ইবনে সিনা | মুসলিম স্বর্ণযুগের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং ইতিহাসের নায়ক

Published:

Updated:

ইবনে সিনার জীবনী

Disclaimer

As an affiliate, we may earn a commission from qualifying purchases. We get commissions for purchases made through links on this website from Amazon and other third parties.

পৃথিবীর সেরা জ্ঞানী ব্যক্তিদের একজন হলেন ইবনে সিনা। তার নাম শোনেনি এমন কাউকে হয়ত খুঁজেই পাওয়া যাবে না।  

কিন্তু অসামান্য প্রতিভার অধিকারী এই ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন?  

ইবনে সিনা ছিলেন সর্ববিদ্যায় পারদর্শী। জ্ঞান-বিজ্ঞানের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে তিনি বিচরণ করেন নি। মধ্যযুগের জ্ঞান বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপনে ইবনে সিনার অবদান অপরিসীম।

তবে চিকিৎসা শাস্ত্রে তার অবদান সবচেয়ে বেশি, তাই তাকে বলা হয় Father of Modern Science. ইবনে সিনা কেবল একজন চিকিৎসক ই ছিলেন না, তিনি একজন গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক ও বটে!

আরবরা তাকে অ্যাখ্যায়িত করেছে আল-শায়খ আল-রাঈস তথা জ্ঞানীকুল শিরোমণি হিসেবে। আর পাশ্চাত্যে তিনি আভিসেনা(Avicenna) নামেই অধিক পরিচিত।  

আজকে আমরা আপনাদের কাছে তুলে ধরব, অসাধারণ প্রতিভাধর ব্যক্তি ইবনে সিনার জীবন কাহিনী। যিনি তার সারাজীবন অতিবাহিত করেছেন কেবল জ্ঞান অন্বেষণ করতে।

তিনি তার কঠোর অধ্যবসায়ের বলেই হতে পেরেছিলেন বিশ্বসেরা জ্ঞানী ব্যক্তিদের একজন। আশা করি ইবনে সিনার জীবনী আপনাকে উদ্বুদ্ধ করবে, নিজেকে অধ্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলতে।

ইবনে সিনার জীবনী

পূর্বজীবন

৯৮০ খৃস্টাব্দে বুখারার অন্তর্গত খার্মাতায়েন জেলার এক গ্রামে ইবনে সিনার জন্ম, যা বর্তমানে উজবেকিস্তানে অবস্থিত।

তার পুরো নাম আবু আলী হোসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ আল হাসান ইবনে আলী ইবনে সিনা। সাধারণত তিনি ইবনে সিনা বা আবু আলী সিনা নামেই পরিচিত। ইবনে সিনা নামের অর্থ সিনার পুত্র হলেও, তার পিতা ছিলেন আবদুল্লাহ এবং মা ছিলেন সিতারা বিবি।

ইবনে সিনার পিতা বুখারার সামানীয় সম্রাটের অধীনে একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

বিজ্ঞানী ইবনে সিনার শিক্ষাজীবন

শিক্ষা ক্ষেত্রে ইবনে সিনা প্রথম থেকেই ছিলেন তুখোড় মেধাবী। মাত্র ১০ বছর বয়সেই তিনি কোরআনের হাফেজ হন। এছাড়াও তার চিন্তাভাবনা ছিল সূক্ষ্ণ ও জটিল বিষয় নিয়ে।

ইবনে সিনার প্রতিভা দেখে তার পিতা তাকে পড়ানোর জন্য তিন জন গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা করেন। তাদের মধ্যে ইসমাইল সূফী তাকে শিক্ষা দেন ধর্মতত্ত্ব, ফিকাহ শাস্ত্র আর তাফসীর বিষয়ে।

সেই সময়ে ভারতীয় গণিত শাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন মাহমুদ মসসাহ। তার কাছে ইবনে সিনা গণিত শাস্ত্রের উপর শিক্ষা অর্জন করেন। রপর তিনি অধ্য্য়ন করেন ইসমাইলী শাস্ত্রের আইন অধ্যায়। এতেও তিনি সমান দক্ষ হয়ে ওঠেন।

