আপনি নিজেকে কতটুকু চিনেন?
আমাদের প্রত্যেকের একটা নিজস্ব গল্প আছে। এই গল্পটি প্রতিদিন আমাদের জীবনে পুনরাবৃত্তি হয়। এটা একটা মেন্টাল মুভির মত। এই মুভিটির প্রধান চরিত্র হলেন আপনি।
এই মুভির প্লট হলো – ওভারথিংকিং। ওভারথিঙ্কিং আমাদের মধ্যে কেবল দুঃখেরই জন্ম দেয়। আবার স্বভাবজাত এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসাও কঠিন।
যার কারণে কাউকে আপনার কাছে যদি সুখী মনে হয় তবে ধরে নিবেন আপনি তাকে পুরোটা জানতে পারেননি।
আসলে আমাদের সবার মধ্যে “পাগলাটে” নামের একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে। আর এই যে মানুষের চিরজীবনের সঙ্গী দুঃখ তা মানুষের চিন্তা, অভিযোজনের ক্ষমতা, মানসিক বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে দেয়।
সুতরাং এটি আপনার জন্যে অত্যন্ত আবশ্যক। এই লাইফ মুভি চলাকালীন সময়ে তা আপনার এতটা মনোযোগ কেড়ে নেয় যে, আপনি নিজেকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে যান আর এর প্রভাব পড়তে থাকে সবকিছুতে।
কিভাবে নিজের জীবনের স্ক্রিপ্টকে রি-রাইট করবেন
কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি, মুভির স্ক্রিপ্ট রি-রাইট করা যেতে পারে। এখন প্রশ্ন তা কিভাবে করবেন? আপনাকে এর জন্যে প্রথমে কিছু সত্যকে, কিছু বাস্তবতাকে জানতে হবে। কারণ আপনি জীবন বাস্তবতায় ডুবে গিয়েছেন।
রাতারাতি মুক্তির পথের স্বপ্ন দেখা ফ্যান্টাসি ছাড়া কিছু নয়। বাস্তবতার সামনে এসে বাস্তবতা, সত্য ধারণ করুন।
এই বাস্তবতা আপনাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে। কিন্তু এই টুকরো টুকরো আপনি কি আসল “আমি”? একদম নয়। কারণ আপনার জীবনের টুকরো আপনাকে বিচারের মাপকাঠি হতে পারে না।
আপনি বরং নিজের ক্ষমতা থেকে কমের ভেতরে আছেন। অন্যদিকে, মিথ্যে হাসির আড়ালে এই প্রতিটি টুকরো আপনাকে ক্ষত করে দিয়েছে।
অন্যের সুখে সুখী হতে চেয়ে মলিন হয়েছেন আরো। তাই আপনার ভাঙা টুকরোগুলোকে একসাথে করে একটা গোটা আপনি হতে হবে আর ঐ ক্ষতগুলো সারিয়ে তুলতে হবে।
পড়ুন- ভালোবাসার মানুষ দূরে সরে গেলে কি করবেন?
নিজের ভেঙে যাওয়া আর আত্মমিথ্যের ভেতর জীবনের বড় একটি তত্ত্ব লুকিয়ে আছে। যে মানুষগুলো আপনাকে সম্মান করবে তা এই সময়েও করবে। আর যারা করবে না তাঁরা পুরো পৃথিবী জয় করলেও আপনাকে সম্মান করবে না।
আবার আশে পাশের মানুষের ভাবনাকেও নিজের মধ্যে আনা বোকামিই বটে। কারণ আপনি নিজের নিঃশ্বাসকে বাতাসে মিশিয়ে দিচ্ছেন, নিজের স্বতন্ত্র চিন্তা করছেন। আর তাঁরা এতদিনে আপনার আত্মার যত্নটিও নিতে পারে নি। এটাকেই হয়ত নিয়তি বলে।
আমরা আজ পৃথিবীর এমন ১০টি সত্যে নিয়ে আলোচনা করবো, যার ফলে আপনি আপনার ভেতরের আমিত্বকে আবিষ্কার করতে পারবেন।
১
আপনার সাথে ঘটছে তা আসলে আপনি নন। আপনি এখন বর্তমানে। অতীতের আপনি আর নেই। সুতরাং আপনার ভার্সনটাই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। তাই আপনি এখন যা হতে পারবেন আপনি ঠিক তাই।
২
