ঘাড়ের ব্যথা একটি সাধারণ ঘটনা, যা সমস্ত বয়স এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষই ভুগে থাকে। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যার মধ্যে পোড় পোশ্চাড়, ইনজুরি এবং আর্থ্রাইটিসের মতো কারণ অন্যতম। ঘাড়ের ব্যথার কারণে একজন ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজ সম্পাদন করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং তাদের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করে। এই ধরনের সমস্যার জন্য ফিজিওথেরাপি একটি কার্যকরী চিকিৎসা। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় মোবিলিটি ইম্প্রুভ করতে ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
এখানে, আমরা ঘাড়ের ব্যথার চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপির সুবিধাগুলি নিয়ে আলোচনা করব এবং এই অবস্থা পরিচালনা করতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ফিজিওথেরাপি কৌশলগুলির একটি ওভারভিউ প্রদান করব।
ঘাড় ব্যথার কারণ
- বয়স হলে ঘাড়ের টিস্যু ক্ষয় হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে ল্যাপটপের সামনে বসে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের এ সমস্যা বেশি হয়। এর কারণে ঘাড়ের মধ্যকার হাড়ে ফাঁক থেকে যায়। যাঁদের সারভাইকাল স্পন্ডেলাইটিস (ঘাড়ে মেরুদণ্ডের অংশে হাড়ক্ষয়) রয়েছে, তাঁদেরও ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
- কোনো কারণে স্পাইনাল কর্ডের কোনো টিস্যু ফুলে গেলে স্লিপ ডিস্ক হতে পারে। সেখান থেকেও ঘাড়ে ব্যথা হয়।
- কোনো দুর্ঘটনায় ঘাড়ে আঘাত পেলে সেই ব্যথা বহুদিন স্থায়ী হয়। পেশিতে টান লাগলে মাঝেমধ্যেই তখন ব্যথা বাড়ে।
- বসার ভঙ্গিতে ত্রুটি থাকলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। বাঁকাভাবে শুয়ে থাকলে ঘাড়ে চাপ পড়ে, সেখান থেকেও ঘাড় ব্যথা হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা হলে অন্যদিকে ঘাড় ঘোরানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।
- মানসিক অবসাদ ও দুশ্চিন্তা থেকেও ঘাড়ের ব্যথা হতে পারে।
- অনেক সময় বিছানায় শুয়ে বই পড়া, টিভি দেখা বা উপুড় হয়ে ল্যাপটপে কাজ করা থেকেও ঘাড়ের পেশিতে টান লেগে ব্যথা হয়।
কারা ঝুঁকিতে
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর থেকে স্পন্ডাইলোসিসের পরিবর্তন শুরু হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর আগেও হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়ে থাকে। সামনে ঘাড় ঝুঁকিয়ে কাজ করতে হয়, এমন সব পেশার মানুষদের এ রোগ বেশি দেখা যায়। শুধু চেয়ার–টেবিলে বসে কাজ করেন, যেমন ব্যাংকার, নির্বাহী, কম্পিউটারে একনাগাড়ে কাজ, ঘাড়ে ঝাঁকুনি লাগে এমন পেশা যেমনঃ মোটরসাইকেল বা সাইকেল চালকদেরও এ রোগ হতে পারে।
রোগ নির্ণয়
শারীরিক পরীক্ষা: শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে ঘাড় ব্যথা নির্ণয় করা যায়। ফিজিওথেরাপিস্ট ঘাড়ের গতির পরিসীমা, সেইসাথে এর শক্তি মূল্যায়ন করে পেশী সচল করতে পারে।
একজন রোগীর চিকিৎসা ইতিহাসও কারণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র প্রদান করতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্ট পূর্বের কোন আঘাত বা চিকিৎসা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন, তারা সময়কাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারে এবং ব্যথার তীব্রতা, সেইসাথে অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন মাথাব্যথা বা বাহুতে শিহরণ এই সম্পর্কে ফিজিওথেরাপিস্ট জেনে নিতে পারেন যা তাঁকে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।
