তাসনুভা অরিনের ৭টি কবিতা

কবি তাসনুভা অরিন

কবি তাসনুভা অরিনের ৭টি কবিতা নিয়ে অভিযাত্রীর সাহিত্য আয়োজন-

দুই অক্ষ ঘুম


এই মুখ এক অন্ধ কারাবাস ছুঁয়ে
কোরাল দিনলিপি
বিশাখা দুপুর

কঙ্কর চোখে উছলে উঠে পাললিক পরবাস

ঊষা জাগানিয়া ভ্রম আর চৈতন্যে
মিশে যায় যজ্ঞের শেষ আহূতি

দুই অক্ষ ঘুম ক্লাউনের বাম পাশে
ছড়িয়ে থাকে শব্দ বকুল

তথাপি সে আর জাগবেনা
অনেক হেসেছে প্রাচীন বটগাছ

তার মাথার কাছে মাথা নুয়ে জানিয়ে গেছে,

জোঁক আর যজ্ঞের গল্প ফুরাবার নয়।

নীল ঘোড়া উড়ে গেলে রেখে যায় যত ময়ূর আর বর্ষা
তারা কি জানে উজানে আসা উন্মেষ কলা
এই দীর্ঘ নাটিকা থেকে সরে যাওয়া উপমা!

বিশাখা কোন গল্পেরই নায়িকা ছিলনা

ফিরে আসা সব চোখ পুঞ্জাক্ষি


মনে হয় ফিরে যাই
পুরনো পথিক পথ আগলে
দেখছে পথের চলে যাওয়া

মনে হয় গিয়ে তাকে বলি
ফিরে আসা সব চোখ পুঞ্জাক্ষি

তাকে দেখতে দেখতে অনেকগুল মুখ মুখর হয়েছিল
তাদের চোখ আর ঠোঁট মিলিয়ে
অনেক কথার থেকে নিয়ে একটি কথা

প্রবাদের মত সত্য হয়ে
মিথের রুপালী প্রলেপে আয়নায় বেজে উঠবে

প্রতিচ্ছবি ভেঙ্গে দিলেই দেহ দেহ কৌতুকে ম ম করে উঠবে যদি জলকেলি দুপুর

তোমাকে কেন মুখ দেখতে বলব আয়নায়

এইখানে জ্বলছে নিভছে বিম্ব বিম্ব মুখ

পাখির উচ্চতা ছিল তার আকাশ


নিমগ্ন আবেশ থেকে নিয়ে যাও উচ্চতা, পাখি
উড়ে উড়ে তুমি যতদূর যাও আকাশ ততটুকু।

আমি নীলে নিশ্চুপ

দেখছি পৃথিবী ৩৬৫ দিন খুঁজছে তার ছায়া, ছায়াপথে

আমার কিছুই অলীক লাগেনা আর
মনে হয় ছিল, সব ছিল
মনে হয় থাকবেনা, কিছুই থাকবেনা।

আমি দেখবনা ময়ূরের বাকিটা নাচ

কিছুটা দুঃখ পাব কি?

মেঘের ভিতরে জমে থাকবে নির্জলা সন্ধ্যা, ভেজা মুখ ও ময়ূখ

আমি খসে পড়া পেখম ভালবাসি
মানুষ যেরকম ভালোবাসে তার খসে পড়া প্রেমিক অথবা প্রেমিকা

যেন উড়তে উড়তে কিছু পাখিদের আর ফিরতে ইচ্ছা করেনা
মনে হয় ঐ কালো তাকে চুপসে নিক
নির্লজ্জ করুক

যেমন দাঁড়কাক পাখিদের থেকে কিছুটা ভিন্ন হয়ে অন্য আঁধারে নিখোঁজ

মনে হয় সে জানে
তার পরিধিটুকু ছিল তার আকাশ

ভ্রম আর ভ্রমণের পুনরাবৃত্তি


ভিতরে বিস্ময় মরে গেলে বাল্যকালকে ফিরতে দেখি উত্তর প্রজন্মে
আমি তাকে খেলনা কিনে দেই

