প্রকৃতির লীলাভূমি আমাদের এ রুপসী বাংলাদেশ। প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে চান, ঘুরে আসুন বগাকাইন লেক এবং কেওক্রাডং শৃঙ্গ। বান্দরবান ভ্রমণ স্পট হিসেবে এ দুটো স্থান অসম্ভব সুন্দর, যা ঘুরতে না গেলে বুঝার উপায় নেই। টাকা খরচ করে বিদেশ ঘুরার আগে দেশটাকে ভালো করে দেখে নিন। জানুন আমাদের দেশটা কত সুন্দর।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চমক নিজের চোখে দেখতে চাইলে বান্দরবান জেলায় আপনাকে যেতে হবে। দহ্মিন-পূর্বাঞ্চলের এ জেলাটিতে প্রকৃতি তার সৌন্দর্য যেন ঢেলে সাজিয়েছে। কি নেই এখানে? দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়-শৈলী, ঝর্ণা-ঝিড়ি, জলপ্রপাত, প্রাকৃতিক লেক আর সবুজের সমারোহে আপনি প্রতি মুহুর্তে বলতে বাধ্য হবেন, আমাদের এ জন্মভূমি কতটা সুন্দর, কতটা অপূর্ব রুপময়!
আর এ কারণে বান্দরবানের টুরিস্ট স্পটের সংখ্যা এতো বেশি। সত্যি বলতে সংখ্যাটা এতো বেশি যে, বান্দরবানের সব গুলো স্পট ঘুরে ফেলতে অন্তত মাস খানেক সময় লেগে যাবে আপনার ।
যাই হোক, আজ বান্দরবানের নির্বাচিত দুটি স্পটের যাবতীয় ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য আর টুকিটাকি সব কিছু নিয়েই কথা বলব। কোন দুটি স্থান নিয়ে কথা বলছি তা ইতোমধ্যে আশা করি শিরোনামে দেখেই জেনে গেছেন।
বান্দরবান ভ্রমণ স্পট
অপরূপ সুন্দর আমাদের এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের একটি পরিচিত জেলা বান্দরবান জেলা। যেখানে রয়েছে সৌন্দর্যমণ্ডিত বিভিন্ন স্থান। তার মধ্য হতে আজকে আমরা জানব বগাকাইন লেক আর কেওক্রাডং শৃঙ্গ ভ্রমণ সম্পর্কে।
বগাকাইন লেক পর্ব
বিভিন্ন ভ্রমণ স্পটের মধ্যে বান্দরবান ভ্রমণ স্পটের আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে প্রথমেই জেনে নেয়া যাক বগালেকের ব্যাপারে কিছু মজার মজার তথ্য। বগা হ্রদ নামে পরিচিত এ প্রাকৃতিক লেকটি বান্দরবানের রুমা উপজেলার অন্তর্গত। ভূ–তাত্ত্বিকগণ ধারণা করেন যে, আজ থেকে সম্ভবত ২০০০ বছর আগে মৃত কোনো আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ বা উল্কাপিণ্ড পতনের ফলে লেকটি তৈরী হয়েছিল। যদিও এই লেকের ব্যাপারে অনেক উপকথাও প্রচলিত আছে। সেই ব্যাপারে আমরা অন্য কোনো দিন কথা বলবো।
ড্রাগন লেক নামে খ্যাত এ লেকটি ১৫ একরের বিশাল জায়গা নিয়ে তার সৌন্দর্যের জানান দিচ্ছে। লেকের গভীরতা ১২৫ ফুট, মিটারে ৩৮ মিটার প্রায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২৪৬ ফুট উপরে থাকা এই লেকটি আকাশ, সবুজের চাদরে ঢেকে থাকা পাহাড়, আর নীল জলের অপরুপ সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে পর্যটকদের কাছে হয়ে উঠেছে এতোটা অনন্য। নীল জলরাশি সঞ্চয় করে প্রকৃতি যেন তার আপন খেয়ালে তৈরী করেছে এই হ্রদ।
