হেনরী ফোর্ডকে হলেন আমেরিকার ক্যাপটেন অফ বিজনেস ইন্ডাস্ট্রি। ১৯০৩ সালে এই বিজনেস ম্যাগনেট প্রতিষ্ঠা করেন বিখ্যাত “ফোর্ড মোটর কোম্পানি”। নিজের বিজনেস স্ট্রাটেজি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,
“আমি একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্যে মোটর কার তৈরী করতে চেয়েছি আর গাড়ির দাম এত সুলভ রাখতে চেষ্টা করেছি যে মানুষ যেন একটির বেশি গাড়ি কিনতে পারে”।
আমাদের আজকের আলোচনায় থাকছে, নতুন ব্যবসার ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করার আগে যে বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে সেই সম্পর্কে।
১৯ শতকের সে সময়টায় আমেরিকায় গাড়ি কেবল ধনকুবেরদের কাছে দেখা যেত। কিন্তু হেনরী ফোর্ড নিজের চল্লিশ বছর বয়সে এসে এমন এক বিপ্লব ঘটালেন যে আমেরিকানদের কাছে নিজস্ব গাড়ি একটি ট্রেন্ডের মত হয়ে গেল।
তার ব্যবসার এই সফলতার পেছনে মূল কারণ ছিলো – ফোর্ড মোটরের অল্প সময়ে বেশি গাড়ি প্রোডাকশনের ক্ষমতা। বলা হয়ে থাকে, এই ব্যক্তিই তার উদ্যোগের দ্বারা আমেরিকাকে গাড়ি চালাতে শিখিয়েছিলেন।
তার চিন্তাশক্তি আর বিজনেস প্ল্যানের কারণে এই কোম্পানিটির ২০১৭ সালের বাৎসরিক আয় সাত বিলিয়নেরও বেশি হয়ে দাঁড়ায়।
এমন আরো শত শত উদাহরণ আমাদেরকে একটি কথা শিখিয়ে দেয়। “A business plan is a key feature in business.” আর একটি ভালো বিজনেস গোল স্মার্ট কৌশলের দ্বারা অর্জন করা যায়। এখন কথা চলে আসে, বিজনেস গোলটা কিভাবে তৈরী করবেন?
এর উত্তরটিও খুব সহজ।
একটি গবেষণালব্ধ নথি থাকা প্রয়োজন। কারণ এই নথি আপনার বিজনেসে ক্ষমতা আর মিশনকে সামনে রেখে আপনাকে এগিয়ে দিবে।
মনে রাখবেন, যেকোন কিছুর শুরুটা যদি সুন্দর হয় তাহলে তা সম্পাদন করাও সহজ হয়ে যায়। এরপর বিজনেস ফান্ডিংয়ের একটা মূল ধারণা করে ফেলুন। ফিক্সড করুন ফান্ডিং কিভাবে শুরু করবেন।
কোন কোন প্রতিষ্ঠান লোন নিয়ে শুরু করে আবার কোনটি নিজের সম্পদ থেকে বিনিয়োগ করে। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠান লোন নিয়েও সফল হয়। যার উদাহরণ হিসেবে, আলিবাবা, জিওর নাম উঠে আসতে পারে।
তবে লোন নিলে তা পরিশোধেরও একটা প্ল্যান থাকা জরুরী। অন্যদিকে, নিজে যদি বিনিয়োগ করেন তবে নিজের পুঁজি আর বিনিয়োগের প্রয়োজনীয় অর্থের সামঞ্জস্য থাকা চাই।
এবার এর পরবর্তী করণীয় কি হবে সেটা নিয়েই আজকে আলোচনার চেষ্টা করবো।
নতুন ব্যবসার ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করার লক্ষণীয় বিষয়ঃ
১) পুরো বিজনেস প্ল্যানের স্পষ্ট সারসংক্ষেপ
যখন সফল ব্যবসায়ী হতে চাচ্ছেন তখন প্রথম কাজ হবে এই সারসংক্ষেপ তৈরী করা। এটার যথার্থ প্রয়োগ ব্যবসাকে ত্বরান্বিত করবে। এই সারসংক্ষেপের প্রথম দুই পৃষ্ঠায় প্রতিটি কর্মীর কাজের দায়িত্ব লিখুন। এরপর লিখুন,
- কোম্পানির মার্কেট ভ্যালু অর্থ্যাৎ কি নিয়ে কাজ করবেন তার মার্কেটের চাহিদা লিখুন।
- কোম্পানি কিভাবে টাকা উপার্জন করবে।
- কেন আপনার প্রোডাক্ট মানুষ কিনবে।
- পুরো প্রজেক্ট পুরোদমে চালু হবার আগ পর্যন্ত আপনার কত টাকার প্রয়োজন হবে এবং কিভাবে তার যোগান দিবেন।
২) মার্কেটে নিজের সুযোগ তৈরী
এ পর্যায়ে দুইটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করুন –
- টার্গেট মার্কেট কতটুকু বড়?
- মার্কেটের চাহিদা কতটা বাড়ছে?
