নিজেকে উৎসাহিত করতে হলে নতুন কিছু করার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। কিন্তু কাজে যোগ দেবার সময় কর্মক্ষেত্রে আপনি কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে ঘরে বসে উপার্জনের জন্যে আপনার সামনে অনেকগুলো পথ খোলা রয়েছে।
আজকের এই আলোচনায় এমন ১০টি কাজের ব্যাপারে জানতে চেষ্টা করবো, যার ফলে ঘরে বসেই উপার্জন শুরু করা সম্ভব এবং স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করা সহজ হয়।
১০ টি উপায়ে ঘরে বসে উপার্জন
চাকরি না পেলে যে জীবনে ব্যর্থতা নেমে আসবে তা কিন্তু না। চাকরি করার পাশাপাশি হোক বা চাকরি না করেও উপার্জন সম্ভব। আর তা ঘরে বসেই করা সম্ভব, শুধুমাত্র প্রয়োজন সময় আর পরিশ্রম। সেই সাথে ঘরে বসে কাজের সন্ধান করা।
জীবনের প্রথম ধাপে ব্যর্থ হওয়ার ১০ টি কারণ | পড়তে ক্লিক করুন
১) আউটসোর্সিং
ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধনশীলতার কারণে মুক্ত পেশাজীবিদের সংখ্যা বাড়ছে। এসব মুক্ত পেশাজীবিরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অধীনে চুক্তিভিত্তিক কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
গুরু ডট কম, আপওয়ার্ক ডট কম, নাইন্টি নাইন ডিজাইন সহ অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে সাইন আপ করে নিজেদের প্রোফাইল তৈরী করতে পারছে।
এখানে বিভিন্ন ধরণের অনলাইন ভিত্তিক কাজের বিজ্ঞাপন রয়েছে। অনলাইন কাজের সন্ধানের এসব প্ল্যাটফরম বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে আপনি বিড করার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সহ নানান প্রজেক্টে কাজ করতে পারেন।
২) অ্যাফলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফলিয়েট মার্কেটিং অনলাইন ব্যবসায় জগতে একটি যুগান্তকারী সুচনা করেছে। গত এক দশক থেকে অনলাইন ভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রে এটি ভালো অবস্থানে রয়েছে।
আমাজন ডট কম, ক্লিকব্যাংক, কমিশন জাঙ্ক, ফ্লেক্স অফার, র্যাকুটেন ডট কম; অ্যাফলিয়েট মার্কেটিং সাইটগুলোর মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
এক্ষেত্রে আপনাকে কোন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করতে হবে না, কোন প্রোডাক্ট কিনতে হবে না, এমনকি ক্রেতার সাথে সরাসরি দর কষাকষি করতে হবে না।
শুধু মাত্র নির্দিষ্ট প্রোডাক্টের অ্যাডগুলো সাইট কিংবা ব্লগে পোস্ট করতে হবে। ব্লগের ভিজিটর অ্যাডে ক্লিক করে প্রোডাক্ট কিনলে লভ্যাংশের কমিশন লুফে নিতে পারবেন।
৩) ফ্রিল্যান্সিং রাইটিং
অনেক ব্যক্তিরই লেখালেখি করার একটা অভ্যাস থাকে। কিন্তু সময়ের অভাবে হয়ে উঠে না। তবে প্রযুক্তির দুনিয়াতে এখন তা সহজ হয়ে গিয়েছে। আপনি চাইলে ঘরে বসেই বিভিন্ন বিষয়ের কৌশলগত কিংবা ব্যকরণগত দিকে আলোকপাত করে একটি ই-বুক লেখতে পারেন।
অনলাইন শপে সেটি বিক্রি করে উপার্জন করতে পারেন। ই-বুক লেখা ছাড়াও আর্টিকেল রাইটার, কপিরাইটার হিসেবেও কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
আপওয়ার্কের মত ফ্রিল্যান্সিং সাইটের পাশাপাশি ব্লগিং প্রো জব বোর্ড, জার্নালিজম জবস, মিডিয়াবিসট্রো, ফ্লেক্সজব, প্রো ব্লগার জব বোর্ড মত সাইটগুলোতে এই ধরণের কাজের সন্ধান পাওয়া যায়। সময় নিয়ে সাইটগুলো নিয়ে রিসার্চ করুন আর আপনার স্বপ্নটাকে বাস্তবায়িত করে তুলুন।
৪) হোম-বেজড সার্ভিস
হোম সার্ভিস ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। বিভিন্ন প্রোডাক্টের হোম ডেলিভারী, বিজনেস পারসনের জন্যে কোন অনলাইন কমিউনিটি কিংবা অফিসের বিভিন্ন কাজের জন্যে সার্ভিস দিয়ে আপনি হোম বেজড সার্ভিসের কাজ শুরু করতে পারেন।
এক্ষেত্রে আপনি নিজেই আপনার কর্মক্ষেত্রের বস এবং নিজেই কর্মী। তবে হোম বেজড সার্ভিসগুলোতে তুলনামূলক কম পুঁজি প্রয়োজন হয়। তাই শুরুতে ছোট পরিসরে কাজ করতে পারেন।
জীবনকে বদলাতে না বলুন ৮টি বদ অভ্যাসকে | পড়তে ক্লিক করুন
