একজন নিভৃতচারী যোদ্ধা মেহদী হাসানের গল্প
২০০০ কিংবা তার কিছু পরে হবে। মহল্লায় মহল্লায় টাইপিং কাজ করার দোকানের হিড়িক পড়ে যায়। কারণ ইতোমধ্যে প্রিন্টিং প্রসেস বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
প্রিন্টিং প্রসেস জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও, বাংলা লেখা যেন একটা ঝক্কি হয়ে উঠে আমাদের জন্যে। কারণ তখন ফেসবুকের জন্ম হয়নি কিংবা মোবাইল ফোনও খুব বেশি মানুষের হাতে দেখা দুষ্কর। তাই ইংরেজি টাইপকেই মানুষ অধিক গুরুত্ব দিতো।
ফলে বাংলা লেখা শেখা কিংবা তার ব্যবহার খুব একটা গড়ে উঠে নি। তাই বাংলা ভাষার জন্যে রক্ত দেওয়া জাতির বাংলা লেখতে যেতে হতো দোকানে কিংবা কোন কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে। বাংলা লেখার ঝক্কি এখানে কমেনি।
১৯৯৮ সালে আবিষ্কার হওয়া বিজয় বায়ান্নো তখন বাংলা লেখায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হতো। কিন্তু মায়ের ভাষা বাংলা লেখতে এবার রক্ত নয়, টাকা দিতে হবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ করে কিনতে হবে বিজয় বায়ান্নোর লাইসেন্স।
তবে তখন বাজারে “প্রবর্তন” নামে আরেকটি সফটওয়্যার প্রচলিত ছিলো। তবে বিজয়ের দৌরাত্ম্যে প্রবর্তনের নাম-গন্ধ কজন মানুষ শুনেছে তার হিসেব পাওয়া কঠিন। অন্যদিকে, বাংলা লেখার এই ঝক্কির পেছনে আরেকটা কারণ ছিলো, আলাদা একটি কীবোর্ড স্ট্র্যাকচার মুখস্ত করতে হতো।
যদিও বিজয় কীবোর্ড কিছুটা এই কষ্ট লাঘব করতে চেয়েছিলো। কিন্তু আদৌতে বাঙালি নিজ হাতে বাংলা লেখতে তখনও পারদর্শী হয়ে উঠেনি।
বর্তমান সময়টাকে এবার আকড়ে ধরা যাক। এখন বাংলা লেখা যেন আমাদের অত্যন্ত সহজ বিষয়। আরো কয়েকবছর আগেও যেখানে মানুষ বাংলিশ ফন্টে লেখে নিজেদের ক্লাসি হিসেবে জাহির করত সেখানে এখন বাঙালি বাংলা ফন্টে না লেখলে আমরা তাকে একটু আড়চোখে দেখি।
কখনো আপনার মনে কি প্রশ্ন জেগেছে, এই বিপ্লবটা আসলো কি করে? এই বিপ্লবটা এসেছে মেহদী হাসান খানের প্রতিষ্ঠিত ওমিক্রন ল্যাবের অভ্র আর রিদমিক কীবোর্ডের মাধ্যমে।
রিদমিক নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। কারণ রিদমিক অভ্রপুষ্ট সফওয়্যার। তবে অভ্র নিয়ে বলার আছে অনেক কিছু। সংগ্রাম, অধ্যাবসায় আর চেষ্টা যেন অভ্রকে নিয়ে গিয়েছে অন্য ইতিহাসের স্বর্ণপাতায়।
আজ অভিযাত্রীতে আমরা বলব অভ্র এর পেছনে থাকা সেই ইতিহাসে কথা। শুধু ইতিহাস নয়, অভ্রকে এই পর্যায়ের আনার সংগ্রামের কথাও আলোচনার চেষ্টা করবো।
অভ্র এবং মেহদী হাসান খানের যুদ্ধের শুরু
শ্রদ্ধেয় এই মানুষটার নাম মেহদী হাসান খান। ১৯৮৬ সালের ২৩ জুলাই ঢাকার মত দুষিত শহরে এই পরিশুদ্ধ মানুষের জন্ম। পড়াশোনা করেছেন আইডিয়াল স্কুল আর নটরডেমের মত স্বনামধন্য স্কুল কলেজে। নটরডেমে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে।
