পৃথিবী সেরা ১০ নারী
‘পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’
কথাটি আজকের নয়, কাজী নজরুল ইসলাম এই কথাটি বলে গিয়েছেন। বেগম রোকেয়া বলেছেন, স্বামী-স্ত্রী এক গাড়ির দুই চাকার মতো। একটু বেতাল হলেই সর্বনাশ।
তাই আজ আমরা সেই ১০ জনকে নিয়ে কথা বলবো যারা প্রতিনিয়ত পৃথিবীর জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র নারীদের জন্য নয়, তাঁরা পুরুষদের জন্যও হতে পারেন আদর্শ।
১.
সাবরিনা পেটারস্কিঃ পরবর্তী আইনস্টাইন?
সাবরিনা পেটারস্কি ২৫ বছর বয়সী একজন আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী। বিজ্ঞানী বললে হয়তো মাহাত্ম্য বুঝতে পারবেন না! Forbes ম্যাগাজিন তাঁকে ইতিমধ্যে ‘পরবর্তী আলবার্ট আইনস্টাইন’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে সে তাঁর প্রথম বিমান তৈরি করেন যার নাম ছিল Zenith Zodiac এবং সবচেয়ে কম বয়সে বিমান চালনার ইতিহাস করেন তিনি।
তাকে ‘আমাজন’ এর প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজস তাঁর নিজস্ব অ্যারোস্পেস কোম্পানীতে চাকুরীর অফার দিয়েছিলেন। এই মুহূর্তে তিনি তাঁর পিএইচডিতে মনোনিবেশ করেছেন।
সত্যি! এত কম বয়সে এত কিছু অর্জন করতে গেলে অবশ্যই বিশেষ কিছু হতে হবে আমাদের।
২.
মালালা ইউসুফজাইঃ এক লড়াকু কিশোরী
নিজের, বন্ধুদের পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য প্রায় প্রাণ বিসর্জন দেওয়া কিশোরীর নাম মালালা ইউসুফজাই। ২০১২ সালের অক্টোবরে মাথার বা পাশে গুলি খেয়েছিলেন এই কিশোরী।
তালেবান এসে স্কুল বন্ধ করার হুমকি দেওয়া পরও মেয়েদের স্কুলে যাওয়ায় অনুপ্রানিত করায় এই মাশুল দিতে হয়েছিলো তাকে ।
১৭ বছর বয়সে তিনি তাঁর সাহসিকতার জন্য নোবেল পান এবং সর্বকনিষ্ঠ অর্থাৎ সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল পাওয়া ব্যক্তি সে এখন পর্যন্ত। নোবেল পাওয়ার পর তাঁর কাজ থেমে থাকেনি। তাঁর ফাউন্ডেশন সুবিধাবঞ্চিত কিশোরীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে চারটি দেশে।
৩.
মেলিন্ডা গেটস
মেলিন্ডা গেটসকে হয়তো অনেকে চিনবেন বিল গেটসের স্ত্রী হিসেবে। কিন্তু Forbes তাঁকে আখ্যায়িত করেছে the most powerful woman in philanthropy হিসেবে।।
তিনি তাঁর ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অসহায় নারী-শিশুদের সহায়তা করে যাচ্ছেন। তাঁর ফাউন্ডেশনের ভিত্তিমূল্য প্রায় ৪০ বিলিয়ন ইউএস ডলার।
২০১৬ সালে তিনি বিশ্বের নারীদের জন্য একটি বিশেষ কর্মসূচির ঘোষণা করেন যা নারীদের প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে আগ্রহী করবে। প্রযুক্তি খাত এই মুহূর্তে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এই খাতে নারীদের সংখ্যা কম হওয়ায় তিনি এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
৪.
অং সান সুচি
তাঁর সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে অনেক। তবে রোহিঙ্গা ইস্যু বাদ দিলে তিনি আমাদের জন্য উদাহরণস্বরূপ। তিনি তাঁর দেশের গণতন্ত্র এর জন্য ২১ বছর গৃহবন্দী ছিলেন।
তাঁর এই ত্যাগ-তিতিক্ষার জন্যে তিনি ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান তবে তিনি তা গ্রহণ করতে পারেন ২০১২ সালে।
গণতন্ত্রের জন্য লড়ে গেলেও তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের উৎখাত করা শুরু হয় এবং তিনি এই ইস্যু নিয়ে এখন পর্যন্ত ভয়াবহ ভাবে নিশ্চুপ।
এক সময় তরুণ সমাজ তাঁকে আদর্শ হিসেবে দেখলেও তাঁর এখনকার নীরবতা তাঁর ভক্ত সংখ্যা কমিয়েছে অনেকটা।
৫.
