বেশিরভাগ মানুষ পরিস্থিতির করুণা দিয়ে নিজের জীবনকে পরিচালিত করে। তাদের সাথে অতীতে যা হয়েছে সেটা মেনে নিয়ে অথবা অন্য মানুষের একান্ত করুণা নিয়ে বেঁচে থাকে।
কিন্তু সত্যি বলতে তারা তাদের বর্তমান জীবন নিয়ে থাকে না। কারণ তাঁরা এখনো অতীতের কারাগারে বন্দী।
আপনি যদি একটি সুন্দর জীবন চান, তাহলে এমন মানুষদের নিন্মে উল্লেখিত বিষয়গুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেকে পরিচালিত হতে দিবেন না কখনো-
মোটিভেশনাল স্পিচ
প্রথমত, আপনার অতীত।
দ্বিতীয়ত, অন্য মানুষের মতামত ও সিদ্ধান্ত।
তৃতীয়ত, নিজের উপর ক্ষীণ বিশ্বাস।
চতুর্থত, সম্পর্ক।
পঞ্চমত, টাকা।
নাম্বার ১:
আপনার অতীত দ্বারা প্রভাবিত হবেন না
আপনার অতীতকে কখনোই বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতকে শাসন করতে দিবেন না। যাই হোক না কেন, আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। আপনার অতীতের দুঃখকে পেছনে রেখে দিন যাতে এটা আপনার ভবিষ্যতকে নষ্ট করে দিতে না পারে। আপনার অতীতের অন্ধকার সময়কে পেছনে রাখুন যাতে এটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আলোকে বাধা না দিতে পারে।
আপনার অতীত চলে গেছে। যা কিছুই ঘটুক, যত খারাপ, নিষ্ঠুর, বর্বর, বাজে কিছুই ঘটুক না কেন সেটা নিয়ে পড়ে থাকা আপনাকে ভালো কিছু দিবে না। যদি আপনার সাথে কেউ খারাপ কিছু করে থাকে, তাহলে একমাত্র সেসব ফেলে সামনে এগিয়ে গিয়ে আপনি জয়ী হতে পারেন। তাই সেখান থেকে সরে যান।
আপনি যদি সেগুলো নিয়ে নিজেকে ঘৃণা করতে থাকেন,
আপনি যদি সেই অতীতের ভিকটিম হয়ে থাকেন,
তাহলে তাঁরা জিতে যাবে। আর আপনি হেরে যাবেন।
যদি আপনি জিততে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই ভবিষ্যতকে নির্মাণ করতে হবে। আর তা শুরু করতে হবে এখনি।
নিজের ঘাড় থেকে তাই অতীতের বোঝা ঝেড়ে ফেলে দিন।
আপনি যে বর্তমান সময়কে নষ্ট করতে অতীতের চলে যাওয়া ঘটনা নিয়ে আর ভাববেন না, এটাই হবে আপনার জন্যে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত।
বর্তমান সময়কে উপভোগ করুন যা আপনাকে পুরোপুরি উপভোগ করার সুযোগ দিয়েছে।
নাম্বার ২:
অন্য মানুষের মতামত ও সিদ্ধান্ত
নিজের জীবনের পথে কিভাবে চলবেন, তা নির্ধারণ করতে অন্য মানুষের মতামত ও সিদ্ধান্তকে কখনোই মেনে নিবেন না। এতে করে এমন কোন পন্থা অবলম্বন করতে হতে পারে যা আপনি করার কথা কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি। মানুষকে খুশি করতে চাওয়া একটি অভিশাপ। এটিকে যে কোন মূল্যে এড়িয়ে যেতেই হবে।
কোন কিছু করার আগে, নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, “আমি এটি করতে চেয়েছিলাম বলেই কি করছি, নাকি অন্য কারো সিদ্ধান্ত মেনে না নেবার ভয়ে করছি?”
