পড়ালেখায় মনোযোগ নেই? মনোযোগী হতে করণীয় কি? জানতে আর্টিক্যালটি পড়ুনঃ
পড়ার অভ্যাস আমাদের জ্ঞানের পরিধিকে বৃদ্ধি করে দেয়। তাই নিজেকে জ্ঞানের ভাণ্ডারের মধ্যে নিয়ে যেতে চাইলে এটিই সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পন্থা। তবে পড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে – পড়ালেখায় মনোযোগ ধরে রাখা। কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে পারলে পড়ার প্রতি মনোযোগ ধরে রাখা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। তাহলে চলুন জেনে নেই পড়ায় মনোযোগ বাড়ানোর পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে।
আমরা যদি পড়ার সময় সঠিকভাবে আমাদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারি তাহলে সেই জ্ঞানার্জন পরিপূর্ণ হবে। এটি অনেকের জন্য কিছুটা কঠিন হলেও মনোযোগী হওয়ার পদ্ধতিগুলো মেনে চললে জ্ঞানের পরিধি বাড়াবে।
পড়ায় মনোযোগ বাড়ানোর পদ্ধতি
১) সঠিক পরিবেশ নির্বাচন করুন
পড়ার স্থান হিসেবে একটি নির্জন স্থানকে নির্বাচন করুন। কোলাহলপূর্ণ কোন স্থান নির্বাচন করবেন না। এতে করে পড়ার প্রতি আপনার মনোযোগ কমে যাবে। তবে যে জায়গাটিতে পড়ছেন সেখানে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাস থাকে।
কয়েক ঘন্টা পর বোরিং হয়ে যাবেন এমন কোন পরিবেশও নির্বাচন করবেন না। এমনকি খুব প্রয়োজন না হলে আপনার পড়ার সময় আপনার আশেপাশের মানুষকেও সেই স্থানটিতে যেতে বারণ করবেন।

২) মনস্থির করুন
পড়তে বসার আগে নিজের মনকে স্থির করুন। পড়তে ইচ্ছে না করলে জোর করে পড়তে বসবেন না। কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলে তা পড়তে বসার আগেই সেরে ফেলুন।
পড়ার সময় শুধু আপনি যা নিয়ে পড়ছেন সেটিই ভাবুন। কোন গুরুতর সমস্যার কথা কিংবা অন্য কোন বিষয়কে মাথার ভেতরে আনবেন না।
৩) রুটিন করে পড়ুন
সারাদিনের কাজের জন্যে একটি নির্দিষ্ট রুটিন করে ফেলুন। এতে করে সারাদিনের কাজের বিশৃঙ্খলা ঘটার সম্ভাবনা কমে আসবে। একই সাথে এর ফলে আপনি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় পড়তে বসতে পারবেন।
ধীরে ধীরে আপনি ঠিক ঐ সময়টিতে পড়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী হয়ে উঠবেন যা আপনার মনোযোগ ধরে রাখতে অনেক ভুমিকা রাখবে।

৪) মোবাইল, ফেসবুক কিংবা ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকুন
পড়তে বসার আগে অবশ্যই মোবাইল, রেডিও, মিউজিক প্লেয়ার, টিভি রিমোট কিংবা মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাবে এমন গ্যাজেট নাগালের বাইরে রাখুন। এগুলোকে হাতের কাছে রাখলে মনোযোগ নষ্ট হবার সম্ভাবনা আছে।
যদি পড়ার ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে প্রয়োজন হয় তাহলে ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া যথাটুকু সম্ভব ইগনোর করুন। কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ইন্টারনেট থেকে বেরিয়ে যান।
৫) প্রয়োজনোয় জিনিসপত্র একসাথে নিয়ে বসুন
পড়ার জন্যে যে যে উপকরণ প্রয়োজন তার সবগুলো নিয়ে বসুন। এতে করে আপনি প্রতি একাগ্র হয়ে উঠতে পারবেন। ফলে পড়ার প্রতি মনোযোগ নষ্ট হবে না।
একই সাথে, এই অভ্যাসটি আপনার সময় অনেক বাঁচিয়ে দিবে ও ক্লান্তি কমিয়ে দিবে।
৬) টপিকের সাথে আগে থেকে পরিচিত হোন
যে টপিক নিয়ে পড়তে বসতে যাচ্ছেন তার সাথে আগে থেকে একটু পরিচিত হোন। পরিচিত হতে সবচেয়ে সহজ দুইটি উপায় আছে।
১. পুরো টপিকটি দ্রুত একবার রিডিং পড়ে নেওয়া, ২. টপিকের ব্যাপারে একটা সংক্ষিপ্ত ধারনা নেওয়া।
এই দুইটির যেকোন একটা আপনি অনুসরণ করতে পারেন। আপনি চাইলে উক্ত বিষয়ের উপর কিছু এক কথার প্রশ্নোত্তরও পড়ে নিতে পারেন। এতে করে উক্ত টপিকের উপর আপনার আতংক কেটে যাবে। এটি মনোযোগ বাড়াতে ভালো ভূমিকা রাখে।