এলেন ওচোয়া
একজন আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার এবং সাবেক নভোচারী। আমেরিকান নারীদের জন্য শুধু নয় এমনকি সমগ্র হিস্পানিক জাতির জন্য ‘এলেন ওচোয়া’ গর্বের একটি নাম।
তিনি এখন পর্যন্ত চারবার মহাশূন্যে ভ্রমণ করেছেন। তিনি রোবট তৈরির ক্ষেত্রেও বিশেষ অবদান রেখেছেন। রোবটের ইনফরমেশন প্রসেসিং এর জন্য অপটিক্যাল সিস্টেমের উদ্ভাবন করেছেন।
সত্যি! এই নারী শুধু নারীদের জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য অনুকরণীয়।
জীবন পাল্টাতে যে ১০ ধরণের মানুষ হতে দূরে থাকা উচিত- জানতে ক্লিক করুন
৬.
মেয়েরা ব্যবসা করতে পারে না কিংবা জানে না। এই কথা তো আমরা কম শুনি নাই। মেয়ে মানুষের মাথায় বুদ্ধি কম তাই এরা ব্যবসা করতে জানে না- এই কথা অহরহ শুনেছি। কিন্তু এই স্টেরিওটাইপকে ভুল প্রমাণ করা ব্যক্তি হলেন লিন্ডা জে ওয়াকনার।
আমেরিকার সবচেয়ে বড় পোশাক কোম্পানী ‘Warnaco’ এর সিইও ছিলেন তিনি এবং এর প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। ১১ বছরে একটি শারীরিক সমস্যার কারণে এক বছর হাটতে পারেননি কিন্তু ঠিক হওয়ার পর পুরো বিশ্বকে জয় করেছেন।
৭.
স্টেফ গ্যাব্রিয়েল
তিনি একজন উদ্যোক্তা, পরিবেশ সচেতনতা কর্মী এবং একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু তিনি উদাহরণ হয়ে আছেন তাঁর পরিবেশ সচেতনতার জন্য।
২০১৪ সালে তিনি একটি কোম্পানী খুলেন যা সমুদ্রে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক এবং মাছ ধরা জাল থেকে সুইমস্যুট তৈরি করেন। তাঁর কোম্পানীর স্লোগান হচ্ছে ‘saving the ocean, one bikini at a time.’
তাঁর পরিবেশবাদী এই চিন্তা আমাদের সচেতন করে প্লাস্টিক ব্যবহারের আগে। প্লাস্টিক সেই সব জিনিসগুলোর একটি যা আমাদের পৃথিবীকে ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
৮.
ইউসরা মারদিনি
২০ বছর বয়স মাত্র কিন্তু আমাদের সবার জন্য এক অনুপ্রেরণা। জীবন বাঁচাতে একসময় উত্তাল সাগরে সাঁতার কেটেছেন ইউসরা মারদিনি। কঠিন সময় পেছনে ফেলে বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নেন এই সিরিয়ান নারী।
শরণার্থী দলের হয়ে রিও অলিম্পিকে অংশ নিয়ে ইতিহাস গড়েন তিনি। রিও অলিম্পিকে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে শরণার্থী দলকে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং ইতিহাস গড়েন। এই মুহূর্তে তিনি জার্মানিতে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন।
৯.
ড্যানিয়েল ফং
তিনি স্কুল শেষ করে কলেজে ভর্তি হোন ১২ বছর বয়সে। এই তথ্যই বলে দিতে পারে তিনি কতটা মেধাবী। ২২ বছর বয়সে বন্ধুদের সাথে মিলে খুলেন একটি স্টার্ট-আপ কোম্পানী ‘LightSail Energy’ যা বায়ুকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করার নতুন পথ খুলে দেয়।
২০১১ সালে Forbes তাঁকে আখ্যায়িত করে ‘May Save the World’ শিরোনামে।
১০.
শেখ হাসিনা
বর্তমানে ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে ২৬তম। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে পেয়েছেন ‘মাদার অফ হিউম্যানিটি’ খেতাব। বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসা।
নিজ দেশে পরবাসীর মতো বসবাস করা থেকে দেশের সর্বোচ্চ চারবার প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা। তাঁর কোনো তুলনা হয় না বলতে গেলে।
তাঁর আমলে যুদ্ধাপরাধীর বিচার, বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির রেকর্ড পরিমাণ উপরে উঠাসহ ঝুলিতে যোগ হয়েছে অনেক সুনাম।
তবে বিভিন্ন কারণে বির্তকিত হলেও, বাংলাদেশ তাঁর উন্নতির শিখরে উঠছে তাঁর হাত ধরেই।
বর্তমানের পৃথিবীতে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন সমানতালে। তাই তাঁদের নিচু করে দেখার কিংবা হেয় করে দেখার কোনো সুযোগ নেই আমাদের। নারীরা এগিয়ে যাক আরো। পৃথিবীর সব নারীর জন্য অভিযাত্রীর পক্ষ হতে রইলো অনেক অনেক শুভ কামনা।
Leave a Reply