ইমেজিং টেস্টঃ কিছু ক্ষেত্রে, ঘাড়ের ব্যথা মূল্যায়ন করার জন্য ইমেজিং টেস্ট প্রয়োজন হতে পারে। এর মধ্যে এক্স-রে, এমআরআই স্ক্যান বা সিটি স্ক্যান অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ঘাড়ের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে হার্নিয়েটেড ডিস্ক বা হাড়ের স্পার দেখা দিতে পারে। একটি সঠিক মূল্যায়ন এবং নির্ণয়ের দ্বারা একজন ফিজিওথেরাপিস্ট ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিকল্পনা করে ঘাড়ের ব্যথার অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে পেতে পারেন। এর ফলে ব্যথা কমাতে এবং শারীরিক গতিশীলতা উন্নত করতে একজন চিকিৎসক অনেক ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারেন যা একজন ভুক্তভোগী রোগীকে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সাহায্য করে।
ঘাড় ব্যথার চিকিৎসা:
ম্যানুয়াল থেরাপি
ঘাড়ের ব্যথা উপশমের জন্য ম্যানুয়াল থেরাপি কৌশলগুলো ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার একটি সাধারণ অংশ। এই কৌশলগুলির মধ্যে ম্যাসেজ, জয়েন্ট মোবিলাইজেশন এবং স্ট্রেচিং ব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ম্যানুয়াল থেরাপি ঘাড়ের ব্যথা এবং শক্ততা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ব্যায়াম থেরাপি
ঘাড়ের ব্যথার জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ব্যায়াম থেরাপি। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট ঘাড়ের পেশী শক্তিশালী করার জন্য একটি উপযোগী ব্যায়াম চার্ট তৈরি করে দিতে পারেন এবং সঠিক নিয়ম মেনে ব্যায়াম করলে সামগ্রিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ঘাড় ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়।
আকুপাংচার
আকুপাংচার থেরাপি একটি ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধের কৌশল যা হাজার হাজার বছর ধরে অনুশীলন করা হয়েছে। এই থেরাপিতে শরীরের নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলিতে পাতলা সূঁচ প্রবেশ করানো হয়, যা আকুপয়েন্ট নামে পরিচিত। আকুপাংচারের পিছনে বিশ্বাস হল যে এই আকুপয়েন্টগুলি শরীরের শক্তি চ্যানেল গুলির সাথে মিলে যায় এবং তাদের উদ্দীপিত করে, শরীরের শক্তিতে ভারসাম্য এবং প্রবাহ পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে, যা কিউ নামেও পরিচিত। আকুপাংচার দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, উদ্বেগ এবং বন্ধ্যাত্ব সহ বিভিন্ন অবস্থার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এবং এটি একটি পরিপূরক থেরাপি হিসাবে পশ্চিমা বিশ্বে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অনেক অসুখের চিকিৎসায় এর কার্যকারিতা থাকা সত্ত্বেও, আকুপাংচার বিতর্কিত একটি চিকিৎসা, যেখানে সন্দেহবাদীরা এর বৈধতা এবং কার্যকারিতার পেছনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
ঘাড়ের ব্যথার জন্য ফিজিওথেরাপি একটি কার্যকরী চিকিৎসা। ফিজিওথেরাপিস্ট ম্যানুয়াল থেরাপি, ব্যায়াম থেরাপি, অঙ্গবিন্যাস সংশোধন এবং বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার ঘাড়ের ব্যথা উপশমে সহায়তা করতে পারেন এবং একজন রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। ঘাড়ে ব্যথা অনুভব করলে একজন ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্য নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা একজন ব্যক্তির নির্দিষ্ট সমস্যাকে আইডেন্টিফাই করে চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রদান করতে পারেন। সেই সাথে একজন ফিজিওথেরাপিস্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যায়াম বা তাঁদের নির্দেশিকা পালন করলে রোগী তাদের ঘাড় ব্যথার বিভিন্ন সমস্যা থেকে উপকৃত হতে পারেন বা , পেশী শক্তিশালী করতে পারে এবং ভবিষ্যতে ঘাড় ব্যথা হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারবে।
ব্যথা কমানোর এবং ঘাড়ের গতিশীলতা উন্নত করতে ফিজিওথেরাপি কার্যকরী ভূমিকা রাখে, যা ব্যক্তিদের দৈনন্দিন কাজকর্ম সহজভাবে করতে সাহায্য করে এবং তাঁদের মাঝে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনে।
Leave a Reply