পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপের দ্বীপ | ইহা ডি কুইমাডা গ্রান্ডি

Published:

Updated:

সবচেয়ে বিষধর সাপের দ্বীপ

Disclaimer

As an affiliate, we may earn a commission from qualifying purchases. We get commissions for purchases made through links on this website from Amazon and other third parties.

মনোরম সৌন্দর্যে ভরপুর অসংখ্য দ্বীপ-উপদ্বীপ ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। ‘দ্বীপ’ শব্দটি শুনলে আমাদের মনে প্রথমেই ভেসে ওঠে অপূর্ব এক স্বর্গীয় দৃশ্যের ছবি। অধিকাংশ দ্বীপ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই পর্যটকদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। পৃথিবীতে এরকম অনেক সবুজ, সুন্দর ও নির্জন দ্বীপ আছে যেখানে ছুটি কাটাতে চলে যান অনেকেই। ধরুন এমনি এক দ্বীপে ছুটি কাটাতে গিয়ে দেখলেন সেটা সাপ বসবাসকারী একটি ভয়ংকর দ্বীপ! কেমন লাগবে? 

সারা বিশ্বে এমন কিছু অদ্ভুত দ্বীপ রয়েছে, যেখানে অপার্থিব সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি লুকিয়ে আছে ভয়ংকর মৃত্যু ফাঁদ। ব্রাজিলের স্নেক আইল্যান্ড তেমনই একটি রহস্যময় দ্বীপ, যা বিষধর সাপের দ্বীপ নামে পরিচিত।

আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত জনমানবহীন এই দ্বীপে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপের বাস। সাধারণ পর্যটকদের জন্য এই নিষিদ্ধ দ্বীপের জানা-অজানা তথ্য নিয়েই আমাদের আজকের লেখা।

বিষধর সাপের দ্বীপ  

আমাজন সংলগ্ন দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিল। ব্রাজিলের সাও পাওলোর উপকূল থেকে ২১ মাইল দূরের এই দ্বীপ পৃথিবীর ভয়ংকর দ্বীপগুলোর একটি। এটি প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটারের একটি ছোট দ্বীপ। যার নাম ইহা ডি কুইমাডা গ্রান্ডি।

পর্তুগীজ শব্দ ‘কুইমাডা’র অর্থ ‘পুড়িয়ে ফেলা’। স্থানীয়রা একসময় এই দ্বীপে ফলের চাষ করতে জমি পরিষ্কার করার জন্য রেইনফরেস্টের কিছু অংশ পুড়িয়ে ফেলে। আর এ কারণেই দ্বীপটির এমন নামকরণ করা হয়।

১১০ একরের এই দ্বীপের প্রায় ৬২ একর রেইনফরেস্টে ঢাকা। এর বাকি অংশে রয়েছে বিভিন্ন ছোট বড় পাথর ও বিস্তৃত তৃণভূমি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দ্বীপটির উচ্চতা প্রায় ২০৬ মিটার বা ৬৭৬ ফুট। এর পার্শ্ববর্তী দ্বীপ নিমারের মত স্নেক আইল্যান্ডের জলবায়ুও নাতিশীতোষ্ণ।

সবচেয়ে বিষধর সাপের দ্বীপ

সাও পাওলোর সমুদ্র ঘেষা অপরূপ নৈসর্গিক এই দ্বীপে কোনো মানুষের বসতি নেই। দ্বীপের একপাশ থেকে অন্য পাশ পর্যন্ত রয়েছে শুধু সাপের বিচরণ। দ্বীপটিতে সাপের সংখ্যা নিয়ে অনেকে অনেক রকমের মত দেন। কেউ মনে করেন, ৪ লক্ষ ৩০ হাজার বর্গমিটারের এই দ্বীপে কমপক্ষে ৪ লক্ষ ৩০ হাজার সাপ আছে।

অর্থাৎ, হিসেব করলে দেখা যায়, প্রতি বর্গমিটারে একটি সাপ রয়েছে। দ্বীপটিতে সাপের অবাধ বিচরণের কারণে ব্রাজিলের সাও পাওলোবাসীদের কাছে এটি সাপের দ্বীপ বা আইল্যান্ড অফ স্নেক নামেই অধিক পরিচিত।

ধারণা করা হয়, প্রায় ৫৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে দ্বীপটি মূল ভূখন্ডের সাথে যুক্ত ছিল। কিন্তু, আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর আগে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় দ্বীপটি মূল ভূখন্ড থেকে আলাদা হয়ে যায়। ফলে সাপগুলো দ্বীপেই আটকে পড়ে এবং নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে জনসংখ্যায় বাড়তে থাকে।