নীল জল আর নীল আকাশ মিলে প্রকৃতির অবিশ্বাস্য এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, আর সাথে চারদিকে ঘিরে আছে সবুজের ছোঁয়া। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই লেকের পানি প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে মাসে ঘোলাটে হয়। আর লেকের সাথে সাথে আশেপাশের নদীর পানিও ঘোলাটে রং ধারণ করে। কারণ হিসেবে মনে করা হয়, এর তলদেশে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ আছে। এ প্রস্রবণ থেকে পানি বের হওয়ার সময় হ্রদের রঙ বদলে যায়। আবার স্থানীয় অনেকের মতে, এই লেকের পানি কখনোই কমে না। সত্যতা জানা নেই, তবে অবাক লাগার মত ব্যাপার।
সকাল, সন্ধ্যা কিংবা রাত, প্রতি বেলাতেই লেক নতুন রূপে ধরা দিবে আপনার কাছে। সকালের উজ্জ্বল আলো যেমন বগালেককে দেয় স্নিগ্ধ সতেজ রূপ, আর রাতে আপনি দেখবেন ভিন্ন এক নতুন পরিবেশ। আকাশে যদি চাঁদের উপস্থিতি থাকে, তাহলে এই লেক হয়ে উঠবে অপূর্ব আর মায়াবী।
ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বগা হ্রদ দুইভাবে সমাদৃত। এই লেক গন্তব্য হিসেবে যেমন জনপ্রিয়, একই সাথে বগালেক পর্বতারোহীদের কাছে অনেকটাই বেস ক্যাম্পের মতো। কারণ যারা রুমা হয়ে ট্রেকিং রুটগুলোতে যেতে চায়, তাদের জন্য বেস ক্যাম্প করার জন্য বগালেক ভাল অপশন।
বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান | বগালেক
বগালেক সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে গেলাম আমরা। এখন জেনে নেই, এই লেকে যাওয়ার ট্যুর–প্ল্যান।
বগালেক যাওয়ার ট্যুর-প্ল্যান
বাংলাদেশের যেকোন স্থান থেকে এই লেকে ঘুরতে যেতে চাইলে বান্দরবান জেলা শহরে সবার আগে আসতে হবে। স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ঢাকা থেকে কেউ বগা হ্রদে কীভাবে আসবেন সে ব্যাপারে এবার বলি।
ঢাকা থেকে বান্দরবান আসতে হলে আপনি দুইভাবে আসতে পারেন। প্রথমত, ঢাকার গাবতলী/শ্যামলী/কলাবাগানসহ অনেক টার্মিনাল আছে, যেখান থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে গাড়ি ছাড়ে। সাধারণত সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বাসগুলো ছেড়ে যায়। এক্ষেত্রে হানিফ, শ্যামলী, সৌদিয়া, ঈগল, সেন্ট–মার্টিন পরিবহনের বাস সহ বেশ কয়েকটি অপশন থাকবে আপনার কাছে। এসি, নন–এসি উভয় কোচেরই বাস পাবেন। টিকেট কেটে বাসে উঠে পড়লে সোজা বান্দরবান নেমে যেতে পারেন।
