ধনী গরিবের পার্থক্য
“আপনি গরিব হয়ে জন্মানো দোষের না, বরং আপনি গরিব হয়ে মৃত্যুবরণ করা দোষের” বিল গেটসের একটি উক্তিটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই-ই পরিচিত।
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনীদের একজন যখন এই কথা বলে তখন কয়েকটি প্রশ্ন চলে আসে- তাহলে কি গরিব থেকে ধনী না হওয়াটা কি সত্যি অন্যায়? নাকি ধনী হওয়া সহজ?
ধনী বলতে আসলে ধনসম্পদের কথা বলা হয়েছে নাকি বড় মানসিকতার কথা বলা হয়েছে? সত্যি বলতে, একবিংশ শতাব্দীর এই যুগে এসে একজনকে ধনী বলতে তার ধনসম্পদের পরিমাণটিই প্রধান।
‘ধনী গরিবের পার্থক্য’ এ বিষয়ে গবেষণা কি বলে?
তারপরও অনেক প্রশ্ন থেকে যায় মনের মধ্যে। আর প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় সম্প্রতি একটি গবেষণায়। লেখক “থমাস করলে” পাঁচ বছর ধরে ২৩৩জন সম্পদশালী মানুষ আর ১২৮ দরিদ্র মানুষের উপর গবেষণা করেন।
এই গবেষণার তথ্য মতে, একজন মানুষ দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েও তার জীবনযাত্রার ধরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে।
সুতরাং দৈনন্দিন কাজকর্ম, স্বভাব, আচার আচরণ পারে একজন ধনী ও গরীব মানুষের মধ্যে পার্থক্য করে দিতে। নিজের লাইফস্টাইলের উপর এমন কর্তৃত্ব করার অভাবেই বেশিরভাগ মানুষের সারাজীবন দরিদ্র হয়েই কাটে।
যে অভ্যাস আপনাকে কখনো ধনী হতে দেবে না- পুরো ব্যাপারটি ভিডিও আকারে দেখতে চাইলে স্ক্রল করে নিচে চলে আসুন।
অভিযাত্রীর আজকের আলোচনায় আমরা কথা বলব এই রিসার্চের বিস্তারিত বিষয় নিয়ে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
এক
ছোট বেলা থেকে আমরা একটা কথা শুনে এসেছি, “Early to bed, eary to rise makes a man healthy, whealthy and wise.” কিন্তু ছোটবেলার এই শিক্ষাটি আমরা সময়ের সাথে ভুলতে বসি।
যার কারণে, যে ছেলেটা ক্লাসের ফার্স্টবয় ছিলো সেই-ই একটা সময় ব্যাকবেঞ্চার হয়ে যায়। এই গবেষণা বলছে, ৪৪ শতাংশ ধনী ব্যক্তিরা তাদের কাজ কর্ম শুরুর তিন ঘন্টা আগে ঘুম থেকে উঠে।
ফলে তাঁরা এই বাড়তি তিন ঘন্টা সময় নিজেকে দিতে পারে। এর মধ্যে ধর্মীয় অনুশাসন, এক্সারসাইজ, কিংবা সারাদিনের প্ল্যান করে ফেলেন।
তবে এদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই এই সময়টা এক্সারসাইজে দেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী এই হার ৭৬ শতাংশ। বেশিরভাগ ধনীরা এই সময়টায় এক্সারসাইজ করেন কারণ এটি তাদের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তাঁরা কাজের প্রতি বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেন।
দুই
ইংরেজীতে একটি কথা আছে, Less Talk, More Action. অর্থ্যাৎ আপনি কম কথা বলুন, বেশি কাজে দেখান। এই কম কথা কিন্তু কেবল বড়াই করার ক্ষেত্রে নয়।
এটা আপনার ব্যবহার কিংবা বন্ধুদের সাথে কতটা সময় গল্প করে কাটাচ্ছেন সেক্ষেত্রেও কার্যকরী। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মানুষ যখন ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট করতে ব্যস্ত তখন আমরা ব্যস্ত চায়ের দোকানে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করতে।
আসলে ধনী হবার ক্ষেত্রে এই অভ্যাসটিও একটি অন্তরায়। কারণ কেবল ৬ শতাংশ ধনী লোক আড্ডায় মশগুল থাকেন এবং তাদের ভেতরের কথা অন্যের সাথে শেয়ার করেন।
মূলত তাঁরা আড্ডা নয়, তাঁরা সময় বাঁচিয়ে চলেন। যার কারণে ৬৭% ধনী মানুষ প্রতিদিন ১ ঘন্টা কিংবা তারও কম সময় দেন বিনোদনের জন্যে।
তিন
স্কুল কিংবা কলেজে “Value of time” কম্পোজিশনে লেখতে গেলেই “ A man without a goal is like a ship without a rudder” লাইনটি জুড়ে দিতাম। এর কারণ মূলত অন্য কিছু না।
ধরুন, একটি লোক রেসে নেমে যদি তার লক্ষ্যের বরাবর সঠিক পথে এগিয়ে যান কেবল তাহলেই কিন্তু তার পক্ষে রেসটি শেষ করা পসিবল।
ধনী হবার রেসটিও তেমন। আপনার একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন। কারণ পরিকল্পনা ছাড়া টাকা খরচ করলে রাজার ভান্ডারও একটা সময় ফুরিয়ে যায়।
ধনীদের মাঝে এই উপলব্ধিটি রয়েছে। তাই শতকরা ৬৭% ধনী ব্যক্তিরাই নিজেদের লক্ষ্য লেখে লেখে স্থির করেন এবং সে অনুযায়ী সামনের দিকে এগিয়ে যান।
চার
ধরুন, মাসের শুরুতে আপনি ৩০ হাজার টাকা বেতন পেয়েছেন। অফিস থেকে বাসায় আসার পথে একটি টিভি আপনার পছন্দ হয়ে গেল। আবার সামনে খেলাধুলার বড় ইভেন্টও রয়েছে। এখন আপনি কি টিভি নিয়ে বাসায় চলে আসবেন?