৭) নির্দিষ্ট সময় পরে বিরতি নিন
একটা নির্দিষ্ট সময় পর আমাদের মস্তিষ্কের রিফ্রেশমেন্ট প্রয়োজন হয়। এই কারণে একটানা কখনো পড়বেন না। প্রতি ৫০ মিনিট পর ১০ মিনিট বিরতি নিন।
বিরতির সময়ে হাটা-চলা করতে পারেন, ক্লান্ত লাগলে হালকা নাস্তা করে নিতে পারেন কিংবা কিছু সময় গান শুনতে পারেন। এতে করে আপনি পুনরায় পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়া আরম্ভ করতে পারবেন।
৮) নিজেকে পুরষ্কৃত করুন
পড়ার শুরুতে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করুন। ঠিক সেই লক্ষ্যে পৌঁছালে নিজেকে পুরস্কৃত করুন। সম্ভব হলে প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে নিজেই নিজেকে পুরষ্কৃত করুন।
এতে করে পড়ার ক্ষেত্রে আপনি নতুন উদ্দীপনা ফিরে পাবেন। ফলে আপনি পড়ার প্রতি আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

৯) পর্যাপ্ত ঘুমান
পর্যাপ্ত ঘুম আপনাকে চাঙ্গা করে তুলবে, কাজের প্রতি মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে। ৬৫ বছর পর্যন্ত একটা মানুষের সুস্থ থাকার জন্যে দৈনিক ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানো উচিৎ।
পর্যাপ্ত ঘুম আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখবে। আপনাকে দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখবে। ফলে আপনি পড়াশুনায় মনোযোগী হতে পারবেন।
জীবনে সফলতা পেতে চাইলে ত্যাগ করুন ৮টি বদ অভ্যাস
১০) মানসিক ও শারীরিক ব্যায়াম করুন
মনোযোগ বাড়াতে প্রতিদিন এক্সারসাইজ করুন। সম্ভব হলে প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্যে হলেও শারীরিক ব্যায়াম করুন। প্রতিদিন সকালে কমপক্ষে দুই মাইল হাটুন।
এতে করে শরীরের আলসেমি কেটে যাবে। পাশাপাশি মনোযোগ বাড়াতে কিছু মানসিক ব্যায়ামও আছে। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন এই মানসিক ব্যায়ামগুলো করুন।
এসব মানসিক ব্যায়ামের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল- একটি পেপারের মধ্যে কালো একটি বিন্দুতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকা, নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিবিধি লক্ষ্য করা, পরিবেশের বিভিন্ন জিনিসের ঘ্রাণ নেওয়া ইত্যাদি।

১১) স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার আপনাকে সুস্থ রাখবে। একই সাথে শরীর সুস্থ থাকলে আপনার মন ভালো থাকবে। নিজের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা এমনভাবে সাজান যেন তাতে ভিটামিন প্রোটিন, মিনারেল, কার্বোহাইড্রেট সঠিক মাত্রায় থাকে।
সকালের নাস্তায় এমন খাদ্য রাখুন যা আপনাকে ভালো পরিমাণে এনার্জী দিতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় চা, কফি খাওয়া বন্ধ করুন। এটি আপনাকে খাদ্যের গুণাগুণ হ্রাস করে দেয়। ধূমপান পরিহার করুন।
প্রতিটা কাজের ফলাফল নির্ভর করে সেই কাজের প্রতি আমাদের মনোযোগের উপর। পড়ার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তেমনি। সঠিক মনোযোগই পারে আমাদের পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে।
এই আগ্রহ বাড়াতে উপরের নিয়মগুলো আপনাদের কাজে লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস। শুভকামনা সবার জন্যে।
Leave a Reply