মুম্বাই শহরের এক সিন্ধি পরিবারে ৬ জুলাই, ১৯৮৫ অভিনেতা রণবীর সিংয়ের জন্ম হয়েছিল। বাবার নাম জগজিৎ সিং ভবনানী এবং মা অঞ্জু ভবনানী। ভারত ভাগের সময় রণবীরের পূর্ব পুরুষেরা বর্তমান পাকিস্থানের সিন্ধু প্রদেশের করাচি থেকে ্মুম্বাইতে শিফট হয়ে আসেন। বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন রণবীর।
রণবীর তাঁর নামের সাথে কখনও ভবনানী পদবী ব্যবহার করতেন না। তাকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিলো ভবনানী পদবীটি তিনি কেনো বাদ দিলেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, তার কাছে এই পদবীটি “অত্যধিক দীর্ঘ ও অত্যধিক অক্ষরযুক্ত” মনে হয়, যা কমার্শিয়াল পণ্য হিসেবে তার ব্র্যান্ডকে ঠিকমত রিপ্রেজেন্ট করতে পারতো না।
আমাদের আজকের আলোচনায় থাকছে ভারতীয় চলচ্চিত্রের বলিউড অভিনেতা রণবীরকে কথোপকথন।
অভিনয়ে আগ্রহী অভিনেতা রণবীর সিং
ছেলেবেলা থেকেই রণবীর অভিনেতা হতে চাইতেন। স্কুলের একাধিক নাটক ও বিতর্কে অংশ নিতেন। একবার জন্মদিনের এক পার্টিতে ঠাকুরমার অনুরোধে শিশু রণবীর নেচে দেখিয়েছিলেন।
রণবীরের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, তিনি হঠাৎ এক লাফে লনে নেমে পড়েন এবং ১৯৯১ সালের অ্যাকশন চলচ্চিত্র হাম-এর “চুম্মা চুম্মা” গানটির সঙ্গে নেচে দেখান। এই ঘটনায় তিনি রোমাঞ্চিত হন এবং অভিনয় ও নৃত্যে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
যদিও মুম্বাইতে এইচ. আর. কলেজ অফ কমার্স অ্যান্ড ইকোনমিকসে ভর্তি হওয়ার পর রণবীর উপলব্ধি করেন চলচ্চিত্রে সুযোগ পাওয়া অতটা সহজ নয়। চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরাই এই ধরনের সুযোগ পান।
তাই অভিনয়ের বাসনাকে “দূরাকাঙ্ক্ষা” মনে করে তিনি সৃজনশীল লেখালিখিতে মন দেন। এরপর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ব্যাচেলর অফ আর্টস’ ডিগ্রি অর্জন করেন।
চলচ্চিত্র শিল্পে রণবীরের পর্দাপন
ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ব্লুমিংটন থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর রণবীর চলচ্চিত্র শিল্পে যোগদান করার জন্য ভারতে ফিরে আসেন। ২০১০ সালে যশ রাজ ফিল্মসের রোম্যান্টিক কমেডি ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ ছবিতে একটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন।
এটিই ছিল তাঁর অভিনীত প্রথম ছবি। ছবিটি সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেছিল এবং বাণিজ্যিকভাবেও সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। এই ছবিতে অভিনয় করে রণবীর শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা বিভাগে একটি ‘ফিল্মফেয়ার পুরস্কার’ অর্জন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অভিনয়ের ক্লাস করার সিদ্ধান্ত নেন এবং থিয়েটারকে মাইনর হিসেবে গ্রহণ করেন। পড়াশোনা শেষ করে ২০০৭ সালে রণবীর ফিরে আসেন মুম্বাইতে।
চ্যালেঞ্জিং সময়
মুম্বাইতে আসার প্রথম দিকে কয়েক বছর ওঅ্যান্ডএম ও জে. ওয়াল্টার টমসনের মতো কয়েকটি এজেন্সির সঙ্গে কপিরাইটার হিসেবে বিজ্ঞাপনের কাজ করেন।
এরপর কিছুদিন তিনি সহকারী পরিচালকের কাজও করেন। কিন্তু অভিনয়কেই জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়ে তিনি সেই কাজ ছেড়ে দেন। স্থির করেন পরিচালকদের কাছে নিজের পোর্টফোলিও পাঠাবেন।
সব ধরনের অডিশনে যান। কিন্তু কোথাও কোনও ভালো সুযোগ পাননি রণবীর। শুধু গৌণ চরিত্রে অভিনয়ের ডাক পেতে শুরু করেন: “সবকিছুই এত হতাশাব্যঞ্জক ছিল যে আমি খুব অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলাম। এক এক সময় আমি ভাবতাম আমি ঠিক করছি না ভুল করছি”।
রণবীরের সফলতা
