পৃথিবীর বুকে স্রষ্টার এক অপরূপ সৃষ্টি হলো মানুষ। প্রতিটা মানুষের কিছু অনন্য আচরণগত বৈশিষ্ট্য থাকে। প্রত্যেকে চায় এই বৈশিষ্ট্যগুলো কাজে লাগিয়ে নিজের ব্যক্তিত্বকে ধারণ করতে।
কারণ আপনার ব্যক্তিত্ব আপনাকে অন্যের নিকট সম্মানিত করতে পারে। আপনার ভেতরেও কি এমন কোন অনন্য বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে আছে? কমেন্টে সেটি আমাদের জানাতে পারেন।
সম্প্রতি মনোবিজ্ঞানীকরা নতুন কিছু আচরণগত রীতি আবিষ্কার করেছেন, যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলোর সাথে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো– এই আচরণগত কৌশলগুলো সবাই প্রয়োগ করতে পারবে।
চলুন তাহলে এবার পরিচিত হওয়া যাক এমন ১২ টি কৌশলের সঙ্গে, যেগুলো অন্যদের সামনে আপনাকে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে সাহায্য করবে।
দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা
১. কিভাবে বুঝবেন কেউ আপনাকে কেউ পছন্দ করে কি না
এটা খুবই সহজ এবং স্মার্ট প্রক্রিয়া। প্রথমত, কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে আপনি পছন্দসই একটি বিশেষ শব্দ ব্যবহার করুন।
যদি কেউ আপনাকে সত্যিই পছন্দ করে তাহলে আপনার বলা সেই বিশেষ শব্দটি তারা ঘনঘন ব্যবহার করবেন। এভাবে আপনি বুঝতে পারবেন যে কেউ আপনাকে পছন্দ করে কি না। কত সহজ তাই না?
২. কীভাবে আপনার বক্তব্য মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবেন
সামনের লোকদেরকে যখন আপনি পরামর্শ বা উপদেশমূলক কোনো কথা বলবেন, তখন সবসময়ই তাদেরকে বলবেন যে আপনার বাবা আপনাকে এই পরামর্শটা দিয়েছিলেন।
মানুষ স্বভাবতই পিতামাতার পরামর্শ বিশ্বাস করে থাকে।ফলে তারা আপনার বক্তব্য গুরত্ব সহকারে গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।
৩. কিভাবে সবাইকে আপনার কথার সাথে সম্মতি জ্ঞাপন করাবেন
গুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছু বলার সময় মাথা সামান্য ঝাঁকিয়ে কথা বলুন এবং শ্রোতার সাথে দৃষ্টি–সংযোগ রাখার চেষ্টা করুন।
এক্ষেত্রে, মাথা ঝাঁকিয়ে কথা বলার অর্থ হলো নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আপনি কথাগুলো বলছেন। সামাজিক আচরণের প্রথানুযায়ী মানুষ ফিরতি মাথা ঝাঁকাবে অর্থাৎ কথায় সম্মতি জ্ঞাপন করবে।
৪. প্রচন্ড ভীড়ের মধ্যে নিজেই নিজের রাস্তা বের করুন
দিনের বেশিরভাগ সময়ে রাস্তায় মানুষের জট লেগেই থাকে। অফিসগামী মানুষ, স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীসহ প্রায় সবার জন্যই এটি বিরক্তিকর ব্যাপার। কারণ এটি আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে।
এই সমস্যার সমাধান হলো, ভীড়ের মধ্যে আপনি যেদিকে যাচ্ছেন তার ঠিক সামনে ডান দিকের মানুষদের দিকে তাকান। দেখবেন ভিড়েও মধ্যেও সবাই আপনাকে রাস্তা ছেড়ে দিচ্ছে। এটা দেখে হয়ত আপনি নিজেই বিশ্বাস করতে পারবেন না।
কৌশলটির ব্যাখা খুবই সোজা। প্রচন্ড ভীড়ের মধ্যে আপনি যখন সামনের লোকগুলোর চেহারার দিকে দেখবেন, তখন আপনি বুঝতে পারবেন যে তারা কোন দিকে যাবে। সে অনুযায়ী আপনি ঠিক তার বিপরীত পথটা বেছে নিয়ে অনায়াসেই বের হয়ে আসতে পারবেন।