গোল্ডেন লাঞ্চহেড ভাইপার

গোল্ডেন লাঞ্চহেড পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপ হিসেবে স্বীকৃত। গোল্ডেন লাঞ্চহেড সারা পৃথিবীতে কেবল স্নেক আইল্যান্ডেই পাওয়া যায়। ব্রাজিলিয়ানরা এদের বলে ফার ডি ল্যান্স। অত্যন্ত বিষাক্ত এই সাপটি পিট ভাইপার প্রজাতির।

এর আরেক নাম বোথরোপস আইসুলারিস। ২০১৫ সালের এক গবেষণায় জানা যায়, স্নেক আইল্যান্ডে ২০০০ থেকে ৪০০০ এর মত গোল্ডেন লাঞ্চহেড রয়েছে।

এরা লম্বায় প্রায় ১-২ মিটার অর্থাৎ প্রায় ৩ ফুট থেকে সাড়ে ৬ ফুট হয়ে থাকে। এদের গায়ের রঙ উজ্জ্বল হলুদাভ ও বাদামী বর্ণের। এরা গড়ে প্রায় ২৮ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। তবে সর্বোচ্চ ৪৬ ইঞ্চি লম্বা সাপও দেখা যায় এই দ্বীপে।

লাঞ্চহেড নামটি এসেছে সাপের মাথার আকৃতি থেকে, যা অন্য বোথরোপস প্রজাতি থেকে আলাদা। এদের মাথা কিছুটা তীক্ষ্ণ আকৃতির। তাই এদের লাঞ্চহেড ভাইপার নামেও ডাকা হয়।

সবচেয়ে বিষধর সাপের দ্বীপ

জনমানবহীন এই দ্বীপে এরা সাধারণত পাখি খেয়ে বেঁচে থাকে। স্নেক আইল্যান্ডে প্রায় ৪১ প্রজাতির পাখি রয়েছে। যা এই সাপগুলোর প্রধান খাদ্য। দ্বীপের সবুজ গাছগাছালিতে যেসব ছোট পাখি বিশ্রামের জন্য এসে বসে, সেই পাখিগুলোই এদের শিকার হয়। তবে টিকটিকিও এদের অন্যতম খাবার।

উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মূল ভূখন্ডে পিট ভাইপারের আরেক প্রজাতির সাপ রয়েছে। এসব দেশে বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যুর কারণ গোল্ডেন লাঞ্চহেডের স্বগোত্রীয় এই সাপগুলো। পিট ভাইপার প্রজাতির গোল্ডেন লাঞ্চহেড মূল ভূখন্ডের সাপের থেকে ৩-৫ গুণ বেশি শক্তিধর। এদের বিষ অন্যান্য সাপের থেকে প্রায় ৪-৫ গুণ বেশি হয়ে থাকে।

এদের বিষ এতই শক্তিশালী যে মানুষের শরীরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তা শরীরের মাংস পর্যন্ত গলিয়ে দিতে পারে। এই সাপের কামড়ে যে পরিমাণ বিষ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তাতে সঙ্গে সঙ্গে মারা যেতে পারে যে কোনো পূর্ণবয়স্ক মানুষ।

কেন এই দ্বীপ নিষিদ্ধ?

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর হওয়া সত্ত্বেও স্নেক আইল্যান্ড শীর্ষ পর্যটক স্থানগুলোর একটি হয়ে উঠতে পারেনি। দ্বীপের প্রতি বর্গ মিটারে একটি সাপ থাকা মানে দ্বীপে নেমে কয়েক পা ফেলতেই এই বিষাক্ত সাপের মুখোমুখি হওয়া।

গোল্ডেন লাঞ্চহেড সাপের বিষের তীব্রতা এত বেশি যে এক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায় মানুষ। তাই দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য বেশ বিপদজনক।

স্থানীয় জেলেরা জানান, এ দ্বীপে যারা বিভিন্ন কারণে পদার্পণ করেছে তাদের কেউই আর ফিরে আসেনি। রহস্যময় এই দ্বীপটি নিয়ে অনেক রকমের গল্পও শোনা যায়। এর মধ্যে কিছু সত্য আবার কিছু মিথ্যা গল্পও রয়েছে।

স্থানীয়দের অনেকে বিশ্বাস করে এই দ্বীপে জলদস্যুরা তাদের সম্পদ গচ্ছিত রেখেছে। আর তাদের এ সম্পদের পাহারায় নিয়োজিত আছে এই সাপগুলো। আবার প্রচলিত আছে, একবার এক জেলে দুর্ভাগ্যবশত এই দ্বীপে আটকে পড়ে। পরের দিন ওই জেলেকে খুঁজতে গিয়ে নৌকায় তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।

১৯০৯ সালে জাহাজের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এই দ্বীপে একটি লাইট হাউস তৈরি করা হয়। সে সময় লাইট হাউসের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্রাজিলিয়ান নেভির একজন অফিসার তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে এই দ্বীপে ছিলেন।