কোন একটি ক্ষেত্রে পিছিয়ে গেলে আমরা ভেঙে পড়তে থাকি। আর নিজে থেকে উপলব্ধি করতে থাকি, আমরা ভেঙে পড়েছি। কিন্তু একটা পথ বন্ধ থাকলে আরেকটি পথ যে বন্ধ আছে তা নয়। আর ভেঙে পড়া মানে ধ্বংস হয়ে যাওয়া নয়।
৩
অন্য মানুষের মতামত খুব কম সময় পুরোপুরি সঠিক হয়। কারণ মানুষ আপনার গল্প শুনতে পারবে। কিন্তু আপনার মত করে তার ভেতর উপলব্ধি জন্মাতে পারবে না। তাদের মতামত দেবার যেমন স্বাধীনতা আছে, তেমনি তাদের কথাকে পার্সোনালি না নেবার অধিকারও আপনার আছে।
৪
পৃথিবীতে আপনি একজনই। আপনি নিজেকে অন্য কারো মধ্যে খুঁজে পাবেন না। শুধু নিজেকে নিজের ভেতর খুঁজে পাবেন। আর এই শক্তি দিয়ে আপনি অন্যকে আকৃষ্ট করতে পারবেন। তাই নিজেকে খুঁজুন এবং বিশ্বাস করুন।
৫
যখন নিজের উপর বেশি বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই, তখনই নিজের প্রতি বেশি সদয় হবার উপযুক্ত সময়। কারণ এটা আপনার মধ্যে একটা পার্থক্য গড়ে দিবে।
সত্যি বলতে, আমরা বাইরের জগতে নিজেকে যেভাবে আমরা উপস্থাপন করি আমরা তা নই। আমরা ঠিক তাই যা আমরা নিজের সাথে আনমনে কথা বলি। তাই একান্তে নিজেকে সময় দিয়ে সবচেয়ে বেশি আত্নবিশ্বাস গড়া যায়।
৬
দেরি বলতে কোন শব্দ নেই, কিন্তু পিছিয়ে পড়া বলতে কিছু রয়েছে। যার ফলে জীবনযাত্রায় প্রতিটি পদক্ষেপই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু নিজের জায়গাটিতে যেতে একেক জনের একেক সময় লাগে।
৭
আপনার জীবন অনেক বড় একটা পথ। জীবনকে যে কোন পরিস্থিতিতে, যে কোন অবস্থায় আলিঙ্গন করা শিখতে হবে। কারণ প্রতিটা বিষয়ই একটা লেসেনের মত। আর এই লেসনের জন্যে নিজেকে দোষ না দিয়ে ক্রেডিট দিয়ে জীবনের বাকী পথ শুরু করুন।
৮
“It’s Okay” বলে বস্তুত পৃথিবীতে কোন শব্দ নেই। কারণ ওকে বললে সব ঠিক হয়ে যায় না। ওকে বললেই যে আপনার সাথে প্রতারণা করলো তার করা ক্ষতিগুলো ঠিক হবে না।
যে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল সে ফিরে আসবে না, আপনার ভাঙা আবেগগুলো জোড়া লাগবে না। তাই ওকে বলে নিঃশ্বাস ফেলার চেয়ে, বিশ্বাস করুন – ওকে বলে আসলে কিছু নেই।
৯
পিছে ফিরে যান। নিজেকে সময় দিন। সারাদিনের একটা সময়ের দুদণ্ড নিঃশ্বাস ফেলে আপনি নিজেকে আবিষ্কার করতে পারবেন।
এই বিষয়গুলো আপনাকে ভাবাবে, “সবচেয়ে বাজে সময়েও আপনি নিজেকে সময় দিতে পেরেছেন এবং আপনি কম পীড়া পেয়েছিলেন”। পরবর্তীতে এটিই আপনাকে এগিয়ে দিবে।
১০
আমরা একটা সময় ভাবি কিছু জিনিস ছাড়া আমরা চলতে পারবো না। কিন্তু পরে সেটিকে ছেড়ে অন্য একটি বিষয়ের উপর আমরা ঝুঁকে যাই। অর্থ্যাৎ পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়।
তাই দুঃখকে ধরে রাখার দায় আমাদের নিজেরই। ভয় না পেয়ে কিছু জিনিস ছেড়ে দিন, জীবনযাত্রাকে বিশ্বাস করুন এবং জীবনকে উপভোগ করুন।
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের জীবনে এই ১০টি সত্য অনুরূপভাবে আসে। এগুলোতে বিশ্বাস আপনাকে এগিয়ে দিতে পারে কয়েকগুণে। কমেন্টে আপনার নিজের সম্পর্কে আপনার ধারণা শেয়ার করুন আমাদের সাথে।
Leave a Reply