জার্মান ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ডয়চে ভেলের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশে প্রতিবছর ২২ লাখ কর্মক্ষম লোক চাকরি বা কাজের বাজারে প্রবেশ করেন৷ কিন্তু কাজ পান মাত্র সাত লাখ মানুষ৷” তাই আজকে আমরা জানব চাকরির ভাইভাতে কিভাবে নিজেকে টিকিয়ে রাখা যায় সে সম্পর্কে।
ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের শতকরা ৪৭ ভাগ স্নাতকই বেকার৷
যেখানে ভারতে ৩৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ, নেপালে ২০ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেকার রয়েছেন৷ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তরসহ উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেছেন কম-বেশি সাড়ে তিন লাখ৷
তাঁদের মধ্যে ৯২ হাজার ৭৪৭ জন স্নাতক পাস, এক লাখ ২৮ হাজার ৪৮১ জন স্নাতক সম্মান এবং ২১ হাজার ৩৮০ জন কারিগরি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন৷
এছাড়া এক লাখ ১৯ হাজার ৮৯৪ জন স্নাতোকত্তর ডিগ্রি, দুই হাজার ৩৮৫ জন স্নাতোকত্তর কারিগরি এবং এক হাজার ৭৬৩ জন এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন৷ অন্যদিকে ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট অর্জন করেন দুই হাজার ৩৩৫ জন৷
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে শ্রমশক্তির পরিমাণ পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ৷ আর আইএলও-এর তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি৷
বেকারত্বের এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে দু-এক বছরের মধ্যে সালে মোট বেকারের সংখ্যা ছয় কোটিতে দাঁড়াবে৷ বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১২তম৷
বাংলাদেশের চাকরির বাজারের হালচাল
চাকুরীর দৌড়ে বাংলাদেশ এগিয়ে না থাকলেও বেকারত্বের দিকে যে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। একদিকে রয়েছে চাকুরীর বাজার সৃষ্টি না করতে পারা। অন্যদিকে, রয়েছে দুর্নীতির করাল গ্রাস।
এরসাথে যুক্ত হয়েছে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সরকার কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পারছে না। আর কর্তা ব্যক্তিরা বলছে যোগ্য ব্যক্তির অভাব। সবমিলিয়ে একটা উভয় সংকটে পড়ে গিয়েছে চাকরীর আশায় থাকা মানুষেরা।
এমন অবস্থায় এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় নিজেকে সেরা হিসেবে প্রস্তুত করে তোলা। এতে শুধু একাডেমিক রেজাল্ট আপনাকে এগিয়ে রাখতে পারবে না। সাথে প্রয়োজন হবে কর্পারেট দুনিয়াতেও বুদ্ধিমত্তার।
চাকরির ভাইভা নিয়ে কার্যকরী বিষয়
আর কর্পারেট দুনিয়াতে প্রবেশের প্রধান পথ হলো ইন্টারভিউ। ইন্টাভিউ দিয়েই মনে জয় করে নিতে পারেন বসদের। আবার বিপরীতটিও হতে পারে। আজকে আমরা এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যা আপনার ইন্টারভিউ বোর্ডের পারফরমেন্সকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিবে।
১) “আমি” নয় “আমরা”
ইন্টারভিউ বোর্ডে “আমি” নয়, “আমরা” শব্দটিকে বেশি ব্যবহার করুন। এতে করে ইন্টারভিউয়ার কোম্পানির প্রতি আপনার আন্তরিকতা বুঝতে পারবে।
এর অর্থ আপনি নিজেকে তাদের কোম্পানির একটি অংশ হিসেবে ভাবছেন- এমনটাই প্রকাশ পাবে। ফলে কায়েন্ট ও সেলসে আপনি যে পুরোটা উজাড় করে দিবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
২) নমনীয়তা