যে ছেলেটা ক্লাস নাইন-টেন থেকে প্রোগ্রামিংয়ের দিকে ঝুঁকে গিয়েছেন তিনি কেন ডাক্তারিকে পেশা হিসেবে নিতে চেয়েছিলেন তা স্পষ্ট করে জানা যায় না। তবে তিনি আদৌ ডাক্তার হতে চাননি এটা তার জীবনে বাকী অধ্যায়েই জানা যায়।
ঘটনাকাল ২০০৩। তখন তিনি নটরডেমের ছাত্র। বইমেলাতে গিয়ে তার চোখে পড়ল বায়োস অর্থ্যাৎ Bangla Innovation Through Open Source নামের একটি স্টল। সেখানে কিছু ছেলেমেয়ে “বাংলা লিন্যাক্স” নামে একটি বাংলা লোকালাইজ করা লিন্যাক্স ডিস্ট্রো নিয়ে এসেছিলো।
এতে বাংলা লেখার পাশাপাশি উইন্ডোর সব টাইটেল, মেনু ফাইলের নামকরণ করা যায় বাংলায়। সে সময়ে বাংলা কোন অপারেটিং সিস্টেমে এভাবে দেখা যায়নি। আর ওয়েবসাইট তো দূরের কথা। কিন্তু বায়োস যে অপারেটিং সিস্টেম বানিয়েছিলো তার পুরোটাই বাংলায়। এমনকি তাদের ওয়েবসাইটটিও বাংলায়।
তাজ্জব হয়ে গেলেন মেহদী। কি ফন্ট দিয়ে এমন করে বানানো জানতে গেলে তিনি জানতে পারেন, ফন্টটির নাম “ইউনিবাংলা”। মূলত এখান থেকেই শুরু। তখন তিনি ইউন্ডোজ ব্যবহার করার সে লিন্যাক্স তার কোন কাজে আসলো না।
কিন্তু তিনি ফন্ট নিয়ে কাজ করলেন। ফন্ট ইন্সটল দিলেন। দেখলেন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ইনসার্ট কী ব্যবহার করে খুব সহজেই যুক্তক্ষর বানানো যাচ্ছে। এসময় তিনি একটি অবাক করা বিষয় লক্ষ্য করলেন। ফন্ট দিয়ে যুক্তক্ষর বানানোর জন্যে যে সফটওয়্যার এবং সফটওয়্যারের ফন্ট লাগত দুটোর একটিও লাগছে না, কেবল এই “ইউনিবাংলা” ফন্ট দিয়েই কাজ হচ্ছে।
তবে এটা খানিকটা বিরক্তিকর। এখানে যদি একটি কীবোর্ড থাকত তাহলে খুব সহজ হতো। তাই তিনি পুরো ইন্টারনেট চষে বেড়ালেন এমন কিছুর আশায়। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। কোথাও এমন সোজা কীবোর্ড নেই। তাই তিনি চিন্তা করলেন তিনি নিজেই এমন একটি কীবোর্ড বানাবেন।
মাথায় সিন্দাবাদের ভূত
সিন্দাবাদের মাথায় ভূত আসা মাত্রই সিন্দাবাদ ভূত নামাতে বসে পড়লেন। ইতোমধ্যে তিনি তখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র।
মাথা ভর্তি চুল, হালকা গড়ন আর চোখে চারকোনা ফ্রেমের চশমা পড়া ছেলেটি ক্যাম্পাস মাতিয়ে বেড়াচ্ছে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, নতুন মেডিকেল জীবনের উপভোগ্য সময় কোন কিছুতে বাদ পড়ছে না সে। মেডিসিন ক্লাব আর ক্লাসে তার সরব উপস্থিতি। সবার সাথে মিশুক এই ছেলেটা ক্যাম্পাসের প্রতিটা কাজেই সরব
কিন্তু হুট করে ছেলেটা যেন হারিয়ে গেল। ক্যাম্পাস চষে বেড়ানো ছেলেটাকে কেউ পুরো ক্যাম্পাস চষে পাচ্ছে না। কি যেন একটা ঘুরছে তার মাথার ভেতর। মাথা নিচু করে হাটে, কেউ কোন একটা প্রশ্ন করলে তবেই উত্তর দেয় নইলে না। নির্জীব হয়ে যাচ্ছে সেই টগবগে যুবকটা।
