পেঁপে ব্যবহার করুন; দেখবেন মুখের এলার্জি চলে যাবে।

রসুনঃ রসুনে অ্যজিউমা নামে এক ধরনের প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে। যা যে কোন ফাঙ্গাল দূর করতে দারুন কার্যকারী। যে স্থানে এলার্জি হয়েছে রসুন ছোট ছোট করে কেটে একটি কাপড়ের টুকরো দিয়ে পেচিয়ে সারা রাত রেখে দিন। দেখবেন চুলকানি কমে গেছে চিরতরে। মুখে এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় হিসেবে এটি বেশ কার্যকরী।

লবণঃ সামান্য ভিনেগারের সাথে কিছু লবণ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং এলার্জি আক্রান্ত স্থানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১/২ বার এভাবে ব্যবহার করুন, এলার্জি দূর হয়ে যাবে।

ঠান্ডা পানিতে মুখ ধোয়া: এছাড়াও এলার্জি সারাতে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধোয়া। মুখের যেকোনো জ্বালাপোড়া ভাব এবং এলার্জির কারণে লালচে ভাব দূর করতে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধোয়া প্রয়োজন। এতে করে রক্তনালী সংকুচিত হওয়ার মাধ্যমে হিস্টামিন বেরোতে বাধা প্রাপ্ত করে। পানি এলার্জির কারণে মুখের জ্বালাপোড়া হ্রাস করতে সহায়তা করে।

এছাড়া গোলাপ জলের সঙ্গে বেসন মিশিয়ে নিয়মিত লাগালে সহজে মুখে এলার্জি হবে না। পাশাপাশি লবঙ্গ এবং মেথি একসাথে নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন এবং চুলকানি কমাতে নিয়মিত আপনার মুখে লাগান। 

মুখে এলার্জির চিকিৎসা হিসেবে ঘরোয়া এই সমাধান গুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।

চর্ম এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায়

সাধারণত আমাদের রক্ত ​​দূষিত হলেই ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে। এছাড়া শরীর অপরিষ্কার রাখলে চর্ম  অ্যালার্জি হতে পারে এবং যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের সংস্পর্শে এলে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই শরীরে এলার্জি থাকলে হাত দিয়ে না চুলকিয়ে জায়গাটির চিকিৎসা করা প্রয়োজন, কারণ যদি হাত দিয়ে এলার্জির স্থানে আঁচড় লাগালে, সেই জায়গার ব্যাকটেরিয়া শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সেখানেও এলার্জি হতে পারে, যা পরবর্তীতে চর্ম জাতীয় রোগে রূপান্তরিত হয়। এলার্জির মধ্যে সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক হচ্ছে চর্ম এলার্জি। ঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ না দিলে চর্ম এলার্জির শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই আসুন জেনে নেই চর্ম এলার্জি দূর করার উপায়:

চিরতাঃ চিরতার পানি আমাদের মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। তাই প্রতিদিন সকালে চিরতার ডাল পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে সেই পানি পান করুন। চর্ম এলার্জি হবে না।

মেহেদী পাতাঃ মেহেদি পাতা সংগ্রহ করে প্রথমে রোদে শুকিয়ে নিন, তারপর শুকনো মেহেদি পাতা একটি বান্ডিলে সংরক্ষণ করুন এবং কিছু শুকনো মেহেদি পাতা এক গ্লাস পানিতে রাতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে খালি পেটে পানি পান করুন। চর্ম এলার্জি জাতীয় সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

নিম পাতাঃ নিম পাতা ঔষধি গুণে স্বয়ংসম্পূর্ণ। নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ একসাথে বেটে একটি মিশ্রন তৈরী করে ছোট ছোট বরি তৈরী করুন। প্রতিদিন ৩ বেলা ৩ টি বরি খাবেন, খাবারের পর ঠান্ডা পানির সাহায্যে। চর্ম এলার্জি মুক্ত হবে।

এছাড়া যাদের সারা শরীরে চুলকানির মতো সমস্যা আছে তারা বেশি করে নিম পাতা সংগ্রহ করে এবং গরম পানিতে সিদ্ধ করে ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার গোসল করুন। শরীরের চুলকানি দূর হয়ে যাবে।

ত্বকের এলার্জি দূর করার উপায়

মূলত, যদি ত্বকে এলার্জি থাকে তবে দেখা যায় যে, ত্বকে বিভিন্ন গোটা হয়। যা অনেকের ক্ষেত্রে দেখতে লালচে দেখায় এবং চুলকায় বা জালাপোড়া করে। কারো কারো এলার্জির ফলে শরীর ফুলে যায়। ত্বকের এলার্জি প্রধানত সূর্যের রশ্মি বা খাবার বা ধুলোর কারণে হতে পারে। তাই আমাদের এলার্জির কারন চিহ্নিত করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ত্বকের এলার্জির যথাযথ চিকিৎসা না নিলে তা এক পর্যায়ে ত্বকের ক্যান্সার রূপ ধারন করতে পারে। তাই ত্বক পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিন। তবে ত্বকের এলার্জি দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়ও রয়েছে, যা অবলম্বন করে আপনি আপনার ত্বকের এলার্জির সংক্রমণ কমাতে পারেন। আপনাদের সুবিধার্থে  ত্বকের এলার্জি দূরীকরণের উপায় তুলে ধরা হলো;