খেলনার বিস্ময় মরে গেলে
তাকে খেলনা থেকে খেলনায় ছুটে যেতে দেখি।

ঐ শুয়ে থাকা বকুলের থেকে সে শুষে নিচ্ছিল সকাল, ফুটফুটে

তখন আমার অবশ লাগে
সময়ের আগেই সময় দেখে ফেলা চোখের মত সাদা হয়ে যাই

দুঃখ পেতে পেতে দুঃখ না পাবার ব্যাধি যাদের আছে তারা জানে
সাধারন হতে হতে মানুষের কাঁধ ঝুকে আসে
হাতের পেশি ফুলে ওঠে

একটি পরিচিত পুনরাবৃত্তির জন্য আবশ্যক ঘুমের প্রস্তুতি নিতে নিতে ভুলে যায়
ফুলের পতনে ঘাসের বুকে যে বিস্ময় জাগে তাকে উত্তর প্রজন্মের খেলনা ঘরে সাজিয়ে রাখা দায়

ঐ দেখো শরীরে শিশির মেখে হলুদ বকুল

তুমি সরিয়ে নাও পাহাড় মেঘ আর উচ্চতা

পৃথিবীর সমকক্ষ বেলুন


পৃথিবীর সমকক্ষ হতে চেয়ে বেলুনটা বড় হচ্ছিল যত
আমরা তাতে ভীত না হয়ে, হয়ে উঠছিলাম আহ্লাদিত

যদি ভিতরে হিলিয়াম থাকে অথবা হয়ে যায় পৃথিবীর থেকে ৫ গুন বড়
উড়ে নিয়ে যাবে কি সে প্রাচীন রাক্ষসের মত

অথবা যদি আমদের নিঃশ্বাসে বড় হতে হতে সে হয় আমদের নিঃশ্বাস বধের রাবণ

কেউ তো তাকে লালন করছে এভাবে
কেউ তো তাকে ছিদ্র করার চেষ্টা করছে গোপনে

আমরা কেবল দেখছি একটা বেলুন নিঃশব্দে বড় হচ্ছে শুধু বিকট শব্দে ফেটে যাবার জন্য

ঐদিন আমদের আর্তনাদ আমরা শুনব কি?

নীলমণি পাথরের অন্ধ চোখ


কিছু কাঁচ ঘর আর ঘুমফুল সহ
আকাশ জানান দিচ্ছিল যখন, সে চিরায়ত নকশার কারিগর
তার বুকে ঘুমায় শত শত পৌরাণিক প্রেম,
যারা ছিল রানীর মতো মুড়িয়ে রঙ্গিন অশোকে।

নিরেট না জানলে কেউ আঁকতে পারেনা মেষ আর মেষ পালকের মুখ ঐ মেঘে

কিছু না বলে, কিছু না ছুঁয়েও চলে যাওয়া যায়
আর যেতে যেতে নিজের সাথে একা হতে হতে ভাবা যায়
এত আয়োজন কিছুই লাগলো না ভাল

অন্য কোন গ্রহ তখন ডাকছিল
আঙ্গুলের পিপাসায়

জানিনা ওদের হাতে কটা আঙ্গুল থাকে
হয়ত এক, হয়ত পাঁচের অধিক
হতে পারে ওদের কোন আঙ্গুল নেই

তথাপি সঞ্চালন আছে
তাড়না আছে

যেমন বাতাসের রং থাকেনা, থাকে বোধ

যেমন রাত্রি
যার জন্য মানিয়ে নিতে নিতে আমাদের চোখ হয়ে উঠছে আশ্চর্য উর্বর।

সর্প কুণ্ডল


তুমি সহ্য করতে পারছিলেনা যখন নিজের দেহের তাপ
পেঁচিয়ে যাচ্ছিলে
নিজের সাথে নিজে
যেন তুমি নিজেকে জন্ম দিয়েছিলে
আবার টেনে নিচ্ছ ভিতরে নিজেকে মৃত্যু করে

তুমি শীতল রক্তের কয়েক হাত দৈর্ঘ্য
আশ্চর্য নকশার বাকবদলের দেহ

এই বিষুবীয় উষ্ণতায় তোমাকে শীতল করে এমন সমার্থক দেহ তোমার উপমার কাছাকাছি ছিল না যখন
নিজেকেই বেছে নিলে নিজের উপমায়

নিজেকে নিজের ভেতর নিচ্ছ গুটিয়ে
যেন কোন যন্ত্রনা নেই, মুক্তি আছে।

যেরকম প্রচণ্ড এক কুণ্ডলে ঢুকে যেতে থাকে ছায়াপথ তার নক্ষত্র সহ

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top