সফলতা বনাম ব্যর্থতা
সাফল্য এমন একটা ব্যাপার যা নিয়ে সবাই আলোচনা করতে পছন্দ করে। একজন সাধারণ ব্যক্তি এবং সফল ব্যক্তির মধ্যে তুলনা করতে অনেকে পছন্দ করে।
সে আলোচনাগুলোতে বেশির ভাগ সময়ই আমরা এমন সব ব্যাপার পয়েন্ট করি যা হয়তো পার্থক্যকে শুধু বড় করে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, একজন সফল ব্যক্তি এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্য অনেক কম। তাঁরা তো রক্ত-মাংসেরই মানুষ, তাই না?
তাই আজ কথা বলব, এমন ৯ টি সুক্ষ্ম পার্থক্য নিয়ে যা সফল ব্যক্তিদের বাকিদের থেকে আলাদা করে থাকে এবং সে পার্থক্য গুলো ঘোচালে হয়তো আমরাও হতে পারি সফল।
১। আইডিয়া
একজন সাধারণ মানুষ সব সময় আরেকজনের সাফল্য এবং ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করে। পরনিন্দা কিংবা পরচর্চা যেনো তাদের নিয়মিত অভ্যাস।
তবে জীবনে সফল হওয়া মানুষের কখনোই এসব কাজে জড়ান না। তাঁরা কথা বলতে পছন্দ করেন আইডিয়া নিয়ে। বিভিন্ন নতুন নতুন চিন্তা-ধারা দিয়ে তাঁরা তাদের মস্তিষ্ক সচল রাখেন।
১০ জনের মধ্যে কথা বললে তাঁরা সবসময় তাদের চিন্তা-ধারাকে প্রকাশ করতে পছন্দ করেন।
২। লক্ষ্য নির্ধারণ
সাধারণ লোকেরা শুধুমাত্র লক্ষ্য নির্ধারণ করেন, সফল লোকরা তাদের লক্ষ্যকে ধাপে ধাপে পূরণ করেন। একজন সাধারণ লোক তার লক্ষ্য নির্ধারণ ঠিক করেন তবে তা পূরণ করতে কোনো জোর খাটান না।
কিন্তু সফল লোকেরা এই কাজ করেন না। তাঁরা লক্ষ্য নির্ধারণ করেন এবং তা পূরণে প্রতিটি কঠিন ধাপ তাঁরা পার করেন। যেখানে একজন গতানুগতিক রুটিনে চলা লোক শুধু লক্ষ্য নির্ধারণ করেন সেখানে উদ্যোক্তারা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পর তাদের কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করেন।
৩। আক্ষেপ বনাম বিচক্ষণতা
সাধারণ ব্যক্তিরা জীবন নিয়ে আক্ষেপ করে, সফল লোকেরা জীবনে আসা সমস্যাগুলোকে বিচক্ষণতার সাথে সমাধান করে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রায় সময় অনেক ধরনের আক্ষেপ করি। কখনো টাকা পয়সার কমতি নিয়ে, কখনো কোথাও অসফল হলে আমরা সেটা নিয়ে ধরে বসে থাকি।
মনোবল কমে যায়, ডিপ্রেশনে পড়ে যাই আমরা। কিন্তু সফল ব্যক্তিরা কখনো কোনো কিছু নিয়ে আক্ষেপ করেন না। তাঁরা সমস্যাগুলো অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সমাধান করেন।
এরা দায়িত্ববোধে কাবু হয় না। দায়িত্বের চাপে এরা আরো বেশি সফল হয়। সত্যি কথা বলতে, সবার জীবনে সমস্যা আসে। তবে কিভাবে আপনি সেটাকে মোকাবেলা করলেন সেটাই আসল কথা। এটাই পার্থক্য গড়ে দেয়।
৪। সফল ব্যক্তিরা কখনো সামাজিক নিয়মে আটকা পড়ে না
সামাজিক নিয়ম বানানো হয় কেন? সরল দৃষ্টিতে দেখলে বুঝবেন, সামাজিক নিয়মের প্রয়োগ হয় শুধুমাত্র সমাজে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য।
সাধারণ ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে সামাজিক গন্ডিতে আটকা পড়ে যান। কিন্তু সফল ব্যক্তিরা কখনোই এই গন্ডিতে আটকা। তাঁরা আর দশজনের মতো না। তাঁরা এই গন্ডিতে কখনই আটকা পড়েন না।
যদি আটকা পড়তেনই, তাহলে আমরা মকবুল ফিদা হুসেন অথবা রাজা রবি ভারমার মতো শিল্পী কি পেতাম? এরা কখনো কোনো ধরনের বাধায় বাধাগ্রস্ত হয় না।
৫। আমরা স্বপ্ন দেখি, তাঁরা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন
স্বপ্ন তো সবাই দেখে। স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে সবার। তবে বাস্তবায়ন করতে পারেন কয়জন? যারা বাস্তবায়ন করতে পারেন, তাঁরা এ জগতে সবার কাছে উদাহরণস্বরূপ হয়ে আছেন।
আমরা স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন বেশি কঠিন হলে তাতে ক্ষান্ত দিয়ে দেই কিন্তু তাঁরা তাদের সবটুকু জোর দিয়ে তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেন।
মার্ক জুকারবারগের কথাই ধরেন। ১৫ বছর আগেও কি কেউ চিন্তা করতে পারত যে একসময় দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত মানুষের সাথে যোগাযোগ করা যাবেম, বন্ধুত্ব করা যাবে? কিন্তু এই ছেলেটি এই স্বপ্নেই বিভোর ছিল এবং তা বাস্তবায়ন করেছে।
দুনিয়া সেরা ১১টি উক্তি, যা বদলে দিবে আপনার জীবন- পড়তে ক্লিক করুণ
৬। মনের বাঘে কাবু করে আমাদের, তাঁরা মনের বাঘকেই নিজের বানিয়ে ফেলেন
কথায় বলে, মানুষকে বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়। কথাটি সত্য। যখনই আমরা কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে যাই, আমাদের মন ভয়ে তটস্থ হয়ে যায় এই চিন্তায় যে আমি কি কাজটা করতে পারব?