হোস্টেলের একটা রুমের ভেতরেই তার রাত-দিন। কখন রাত হচ্ছে আর কখন দিন তার হিসেব নেই। তিনি তখন ইংরেজী টাইপ করে বাংলা লেখার সফটওয়্যার আবিষ্কারে ব্যস্ত। ইউনিকোড ভিত্তিক কিবোর্ড বানানো তখন তার ধ্যান জ্ঞান। ইতোমধ্যে রাত দিন খেটে একটা প্রোটোটাইপ দাঁড় করিয়ে ফেলল সে।
তবে একজন কলেজ পড়ুয়া ছেলের সফটওয়্যার কেন মানুষ ব্যবহার করবে? তিনি নিজের পরিচয় গোপন রাখতে চাইলেন, সাথে সফটওয়্যারে রাখতে চাইলেন পেশাদারিত্বের ছাপ। দেখা গিয়েছে কোডিং নিয়ে ভাবতে ভাবতে বিছানায় গিয়ে কিছু একটা তার মাথায় এসেছে।
তারপর সে নিয়ে সারারাত কাজ করতে করতে কখন যে ভোরের আলো জানালায় উঁকি দিয়েছে তা খেয়ালই করেননি। অন্যদিকে, এসব করতে করতে চোখের নিচে কালি পড়ে গেল সদ্য ডাক্তার হবার স্বপ্নে বিভোর ছেলেটার।
তাই পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ল তার কাজের খবর। সবাই জানতে পারলো বাংলা কিবোর্ড বানাচ্ছে মেহদী। কিন্তু যখন অন্য একটি কোম্পানির কীবোর্ড ইতোমধ্যে খুব প্রচলিত তাহলে কেন?
কারণ ছেলেটা বাংলা ভাষা লেখাকে আরো সহজ করতে চায়, বাংলা ভাষাকে বিনামূল্যে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চায়। যে ভাষার জন্যে মানুষ রক্ত দিয়েছে তা দিয়ে ব্যবসার করার ধান্দা নেই ছেলেটার। ভাষার প্রতি এমন শ্রদ্ধা মেহদীর প্রতি আরো শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দেয়।
একদিকে স্বপ্ন অন্যদিকে ডাক্তারির পড়াশুনা
ভাষা শহীদেররা যেমন নিজের রক্তকে উৎসর্গ করে বাংলা ভাষাকে মর্যাদা দিয়েছেন। তেমনি মেহদী মর্যাদা দিয়েছেন নিজেকে মেডিকেল নামের রোলার কোস্টারের মাঝে রেখে। সাধারণত মেডিকেল জীবন এমনিতেই অনেক দুর্বিষহ। প্রতিদিনের ক্লাস, এক্সাম নিয়ে এমবিবিএসের ৫ বছরের জীবনের প্রতিটা দিন এক একটি গল্প।
আবার এমন স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন সুযোগ পেয়ে ডাক্তার হতে মনোযোগ কে না দিবে? কিন্তু সেই সময়টাতে মেহদী সব ছেড়ে দিয়ে অভ্রকে লালন করেছেন। তাতে মেডিকেলের শিক্ষকদের কাছে হয়েছেন তিনি অমনোযোগী ছাত্র। এমনও শোনা গেছে, মেডিকেল তার জন্যে নয়।
কারণ বেশিরভাগ ক্লাসেই থাকতেন অনুপস্থিত। ফলে ছয় মাস করে পিছিয়ে থাকতেন নিজের ব্যাচের চেয়ে। ভাষাকে উন্মুক্ত করার এই সংগ্রামের নাম দিয়েছেন অভ্র। যার অর্থ আকাশ। আর কেন অভ্র? তার উত্তর দিয়েছেন এর স্লোগানে। অভ্রর স্লোগান, ভাষা হোক উন্মুক্ত। সত্যিই তো ভাষাকে উন্মুক্ত করেছেন মেহদী।
এদিকে যেহেতু তিনি উইন্ডোজের জন্যে সফটওয়্যার বানাতে চাচ্ছেন তাই তাকে মাইক্রোসফট ডটনেট ব্যবহার করতেই হলো। এরপর ভারতের একটি ফন্ট প্রতিযোগিতায় তিনি অভ্রর প্রোটোটাইপ পাঠালেন। কিন্তু সেখানে বাগ ধরা পড়ল।
তারা জানালো অভ্র বারবার ক্রাশ করছে। মাথায় হাত মেহদীর। এরপর বাগ ফিক্স করতে ডটনেট ফ্রেমওয়ার্ক বাদ দিলেন, পুরো কোড আবার নতুন করে লেখলেন ভিজ্যুয়াল বেসিকে। এরপর আবারো কোড লেখেন Delphi/Object Pascal এ। ফলে শেষমেষ ক্রাশের ঝামেলা কমলো।
ওমিক্রন ল্যাবের যাত্রা শুরু