পাশপাশি সুযোগ এবং হুমকি দুটোরই একটা লিস্ট করে ফেলুন। তারপর সেসব মোকাবেলার একটা পরিকল্পনা করুন।
এসব তথ্য চেম্বার অফ কমার্স, ইন্ডাস্ট্রি এসোসিয়েশন, আদমশুমারী তথ্য কিংবা অন্য বিজনেস মালিকের কাছে থেকে পেতে পারেন। লক্ষ্য রাখবেন, প্রতিটি তথ্য যেন সঠিক হয় এবং তথ্যের সোর্সও নোট আকারে সংযুক্ত করবেন।
জেফ বেজসঃ কিভাবে শূন্য হতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ই-কমার্স সাইট অ্যামাজন গড়লেন
৩) প্রতিযোগিতা সৃষ্টি
নিজের কাছে নিজের প্রোডাক্টকে ইউনিক বা কাস্টোমার উপযোগী মনে হওয়া খুব স্বাভাবিক। একই সাথে, এই ফাঁদে পরে ক্ষতি হওয়াটাও স্বাভাবিক। তাই নিজের প্রোডাক্ট নিয়ে আত্মবিশ্বাসী না থেকে প্রতিযোগী সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফেলুন।
- কারা আপনার প্রতিযোগী?
- তাঁরা কি বিক্রি করে?
- মার্কেটে তাদের শেয়ার কত শতাংশ?
- তাঁরা কতদিন ধরে মার্কেটে আছেন?
- কেন একজন তাদের প্রোডাক্ট না কিনে আপনার প্রোডাক্ট কিনবে?
- তাদের মার্কেটে নিজেদের প্রোডাক্ট পৌঁছাতে প্রতিবন্ধকতা কোথায়?
এতে করে আপনি আপনার সবচেয়ে শক্ত প্রতিযোগী খুঁজে পাবেন। একইসাথে আপনার প্রোডাক্টের মান বাড়বে এবং এই তথ্যগুলো কোম্পানির বাজে অবস্থায় আপনার কেস স্টাডিতে সহায়তা করবে।
৪) কিভাবে কাজ সম্পাদন করবেন
এখন আপনার বিজনেসের মূল ধারণা পাকাপোক্ত হয়ে গেল। এবার আপনার টিম নিয়ে ভাবার সময়। প্রথমে, টিমের কোয়ালিটি সম্পর্কে অবগত হোন। এরপর, টিমের শক্তিশালি জায়গা ও দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করুন। একইসাথে, তাদের নিয়ে কাজ সম্পাদনের একটা প্ল্যান করে ফেলুন।
যেমনঃ হেনরী ফোর্ড এই স্টেজে গিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ধরে ফেলেছিলেন। তিনি দেখেন, তার টিম মেম্বাররা প্রতিদিন ৯ ঘন্টার পরিবর্তে ৮ ঘন্টা করে কাজ করছে। অতঃপর কর্মীদের কাজে উৎসাহী করতে তিনি তাদের মজুরী দ্বিগুণ করে দিলেন।
সুতরাং বলা যায়, এমন পদক্ষেপ শুধু আপনার ব্যবসাকে সফলই করবে না, বরং প্রতিবন্ধকতাও কমিয়ে দিবে।
আপনার এবং একজন সফল মানুষের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলো- জানতে ক্লিক করুন
৫) নির্দিষ্ট সময়ে কোম্পানির আয়
কোম্পানির আয় একটি মূল বিষয়। কারণ কোন কোম্পানিই ক্ষতির সম্মুখীন হতে চাইবে না। এই স্টেপে আপনাকে আরো দুটো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে হবে।
- পুরো ব্যবসাকে দাঁড় করাতে কত টাকা প্রয়োজন পড়বে?
- কখন লভ্যাংশ আসা শুরু করবে?
অন্যদিকে, নির্দিষ্ট সময়ে আয়ের হিসাব বের করার জন্যে অতীতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও এর আওতায় আনতে হবে। এছাড়াও মূল বিনিয়োগের কতটুকু ফেরত এসেছে তারও একটি বিশ্লেষণ আনা উচিৎ। মূলত আপনার প্রধান কাজ হবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের আয়-ব্যয়ের হিসেব করা।
৬) বিজনেস প্ল্যানকে বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য করে তুলুন
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসায়িকগণ আকাশচুম্বী পরিকল্পনা করে বিজনেস প্ল্যান তৈরী করেন। যার কারনে খুব তাড়াতাড়ি তাদের ব্যবসায় ভাটা পড়ে।
একটি অবাস্তব বিজনেস প্ল্যান মানে ব্যবসার জন্যে সারাজীবন খেটে আপনি কোম্পানির জন্যে একটি প্রতিবন্ধকতা তৈরী করলেন। তাই বিজনেস প্ল্যানকে বেশি উচ্চাভিলাষী না করে যতটুকু অর্জন করা সম্ভব তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন।
সবশেষে বলতে হয়, একটি কার্যকরী বিজনেস প্ল্যান তৈরী করতে প্রচুর সময়, চিন্তা, আর অর্থায়নের প্রয়োজন পড়ে। এসব বিষয়ের দিকে নজর দিলে ব্যয় করা সময়কে নিজের ব্যবসায়ীক সফলতাতে রূপান্তর করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
যদিও এসব খুব বেসিক চিন্তা-ভাবনা। কিন্ত প্রত্যেকে এগুলোর যথার্থ ব্যবহার করে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। তাই আভিযাত্রীর পক্ষ থেকে শুভকামনা আপনার জন্যে।
ব্যবসায় সফল হতে হলে কি করতে হবে, দেখে নিন নিচের ভিডিওটিতে
Leave a Reply