কাজটা কি ভালো হবে? এবং ঠিক তখনই নার্ভের দুর্বলতার কারণে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি। আমরা আমাদের বিফলতার ভয়ে কাজটা আর করি না।
কিন্তু সফল ব্যক্তিরা কখনোই এই ভয়ে কাবু হোন না। তাঁরা ঝুকি নিতে ভালোবাসেন। তাদের কাছে ঝুকি না নেওয়াকে জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি মনে হয়।
৭। সবুরে ফলে মেওয়া, দ্রুততায় হয় ভুল
তৎক্ষণাৎ কোনো কিছু থেকে আশা করাটা সবচেয়ে বড় ভুল। কোনো কাজ করার পর তা থেকে যদি আমরা দ্রুত ফল আশা করি, তাহলে আমাদের বুঝতে হবে যে আমরা অধৈর্যের মতো আচরণ করছি। অধৈর্যবান ব্যক্তিরা কখনোই জীবনে সফল হোন না।
সফল ব্যক্তিরা সবাই ধৈর্যের সুমহান উদাহরণ। এরা তাদের যৌবনে অনেক কষ্ট করেছেন, অনেকে বৃদ্ধ বয়সেও তো সফলতা পান না। মৃত্যুর পর পান।
যেমন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত। জীবনের শেষ দিকে খুব করুণবস্থায় মারা গিয়েছিলেন। তার বই বেশিরভাগই সফলতা পেয়েছিল তার তিরোধানের পর। কিন্তু মরেও তিনি নিজেকে ভোলাননি, তার অমর সৃষ্টির মাধ্যমে জীবিত আছেন আমাদের মনে-প্রাণে।
৮। গুচি পরলেই “বড়লোক” হওয়া যায় না
“আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ” এই প্রবাদটি তো আমাদের অনেক চেনা পরিচিত। এই প্রবাদটির সার অর্থ হচ্ছে, ছোট মন মানসিকতার মানুষ হঠাত বড় হয়ে গেলে তাদের পা আর মাটিতে পড়ে না।
তাঁরা অহমিকায় একজন মানুষকে মানুষ মনে করেন না। দামি পোশাক-পরিচ্ছদ কিংবা দামি গাড়ি দিয়ে নিজেদের আভিজাত্য বাড়ানোর চেষ্টা করেন।
কিন্তু সফল ব্যক্তিরা তাদের মনের দিক থেকে বড় হোন। তাদের পরনে সাধারণ জামা থাকে, সাধারণ ভাবে জীবন যাপন করেন। লোক দেখানো জীবন-যাপন করেন না।
টাকা থাকলে নিজেকে ধনী বলা যেতে পারে কিন্তু মনের দিক দিয়ে অভিজাত না হলে নিজেকে “বড়লোক” বলতে পারবেন না।
৯। মানসিকতায় বাধা
“The sky is the limit” এই জনপ্রিয় লাইনটা তো আমরা অনেক শুনে থাকি চলচ্চিত্রগুলোতে কিন্তু এর মানে কি? স্বপ্ন দেখায় কোনো বাধা আসা উচিত না। যদি স্বপ্ন দেখেনই, বড় স্বপ্ন দেখুন। নিজের স্বপ্নকে আকাশ সমান উচ্চতায় নিয়ে যান।
আপনার মস্তিষ্কের একটা অংশ বলতেই পারে, “এত বড় স্বপ্ন দেইখো না, তোমার এই যোগ্যতা নাই।” এই মেন্টাল ব্লকটা পার করাটাই আসল বিষয়।
সবকিছুতে ইতিবাচক দিক খুজতে হবে। সফল ব্যক্তিরা তাই করেন। তাঁরা ব্যর্থতার মধ্যেও ইতিবাচক দিক খুঁজে বের করেন। শচীনকে দেখে বড় হয়েছিল দিল্লির এক বালক, মা-বাবাকে বলেছিল আমি শচীনের মতো হতে চাই। আর এখন সেই ছেলে শচীনের রেকর্ডকেই ভয় পাইয়ে দিচ্ছেন।
কিছু বছর একই ফর্ম-এ খেলতে থাকলে হয়তো শচীনের বেশিরভাগ রেকর্ডই ভেঙ্গে দিতে পারেন। ছেলের নাম জানতে চান? বুঝে গেছেন হয়তো! ছেলেটার নাম ভিরাট কোহলি।
এই ব্যাটসম্যান যদি কখনো এই চিন্তাকে করে এগোতো যে, শচীনকে ছোয়া সম্ভব না তাহলে কি এই পর্যন্ত আসতে পারত? আপনি ১০০-কে টার্গেট করেন, ৯০ পাবেন। তাই টার্গেট করতে হবে ১১০ কে।
আমরা এবং সফল ব্যক্তিদের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। পার্থক্য খুব অল্প। এই পার্থক্যগুলোকে পার করতে পারলে হয়তো আমরা সবাই সফলতার মুখ দেখব।
দিন শেষে এটাই বলা যায়, সফল হওয়ার কোনো গাইডবুক নাই। এই ৯টি পরামর্শও খুব বিশেষ একটা কাজে দিবে না কিন্তু চেষ্টা থামানো যাবে না। সফল না হতে পারি, একজন ভালো মানুষ তো হতে পারি।
Leave a Reply