৫ সেকেন্ড ভেবে নিন আর উত্তর কমেন্টে জানিয়ে দিন। আমার মনে হয়, আপনার উত্তর নেগেটিভ।
কিন্তু এত বড় ভুল না করলেও আমরা একটি ভুল হরহামেশা করে ফেলি। তা হলো – মাসের শুরুতে বেতন পেয়ে হাত খুলে খরচ করে ১০ কিংবা ১৫ দিনের মধ্যে সব টাকা শেষ।
তখন দেখা যায়, কোন ছোট একটি বিল যেমন কারেন্ট বিল বা নেট বিল বা গ্যাস বিল আটকে যায়। এটি এড়াতে টাকার একটি সঠিক ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজন। আসলে ধনীদের মধ্যে এই অনুধাবনটি রয়েছে।
যার কারণে, ৮১ শতাংশ ধনী ব্যক্তি যে কোন কাজের ব্যাপারে টু-ডু-লিস্ট করেন। ফলে তাদের কর্মতালিকা থেকে কোন একটি কাজও বাদ পড়ে না। ফলে পিছিয়ে পড়ার মত নেতিবাচক প্রভাবে তাদের কম পড়তে দেখা যায়।
কর্মক্ষেত্রে ক্লান্তি দূর করতে চান? ১০টি অব্যর্থ উপায় জানতে ক্লিক করুন
পাঁচ
গবেষণায় যে ২৩৩ জন সম্পদশালী মানুষের উপর গবেষণা চালানো হয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে কমন অভ্যাসটা দেখে গিয়েছে তা হলো – সেলফ ইমপ্রুভমেন্ট ও শেখার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ প্রবল।
৮৬% লোকের মাঝেই এই গুণটি দেখা গিয়েছে। তাঁরা তাদের শেখার স্পৃহাটিকে নষ্ট করে দেন না। ধনী হতে হলে এই গুণটি প্রয়োজন। কারণ অর্থ উপার্জন আর নিজের আয়ের পরিধি বাড়াতে সেলফ ইম্প্রুভমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
রাগ কমানো, ক্ষুধা মন্দা, ঘুম মন্দা, অন্যের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়, সংগ্রামী হয়ে ওঠাসহ আরো বেশ কিছু বিষয় আছে এতে।
আমেরিকান রাইটার জিম রিহনের কথার মধ্যে দিয়ে এটি আরো স্পষ্ট হয়। উনি বলেন, “ফরমাল এডুকেশন আমাদের বাঁচতে শেখায় আর স্ব-শিক্ষা আমাদের ভাগ্য গড়ে দেয়”। স্ব-শিক্ষা কিংবা সেলফ ইম্প্রুভমেন্টের প্রভাব তাই ধনী হবার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
তাহলে ধনী আর গরীবের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারছেন কি? আপনার অভ্যাসই আপনাকে গরীব থেকে ধনীতে রূপান্তর করবে। আপনার সময় বাঁচিয়ে দিবে, আপনাকে লাইফের প্রতি ট্রিগার চেপে এগিয়ে দিবে।
এখন আপনি নিজেকে ধনীর কাতারে ফেলতে চান নাকি গরীবের কাতারে ফেলতে চান– সে উত্তর আপনারই হাতে। আর ধনীর কাতারে ফেলতে হলে ধনীদের এসব স্বভাব এখন থেকেই শুরু করে দিন।
Leave a Reply