আফসোস! এই শব্দটি আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পৃথিবীর যেখানেই যান না কেন, সব জায়গাতেই আফসোস শব্দটির সাথে আপনার দেখা মিলবেই। কখনো কোনো বিষয় নিয়ে আফসোস করেনি, এমন মানুষ হয়ত খুব কমই পাওয়া যাবে।
আপনার জীবনেও নিশ্চয় এমন সময় প্রায়ই আসে, যখন আপনি অতীতে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর কথা ভেবে আফসোস করতে থাকেন। অতীতে কি হয়েছিল, কি হতে পারত এসব চিন্তা করতে গিয়ে বর্তমান সময়কে অবহেলায় কাটিয়ে দেন।
কিন্তু আমরা চাই না আপনার ভবিষ্যৎ অতীতের গভীরে এভাবে হারিয়ে যাক। তাই আমরা আপনার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ লাইফ লেসন নিয়ে এসেছি। যা আপনাকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন মত সিদ্ধান্ত নিতে বা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে।
১১টি লাইফ লেসন, বদলে দিবে আপনার জীবন
১. সময় নষ্ট করবেন না
সময় আপনার জন্য অসামান্য সাফল্য এনে দিতে পারে, যদি আপনি সময়কে ঠিকভাবে কাজে লাগান। কিন্তু যদি আপনি সময় নষ্ট করেন, তাহলে সেই সময়ই আপনার জন্য সবচেয়ে কষ্টের হয়ে দাঁড়াবে।
অর্থাৎ, Either time can be a great healer or a great killer.
এটা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করে, যে আপনি আপনার বর্তমান সময়কে কিভাবে কাজে লাগাচ্ছেন।
বর্তমানে আপনি যে কাজগুলো করছেন বা যে সিদ্ধান্ত গুলো নিচ্ছেন, তা অবশ্যই আপনার ভবিষ্যৎ এর উপর প্রভাব ফেলবে।
তাই আর সময় নষ্ট করবেন না। আজ থেকেই আপনার মূল্যবান সময়কে গুরুত্ব দিতে শিখুন। কারণ সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না।
নিজের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিন। আপনার জীবনের গল্প পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরুন। যেন তারাও সময়কে অবহেলা করার ভুলটি না করে।
২. নিজস্ব নিয়মে চলুন
জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হল, শতকরা ৯৯ ভাগ লোক যে নিয়ম মেনে চলেছে সেটা মেনে চলা। তাই কাউকে অনুসরণ করবেন না। বরং নিজেকে অন্যদের জন্য আদর্শ হিসেবে গড়ে তুলুন।
অন্যের তৈরী করা নিয়ম মেনে চলে, জীবনে কখনোই কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। জীবনে কিছু অর্জন করতে হলে আপনাকে কিছু নিয়ম ভাঙতেই হবে।
নতুবা আপনার পরিচয় অন্য ব্যর্থ মানুষের ভীড়েই হারিয়ে যাবে। আপনার চারপাশে তাকিয়ে দেখুন। এমন অনেক মানুষ দেখতে পাবেন যারা নিয়মের বেড়াজাল ভাঙতে ভয় পায়। তাই বাকি জীবন আফসোস করেই কাটিয়ে দেয়।
আপনিও কি তাদের একজন হতে চান? নিশ্চয়ই না। তাহলে অন্যের তৈরি করা নিয়মের বেড়াজাল ছিন্ন করে বেড়িয়ে আসুন।
নিজস্ব নিয়ম তৈরি করুন এবং সেই নিয়মেই জীবনে এগিয়ে চলুন। যেখানে আফসোসের কোনো জায়গা নেই।
৩. যেকোনো কাজে ঝুঁকি নিন
যারা পরিশ্রম করে না এবং কাজে ঝুঁকি নেয় না তারা কখনো সফল হতে পারে না। বরং তারাই পরবর্তীতে হতাশ এবং ব্যর্থ ব্যক্তিতে পরিণত হয়।
কিন্তু কাজে ঝুঁকি নেওয়া বলতে আসলে কি বোঝায়?