জ্ঞানের চতুর্দিকে ইবনের সিনার পদার্পন 

তৎকালীন সময়ের অন্যতম আরেকজন জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন আল নাতেলী। ইবনে সিনা তার কাছে ফিকহ শাস্ত্র, ন্যায়শাস্ত্র, জ্যামিতি এবং জ্যোতিষ শাস্ত্র বিষয়ে শিক্ষা নেন। কিন্তু তার প্রতিভা ও জানার আগ্রহের কাছে আল নাতেলীর মত জ্ঞানী ব্যক্তিও হার মানেন।

একসময় আল নাতেলীর কাছে এমন কোনো জ্ঞান আর অবশিষ্ট ছিল না, যা তিনি ইবনে সিনাকে শিক্ষা দিতে পারেন। তাই তিনি ইবনে সিনাকে নিজে স্বাধীন মত গবেষণা করার কথা বলেন।

ইবনে সিনা ছিলেন একজন জ্ঞানসাধক। জ্ঞান সাধনার মধ্যেই ছিল তার মনোনিবেশ। তাই তো ইউক্লিড ও টলেমির মত বিজ্ঞানীর লেখাও পড়ে ফেলেন তিনি।

এরপর পড়তে শুরু করেন এরিস্টটলের মেটাফিজিক্স। একই সাথে এরিস্টটলের দর্শন শাস্ত্রও সম্পূর্ণ ধাতস্থ করে ফেলেন। কোনো বিষয় বুঝতে না পারলে কিংবা জটিল কোনো বিষয়ে সমস্যার সম্মুখীন হলে তিনি মসজিদে গিয়ে নফল নামাজ আদায় করতেন। যতক্ষণ না সমস্যার সমাধান পেতেন।

ইবনে সিনার জীবনী

ডাক্তার ইবনে সিনা 

১৬ বছর বয়স থেকে ডাক্তার হওয়ার নেশা জাগে তার। ১৮ বছর বয়সেই তিনি পুরোদমে ডাক্তার হয়ে যান। তার খ্যাতি দুর-দুরান্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

মাত্র ১৯ বছর বয়সে ইবনে সিনা বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, অর্থনীতি, রাজনীতি, গণিতশাস্ত্র, জ্যামিতি, ন্যায়শাস্ত্র, চিকিৎসা শাস্ত্র, কাব্য, সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে অসীম জ্ঞানের অধিকারী হন।

লেখক, বিজ্ঞানী ইবনে সিনা

জীবনে অনেক দেশ ভ্রমণ করেন ইবনে সিনা, সেই সাথে অর্জন করেন প্রচুর অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি প্রায় শতাধিক বই রচনা করেন।

২১ বছর বয়সে ইবনে সিনা আল মুজমেয়া নামক একটি বিশ্বকোষ রচনা করেন, যার মধ্যে গণিত শাস্ত্র ব্যতীত প্রায় সকল বিষয়াদি তিনি লিপিবদ্ধ করেন।  

চিকিৎসা বিষয়ে তার অমর গ্রন্থ আল কানুন ফিত-তিব । আল কানুন ৫ খন্ডে বিভক্ত। যা ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল প্রতিষ্ঠানসমূহে পড়ানো হত।

এখনো ইউনানী চিকিৎসায় এই বইয়ের অবদান অপরিসীম। ইবনে সিনা হলিস্টিক মেডিসিনের প্রণেতা। তিনিই মানুষের চোখের সঠিক এনাটমির বর্ণনা দেন। মেনিনজাইটিস রোগ ও প্রথম তিনি সনাক্ত করেন।

ইবনে সিনার আরেকটি বিখ্যাত রচনা কিতাব আল-শিফা, যা একটি দার্শনিক গ্রন্থ। এটি ২০ খন্ডে বিভক্ত। ইবনে সিনার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হল কিতাব আল ইশারাত

তাছাড়া তার লেখা আরযুযা ফিত-তিব, লিসানুল আরব, আলমজনু, আল মুবাদাঊন মায়াদা, মা দুনিয়াত(খনিজ পদার্থসমূহ), Treaties of Minerals উল্লেখযোগ্য।

