আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, সফল মানুষেরা কেন এত সফল? সফল ও ব্যর্থ মানুষের মধ্যে পার্থক্য কি?
অভ্যাস আমাদের জীবনযাপনের ধরনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রভাব ফেলে। ডিউক ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আমরা প্রতিদিন যা যা করি তার ৪৫% আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাসের কারণে। এজন্য, সফল ব্যক্তিরা নিত্যদিন কিছু অভ্যাস পালন করেন। সফল মানুষদের অভ্যাস গুলো মেনে নিয়ে একজন ব্যর্থ ব্যক্তিও সফলতা অর্জন করতে পারেন।
আমরা সবাই জানি, বাজে স্বভাব আমাদের মানসিক ও শারীরিক দুই ক্ষেত্রেই চরম ক্ষতিকারক। সেগুলো আপনাকে সাফল্য অর্জনের পথে বাধা দিতে পারে। অন্যদিকে, ভালো স্বভাবগুলো আপনাকে উপরে উঠতে সাহায্য করে এবং আপনার বেস্ট ভার্সন হয়ে উঠতে সহযোগিতা করবে।
আবার সফলতার ধারণা একেকটি মানুষের কাছে একেক রকম। কারো কাছে সাফল্য মানে বেশি বেশি টাকা উপার্জন করা। আবার কাছে সাফল্য মানে সুখী একটা সম্পর্ক কিংবা কোন কিছু লাভ করার মত ক্ষুদ্র বিষয়গুলো।
তাহলে সফল মানুষদের কি কি কমন অভ্যাস বাকীদের থেকে তাদের আলাদা করেছে?
সফল হবার পেছনে সফল মানুষদের অভ্যাস
এক, রিডিং বুকস
বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কোম্পানির মালিক ওয়ারেন বাফেট একটি ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, তার ভেতর গড়ে উঠা অভ্যাসগুলোর মধ্যে “বই পড়া” তার সবচেয়ে ভালো অভ্যাস।
টম কোরলে নামের একজন অর্থ-পরিকল্পনাকারী ২৩৩ জন মানুষের উপর একটি জরিপ চালিয়েছিলেন। এই ২৩৩ জনের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন নিজ প্রচেষ্টায় হওয়া বিত্তশালী। এই জরিপ একটি চমৎকার ছক আমাদের সামনে উঠিয়ে আনে।
এই জরিপের অংশগ্রহণকারী মধ্যে ৮৮% শতাংশ মানুষ দাবি করে, তারা প্রতিদিন কমপক্ষে আধা ঘন্টা পড়েন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই ইতিহাস, বায়োগ্রাফির মত নন-ফিকশন বইগুলোকেই তাদের পড়ার জন্যে বেছে নেন।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলেজিন্স ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ফুটসি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দাবি করেন, তিনি প্রতিদিন ১ ঘন্টা নিয়ম করে তার ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বই পড়েন। পাশাপাশি যখন তিনি সময় পান তখন তিনি বিভিন্ন আর্টিকেলের মাধ্যমে তার মতামত প্রকাশ করেন। এটা তাকে একই জিনিসের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবগত হতে সাহায্য করে এবং তিনি তার অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে তা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারেন।
দুই, আর্লি রাইজিং
করলের জরিপের অংশ হিসেবে যাদের ইন্টারভিউ নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৫০% শতাংশ মানুষ তাদের কর্মব্যস্ত দিন শুরুর তিন ঘন্টা আগে ঘুম থেকে জেগে উঠেন। এটা তাদেরকে অন্যান্য কাজ যেমন সাইড প্রজেক্ট শেষ করা, ব্যায়াম করা, পরিকল্পনার মত কাজ শেষ করতে সাহায্য করে।
আর্লি রাইজিংয়ের একজন ভালো উদাহরণ ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী শের্ল স্যান্ডবার্গ। তিনি এত বড় প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা হয়েও সকালে ৭টার সময় অফিসে হাজির হন। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন “ভোগ” এর চিফ এডিটর আন্না উইনটোর প্রতিদিন ভোর ৫টা ৪৫ এ উঠে এক ঘন্টা ধরে টেনিস খেলেন।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, শুধু পরিমিত ঘুম নয়, ঘুমের সময়টাও ঠিকঠাকভাবে রুটিন করে নিতে হবে। কারণ একজন আর্লি রাইজারই পারে সাফল্যের স্বাদ নিতে নিজেকে এগিয়ে রাখতে।
তিন, ওয়ার্ক আউট
আমরা সবাই লাইফস্টাইল বিশেষ করে স্বাস্থ্য সমন্ধীয় বিষয়ে জেনে জেনেই বড় হয়েছি। মিশিগানের বিখ্যাত কৌটা উৎপাদনকারী কোম্পানি “প পডস”- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেমস পারলের মতে, সফল উদ্যোক্তার ভালো মানসিক ও শারীরিক অবস্থা থাকা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন ওয়ার্ক আউট অর্থ্যাৎ ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনি নিজের মনকে চাঙ্গা করতে পারবেন এবং শারীরিকভাবে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার মাধ্যমে আপনি ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে পারবেন।
মোট কথায় বলা যায়, একজন সবল মানুষেরই সবল মনোবল থাকে।
চার, যোগাযোগ দক্ষতা নিয়ে কাজ করা
যোগাযোগ মানুষের আত্মিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং কর্মজীবনে একটি ভীত গড়ে দেয়। তথ্য-উপাত্ত, ছক যতটা গুরুত্বপুর্ণ ঠিক তেমনি গুরুত্বপূর্ণ – সেই তথ্য উপাত্তকে একটি ভালো পন্থার মধ্যে দিয়ে আরেকজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া। নচেৎ আপনি আপনার লক্ষ্যকে ধরতে পারবেন না।
সফল উদ্যোক্তা ও নেতা রিচার্ড ব্রানসন বলেন, “Communication is the most important skill any leader can possess.”