ধরুন, আপনাকে একটি কাজ দেওয়া হল। আপনি জানেন যে, এই কাজটি করতে গিয়ে আপনি ব্যর্থও হতে পারেন। তবু আপনি একবার চেষ্টা করতে চাইছেন। এই চেষ্টা করাকেই কাজে ঝুঁকি নেওয়া বলে।
তাই ব্যর্থতা এবং এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব মেনে নেওয়ার জন্য নিজেকে সবসময় প্রস্তুত রাখুন। যে কাজ ই হোক না কেন, ঝুঁকি নিয়ে কাজটি করা শুরু করুন।
এখন যদি আপনি কাজে ঝুঁকি না নেন, তাহলে হয়ত একসময় আপনাকে এর জন্য আফসোস করতে হবে। আর হতাশ হয়েই সারাজীবন কাটিয়ে দিতে হবে।
৪. মনকে অনুসরণ করুন
কখনো কখনো কোনো কিছু অর্জনের ক্ষেত্রে আমরা বাবা-মা বা বন্ধুর উপদেশ মেনে নেই। যা অনেক সময় আমাদের জন্য সবচেয়ে আক্ষেপের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের ছোট থেকে শেখানো হয় বড়দের উপদেশ মেনে চলতে। কিন্তু আসলে তা ঠিক নয়। প্রথম বিষয় হচ্ছে, আপনার মন যা বলে তাই করুন। কারণ কেউ জানে না আপনার মন কি চায়।
সবাই মনে করে তারা আপনাকে সবচেয়ে ভালো উপদেশটি দিচ্ছে। কিন্তু অন্যের উপদেশ মেনে চলার কারণে কখনো কখনো আমাদের সারাজীবন আফসোস করতে হয়। তাই আপনি কি চান, সেটা বুঝতে চেষ্টা করুন। এবং নিজের মনকে প্রাধান্য দিতে শিখুন।
৫. আগ্রহ নিয়ে কাজ করুন
যে কাজই করুন না কেন, তা যেন আপনার ইচ্ছা এবং স্বপ্নের জন্য হয়। টাকার পেছনে দৌড়াবেন না। যে চাকরি আপনাকে ভালো মানের বেতন দিবে, সে চাকরির খোঁজ করা থেকে বিরত থাকুন।
কারণ এমন একসময় আসবে, যখন আপনার টাকা থাকা সত্ত্বেও, আপনি আপনার চাকরির প্রতি বিরক্ত হয়ে উঠবেন।
তাই আপনি যে কাজটি করতে ভালোবাসেন সেই কাজটি ই করুন। নিজের ইচ্ছাকে মূল্য দিতে শিখুন।
সেইসব কাজ করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয় বা যে কাজটি করতে আপনি পছন্দ করেন। মন থেকে যে কাজই করুন না কেন, একসময় আপনি সফল হবেনই।
৬. অভিযোগ করা বন্ধ করুন এবং কাজ করা শুরু করুন
অনেকেই আছেন যারা সমস্যা দেখলেই সেটা নিয়ে অভিযোগ করা শুরু করেন। কিন্তু অভিযোগ করলেই কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। বরং চেষ্টা করলেই যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
সবার জীবনই কোনো না কোনো সমস্যায় জর্জরিত। যারা নিজেদের সমস্যার সমাধান না করে রেখে দেয়, তারাই জীবনে আফসোস করে এবং হতাশ হয়ে পড়ে।
তাই প্রথমে নিজের সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করা বন্ধ করুন। কারণ কেউ আপনার জন্য সমস্যাটি সমাধান করে দিবে না। বরং আপনাকেই এর সমাধান করতে হবে।
মুসলিম স্বর্ণযুগের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ইবনে সিনা | পড়তে ক্লিক করুন
৭. কখনো কখনো চুপ থাকাই শ্রেয়
কিছু কিছু পরিস্থিতিতে কোনো রিয়্যাক্ট না করে, চুপ করে থাকাই উত্তম। প্রত্যেক পরিস্থিতিতেই আপনাকে রিয়্যাক্ট করতে হবে, এমনটা জরুরী নয়।
মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতিও আসে যখন আপনাকে যে কোনো একটি পথ বেছে নিতে হয়। যে আসলে আপনি বিষয়টিতে রিয়্যাক্ট করবেন নাকি তর্ক করা বন্ধ করবেন।