কেউ ট্রেনে যেতে চাইলে তাও যেতে পারেন। তবে ভেঙ্গে যাওয়া লাগবে। কমলাপুর থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোন আন্তঃনগর ট্রেনে করে আপনাকে আগে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে হবে। তারপর সেখান থেকে বাসে করে বান্দরবান। তবে বাসে গেলে তুলনামূলকভাবে অনেকটা সময় কম লাগে বলে বাসে যাওয়াই ভাল।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাতের সব বাসগুলো মোটামুটিভাবে সকাল ৭টা থেকে ৯ টার মধ্যে পৌঁছে যায়। বাস থেকে নেমে বাস স্ট্যান্ডের পাশে কিছু ভাল মানের হোটেল পাবেন, চাইলে সকালের নাস্তা করে নিতে পারেন। নাস্তা শেষ করে সেখান থেকে ১০ টাকা জনপ্রতি অটোবাইকে করে রুমা-থানচি বাস স্ট্যান্ডে চলে যাবেন।
বান্দরবান শহর থেকে রুমা উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৫৫ কি.মি.। রুমা–থানচি বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রতি দিন ২ ঘন্টা পরপর ৫টি বাস রুমার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সকাল ৭টা, ৯টা, ১১টা, দুপুর ১টা ও ৩টা। আপনার সময় বুঝে টিকেট করে বাসে উঠে পড়ুন। আড়াই ঘন্টা পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে যেতে পৌছে যাবেন রুমা উপজেলায়।
রাস্তায় চোখে পড়বে বান্দরবানের বিশালাকার পাহাড় গুলো । আর একই সাথে উপভোগ করবেন বান্দরবানের চোখ জুড়ানো অপার সৌন্দর্য।
বগালেক ভ্রমণ গাইড
যদি পূর্বে ভ্রমণ গাইডের কোন ব্যবস্থা না করে থাকেন, রুমা বাজারে নেমে প্রথমে আপনাকে গাইড খুঁজতে হবে। বাজারে স্থানীয় কাউকে বললে পেয়ে যাবেন গাইডের ঠিকানা। প্রতিদিনের জন্যে গাইডকে দিতে হবে বিজিবি দ্বারা নির্ধারিত ৬০০ টাকা।
রুমাতে পৌঁছাতে যদি দুপুর হয়ে যায়, তাহলে ভাল হবে দুপুরের খাবারের ঝামেলাটা রুমা বাজার থেকে সেরে নেওয়া। বাংলা খাবার যেমন মাছ মাংস সব কিছু পাবেন। খাবার শুরু করার আগে গাইডকে বলে রাখুন বিজিবি ফর্ম আর ছাড়পত্র যাবতীয় যেসব কিছু আছে তা রেডি করে ফেলতে।
খাবার পর্ব শেষ করেই ফর্ম ফিল আপ করে বিজিবি ভ্রমণ খাতায় নাম ঠিকানা স্বাক্ষর সবকিছু ঝামেলা মুক্ত করে আবার রুমা বাজার চলে আসুন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন- খাবার স্যালাইন, ট্যাকিং শু, হাল্কা ঔষুধ কিনে চাদের গাড়ি কিংবা ফোর হুউলার জিপ ভাড়া করে ফেলুন। এক্ষেত্রে গাইড আপনাকে সাহায্য করবে।
আসলে ফোর হুউলার জিপ নাকি চাদের গাড়ি ভাড়া করবেন এটা নির্ভর করবে আপনার ট্যুর মেম্বার কতজন তার উপর। ৪-৬ জন হলে ফোর হুউলার জিপ ভাড়া নেয়াটাই ভাল। খরচ পড়বে আসা যাওয়া ৪২০০ টাকার মত। আর মেম্বার তার বেশি হলে চাদের গাড়ি নেয়া ভাল। খরচ ৫৩০০ টাকার কিংবা তার কিছু কম বা বেশি।
বলে রাখি, রুমা বাজার থেকে বগা হ্রদের এর দূরত্ব ১৭ কি.মি.। গাড়ি আপনাকে বগালেকের পাদদেশের একটা পাহাড়ের নিচে নামিয়ে দিবে। জায়গাটার নাম কমলাবাজার। এই ১৭ কি.মি. রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। তাই রাস্তার কিছুটা খারাপ অবস্থা। তবে রুমাবাজার থেকে কমলাবাজার পর্যন্ত রাস্তা আপনাকে নিঃসন্দেহে রোলার কোস্টারে চড়ার স্বাদ দিবে।