কিন্তু পরবর্তীতে ওই পরিবারের সবাই সাপের কামড়ে মারা যায়। কয়েকদিন পর নেভির অফিসাররা এসে তাদের মৃত অবস্থায় পান। এরপর থেকে লাইট হাউসে অটোমেটিক সিগনালের ব্যবস্থা করা হয়।

সবচেয়ে বিষধর সাপের দ্বীপ

১৯২০ সালের পর থেকে জনসাধারণের জন্য দ্বীপটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ব্রাজিলের নৌবাহিনী। তবে লাইট হাউসের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এখনো বছরে একবার এই দ্বীপে যেতে হয়। তবে সে জন্য নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সহায়তা নিতে হয়।

ব্রাজিলিয়ান নেভি অফিসাররা ছাড়াও সাপের এই রাজ্যে সাপের ওপর গবেষণা করতে কিছু বিজ্ঞানীকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কারণ জীববিজ্ঞানী এবং গবেষকদের জন্য দ্বীপটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবন্ত পরীক্ষাগার।

দ্বীপটিতে সাপের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকলেও দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে গত ১৫ বছরে এদের সংখ্যা অন্তত ১৫ ভাগ কমে গেছে।

তাই ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ কনজারভেশন ফর নেচার এই গোল্ডেন লাঞ্চহেডকে বিপন্ন প্রাণির তালিকায় স্থান দিয়েছে। জনসাধারণের জন্য দ্বীপটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পেছনে যা আরেকটি অন্যতম কারণ।

আলোচনার শেষার্ধে বলতে পারি – যেহেতু ইহা ডি কুইমাডা গ্রান্ডি বিষধর সাপের দ্বীপ, তাই এখানে কোন জনবসতি গড়ে উঠে নি। আবার অনেকে ঘুরতে গিয়ে ফিরে আসে নি। এটা সত্যিই এক বিস্ময়কর দ্বীপ। এমন কোন অবাক করা বিষয় জানা থাকলে আমাদের জানিয়ে দিতে পারেন। আমরা বিষয়টি সবার জানার সুবিধার্থে তুলে ধরব আমাদের লেখনীতে।

About the author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Latest Posts

  • সর্দি থেকে মুক্তির উপায়, নাকের এলার্জি দূর করার উপায় | দ্রুত উপশম পেতে ঘরোয়া চিকিৎসা

    সর্দি থেকে মুক্তির উপায়, নাকের এলার্জি দূর করার উপায় | দ্রুত উপশম পেতে ঘরোয়া চিকিৎসা

    নাকের এলার্জি হচ্ছে নাকের ঝিল্লি প্রদাহের কারণে নাকের একটি সমস্যা। এটি সারা বিশ্বব্যাপী একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ নাকের এই রোগে আক্রান্ত। নাকের এলার্জি কোন মারাত্মক ক্ষতিকর রোগ না হলেও এ রোগের কারণে দৈনন্দিন জীবন প্রবাহ ব্যাহত হয়। এলার্জিজনিত সর্দি এবং হাঁচি জীবনকে অতিষ্ট করে তোলে। এই রোগে হঠাৎ…

    Read more

  • কফ, কাশি দূর করার উপায় | সঠিক চিকিৎসাই হতে পারে কাশি দূরীকরণের মাধ্যম

    কফ, কাশি দূর করার উপায় | সঠিক চিকিৎসাই হতে পারে কাশি দূরীকরণের মাধ্যম

    গলায় বুকে কফ জমে থাকা বেশ বিরক্তিকর একটি সমস্যা। ঋতু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়। আর আবহাওয়ার এই দ্রুত পরিবর্তন আমাদের শরীর খাপ খাওয়াতে পারে না, যার কারণে সৃষ্টি হয় ঠান্ডা জ্বর ও সর্দি-কাশির। ঠান্ডা সর্দি কাশি এগুলো আমাদের কাছে খুব পরিচিত রোগ হলেও এই ঠান্ডা সর্দি কাশি থেকে আমাদের দেহে অনেক বড় বড় অসুখ…

    Read more

  • ওজন কমানোর উপায় ডায়েট চার্ট | সুস্থ স্বাভাবিক জীবন

    ওজন কমানোর উপায় ডায়েট চার্ট | সুস্থ স্বাভাবিক জীবন

    সুস্থ স্বাভাবিক এবং রোগমুক্ত জীবন আমরা কে না চাই। আর এই সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করার একমাত্র উপায় হচ্ছে শারীরিক ওজন ঠিক রাখা। কেননা ওজন বেড়ে গেলে যে কোন রোগের ঝুঁকি ও বেড়ে যায়। এজন্য বাড়তি ওজন অনেকের মানসিক অসুস্থির প্রধান কারণ। তাই রোগ প্রকোপ কমাতে এবং মানসিক শান্তির উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের উচিত শারীরিক ওজন…

    Read more