অভ্রকে ক্রাশমুক্ত করে তিনি প্রোফেশনালিজমে আরেকধাপ এগিয়ে গেলেন। এরপর মুহম্মদ জাফর ইকবালের বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস “ওমিক্রনিক রূপান্তর” থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ওমিক্রন ল্যাব প্রতিষ্ঠা করলেন। প্রবাসী মামাকে রিকুয়েস্ট করে ডোমেইন কিনলেন।
বিনিময়ে মামার বিয়ের ছবি তুলে দিতে হলো। আর সেই ছবিগুলো প্রকাশ পেলো অভ্রর অফিশিয়াল সাইটে। ছবিগুলোর নিচে লেখা ছিলো, “তুমি যদি এই সাইটে ইউনিবিজয়ের জন্য এসে থাকো, তবে এখানে ক্লিক করো”। এরপর মেহদী তাতে যুক্ত করলেন ফোরাম।
ফলে অভ্র নিয়ে আলোচনার একটা প্ল্যাটফর্ম যুক্ত হলো। যাতে করে সবাই নিজেদের চাহিদা, অভিযোগ সব সেখানে রাখতে পারতেন। আর অভ্র টিম কাজ করত সেসব বিষয়ের উপর। টিম প্রোফেশনালিজমের জন্যে নিয়মিত রিলিজ লগ, ভার্সন ইউজার ম্যানুয়াল প্রকাশিত হতো।
টিম প্রফেশনালিজমের সফলতা কথাটুকু ছিলো? এই সফটওয়্যার যে বাংলাদেশী কোন টিমের তৈরী শুরুর দিকে এটা কেউ বিশ্বাসই করত না। এমনকি ফ্রী দেওয়াটাকে সবাই একটা মার্কেটিং পলিসি ভাবত।
তবে ইতোমধ্যে অভ্র কিন্তু ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। তখনকার প্রযুক্তি বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন “কম্পিউটার টুমোরো”তে অভ্রকে ফিচার করে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সাথে বোনাস হিসেবে দেওয়া হতো অভ্রর এককপি ফ্রী সিডি।
যুগান্তকারী বাংলা লেখার বিপ্লবের শুরু
এভাবেই অভ্র তার আকাশে ছড়িয়ে পড়তে থাকল। এদিকে অভ্র ফোরাম অ্যাকটিভ হয়ে যাচ্ছিলো। সেখান থেকে তৈরী হয়ে গেল অভ্রর টিম। প্রথমে মেহদীর সাথে পরিচয় হয় এলিফ্যান্ট রোডের বইয়ের দোকান “বাঙালিয়ানা”র মালিক ওমরের সাথে। তার দোকানে অভ্র নিয়ে আড্ডা চলত।
ফলে সেটা ছিলো অভ্র টিম গঠনের সেকেন্ড মাদারল্যান্ড। এই সেকেন্ড মাদারল্যান্ড থেকে পরিচয় ঘটে রিফাত-উন-নবীর সাথে। এই রিফাত-উন-নবীই অভ্রর ম্যাক ভার্সন বানিয়েছেন। এরপর টিমে আসেন তানবিন ইসলাম সিয়াম ও শাবাব মুস্তফা।
সিয়াম অভ্র টিমে আসার কিছুদিনের মধ্যে বানিয়ে ফেললেন কালপুরুষ ও সিয়াম রূপালী নামের দুইটি ফন্ট। উল্লেখ্য যে, এই দুইটি ফন্টের জন্ম হয়েছিলো শুধু অভ্রর জন্যেই। এরপর ভারত থেকে আসে নিপন। অ্যাকটিভ একজন মডারেটর হয়ে যান অভ্র ফোরামের।
পরবর্তীতে কোডিংয়ে হাত পাকান অভ্রর লিন্যাক্স ভার্সন তৈরীর মাধ্যমে। উল্লেখ্য যে, অভ্রর যে বর্তমান ওয়েবসাইট সেটি তারই বানানো। অভ্র টিমে এরপর যোগ দেন মেহদীর স্ত্রী সুমাইয়া নাজমুন। তিনি অভ্রর জন্যে দেড় লাখ শব্দের একটি ডিকশনারী তৈরী করেন।
বিনা মূল্যে অভ্র
এরপর থেকে ২০০৭ সালে “অভ্র কীবোর্ড পোর্টেবল এডিশন” বিনামুল্যে ব্যবহারের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়। অভ্র কীবোর্ডের ভার্সন ৫ এর পর থেকে এটি ফ্রীওয়্যার থেকে ওপেনসোর্সে রূপান্তর করা হয়। এটি মজিলা পাবলিক লাইসেন্সের অধীনে লাইসেন্সকৃত।