মোটামুটিভাবে ১ ঘন্টার প্রকৃতির রুপ আর সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে রুমা থেকে বগালেকের সে পাহাড়ের কাছে চলে আসবেন। গাড়ি থেকে নামার পড়ই আপনার ট্র্যাকিং শুরু।
এই পাহাড়ের অন্যপাশেই আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে বগালেক। মোটামুটি ৩০–৪৫ মিনিট সময় লেগে যাবে। পাহাড়ের উপরে উঠেই আপনার চোখে পড়বে কাঙ্খিত বগালেক। তবে আগে আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিতে।
লেকের পাড়ে অবস্থিত বিজিবি ক্যাম্পে পুনরায় নাম ঠিকানা এন্ট্রি করে বম পাড়ায় চলে আসুন।
প্রথম রাতটা বগালেকে কাটাতে পারেন। থাকার মত কটেজ পাবেন এখানে। লেকের কাছেই আছে কটেজগুলো। চাইলে সারারাত লেকের কাছে কটেজে শুয়ে বসে আড্ডা দিয়ে পার করে দিতে পারেন অনায়াসে। কটেজের ভাড়া জন প্রতি ১০০ টাকা। একটি কটেজ বাড়িতে ১২–১৪ জন থাকা যায়।
গাইডকে বলে দিন রাতের খাবারের ব্যবস্থা করে ফেলতে। স্থানীয় বমদের বাড়িগুলোর বাইরে তারা খুব সুন্দর টেবিল চেয়ারের ব্যবস্থা করে রেখেছে। সেখানে বসে রাতের খাবার খেয়ে নিতে পারেন। খাবার হিসেবে ডিম ডাল ভর্তা মুরগির মাংস সবই পাবেন। জনপ্রতি ১২০–১৫০ টাকায় হয়ে যাবে।
চাইলে আপনারা বারবিকিউের ব্যবস্থা করতে পারবেন। লেকের পাড়ে বসার জন্যে খুব সুন্দর ব্যবস্থা করা আছে। চাইলে সেখানে বসে খুব কাছ থেকে রাতের এই লেকের মায়াময় সৌন্দর্য আর স্বর্গীয় রূপ খুব কাছ থেকে দেখে ফেলতে পারেন। জ্যোৎস্না রাত হলে তো আপনার ষোলকলা পূর্ণ হয়ে যাবে আশ্বাস দিচ্ছি। হতে পারে আপনার জীবনের সেরা রাতের একটি।
বগালেকের ব্যাপারে আজ এ পর্যন্তই। আশা করছি, অভিযাত্রীর এই আয়োজনে আপনি অবশ্যই বগালেক একবার হলেও ঘুরে আসবেন আরে উপভোগ করে নিবেন এর অপার সৌন্দর্য।
কেওক্রাডং পর্ব
বান্দরবান ভ্রমণ স্পটের আরেক সৌন্দর্য হল কেওক্রাডং শৃঙ্গ। বগালেক ঘুরতে এসে এই শৃঙ্গ না দেখে চলে যায় এমন নজির খুব কমই আছে। বগালেক থেকে তিন বা সাড়ে তিন ঘন্টার হাঁটাপথ পাড়ি দিতে পারলে পৌঁছে যাবেন বাংলাদেশের তৃতীয় সবোর্চ্চ চূড়ায়। এটি শব্দটি মারমা শব্দ। মারমা ভাষায় কেও মানে ‘পাথর’, কাড়া মানে ‘পাহাড়’ আর এবং ”ডং” মানে ‘সবচেয়ে উঁচু’। অর্থাৎ কেওক্রাডং মানে সবচেয়ে উঁচু পাথরের পাহাড়।
একটা সময় এটাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া ধরা হত। তবে আধুনিক গবেষণায় এই তথ্য ভুল প্রমাণিত হয়েছে। পরবর্তীতে দেখা যায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া হল সাকা হাপং, দ্বিতীয় অবস্থানে আছে তাজিংডং। আর তাই এটা এখন তৃতীয় অবস্থানে রাখা হয়েছে।
