ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার:
উদ্যোক্তা, ইন্টারনেট মার্কেটার এবং পাবলিক স্পিকার নাহিদ হাসান। অনলাইন মার্কেটিং কোম্পানি Bizcope এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী। Bizcope মূলত এসইও এবং ইন্টারনেট মার্কেটিংয়ের সার্ভিস দিয়ে থাকে।
অনলাইন মার্কেটিংয়ে গত আট বছরের অধিক সময় ধরে কাজ করছেন নাহিদ হাসান। তার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এই সেক্টরে নতুনদের সাথে নলেজ শেয়ারিং করতে ভালবাসেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, গত ৮+ বছর ধরে অনেক কাজ করেছি, অনেক ভুল করেছি, অনেক শিখেছি। আমি চাই আমার এই অভিজ্ঞতা নতুন এবং ইন্টারমিডিয়েট প্রফেশনালদের কাজে লাগুক।
ডিজিটাল মার্কেটিং এই সময়ের একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার। চারদিকে একে একে ডিজিটাল মিডিয়ার যে বিপ্লব চলছে তাতে ধরে নেওয়া যায় মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যম হতে যাচ্ছে কর্পোরেট দুনিয়ার সবচেয়ে বড় টার্গেট। প্রায় প্রতিটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের মার্কেটিং কমিউনিকেশনকে ডিজিটাল আত্মপ্রকাশ নিয়ে অনেক বেশি সিরিয়াস। অন্যদিকে বর্তমানে তরুণরা ক্যারিয়ার গড়তে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে আগ্রহী। তাই যারা ক্যরিয়ার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিংকে বেঁছে নিতে চান তাদের একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দিতে অভিযাত্রীর পক্ষ থেকে সাইফুল্লাহ সাইফ কথা বলেছেন অনলাইন মার্কেটিংএ অভিজ্ঞ নাহিদ হাসানের সাথে।
বর্তমান বাংলাদেশে ক্যারিয়ার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্ভাবনা, নির্দেশনা
সাইফুল্লাহ সাইফ: ভাইয়া কেমন আছেন? অভিযাত্রীর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম।
নাহিদ হাসান: আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। আশা করছি আপনারাও ভাল আছেন।
সাইফুল্লাহ সাইফ: আমরা মূল প্রসঙ্গে চলে আসি। ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে এই ইন্ডাস্ট্রিতে ৮ বছরের অভিজ্ঞ নাহিদ হাসান ভাইয়ার কাছে ক্যারিয়ার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং সুযোগ ও সম্ভাবনার কথা জানবো। ভাইয়া সহজ করে বললে ডিজিটাল মার্কেটিং আসলে কি?
নাহিদ হাসান: সহজভাবে যদি বলি তাহলে ব্যাপারটা এমন, ডিজিটাল চ্যানেল নির্ভর যে মার্কেটিং এক্টিভিটি সেটাই ডিজিটাল মার্কেটিং। কন্টেন্ট তৈরি হতে শুরু করে, এড, ব্র্যান্ডিং, প্রমোশন, সব কিছুই যখন ডিজিটাল চ্যানেলে করা হয় সেটাই ডিজিটাল মার্কেটিং।
এখানে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর সাথে জড়িত সাইকোলজিকাল বিষয়গুলো একইরকম থাকবে অনেকটা। গাণিতিক ক্যালকুলেশনটাও একই রকম থাকবে। তবে মাথায় রাখতে হবে এই ডিজিটাল চ্যানেলগুলো ব্যবহার করার সময় মানুষ কীভাবে রিএক্ট করে। আবার এই ডিজিটাল চ্যানেলগুলো যেভাবে কাজ করে, তাকে আমরা এলগরিদম বলে থাকি।
ডিজিটাল মার্কেটিং অনেকটা বোথ ওয়ে কমিউনিকেশন, এখানে আপনি যেমন খুব সহজে আপনার টার্গেট কাস্টমারকে খুঁজে পেতে পারেন, তেমনি আপনার কাস্টমার খুব সহজেই আপনার সাথে ইন্টারেক্ট করতে পারে।
সহজভাবে বলতে গিয়েও হয়তো একটু বেশি বলে ফেলছি, হা হা হা।
সাইফুল্লাহ সাইফ: ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে আপনি কেন আসলেন? কখন এবং কীভাবে শুরু?