কখনো কখনো শান্তিরক্ষার জন্য একপক্ষকে চুপ থাকতে হয়। বিশেষ করে সম্পর্কের ক্ষেত্রে। একজন রেগে গেলে আরেকজনের চুপ থাকা উচিত। এতে করে সামনের মানুষটি একসময় তার ভুল বুঝতে পারবে।
৮. ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন করুন
আপনার কর্মজীবনে ভারসাম্য বজায় রাখুন। অনেকেই কাজে খুব ব্যস্ত থাকেন। ফলে অন্য সব ক্ষেত্রে সময় দিতে পারেন না। কাজে ব্যস্ত থাকা মানুষগুলো আপনার জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে। কারণ পরবর্তীতে তাদের জীবনে একাকীত্ব ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা।
তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজের জন্য সময় বের ক্রুন। আপনার কাছের মানুষদের সময় দিন। সবকিছুর মাঝে ভারসাম্য গড়ে তুলুন।
৯. নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন না
অন্যকে খুশি করতে গিয়ে নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলবেন না। আপনি যাই করুন না কেন, সেটা যেন অন্যকে খুশি করার জন্য না হয়।
আপনি কখনোই সবাই কে একসাথে খুশি করতে পারবেন না। কারণ আপনি যদি একজনকে খুশি করতে যান তাহলে অন্যরা কষ্ট পেতে পারে।
আবার, সবাইকে খুশি করার চেষ্টা করতে গিয়ে অনেকে নিজেকে, নিজের ইচ্ছা এবং স্বপ্নকেও ভুলে যায়। তাই, যা আপনার অস্তিত্বকে সংকটে ফেলতে পারে,সেই কাজটি করা থেকে বিরত থাকুন।
১০. টাকা কোনো সমাধান নয়
প্রবাদটা আমরা সবাই জানি, Money can not buy happiness. টাকা-পয়সা কখনো আপনার জন্য সুখ কিনে আনতে পারবে না।
আপনাকে এটা বুঝতে হবে। ধনী হওয়ার অর্থ এই নয় যে, আপনি জীবনে সুখী হবেন। কারণ ধনী হওয়ার লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে আমরা প্রায়ই আমাদের স্বপ্ন, সম্পর্ক, সময় এবং আরো অনেক কিছু ত্যাগ করে দেই।
কিন্তু যখন আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌছাবেন ততক্ষণে হয়ত সবকিছু আপনার হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে। তখন চাইলেও আপনি সেগুলোর কাছে আর পৌঁছাতে পারবেন না।
তাছাড়া পরিশ্রম করলে টাকা এমনিতেই উপার্জন করা সম্ভব। So just be happy now.
১১.পরিশ্রমী হোন
সফলতার ক্ষেত্রে বাহ্যিক সৌন্দর্য, উচ্চতা ইত্যাদির প্রয়োজন শতকরা ১ ভাগ। আর বাকি শতকরা ৯৯ ভাগ সফলতাই আসে পরিশ্রমের মাধ্যমে।
আসলে সফলতার ক্ষেত্রে বাহ্যিক সৌন্দর্যের কোনো ভূমিকা নেই। কেউ ই তার ভালো চেহারার জন্য চাকরি পায় না। যারা কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন, তারাই চাকরি পান।
যেখানে আপনি অভিযোগ করে সময় নষ্ট করছেন। সেখানে অন্য কেউ হয়ত অভিযোগ না করে কঠোরভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এতে ফলস্বরূপ তিনি তার লক্ষ্যেও সহজেই পৌঁছাতে পারছেন।
তাই যে কোনো কাজের ক্ষেত্রেই অভিযোগ না করে আপনার সর্বোচ্চ দিয়ে পরিশ্রম করুন এবং চেষ্টা করতে থাকুন।
তাই ভবিষ্যৎ এ যেন কখনো আফসোস করতে না হয় সেই চেষ্টা করুন। আশা করি এই লেসনগুলো অনুসরণ করলে আপনি আপনার জীবন থেকে আফসোস নামক শব্দটি সহজেই মুছে ফেলতে পারবেন।
Leave a Reply