নারকেল তেল: নারকেল তেল এলার্জি দূর করতে অনেক বেশি কার্যকরী। তবে শুধু নারকেল তেল নয় নারকেল তেলের সাথে কর্পূর মিশ্রিত করে এলার্জি স্থানে লাগিয়ে নিন। আপনি আরাম অনুভব করবেন এবং এলার্জিও দ্রুত সেরে যাবে।

ফিটকিরি: আমরা সকলেই জানি ফিটকিরি দূষিত পানি পরিষ্কার করে থাকে। এলার্জির স্থানে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। তাই ফিটকিরি মিশ্রিত পানি দিয়ে এলার্জির স্থানটি ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার ত্বকের ব্যাকটেরিয়া দূর হয়ে যাবে।

এলোভেরা: অ্যালোভেরা জ্বালাপোড়া তো সংক্রমণ করেই, তার সাথে সাথে এলোভেরাতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান; যা জীবাণু প্রতিরোধে সক্ষম। সবচেয়ে ভালো হয় ন্যাচারাল এলোভেরা পাতা থেকে রস বের করে সেই রস এলার্জি সংক্রমিত স্থানে লাগালে। ফলে দ্রুতই আপনি এলার্জি থেকে মুক্তি পাবেন।

ত্বকের এলার্জি দূর করার উপায়

এলার্জি বিভিন্ন কারনে হতে পারে । তাই আমাদের এলার্জি যাতে না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে । যে খাবার খেলে এলার্জি হয় তা পরিহার করতে হবে এবং বাসার চাদর, কাঁথা, বালিশ রোদে শুকাতে দিতে হবে সপ্তাহে অন্তত ১ বার এবং কাঁথা গুলো গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। ধুলাবালিতে যাঁদের এলার্জির সমস্যা আছে তাদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি যাদের শরীর অতিরিক্ত ঘামে তাদের জামা কাপড় পরিষ্কার রাখতে হবে এবং নিয়মিত গোসল করতে হবে।

বাসা সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। যাতে বাসায় ছত্রাক না হয় এবং এলার্জি জিনিত সমস্যা দেখা না দেয়। এলার্জি হলে অ্যান্টি হোস্টামিনন জাতীয় ঔষুধ গ্রহন করতে হবে। তবে, ঘরোয়াভাবে এলার্জি দূর করার উপায় অনুসরণ করেও এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কারন এটি আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি শরীরের যত্ন নিতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করতে হবে।

সর্বোপরি, এলার্জিজনিত বিষয়গুলো থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন এবং সুস্থ থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Latest posts

  • সর্দি থেকে মুক্তির উপায়, নাকের এলার্জি দূর করার উপায় | দ্রুত উপশম পেতে ঘরোয়া চিকিৎসা

    সর্দি থেকে মুক্তির উপায়, নাকের এলার্জি দূর করার উপায় | দ্রুত উপশম পেতে ঘরোয়া চিকিৎসা

    নাকের এলার্জি হচ্ছে নাকের ঝিল্লি প্রদাহের কারণে নাকের একটি সমস্যা। এটি সারা বিশ্বব্যাপী একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ নাকের এই রোগে আক্রান্ত। নাকের এলার্জি কোন মারাত্মক ক্ষতিকর রোগ না হলেও এ রোগের কারণে দৈনন্দিন জীবন প্রবাহ ব্যাহত হয়। এলার্জিজনিত সর্দি এবং হাঁচি জীবনকে অতিষ্ট করে তোলে। এই রোগে হঠাৎ…

    Read more

  • কফ, কাশি দূর করার উপায় | সঠিক চিকিৎসাই হতে পারে কাশি দূরীকরণের মাধ্যম

    কফ, কাশি দূর করার উপায় | সঠিক চিকিৎসাই হতে পারে কাশি দূরীকরণের মাধ্যম

    গলায় বুকে কফ জমে থাকা বেশ বিরক্তিকর একটি সমস্যা। ঋতু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়। আর আবহাওয়ার এই দ্রুত পরিবর্তন আমাদের শরীর খাপ খাওয়াতে পারে না, যার কারণে সৃষ্টি হয় ঠান্ডা জ্বর ও সর্দি-কাশির। ঠান্ডা সর্দি কাশি এগুলো আমাদের কাছে খুব পরিচিত রোগ হলেও এই ঠান্ডা সর্দি কাশি থেকে আমাদের দেহে অনেক বড় বড় অসুখ…

    Read more

  • ওজন কমানোর উপায় ডায়েট চার্ট | সুস্থ স্বাভাবিক জীবন

    ওজন কমানোর উপায় ডায়েট চার্ট | সুস্থ স্বাভাবিক জীবন

    সুস্থ স্বাভাবিক এবং রোগমুক্ত জীবন আমরা কে না চাই। আর এই সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করার একমাত্র উপায় হচ্ছে শারীরিক ওজন ঠিক রাখা। কেননা ওজন বেড়ে গেলে যে কোন রোগের ঝুঁকি ও বেড়ে যায়। এজন্য বাড়তি ওজন অনেকের মানসিক অসুস্থির প্রধান কারণ। তাই রোগ প্রকোপ কমাতে এবং মানসিক শান্তির উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের উচিত শারীরিক ওজন…

    Read more