৫) ইমেজ কনসালটেন্টসি
স্বভাবগত কারণে আমরা পাবলিক লুক বা ইমেজ নিয়ে সচেতন। ফলে এটা অনলাইন ভিত্তিক পেশাগুলোর মধ্যে বেশ ভালো অবস্থানে আছে। আপনি অন্য কারো পোষাক, মেকআপ কিংবা লুকের ব্যাপারে সাজেশন দিয়ে উপার্জন করতে পারেন।
কাজ পেতে অনলাইন জব মার্কেটপ্লেসগুলোতে বিচরণ করতে পারেন। পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানি অনলাইন ভিত্তিক ইমেজ কন্সাল্টেন্ট নেয়।
এগুলোতেও কাজের জন্যে আবেদন করতে পারেন। তবে নিজ থেকে আগ্রহী হলেই কাজটি শুরু করতে পারেন।
৬) সোশ্যাল মিডিয়া স্পেশালিস্ট
বর্তমান সময়ে একটি ব্যবসা দাঁড় করাতে সোশ্যাল মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্যবসার প্রসার ঘটাতে চাইলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এক্টিভ থাকা ও প্রয়োজনে বিজ্ঞাপন দিতে হবে।
মূলত একজন সোশ্যাল মিডিয়া স্পেশালিস্ট, সোশ্যাল মিডিয়ায় পণ্যকে প্রোমোট করেন এবং অডিয়েন্স তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন।
যেহেতু কাজটি পুরোপুরি অনলাইন ভিত্তিক তাই কাজের বাজার বৃহৎ। অনলাইন কিংবা অফলাইন দুইভাবে বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজের সুযোগের ব্যপারে খোঁজ রাখতে পারেন।
৭) লাইফ কোচিং
সফল কিংবা ব্যর্থ, দুই ধরণের মানুষই জীবন যাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যায়। এসব সমস্যাকে পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাইলে তাদের একজন লাইফ কোচ প্রয়োজন হয়।
কারো লাইফের সমস্যা শুনে কোন কার্যকরী পরামর্শ দেয়ার ক্ষমতা থাকলে আপনি এই কাজে যুক্ত হতে পারেন। অনলাইন জব মার্কেটপ্লেসগুলোতে এ ধরনের কাজের জন্য নিজেকে এক্টিভ রাখা প্রয়োজন।
পাশাপাশি নিজের অনলাইন প্রোফাইল ক্রিয়েট করেও কাজ শুরু করতে পারেন। এছাড়া নিউজলেটারের মাধ্যমে অনলাইন প্রোমোশন করে কাজের সুযোগ তৈরী করে নিতে পারেন।
৮) রিভিউয়ার
রিভিউয়ার কিংবা সমালোচকরা রেস্তোরা, দোকান, পণ্য, সিনেমা সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর মতামত দিয়ে থাকেন। এই কাজের পারিশ্রমিকের পাশাপাশি রিভিউ করা পণ্যগুলো বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
এছাড়া নানান স্তরের মানুষের সাথে পরিচিত হবার বিষয়টি তো থাকছেই। উপার্জনের জন্যে রিভিউ থেকে পার্সোনাল ব্লগ খুলতে পারেন।
শুরুর দিকে কিছু ফ্রী রিভিউ দিয়ে ব্লগের জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন কোম্পানি আপনাকে পেইড রিভিউ করার প্রস্তাব দিবে।
৯) আর্ট ডিলার
একজন আর্ট ডিলার হিসেবে আপনার কাজ হবে – শৈল্পিক কোন জিনিস তৈরী করা, ছবি এঁকে দেওয়া, ইন্টেরিয়র ডিজাইন করা, টি-শার্টের ডিজাইন করা ইত্যাদি।
কাজগুলো বিক্রির জন্যে ই-কমার্স সাইট খুলতে পারেন। এই কাজের জন্যে কিছু পুঁজি নিয়ে শুরু করা জরুরী। এটি আপনাকে ব্যবসা সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। তবে এই কাজে যুক্ত হবার জন্যে নিজের প্যাশন থাকা উচিৎ।
১০) অনলাইন টিউটোরিং
কোন কাজের উপর আপনার দক্ষতা কিংবা ভালো মানের ডিগ্রি থাকলে এই কাজে যোগ দিতে পারেন। বর্তমানে টিউটোরিংয়ের পেশা কেবল স্কুল কিংবা কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অবসরপ্রাপ্ত চাকুরীজীবি কিংবা মাঝবয়সীরাও নতুন কিছু শেখার তাগিদে অনলাইন ক্লাসের দিকে ঝুঁকছে।
ফলে অনলাইন টিউটোরিংয়ের সম্ভাবনা বাড়ছে। অনলাইন টিউটোরিয়াল নিয়ে কাজ করে এমন সাইটগুলোতে আবেদন করতে পারেন। পাশাপাশি লিন্ডা ডট কম কিংবা ইউডেমি ডট কমে নিজে কোর্স খুলে উপার্জন করতে পারেন।
এই দশটি পেশা প্রমাণ করে, কর্মক্ষেত্রের অসুবিধার কারণে আপনার পিছিয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই।
তাহলে আজ থেকে ঘরে বসে উপার্জন শুরু করে দিন। প্লান করুন, নিজেকে তৈরী করুন আর কাজে ঝাপিয়ে পড়ুন। আপনার সফলতার জন্যে অভিযাত্রীর পক্ষ থেকে শুভকামনা।
Leave a Reply