ইবনে সিনার জীবনী
The first page of a manuscript of Avicenna’s Canon, dated 1596/7 (Yale, Medical Historical Library, Cushing Arabic ms. 5). Source: Wikipedia

ব্যক্তি হিসেবে ইবনে সিনা

ইবনে সিনা ছিলেন স্বাধীনচেতা ও আত্মমর্যাদা সচেতন ব্যক্তি। জীবনের নানা উত্থান পতনের মধ্যেও তিনি কখনো জ্ঞানচর্চা করা ছাড়েন নি। তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানপিপাসু এবং ধীসম্পন্ন ব্যক্তি।

জ্ঞান চর্চাই ছিল তার মূখ্য কাজ। এক যুদ্ধ শিবিরে অবস্থান কালে তিনি তলপেটের ব্যাথায় কাবু হয়ে পড়েন। এই রোগেই ইবনে সিনা ১০৩৭ খৃস্টাব্দে, মাত্র ৫৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

কঠোর অধ্যবসায়, পরিশ্রম এবং আগ্রহ থাকলে জীবনে সাফল্য আসতে বাধ্য, এমন ই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন ইবনে সিনা।

নিজেকে অধ্যবসায়ী এবং পরিশ্রমী হিসেবে গড়ে তুলতে ইবনে সিনার জীবনী যদি আপনাকে অনুপ্রাণিত করে থাকে, তবে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন।

ইবনে সিনার জীবনী ভিডিও আকারে দেখুন নিচে 

About the author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Latest Posts

  • সর্দি থেকে মুক্তির উপায়, নাকের এলার্জি দূর করার উপায় | দ্রুত উপশম পেতে ঘরোয়া চিকিৎসা

    সর্দি থেকে মুক্তির উপায়, নাকের এলার্জি দূর করার উপায় | দ্রুত উপশম পেতে ঘরোয়া চিকিৎসা

    নাকের এলার্জি হচ্ছে নাকের ঝিল্লি প্রদাহের কারণে নাকের একটি সমস্যা। এটি সারা বিশ্বব্যাপী একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ নাকের এই রোগে আক্রান্ত। নাকের এলার্জি কোন মারাত্মক ক্ষতিকর রোগ না হলেও এ রোগের কারণে দৈনন্দিন জীবন প্রবাহ ব্যাহত হয়। এলার্জিজনিত সর্দি এবং হাঁচি জীবনকে অতিষ্ট করে তোলে। এই রোগে হঠাৎ…

    Read more

  • কফ, কাশি দূর করার উপায় | সঠিক চিকিৎসাই হতে পারে কাশি দূরীকরণের মাধ্যম

    কফ, কাশি দূর করার উপায় | সঠিক চিকিৎসাই হতে পারে কাশি দূরীকরণের মাধ্যম

    গলায় বুকে কফ জমে থাকা বেশ বিরক্তিকর একটি সমস্যা। ঋতু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়। আর আবহাওয়ার এই দ্রুত পরিবর্তন আমাদের শরীর খাপ খাওয়াতে পারে না, যার কারণে সৃষ্টি হয় ঠান্ডা জ্বর ও সর্দি-কাশির। ঠান্ডা সর্দি কাশি এগুলো আমাদের কাছে খুব পরিচিত রোগ হলেও এই ঠান্ডা সর্দি কাশি থেকে আমাদের দেহে অনেক বড় বড় অসুখ…

    Read more

  • ওজন কমানোর উপায় ডায়েট চার্ট | সুস্থ স্বাভাবিক জীবন

    ওজন কমানোর উপায় ডায়েট চার্ট | সুস্থ স্বাভাবিক জীবন

    সুস্থ স্বাভাবিক এবং রোগমুক্ত জীবন আমরা কে না চাই। আর এই সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করার একমাত্র উপায় হচ্ছে শারীরিক ওজন ঠিক রাখা। কেননা ওজন বেড়ে গেলে যে কোন রোগের ঝুঁকি ও বেড়ে যায়। এজন্য বাড়তি ওজন অনেকের মানসিক অসুস্থির প্রধান কারণ। তাই রোগ প্রকোপ কমাতে এবং মানসিক শান্তির উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের উচিত শারীরিক ওজন…

    Read more