৫. যদি একটি নির্দিষ্ট গান আপনার মাথার মধ্যে আটকে থাকে তাহলে কি করবেন
যদি আপনি কোনো একটা নির্দিষ্ট গানের মোহ থেকে বের হতে চান, তাহলে গানের শেষ অংশটুকু মনে রাখার চেষ্টা করুন। জেইগারনিক ইফেক্টের অনুসারে, অসমাপ্ত করে রাখা কাজগুলো আমাদের মস্তিষ্ক ভালোভাবে মনে রাখতে চেষ্টা করে।
তাই আপনি যখন গানের শেষটুকু মনে রাখবেন, তার মানে আপনি গানটি শেষ করেছেন। সুতরাং মস্তিষ্ক গানটিকে মনে রাখার জন্যে অতটা গুরুত্ব দিবে না।
আর সুতরাং গানটি ভুলে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এই নিয়ম অনুসরণ করে আপনি কি কোন গানের গানের ঘোর থেকে বের হতে পারলেন? কমেন্টের মাধ্যমে জানার অপেক্ষায় রইলাম।
৬. কোনো প্রকার জোর–জবরদস্তি ছাড়াই কিভাবে আপনার সন্তানকে শাক–সবজি খাওয়াতে রাজী করাবেন
এখনকার মায়েদের সবচেয়ে বড় একটা অভিযোগ হলো,বাচ্চারা একদমই শাক–সবজি খেতে পছন্দ করে না। তবে এমন একটি কার্যকর কৌশলের কথা এখন বলব, যেটা আপনি চাইলে অন্যান্য ক্ষেত্রেও ব্যবহার করতে পারবেন।
প্রথমত, ‘সবজি খাবে কি না?’ জিজ্ঞাসা করার পরিবর্তে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন যে তারা ম্যেনুতে ঠিক কী ধরনের সবজি খেতে ইচ্ছুক। এবার আপনি নিজেই তাদের জন্য পুষ্টিকর সবজিগুলো বাছাই করুন।
এতে খাওয়ার সময় আপনার সন্তান মনে করবে যে সবজি খাওয়ার সিদ্ধান্ত তারা নিজেরাই নিয়েছে। সাপও মরলো, লাঠিও ভাঙ্গলো না।
৭. কেউ যদি আপনার দিকে সন্দেহজনকভাবে তাকিয়ে তখন, তখন কি করবেন
এটা খুবই অসহ্য একটি ব্যাপার। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য আরো বেশি। তাহলে চলুন একটা উপায়ের সাথে পরিচিত হওয়া যাক।
রাস্তাঘাটে বা অন্যান্য জায়গায় যদি কেউ আপনার দিকে দৃষ্টিকটুভাবে তাকিয়ে থাকে তাহলে আপনি তার দিকে তাকিয়ে হাই তুলুন। আপনি হয়ত জানেন না, হাই তোলা একটি সংক্রামক অভ্যাস।
সুতরাং অভ্যাসবশত উনি নিজেও হাই তুলবেন এবং আপনার প্রতি তার মনোযোগ বিঘ্নিত হবে। তখন আর আপনাকে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হবে না।
৮. কিভাবে জিনিসপত্র বহনের কাজে সহজেই অন্য কারো সাহায্য নিবেন
সবসময় জিনিসপত্র বহনের কাজটি করার সময়, কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করবেন। কথোপকথনের এক পর্যায়ে কিছু জিনিসপত্র তার হাতে ধরিয়ে দিন।
বেশিরভাগ সময় কেউ বুঝতেই পারবে না যে আপনি কৌশলে তাদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরী।
কেননা অনেকেই হয়ত মনোযোগ দিয়ে আপনার কথা নাও শুনতে পারে এবং এ ধরনের ব্যবহারে হয়ত তারা বিরক্ত হতে পারে।
৯. কিভাবে প্রথম পরিচয়ের পর্বেই কারো মন জয় করবেন
ব্যবসায়িক কার্যক্রমের কিংবা কর্মক্ষেত্রে ক্ষেত্রে এটি খুবই জরুরী একটি বিষয়। এটি করতে প্রথম পরিচয়ের সময় হাত মেলানো অত্যন্ত ইতিবাচক একটি কাজ।