অর্থ্যাৎ যোগাযোগ এমন একটি দক্ষতা যা প্রতিটি নেতারই থাকা উচিৎ।
তাই অন্যান্য দক্ষতার মত, আলাপচারিতা মধ্যে দিয়ে প্রতিদিন কমিউনেশন স্কিল বা যোগাযোগ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এভাবে তা সামগ্রিকভাবে আপনার প্রতিটি কাজে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
বিখ্যাত লেখক ব্রায়ান ট্র্যাসি বলেন, “আপনি কোন যদি কোন কিছু নিয়ে কাজ করতে চান তাহলে তা আপনার জীবনের প্রতিটি অংশের মান বাড়িয়ে দিবে”।
অনুপ্রেরণামূলক আরও লেখা পড়ুন:
পড়া কিংবা যেকোন তথ্য সহজে মনে রাখার কৌশল
যুব সমাজের জন্য রতন টাটার অসাধারণ মোটিভেশনাল স্পিচ
যে পাগলামিটা আপনাকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দেবে
পাঁচ এবং সর্বশেষ, প্রযুক্তির ব্যবহার
আপনি যখন কোন প্রতিষ্ঠানের সিইও, তখন আপনার প্রতিদিনের কাজ সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখতে হবে। বিশেষ করে তাদের জন্য এটা বাঞ্চনীয় যারা একসাথে অনেকগুলো ব্যবসা পরিচালনা করেন। তাদের জন্যে টু ডু একটি লিস্ট থাকা খুবই প্রয়োজন।
ভক্স মোবাইলের সিইও ক্রিস স্নাইডার তার কোম্পানির বাৎসরিক আয় ৩০% বাড়িয়েছেন। একই সাথে তিনি “Gartner’s MMS Magic Quadrant” এ তার কোম্পানিকে অন্তর্ভূক্ত করেছেন। একই সাথে তিনি Global Enterprise Mobility Alliance (GEMA) এর প্রতিষ্ঠাতা।
স্নাইডার বলেন, তার সফলতার পেছনে দায়ী ছিলো তার গোছানো কাজ এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজের কৌশলগুলোকে সাজানো। তার উপর প্রযুক্তির এমন প্রভাব ছিলো যে, তিনি তাদের কাজ এবং মিটিংয়ের শিডিউল করতে PRM Tool ব্যবহার করতেন। এটা তার পারিবারিক সম্পর্ক ও কাজের সম্পর্ক দুটোকে ব্যলেন্স করতে অনেক ভূমিকা রাখে।
তাহলে এই পাঁচটি অভ্যাসের কোনটি আপনার মধ্যে রয়েছে বা কোন অভ্যাসটি স্বভাবে পরিণত করতে আজ থেকেই শুরু করছেন? মানুষ কীভাবে ব্যর্থতা থেকে উঠে আসতে পারে বলে আপনার ধারণা? তা কমেন্টে আমাদের জানিয়ে দিন। শুভকামনা আপনার জন্যে।
কেমন লেগেছে সফল মানুষদের প্রতিদিনের অভ্যাস বিষয়ে লেখাটি?
কমেন্টে জানান।
আর সেই সাথে আপনার মাথায় সফল মানুষের কমন কোন অভ্যাস জানা থাকলে বা নতুন কোন পয়েন্ট থাকলে কমেন্টে আমাদের সাথে শেয়ার করুন।
Leave a Reply