যে কেউ চাইলে গিটহাব রিপোজেটরি থেকে অভ্রর কোড ডেভেলপমেন্টে অংশ নিতে পারবেন। ২০১৪ সালের অক্টোবরে প্রকাশ হলো ovro.im ঠিকানায় এটির অনলাইন টুল। এভাবে অভ্র ছড়িয়ে পড়ছে সফল্ভাবে।
তবে অভ্রকে কিছুটা সংগ্রাম করতেও হয়েছে অনেক প্রতিকূলতার সাথে। ৮ এপ্রিল ২০১০ সালে দৈনিক জনকণ্ঠে মোস্তফা জব্বার “সাইবার যুদ্ধের যুগে প্রথম পা” নামে একটি প্রতিবেদনে অভ্রর বিরুদ্ধে পাইরেসির অভিযোগ আনেন।
তিনি বলেন, তার বিজয় কীবোর্ডের লেআউট ব্যবহার করে অভ্র কীবোর্ডের লেআউট তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু মজার বিষয় হলো, দৈনিক জনকণ্ঠও তখন অভ্র লেআউট অনুসরণ করত। তবে পরবর্তীতে মেহদী মোস্তফা জব্বারের অভিযোগের উত্তর দিয়েছেন একাধিক সাক্ষাৎকারে।
তিনি বলেন, বিজয় কীবোর্ডের কপিরাইট চাওয়া হয়েছিলো। কিন্তু মোস্তফা জব্বার তা বিনা পয়সায় দেননি। ফলে তিনি নিজেই ইউনিবিজয় কীবোর্ড লেআউট তৈরী করেন, যার সাথে বিজয় কীবোর্ডের অন্তত ৮টি পার্থক্য রয়েছে। অন্যদিকে, বিজয় এবং ইউনিবিজয় নিয়ে ট্রেডমার্কের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাও ভিত্তিহীন। কারণ দুটো নাম একই নয়।
জানতে ক্লিক করুন- বয়স অনুযায়ি আপনার এখনই কি করা উচিত
অভ্রের বিশ্বজয়
অভ্র এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। যার ফলে অভ্রর ঝুলিতে স্বীকৃতিও আছে অনেক।
মাইক্রসফটের অনলাইন সংগ্রহশালায় ইন্ডিক ভাষাসমূহের সমাধানের তালিকায় অভ্র কী-বোর্ডকে অন্তর্ভুক্তি, জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র ব্যবহার, অভ্রকে বাংলা কীবোর্ড রিসোর্স হিসেবে ইউনিকোড সংস্থার ওয়েব সাইটে অন্তর্ভূক্তি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা বেসিস বাংলা তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য অভ্রটিমকে-কে ২০১১ ‘বিশেষ অবদান পুরষ্কার’ (Special Contribution Award) প্রদান এর মধ্যে কয়েকটি।
এছাড়াও মেহদী ব্যাক্তিগতভাবে ২০১৬ সালের সেপ্টেস্বরে Top Ten Outstanding Young Persons পুরস্কার লাভ করেন। উল্লেখ্য যে, নির্বাচন কমিশনে অভ্র ব্যবহারের ফলে সরকারের পাঁচ কোটি টাকা বেঁচে যায়। কারণ অভ্র সম্পূর্ণ ফ্রী। অভ্র নির্বাচন কমিশনে ব্যবহারের বিপরীতে মেহদী টাকা নেননি, শুধু একটি অফিশিয়াল স্টেটমেন্ট নিয়েছেন।
মেডিকেলে বসে প্রোগ্রামিং করা মেহদী ২০১০ সালে ইন্টার্ন শেষ করে বিয়ে করেন সহপাঠী সুমাইয়া নাজমুনকে। মেহদী এখন কর্মরত আছেন ব্যাকপ্যাকে। ডাক্তারি পাশ করেও প্রোগ্রামার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করার অনুপ্রেরণা তার স্ত্রীই তাকে দেন।
ভাষাকে উন্মুক্ত করা এই মানুষটির জন্যে এবং ভালোবাসার অভ্রর জন্যে অনেক অনেক শুভকামনা অভিযাত্রীর পক্ষ থেকে।
Leave a Reply