নাহিদ হাসান: এমনি এমনি চলে আসলাম, তেমন কোন প্লান ছাড়াই… হা হা হা। আসলে পড়ালেখা শেষ করার পর পরই অনলাইন সেক্টরের সাথে কানেক্টেড হয়ে যাই, যদিও তার আগেও কানেক্টেড ছিলাম, কিন্তু ওটা ওভাবে সিরিয়াস হয়ে না।
আমি মুলত এসইও সার্ভিস দিয়ে কাজ শুরু করি, তারপর ধীরে ধীরে নিজের সাইট তৈরি করা, সেই সাইটের মাধ্যেমে ক্লায়েন্ট ম্যানেজ করার জন্য কিছু স্টাডি করতে হয়, ডিজিটাল মার্কেটিং ফানেল নিয়ে কাজ করতে হয়। ওটা নিয়ে কাজ করতে করতে কিছুটা অভিজ্ঞতা হয়, যেটা আমাকে যেমন নতুন কাজ ম্যানেজ করতে সাহায্য করেছে, ঠিক তেমনি, আমিও আমার এই অভিজ্ঞতা আমার ক্লায়েন্টদের জন্য সেল করতে পেরেছি।
এভাবেই কাজ করতে করতে একসময় আবিস্কার করলাম, অনেকটা পথ চলে এসেছি।
সাইফুল্লাহ সাইফ: ভাইয়া বর্তমানে কি নিয়ে কাজ করছেন? ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
নাহিদ হাসান: বর্তমানে আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং এর বেশ কয়েকটি যায়গায় কাজ করছি। আলাদা করে বলতে গেলে, এসইও, ফেসবুক মার্কেটিং, কন্টেন্ট ক্রিয়েশন, লিড জেনারেশন নিয়ে কাজ করছি। এছাড়াও নিজেদের কিছু আলাদা প্রজেক্ট আছে। মূলত এফিলিয়েট এবং প্রিন্ট অন ডিমান্ড নিয়ে কাজ করছি। আলাদা দুইটা টিম ডেডিকেটলি কাজ করছে।
সাইফুল্লাহ সাইফ: আমরা জানি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ব্যাপক চাহিদা আছে। কিন্তু বাংলাদেশের কথা চিন্তা করলে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বর্তমান অবস্থাটা কেমন?
নাহিদ হাসান: বর্তমান অবস্থা ভাল এবং এটা গ্রোয়িং স্টেজে আছে। আসলে ডিজিটাল মার্কেটিংকে এভয়েড করার মত অবস্থা এখন আর নাই। মানুষ এখন টিভি কম দেখে, ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতেই বেশি সময় দেয়। কোন তথ্য লাগলে গুগলে সার্চ দেয়। কোন পন্য কেনার দরকার হলে রিভিউ পড়ে, দাম জানার দরকার হলে গুগুল করে। মতামত লাগবে? তো ফেসবুক গ্রুপ আছে। এমনকি নেটফ্লিক্স এর কারণে মানুষের বিনোদনের জায়গাগুলোও এখন অনলাইনকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে।
তারমানে আপনার কাস্টমার এখন অনলাইনে থাকে, তাই মার্কেটিং প্লানটাও ডিজিটাল চ্যানেলগুলোকে মাথায় রেখেই করতে হবে।
তাই আমি কোন নির্দিষ্ট ডাটাও যদি শেয়ার না করি, তাও আপনি বুঝতে পারবেন, ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে ফিউচার।
সাইফুল্লাহ সাইফ: ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে পেশা হিসেবে কোথায় কোথায় কাজের সুযোগ আছে?
নাহিদ হাসান: বাংলাদেশের কথা যদি বলি, তাহলে সবগুলো দরজা এখনো ওভাবে খুলেনি। বাংলাদেশের মার্কেটের কথা চিন্তা করলে এসইও, ফেসবুক মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, এসএমএস মার্কেটিং, ইউটিউব এবং গুগল এডস।
ধীরে ধীরে এফিলিয়েট মার্কেটিং ম্যানেজারের চাহিদা তৈরি হবে, তবে কিছুটা সময় লাগবে।
সাইফুল্লাহ সাইফ: আগামী ৫-১০ বছর পর অন্যান্য আকর্ষণীয় পেশার সাথে এই ইন্ডাস্ট্রির তুলনামূলক অবস্থান কেমন হবে বলে মনে করছেন?
নাহিদ হাসান: চাহিদা আরো বাড়বে, কেননা সে সময় মোটামুটি সবার ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য বাজেট থাকবে। তারমানে কম্পিটিশন বাড়বে, আর কম্পিটিশন বাড়া মানেই হচ্ছে স্কীল্ড পিপলদের চাহিদা বেড়ে যাওয়া, তারমানে বেশি আয়ের সুযোগ থাকছে।
সাইফুল্লাহ সাইফ: পেশা হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং কতটা সিকিউর?