কেওক্রাডং এর উচ্চতা কত
আগে এর উচ্চতা ধরা হত ১২৩০ মিটার। অধুনা রাশিয়া কর্তৃক পরিচালিত SRTM উপাত্ত এবং GPS গণনা থেকে দেখা গেছে এর উচ্চতা ১,০০০ মিটারের কম l ৯৬৭ মিটার/৩১৭২ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এ পাহাড়টি রুমা উপজেলার আওতায় পড়েছে।
কেওক্রাডং যাওয়ার ট্যুর প্ল্যান
যাহোক বগালেকে এক রাত থাকার পর পরদিন সকালে রওনা দিতে পারেন কিওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে। সকালবেলা নাস্তা করে (বমদের যে ঘরে রাতের খাবার খেয়েছেন, বলে রাখলে তারাই সকালের নাস্তা তৈরি করে রাখবে) বিজিবি ক্যাম্পে চলে যান।
মার্ক টোয়েন বলেছেন – আজ থেকে বিশ বছর পর আপনি এই ভেবে হতাশ হবেন যে, আপনার পক্ষে যা যা করা সম্ভব ছিল তা করতে পারেননি। তাই নিরাপদ আবাস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ুন। আবিষ্কারের জন্য যাত্রা করুন, স্বপ্ন দেখুন আর শেষমেশ আবিষ্কার করুন।
সেখানে আবারো নাম এন্ট্রি করে নিন সাথে বম পাড়া থেকে হাল্কা কিছু স্ন্যাকস নিয়ে নিতে পারেন। তারপর শুরু করে দিন ট্র্যাকিং। আর হ্যাঁ ব্যাগপ্যাক কিছুটা হাল্কা করে নিন। জিনিষপত্র যেমন- কাপড় অথবা অন্যান্য কিছু থাকলে গাইডের মাধ্যমে স্থানীয় বম পাড়ায় রেখে যেতে পারেন। তাতে ট্র্যাকিং করতে সুবিধা হবে, কষ্টও অনেকটা কমে যাবে।
দীর্ঘ ৩–৪ ঘন্টা পর পৌঁছে যাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্গে। সকল ক্লান্তি ভুলে যাবেন যখন চূড়া থেকে চারপাশটা দেখবেন। রোমাঞ্চ আর এক অজানা ভাল লাগার শিহরণ অনুভব হবে গ্যারান্টি দিচ্ছি। আনন্দে উদ্ভাসিত হবেন আপনি। জ্বী হ্যাঁ, মোটেও বাড়িয়ে বলছি না। সাদা মেঘ আপনার শরীরকে ছুঁয়ে যাবে। সাদা মেঘ হাত দিয়ে ধরার লালিত স্বপ্নও পূরণ হয়ে যাবে একইসাথে।
বলে রাখি, এই শৃঙ্গে যাওয়ার সময় বোনাস হিসেবে পথে পড়বে ছোট ও বড় চিংড়ি ঝর্ণা। পথে পিপাসা পেলে সেখান থেকে পানিও নিয়ে নিতে পারেন। মিঠা পানির এ ঝর্ণাগুলো পানের যোগ্য।
যাইহোক, শৃঙ্গের চূড়ায় একটা রাত থাকতে চাইলে তারও ব্যবস্থা আছে। এখানে বলে রাখি, আপনি চাইলে একেবারে চূড়ায় থাকতে পারেন আবার চাইলে পাহাড়ের চূড়া থেকে একটু নিচে মানে দার্জিলিং পাড়াতেও থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে চূড়ায় থাকলে প্রতিরাতের জন্য জন প্রতি পড়বে ৩০০ টাকা, আর দার্জিলিংয়ের পাড়াতে থাকলে পড়বে ২০০ টাকা। খাবার ব্যবস্থা বগালেকের মতই। গাইড আপনাকে সে ব্যবস্থা করে দিবে।
পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত কেওক্রাডং থেকে আবার রওনা দিন। চাইলে সকালের খাবার খেয়ে রওনা দিতে পারেন। এটাই ভাল। এই শৃঙ্গে উঠতে যতটা কষ্ট, নামা ততটা কষ্টের না। সময়ও কম লাগবে। ২ ঘন্টা হাঁটার পর আবার বগালেকে পৌঁছে জিনিষপত্র যা রেখে গিয়েছিলেন তা সংগ্রহ করে নিন। চাইলে গোসল করে নিতে পারেন লেকের পানিতে। এক্ষেত্রে একেবারে তীরে কয়েকটা ঘাট আছে গোসল করার জন্য। ঘাট থেকে না যাওয়াই ভাল। কারণ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যাওয়ার দরুন বিজিবি লেকের পানিতে নামা এখন সম্পূর্ণ নিষেধ করে দিয়েছে।
তারপর পুণরায় বিজিবি ক্যাম্পে নাম এন্ট্রি করে বগালেক শেষ বারের মত দেখে পাহাড় থেকে নেমে গাড়িতে উঠে পড়ুন। ভাড়া করা গাড়িটি আপনাদের জন্য অপেক্ষায় থাকবে। গাইডকে যথাসময়ে থাকার জন্যে সেটা নিশ্চিত করুন।
রুমা বাজার নেমে চাইলে লাঞ্চ করে নিন। ক্যাম্পে ফিরে নাম এন্ট্রি শেষ করে বাসে চলে আসুন বান্দরবান। ৫টায় নেমে কাউন্টার থেকে ঢাকাগামী বাসের টিকিট কেটে অপেক্ষা করতে থাকুন। সেখান থেকে ৮ টার বাসে করে ব্যস্ত নগরী ঢাকায় সকাল ৬–৮ টার মাঝে পৌঁছে যাবেন।
জরুরী কিছু কথাঃ
১/ জামাকাপড় খুব বেশি নেয়ার দরকার নেই। যেগুলো না নিলেই নয়, শুধু সেগুলো নিবেন। কারণ ব্যাগ বেশি ভারী হলে যাত্রাপথে এই খাড়া রাস্তায় সাথের বোঝা নিয়েই আপনাকে উঠতে হবে। ব্যাপারটা মোটেও সুখকর হবে না।
২/ ব্যাগপ্যাক নিবেন। হাতে ব্যাগ না নেয়ার জন্য সাজেস্ট করব।
৩/ ট্র্যাকিং সু অথবা ভাল মজবুত জুতা নিয়ে যাবেন। জুতার গ্রিপ ভাল থাকা চাই।
৪/ পানির বোতল নিবেন। খুব বেশি বড় নাহ। ১/২ লিটারের। যাতে খুব তৃষ্ণা পেলে পানি পান করতে পারেন। সাথে স্যালাইন রাখতে পারলে ভাল।
৫/ বর্ষাকালে গেলে লবণ নিবেন। কারণ বৃষ্টি হলে ভয়ানক জোঁকের অত্যাচার সহ্য করা লাগতে পারে আপনাকে।
৬/ যদি সম্ভব হয় বান্দরবান আসার পূর্বে ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচার জন্যে ম্যালেরিয়ার টিকা নিয়ে নিন।
৭/ ফার্স্ট এইড হিসেবে হালকা কিছু ঔষধ নিয়ে নিতে পারেন।
৮/ যেহেতু পাহাড়ি এলাকা, তাই মোবাইল বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে চার্জ দেয়ার জন্যে আপনি তেমন কোন সুযোগ পাবেন নাই। তাই পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে নিন।
৯/ রোদ এড়ানোর জন্যে গামছা বা ক্যাপ পরে নিতে পারেন।
১০/ যেকোন অপচনশীল ময়লা-আবর্জনা পাহাড়ে কিংবা লেকে ফেলে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট না করার অনুরোধ রইল।
হ্যাপি ট্রাভেলিং। আজকে আমরা বান্দরবান ভ্রমণ স্পট হিসেবে বগাকাইন লেক আর কেওক্রাডংয়ের সৌন্দর্য আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। আবার অন্য কোন দর্শনীয় স্থান নিয়ে লিখব অভিযাত্রীর পাতায়। ততদিন পর্যন্ত ভাল থাকুন,সুস্থ থাকুন। লেখাটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন।
Leave a Reply