মনে রাখবেন, আপনি একটি ইউনিক রিজনের জন্যে পৃথিবীতে এসেছেন। মানে আপনার মধ্যে অনন্য কিছু আছে বলেই আপনি এই পৃথিবীতে এসেছেন।
আপনি পৃথিবীতে এসেছেন সব মানুষের দৃষ্টিগোচর হতে, আপনি যা তার জন্যে সবার কাছে থেকে প্রশংসা পেতে। তাই নিজের আলো কমিয়ে দিয়ে অন্য মানুষের জন্যে ফ্যাকাসে হবেন না।
আপনি নিজে যেমন, তেমন করে জ্বলে উঠুন। যারা আপনাকে সত্যিই আপন ভাববে তাঁরা আপনার আলোতে আপনার সাথেই জ্বলে উঠবে।
নাম্বার ৩:
নিজের উপর ক্ষীণ বিশ্বাস
নিজের ব্যাপারে সীমাবদ্ধ ধারণা নিয়ে পুরো জীবনকে পরিচালনা করবেন না। আপনার সীমাবদ্ধতা আপনার কাছে সচেতনমূলক বা যুক্তিযুক্ত হতে পারে। কিন্তু তা যতটা যুক্তিযুক্ত তার থেকে বেশি অযৌক্তিক। এই স্ব-সীমাবদ্ধতার ধারণা আপনার মধ্যে শৈশব থেকে তৈরী হতে থাকে। আর তারপর… সারাজীবন ধরে আমরা সেগুলোকে বয়ে বেড়াই। এসব ধারণা আমাদের মাঝে এমন কিছু মানুষ জন্ম দিয়েছে যারা আসলে নিজের স্বপ্নকে কখনো ছুঁতে পারে নি।
তাই নিজেকে সেসব জায়গায় সীমাবদ্ধ মনে হয় সেগুলোকে খুঁজে বের করে বলুন, “চুপ থাকো, সরে যাও”।
পৃথিবীতে আপনার সাধ্যের বাইরে কিছু নেই। পৃথিবীতে অধিকারের বাইরে কিছু নেই।
পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যা আপনি হতে পারবেন না। যদি- আপনি নিজের উপর বিশ্বাস রাখেন; আপনি মনে করেন “যেকোন কিছুই অর্জন সম্ভব”।
যখন আপনি আপনার লিমিটেশনকগুলোকে মুক্ত করে দিতে পারবেন, আপনার সম্ভাবনা তখন লিমিটেশনের বাইরে চলে যাবে, আনলিমিটেড হয়ে যাবে।
একবার ধারণা করুন, আপনি কি জয় করতে পারেন যদি –
যেকোন কিছুই অর্জন সম্ভব হয়,
প্রতিদিন আপনার জীবনে মিরাকল ঘটে।
একটি প্রবাদ আছে,
“নিজের ভেতরে কোন শত্রু না থাকলে বাইরের শত্রু কোন ক্ষতি করতে পারে না।”
অর্থ্যাৎ আপনার ভেতর থেকে যখন আপনাকে কিছু টেনে না ধরছে, তখন বাইরের কিছুই আপনাকে পেছনে ঠেলে দিতে পারবে না।
আপনার পুরো জীবনটাই ঝট করে পরিবর্তন হয়ে যাবে –
যদি আপনি নিজের চিন্তা-ভাবনা চেঞ্জ করেন।
যদি আপনি সবকিছুকে গিফট হিসেবে নেন।
যদি আপনি সব কিছুকে “অভিশাপ” হিসেবে না নিয়ে “আশীর্বাদ” হিসেবে ধরে নেন তাহলে আপনার কাছে সবকিছুকে সম্ভব মনে হতে থাকবে।
নিজের সাথে এই পাগলামিটা আপনাকে করতেই হবে।
নাম্বার ৪:
সম্পর্ক
সম্পর্ক একটি হৃদয়স্পর্শী বিষয়। কিন্তু আপনার যদি সবসময় অন্য কাউকে প্রয়োজন হয়- সুখী হতে, পূর্ণতা পেতে,
আপনার যদি মনে হয়- এক মুহূর্তের জন্যে তাকে না ছেড়ে যেতে। তাহলে আপনার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না।
আমি আপনাকে রিলেশন এড়িয়ে যেতে বলছি না। কারণ পৃথিবীতে “ভালোবাসা” আর “যোগাযোগ”- এর থেকে বড় কোন শক্তি নেই।
আমি শুধু তাদের কথা বলছি-
যারা রিলেশনশিপ ছাড়া বাঁচতে পারে না।
যারা যে কারো সাথেই থাকতে পারে, এমনকি ভুল মানুষের সাথেও।
যারা একটা মুহূর্তও সিঙ্গেল থাকতে পারে না।
আমি শুধু আপনাকে বলছি,
আপনার মেন্টালিটি উন্নত করতে, আপনার মানসিক শক্তি অর্জন করতে, যাতে আপনি বুঝতে পারেন –
“আমাকে সুখী করতে আর কারো প্রয়োজন নেই,
আমি একা সুখী হতে পারবো”।
নাম্বার ৫:
টাকা
এটি পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে। ধারণা করতে পারছেন জিনিসটি কি? টাকা।
এটার মানে এই না যে, আপনার প্রাচুর্য প্রয়োজন নেই। এটার মানে এই না, অর্থই অনর্থের মূল।
আপনি, আমি ভালো করেই জানি টাকা দিয়ে আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো কাজটি করতে পারেন অর্থ্যাৎ মানুষকে সাহায্য করতে পারেন। তাই আপনার সিদ্ধান্তগুলোকে টাকার সাথে আষ্টেপৃষ্টে আটকে ফেলবেন না।
যদি আপনি কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ভাবেন, “কত টাকা এখানে রয়েছে?”; তাহলে আপনি ভুল।
আপনাকে আপনার অন্তরকে অনুসরণ করতে হবে এবং প্রতি মুহূর্তে মানুষের সেবা করার ব্রত থাকতে হবে।
যখন আপনি আপনার অনুভূতিকে অনুসরণ করবেন এবং আত্মাকে পরিশুদ্ধ করবেন, তখনই টাকা আপনার হাতে চলে আসবে। আর এটা এত পরিমাণে আসবে যা আপনার আগের ধারণারও বাইরে ছিলো।
তাই, নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন আর নিজের মত করে নিজের জীবনকে চালনা করুন। সবকিছুর প্রভাবের বাইরে থেকে নিজেকে চালনা করুন।
নিজের স্বাধীনতা খুঁজুন, পরিপূর্ণভাবে বাঁচুন।
আজকের মতো এ পর্যন্তই। আগামীতে আসবো নতুন কোন মোটিভেশনাল স্পিচ নিয়ে।
বিভাগীয় সম্পাদক: প্রিয় পাঠক!
মোটিভেশনাল স্পিচটি কেমন লেগেছে?
আরও অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য পড়ুন:
এ.পি.জে. আবদুল কালামের শ্রেষ্ঠ অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য
Leave a Reply