কারো সাথে হাত মেলানোর আগে দেখে নিন আপনার হাত যথেষ্ট গরম আছে কি না। কেননা উষ্ণ হাত একটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে যেখানে ঠান্ডা হাত ঠিক এর বিপরীত পরিবেশ সৃষ্টি করে।
১০. কিভাবে খুব ভালো একজন শ্রোতা হয়ে উঠবেন
পাশের মানুষটি যখন তার কোনো অনুভূতির কথা আপনাকে বলবে তখন সেটার পুনরাবৃত্তি করুন এবং যুক্তিমূলক ব্যাখা প্রদান করুন।
যেমন ধরুন– আপনার বব্ধু বললো যে– আজকের বিকালটা অনেক সুন্দর।‘ তখন আপনি যদি তার কথার পুনরাবৃত্তি করে বলেন যে-‘ ঠিকই বলেছ,আসলেই আজকের বিকালটি অনেক সুন্দর।‘
তখন তিনি অবচেতনভাবে অনুভব করবেন যে আপনি একজন ভালো শ্রোতা। তবে হ্যাঁ, একটা বিষয় নিয়ে অনেকক্ষন ঘাটাঘাটি না করাই উত্তম।
১১. কিভাবে কারো কাছ থেকে কোন ধরণের সাহায্য নিতে পারেন
কেউ আপনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসুক– এমনটা যদি চান, তাহলে তাকে সরাসরি জানান যে আপনার সাহায্য দরকার। স্বভাবতই মানুষ নিজেকে অপরাধী ভাবতে পছন্দ করে না। তখন তারা আপনাকে সাহায্য করতে অস্বীকার করতে পারবে না।
এবার আসুন পরিচিত হওয়া যাক এমন একটি স্মার্ট আচরণগত কৌশলের সঙ্গে যেটা আপনার ইতিবাচক ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলবে এবং আপনার প্রতি অন্যের নেতিবাচক মনোভাব পরিবর্তনে সাহায্য করবে।
১১. কারো অপছন্দের তালিকা থেকে নিজেকে কিভাবে পছন্দের তালিকায় নিয়ে যাবেন
আপনার পরিচিত সবাই যে আপনাকে পছন্দ করবে ব্যাপারটা ঠিক এমন নয়। আবার অনেক সময় দেখা যায় যে, ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে কারো হয়ত আপনার ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হলো।
এখন অকারণে কেউ আপনাকে অপছন্দ করুক, এটা অবশ্যই আপনি চাইবেন না। এই টানাপোড়নের চিন্তা–ভাবনাকে পাল্টাতে চাইলে আপনাকে কিছু কৌশল মাথায় রেখে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
আপনি তাদের সাথে একটু একটু করে সৌজন্যমূলক কথাবার্তা /প্রশ্ন চালিয়ে যেতে পারেন। তবে আরো ভালো হয় যদি আপনি তার কাছ থেকে এমন কিছু ধার করতে পারেন যা ফেরতযোগ্য।
হতে পারে সেটা একটা কলম বা বই বা অন্য যেকোনো কিছু। সাধারণত মানুষ যাদেরকে অপছন্দ করে তাদেরকে সহজে সাহায্য করে না। তাই সাহায্য পেলে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতে দোষ কোথায়?
অন্যদিকে ছোট্ট কোনো সাহায্যের ক্ষেত্রে তারা যে কাউকে সহজেই ‘না‘ বলতে পারবে না। আপনার ভদ্রতা, সৌজনতা আস্তে আস্তে তাদের ভাবনাগুলোকে বদলে দিবে শুরু করবে।
সবশেষে তাদের ভুলভ্রান্তির অবসান ঘটবে এবং অপছন্দের তালিকা থেকে আপনি তাদের পছন্দের তালিকায় চলে যাবেন।
দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা গুলো থেকে বাঁচতে কোন কৌশলটি আপনার বেশি কাজে লাগতে পারে বা কোন কৌশলটি আপনাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে এবং উপকারী মনে হয়েছে সেটা কমেন্টে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
আপনার কাছে যদি এরকম কিছু উপকারী অথচ সহজ কৌশল থাকে সেটাও আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
Leave a Reply