এরপর রণবীর অভিনয় করেন রোম্যান্টিক ড্রামা ‘লুটেরা (২০১৩)’, সঞ্জয় লীলা ভংসালী পরিচালিত ট্র্যাজিক রোম্যান্স ‘গোলিয়োঁ কী রাসলীলা রাম-লীলা (২০১৩)’ এবং অ্যাকশন-ড্রামা ‘গুন্ডে (২০১৪)’ ছবিতে। গোলিয়োঁ কী রাসলীলা রাম-লীলা ছবিটি ছিল তাঁর অভিনীত বাণিজ্যিকভাবে সফল ছবিগুলির মধ্যে সর্বাগ্রে।
২০১৫ সালে তিনি অভিনয় করেন কমেডি-ড্রামা দিল ধড়কনে দো ছবিতে। এই বছরই বাজীরাও মস্তানী ছবিতে তিনি প্রথম বাজিরাওয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এই ছবিটি ছিল বলিউডের সর্বাধিক বাণিজ্যসফল ছবিগুলির অন্যতম।
ছবিটি সমালোচকদের প্রশংসাও অর্জন করে এবং এই ছবিতে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন।
রণবীরের পাশাপাশি জানব বলিউডের একজন রাণীর গল্প
ব্যক্তি রণবীর সিং
রণবীর সিং, বলিউডে তরুণ অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম সেরা অভিনেতা ও সুপারস্টার। স্ক্রিনের গুণাগুণের চেয়ে সিং’কে বেশি ভালো লাগে তার অফ স্ক্রিন ব্যক্তিত্বের জন্য।
এত বড় স্টার ও তুমুল জনপ্রিয় হয়েও নিজের মধ্যে সামান্যতম অহংকার নেই, সবসময় ফান লাভিং ব্যবহার। একজন সাধারণ মানুষের মতো আচরণ, আর বিভিন্ন ইতিবাচক পাগলামো তো আছেই।
ফলাফল হিসেবে পর্দার সফলতা হোক কিংবা পর্দার বাহিরের দর্শকদের ভালোবাসা, দুই জায়গাতেই সমানভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
তবে অবাক হই তার প্রতি অনেকের স্ট্রং ঘৃণা দেখে। যদিও মাঝেমাঝে বাজে ড্রেসের সেন্সের জন্য অনেকেই ঠাট্টা করে, সেটা ভিন্ন বিষয়। ফ্যাশন সেন্স দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার, কেননা সে ইতোমধ্যে ফ্যাশন আইকন হিসেবে অনেক প্রেস্টিজিয়াস পুরষ্কার পেয়েছে।
যাক ড্রেস সেন্সের অপছন্দের ব্যাপারটা বুঝলাম, কিন্তু তাই বলে এমন সামান্য কারণে রণবীর সিং এর প্রতি এমন শক্ত অপছন্দের পেছনে যুক্তি বুঝা দায়।
অন্যরকম এক রণবীর
রণবীর সিংয়ের গুনাগুণের তালিকা যদি তুলে ধরা যায়, তাহলে বলা যায় তিনি একজন ভালো অভিনেতা। স্টার পাওয়ার থাকার পরেও এত সহজ সরল ও মানবিক থাকা, কো-স্টারদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ ও যে কারো সাথে সহজে মিশে যাওয়া খুব কম অভিনেতার মধ্যেই পাওয়া যায়।
উপস্থিত বুদ্ধি , যে কোন ইন্টার্ভিউ বা ফিল্ম প্রমোশনে প্রচণ্ড এনার্জেটিক থাকা কিংবা ভিউয়ারদের সামান্যও বোর ফিল করতে না দেওয়া, ছয় বছর কমিটেড থেকে নিজের ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করা ও সুযোগ পেলেই সেই ভালোবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রে সামান্যতম দ্বিধাবোধ না করা।
শুধু কি তাই? সবসাময়িক তারকাদের কাজের এপ্রিশিয়েট করা, বিশেষ করে নিজের স্ত্রীর প্রাক্তনকে (রনবীর কাপুর) প্রিয় অভিনেতা বলা ও ভূয়সী প্রশংসা করা, ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়রদের প্রতি প্রপার রেস্পেক্ট ও ট্রিবিউট, ফ্যানদের সাথে ইন্টারেকশনের ধরণ ইত্যাদি। তারপরেও কিছু দর্শকদের দেখি তাকে নিয়ে স্ট্রংলি অপোজিশন দেখাতে, সত্যি অদ্ভুত!
গত বছরের শুরুতে সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘পাদ্মাবত’ সিনেমার খিলজি চরিত্রে ও বছরের শেষে রোহিত শেঠির মাসালা ফিল্ম ‘সিম্বা’-তে পুলিশ চরিত্রের পর ‘গালিবয়ে’ এমন সাদামাটা স্ট্রিট র্যাপারের চরিত্রই প্রমাণ করে রণবীর সিং অভিনেতা হিসেবে কতটা ভার্সেটাইল।
সামনের দুটো প্রজেক্টও ইন্টারেস্টিং। ‘এক থা টাইগার’ ও ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ খ্যাত কবির খানের পরিচালনায় ক্রিকেটার কাপিল দেবের বায়োপিক ‘৮৩’ এবং ‘কুচ কুচ হোতা হ্যাঁ’, ‘কাভি খুশি কাভি গাম’, ‘মাই নেইম ইজ খান’ খ্যাত কারান জোহারের পরিচালনায় “তাখত” সিনেমা।
দেখা যাক শক্তিশালী এই তরুণ সুপারস্টার আমাদেরকে আর কি কি উপহার দেন। রণবীর সিংকে নিয়ে আপনাদের ভালোলাগা মন্দলাগা কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আমাদের।
Leave a Reply