ইন্টারভিউ বোর্ডে নমনীয় হয়ে থাকুন। ইগো থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করুন। এতে করে ইন্টারভিউয়ার বুঝতে পারবেন আপনি নিজের ভুলগুলো স্বীকার করতে পিছপা হবেন না। যার কারণে, টিমে আপনি বেস্ট কন্ট্রিবিউশন করতে পারবেন।
৩) নেতৃত্ব মনোভাব
আপনি যে পদের জন্যেই এপ্লাই করুন না কেন আপনার নেতৃত্বের গুণাবলি প্রকাশ করতে হবে। লিডারশিপ স্কিল আপনার চাকুরীর পথকে আরো সুগম করে তুলবে। পাশাপাশি আপনাকে প্রকাশ করতে হবে, লিডারশিপকে আপনি এনজয় করেন এবং যেকোন পজিশন থেকে আপনি লিড দিতে পারবেন।
৪) পরিকল্পনা
অনেক সময় ইন্টারভিউ বোর্ডে পরিকল্পনার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। এটার জন্যে কোম্পানির প্রোফাইল ঘেটে একটা ব্যাসিক ৩০/৬০/৯০ দিনের একটা পরিকল্পনা তৈরী করতে পারেন।
এতে করে আপনি কোম্পানিকে কতটা কন্ট্রিবিউট করতে পারবেন তার বহিঃপ্রকাশ হবে।
৫) সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা
কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে আপনাকে দোটনায় পড়তে হতে পারে। তাই নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমটাকেও আপনার প্রকাশ করতে হবে।
তবে এক্ষেত্রে সরাসরি কোন প্রশ্ন না করলে ইন্টারভিউ বোর্ডে ডিসিশন মেকিং বিষয়ক একটি বিষয় আপনি সামনে পেয়েই যাবেন। তখনই নিজের এই অ্যাবিলিটি প্রকাশ করে ফেলতে পারেন।
৬) সুযোগ
কোম্পানির সাথে কাজ করার সুযোগ পেলে আপনি যে আনন্দিত হবেন তা প্রকাশ করুন। নিজের এক্সপ্রেশন দিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডকে এটি বুঝিয়ে দিন।
এখানে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে, “আপনি কেন এই চাকুরী করতে চাচ্ছেন?”। এই প্রশ্নের উত্তরটি এমনভাবে সাজিয়ে নিয়ে যান যেন আপনি সবিস্তারে নিজের অনুভূতিটি প্রকাশ করতে পারেন।
৭) সাফল্য
ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনার সাফল্য প্রকাশ করা জরুরী। তবে একই সাথে আপনি সাকসেসকে যে একপাক্ষিক ভাবেন না। তাই সাকসেসে অন্য কর্মীদের একটা ভূমিকা থাকবে এটা প্রকাশ করা উচিৎ।
এতে করে টিমের সাথে আপনি কতটা এনগেজ হতে পারবেন তাই প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি নিজের সাফল্যের কথাগুলো গল্প আকারে উপস্থাপন করুন। সে গল্পে আপনার সংগ্রাম এবং কি কি বিরূপ বিষয় আপনি অতিক্রম করে এসেছেন এসব প্রকাশ করুন।
আর নিজের স্পেসিফিক সাফল্যের কথা বলতে গেলে অবশ্যই সংখ্যার ব্যবহার করুন। এতে করে তথ্য সঠিক মনে হবে।
৮) মিশন
প্রতিটি কোম্পানির একটি মিশন থাকে। ইন্টারভিউতে যাবার আগে সেই মিশন সম্পর্কে যথাযথ ধারণা নিয়ে যান। ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনার কাছে যে প্রশ্ন কিংবা স্ট্রাটেজি জানতে চাইবে তার সাথে মিশনকে যুক্ত করে দিন এবং এমনভাবে যুক্ত করে দিন যেন তাঁরা বুঝতে পারে আপনি কোম্পানির মিশন, ভিশন নিয়ে একটা রিসার্চ করেছেন।
৯) খোঁজ খবর
ইন্টারভিউ বোর্ডে যাবার আগে কোম্পানির রিসেন্ট খবরাখবর জেনে নিন। কোম্পানি নিয়ে কোন আর্টিকেল কিংবা প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তা পরে নিন। কথার ফাঁকে ফাঁকে এসব তথ্য দিন। এতে করে আপনার ইন্টারভিউ আরো ইনফরমেটিভ হয়ে উঠবে।
১০) ধন্যবাদজ্ঞাপন
ইন্টারভিউয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি। ইন্টারভিউয়ের শেষে অবশ্যই “ধন্যবাদ” কিংবা “থ্যাংক ইউ” বলে বোর্ড থেকে বেরিয়ে আসুন। এতে করে আপনার বিনয়ী মনোভাব প্রকাশ পাবে।
এমন সব ছোট ছোট বিষয় লক্ষ্য রেখে পছন্দের চাকুরীটিকে নিজের করে নিতে পারেন। অভিযাত্রীর পক্ষ থেকে আপনার জন্য শুভকামনা।
Interview তে কিভাবে ভালো করবেন? নিচের ভিডিওটি দেখে জেনে নিন গোপন সূত্র
Leave a Reply