নাহিদ হাসান: সিকিউর বলে আসলে কিছু নেই, এটা নির্ভর করবে আপনি সময়ের সাথে সাথে নিজেকে কিভাবে পাল্টাচ্ছেন তার উপর। আজ থেকে ২০ বছর আগে হয়ত মানুষ রেস্টুরেন্টে যেত, কিন্তু পাস্তা খেতো না। এখন মানুষ পাস্তা, পিজাতে বেশি অভ্যস্ত। এখন যে রেস্টুরেন্টগুলো এই ট্রেন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে তার খাবারের মেনু পরিবর্তন করেছে তাদের সমস্যা হয়নি। একইভাবে ডিজিটাল মার্কেটিংয়েও অনেক পরিবর্তন আসবে, মানুষ এখন অনেক ভিডিও দেখে, সামনে হয়ত এনিমেশন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স চলে আসবে, আর তখন মার্কেটারকে সেগুলোর সাথে খাপ খাওয়াতে হবে।
সাইফুল্লাহ সাইফ: ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং থেকে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পার্থক্য কোথায়?
নাহিদ হাসান: অনেক পার্থক্য, আবার কোন পার্থক্য নেই। কাস্টমার এবং বিক্রেতা একই আছে, প্রোডাক্টের নিডও হয়ত একই থাকছে, শুধু চ্যানেলগুলো পরিবর্তন হচ্ছে। তাই এখানে এডিশনাল হিসেবে আপনার সেই চ্যানেলগুলোর এলগরিদমগুলোর সাথে অভ্যস্ত হতে হবে, পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে। আর অনেক থার্ড পার্টি টুল আছে, যেগুলোর সুবিধা নিতে হবে।
সাইফুল্লাহ সাইফ: একজন ভাল মানের ডিজিটাল মার্কেটার হতে কি কি যোগ্যতা লাগে?
নাহিদ হাসান: আপটুডেট থাকার মন মানসিকতা, সৃজনশীলভাবে ভিজুয়ালাইজ করার ক্ষমতা এবং গ্লোবাল মার্কেট সম্পর্কে আইডিয়া রাখা, কেননা ডিজিটাল যুগে, মানুষ দিনে দিনে গ্লোবাল কালচার, বাইয়িং বিহেভিয়ারের সাথে অনেক বেশি কানেক্টেড হয়ে যাবে। ভৌগলিক যে পার্থক্য গুলো আগে ছিল, তা থাকবে তবে অনেকটাই কমে যাবে।
সাইফুল্লাহ সাইফ: যারা এই সেক্টরে আসতে চায়, তারা কীভাবে শুরু করবে?
নাহিদ হাসান: শুরু করে দেয়া, শুরু করার জন্য শুধু শুরু করাটাই দরকার। শুরু করলে আসলে রাস্তা বের হয়ে যায়, অনেক ফোরাম আছে, অনেক সিনিয়র প্রফেশনাল আছে, অনেক ব্লগ পোস্ট আছে। আমি নিজেই আমার ব্লগ গ্রো উইথ নাহিদে অনেক ফ্রী রিসোর্স শেয়ার করি। আপনি করেন আপনার অভিযাত্রীতে। এরকম আরো হাজারো কন্টেন্ট আছে। শুরু করার জন্য যা লাগে তার সবকিছু ওয়েবে আছে, এছাড়াও সিনিয়র অনেকেই টুক টাক মেন্টরশীপের সাথে কানেক্টেড থাকেন, সেখান থেকেও শেখার সুযোগ থাকছে।
আমরাও একটি ই-লার্নিং প্লাটফর্ম নিয়ে কাজ করছি, সো কেউ চাইলে সেখানেও জয়েন করতে পারেন।
সাইফুল্লাহ সাইফ: নতুনরা ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে বা কাজ করতে গেলে কোথায় ভুল করে?
নাহিদ হাসান: অল্প একটু কাজ করেই অথবা শিখেই মনে করে ফেলে যে অনেক শেখা হয়ে গিয়েছে। কিছু জিনিস থিউরিটিকাল জানলেও খুব একটা কাজে লাগানো যায়না, যদি প্র্যাকটিকাল কাজ করার সুযোগ না পাওয়া যায়। নিজের একটা ওয়েবসাইট থাকলে সবচাইতে ভাল এবং ইফেক্টিভ ভাবে প্র্যাকটিস করা যায়, যা পরবর্তিতে তাকে আরো বেশি এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
সাইফুল্লাহ সাইফ: অভিযাত্রীকে সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
নাহিদ হাসান: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ, অভিযাত্রীর জন্য রইলো অসংখ্য শুভকামনা।
ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার বিষয়ক
প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্টে লিখুন।
Leave a Reply