গণচীনের বর্তমান রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি তিনি। চীনের রাষ্ট্রীয় কেন্দ্রীয় সামরিক পরিষদের চেয়ারম্যান তিনি। এছাড়া কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়নারও মহাসচিব তিনি।
শি জিনপিংয়ের জন্ম হয় ১৫ জুন ১৯৫৩ সালে বেইজিংয়ে। তার বাবা শি জোংশুন একজন রাজনীতিক ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন সিপিসির উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বে ছিলেন।
আধুনিক চীন নির্মাণে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর অবদান অনেক। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান এবং চীনের বদ্ধ অর্থনীতির ব্যবস্থাকে খোলাবাজার অর্থনীতিতে পরিণত করার কারণে তিনি বিখ্যাত। বলা হচ্ছে তিনি মাও সেতুং এর চেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন বর্তমানে।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে মাও সেতুংয়ের ডাউন টু দ্য কান্ট্রিসাইড (গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা) প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা তখন জেলে। এরপর ১৯৬৯ সালে ইয়ানানে ইয়াঞ্চুয়ান শহরে কমিউনিস্ট পার্টির উৎপাদন বিষয়ক উপদলের প্রধানের দায়িত্ব পান তিনি।
১৯৭৫ সাল, শি জিনপিংয়ের বয়স ২২ বছর। উৎপাদন বিষয়ক উপদল প্রোগ্রাম থেকে বের হয়ে আসেন তিনি। পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে সেই প্রোগ্রামে অংশগ্রহনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন-
“এটি একটি আবেগময় অভিজ্ঞতা ছিল। অংশ নেয়ার সময়ে আমাদের অন্যরকম এক মনোভাব ছিল। পরে যখন সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে আর বাস্তবায়ন করা গেল না, তখন আমরা বুঝলাম আমরা আসলে একটা ঘোরের মাঝে ছিলাম।”
বর্তমান পৃথিবীর আলোচিত, শক্তিধর এই রাজনৈতিক ব্যক্তির জীবনে তার বাবার প্রভাব খুব বেশি। চলুন তাহলে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নিজের মুখেই শুনে আসা যাক তার সফলতার গোপন রহস্য।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
“ছোটবেলায় আমি খুব স্বার্থপর ছিলাম। সবকিছুতেই নিজের সুবিধে আর লাভটা বুঝে নেবার চেষ্টা করতাম। আমার এই দোষের জন্য আস্তে আস্তে আমার বন্ধুর সংখ্যা কমতে শুরু করল।
শেষে অবস্থা এমন হলো যে আমার আর কোনো বন্ধুই অবশিষ্ট রইল না। কিন্তু, সেই অপরিণত বয়সে আমি এর জন্য নিজেকে দায়ী না করে সিদ্ধান্ত নিলাম আমার বন্ধুরা আসলে হিংসুটে। ওরা আমার ভাল দেখতে পারে না। আমার বাবা শি জোংশুন সবই লক্ষ করতেন, মুখে কিছু না বললেও।
একদিন রাতে বাড়ি ফিরে দেখি, বাবা আমার জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছেন। টেবিলে রাখা আছে রান্না করা নুডুলসের দুটি ডিশ। একটা ডিশে সেদ্ধ নুডুলসের ওপর রাখা আছে একটি খোসা ছাড়ানো সেদ্ধ ডিম। অন্য ডিশটিতে শুধু লুডুলস।
যে কোনো একটি ডিশ বেছে নিতে বললেন বাবা। স্বাভাবিক ভাবেই আমি ডিম সমেত ডিশটাই উঠিয়ে নিলাম। সেই সব দিনে চীনে ডিম ছিল এক দুস্প্রাপ্য জিনিস।
উৎসবের দিন ছাড়া কারো বাড়িতে ডিম খাওয়ার কথা তখন ভাবা যেত না। খাওয়া শুরু করবার পর দেখা গেল বাবার ডিশে নুডুলসের তলায় আসলে লুকিয়ে রাখা আছে দুটো ডিম।
আমার এত দুঃখ লাগছিল তখন। কেন যে তাড়াহুড়ো করে বাছতে গেলাম। বাবা আমাকে দেখছিলেন। খাবার পর মৃদু হেসে বললেন, “মনে রেখো, তোমার চোখ যা দেখে, সেটা সব সময় সত্যি নাও হতে পারে। শুধু চোখে দেখে যদি মানুষ বা কোনো পরিস্থিতিকে বিচার করে সিদ্ধান্ত নাও, ঠকে যাবার সম্ভবনা থাকবে।”
পর দিন বাবা আবার খাবার টেবিলে নুডুলসে ভর্তি দুটো ডিশ রেখে আমাকে খেতে ডাকলেন। আগের দিনের মত এবারেও একটাতে ডিম আছে, আর একটাতে নেই। আমাকে যে কোনো একটি ডিশ বেছে নিতে বলা হলো।
আমি আগের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি, চোখ যা দেখে তা সত্যি নাও হতে পারে। আমি ডিম ছাড়া ডিশটিই বেছে নিলাম। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখলাম, ভেতরে কোনো ডিমই নেই। বাবা আমার দিকে তাকিয়ে আবার হাসলেন।
সফল মানুষদের সফলতার কারণ জানতে ক্লিক করুন।
“অভিজ্ঞতা সব সময় সঠিক পথ দেখায় না। জীবন বড় বিচিত্র। জীবনে চলার পথে বহুবার আমাদের মরীচিকার সামনে পড়তে হয়। এর থেকে উত্তরণ অসম্ভব। জীবন যেটা তোমাকে দিয়েছে, সেটা মেনে নিলে কষ্ট কম পাবে। তোমার অভিজ্ঞতা এবং বুদ্ধিমত্তা তুমি অবশ্যই কাজে লাগাবে, কিন্তু শেষ কথা জীবনই বলবে।”
তৃতীয় দিনে আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। আগের দিনের মতই এবারেও একটাতে ডিম আছে, আর একটাতে নেই। তবে একটা ব্যাপার এবার একটু অন্য রকম হলো। এবার আমি বাবাকে বললাম, আগে তুমি নাও। তারপর আমি। কারণ তুমি বাড়ির সবার বড়, এই সংসার তোমার রোজগারে চলে। তোমার অধিকার সবার আগে।
শুনে বাবার মুখে উজ্জ্বল হাসি ফুটে উঠল, মুখে কিছু বললেন না যদিও। খাওয়া শুরু করবার পর আমি দেখলাম নুডুলসের নীচে আমার ডিশে দুটো ডিম। খাবার পর বাবা আমাকে কাছে ডাকলেন।
সস্নেহে আমার হাত ধরে বললেন, “মনে রেখো, কৃতজ্ঞতা এবং ঋণ স্বীকার করা মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম। তুমি জীবনে যদি অন্যের জন্য ভাব, অন্যকে দাও, জীবনও তোমার কথা ভাববে, তোমাকে আরো বহুগুণে ফিরিয়ে দেবে।
জিনপিং বাবার এই তিনটে উপদেশ আজীবন মনে রেখেছেন, এবং মেনে চলেছেন। “কি আশ্চর্য , সত্যি জীবন তাঁকে বহু গুণ ফিরিয়ে দিয়েছে। তিনি অনুভব করেছেন, তিনি যা পেয়েছেন তা জীবনেরই দান; জীবনের দান ছাড়া আর কিছু নয়?”
Leave a Reply