কিছু কাজ আমাদের অবচেতন মনে ভালোলাগার জন্ম দেয়। ধীরে ধীরে সেগুলো শখে পরিণত হয়ে উঠে। সময় পরিক্রমায় অনেক কিছু বদলালেও এই বিষয়গুলো ধ্রুব থাকে, যা কর্মজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তবে মানুষ ভেদে শখের তারতম্য যথেষ্ট। কারো ভালো লাগে নতুন নতুন স্থানে ভ্রমণ করতে, কারো ভালোলাগে বই পড়তে আবার কারো ছবি আঁকতে।
অন্যদিকে, অবসর সময়ে মনের খোরাক মেটাতে এসব কাজের ভূমিকা অনেক বেশি। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ কর্মজীবনে প্রবেশের পর সময়ের অভাবে শখের কাজগুলো থেকে দূরে চলে যায়।
অথচ আপনার একান্ত শখগুলো কর্মজীবনকে রঙিন করে তুলতে পারে। উপহার দিতে পারে এক আনন্দময় ও সাফল্যমণ্ডিত জীবন।
চলুন এবার পরিচিত হয়ে নেওয়া যাক কর্মজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এমন ১০টি শখের সাথেঃ
কর্মজীবনে ইতিবাচক প্রভাব
১) শারীরিক চর্চা
স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে শারীরিক চর্চা এক ধরণের শখ। জগিং, ইয়োগা কিংবা জিম তাদের কাছে ভালোলাগার বিষয়। কর্মজীবনেও এই শখ আপনার অব্যহত রাখা উচিৎ।
সকাল বেলা সজীব প্রকৃতির মাঝে জগিং কিংবা ইয়োগা খুব কম সময়ে আপনাকে প্রাণবন্ত করে তুলবে। এছাড়াও শারীরিক চর্চা নিউরনে তথ্য চলাচলের পথ সুগম করে।
ফলে আপনি দীর্ঘ সময় ধরে কোন তথ্য মনে রাখতে পারবেন। কোন কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে এটা আপনাকে সাহায্য করবে।
২) ভ্রমণ
“ভ্রমণ” খুব পরিচিত শখগুলোর মধ্যে একটি। নতুন নতুন স্থানে ভ্রমণের প্রতি ভালোলাগা আপনার অবসর সময়কে সুন্দর করে তুলবে। আপনি বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারবেন।
তাদের ভাষা, খাবার, পোষাক, জীবন যাপনের ধরণসহ নানান বিষয় খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ তৈরী হবে। এই অভিজ্ঞতা আপনাকে কাজের ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখতে পারবে।
অ্যালবার্ট টিকার তার “সেরেব্রাম” নামক বইয়ে উল্লেখ করেছেন – দোভাষী মানুষ পাজল, পরিকল্পনা ও কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে অন্যদের থেকে বেশি মনোযোগী হয়।
জীবনে ঝুঁকি নিতে অনুপ্রেরণা জোগাবে যে ৮টি গল্প | পড়তে ক্লিক করুন
৩) স্বেচ্ছাসেবা
নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে অনেকের ভালোলাগে। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিভিন্ন সংঘে যোগদান এটির একটি অংশ।
এই অভ্যাস আপনাকে বিভিন্ন পরিস্থিতি সম্পর্কে অভিজ্ঞ করে তুলতে পারে। কর্মক্ষেত্রে সমস্যা সমাধান প্রসঙ্গে আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
নেটওয়ার্কিংয়ে আরো সক্রিয় হতে সাহায্য করবে। অন্যদিকে, আপনার কর্মজীবনে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচন করে দিবে।
৪) খেলাধুলা
খেলাধুলা আর শৈশবের শখ বিনি সুতোর মালায় গাঁথা। ইনডোর কিংবা আউটডোর সকল ধরণের খেলায় মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়। খেলাধুলার সাথে প্রত্যহিক যোগাযোগ আপনাকে পরিকল্পনাতে সক্ষম। একই সাথে নতুন তথ্যকে হালনাগাদ করার ক্ষেত্রে পারদর্শীর নেওয়ার ক্ষেত্রে কৌশলী করে তুলবে। দীর্ঘ সময়ের অনুশীলন মনোযোগ বাড়িয়ে তুল হয়ে উঠতে খেলাধূলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫) বাদ্যযন্ত্র বাজানো
বাদ্যযন্ত্র বাজানো খুব পরিচিত একটি শখ। বাদ্যযন্ত্র বাদকেরা বিভিন্ন কর্ডের সংমিশ্রণে একটি মধুর সুর বের করে আনেন।
কর্ডের বিন্যাস করার এই ক্ষমতা কর্মক্ষেত্রে প্রতিটি কাজের সুষ্ঠু বিন্যাস করতে সাহায্য করে। কোন বিষয়কে দ্রুত উপলন্ধির ক্ষেত্রেও এই অভিজ্ঞতা ভূমিকা রাখে।
এছাড়া নিজের অবসর সময় সুরের মূর্ছনায় ভাসিয়ে দিতে তো বাদ্যযন্ত্রের জুড়ি নেই।
৬) হাস্যরস
হাসতে আমরা সবাই ভালোবাসি। আর কিছু মানুষ অন্যকে এই আনন্দ দিয়ে তৃপ্ত হন। কর্মক্ষেত্রে আপনার কৌতুকরসবোধ আপনাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে তুলতে পারে।
আপনি বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের কাছে সহজেই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠার সক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন। এই গুণ কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে আপনাকে সাহায্য করবে।
নিজের চিন্তা-ভাবনা মানুষের সাথে সহজেই ভাগাভাগি করে নতুন নতুন পরিকল্পনা নেওয়া সহজ হবে।
৭) বই পড়া
কর্মজীবনে ব্যস্ততার মাঝে এই শখটির সাথে সবচেয়ে বেশি দূরত্ব তৈরী হয়। বই পড়ার অভ্যাস আপনার কল্পনার বিচরণ বাড়িয়ে দেয়।
বই আপনাকে যান্ত্রিক সময় থেকে ছুটি দিয়ে নিয়ে যাতে পারে অন্য এক রাজ্যে। এটি আপনার অনুভূতি আরো শাণিত করে দেয়, ক্লান্তি দূর করে।
অবসরে ছোট কোন গল্প কিংবা কবিতা আপনাকে কাজের জন্যে পুনরায় উজ্জীবিত করে দিতে পারে।
৮) লেখালেখি
বই পড়ার অভ্যাস থেকেই চলে আসে লেখালেখির অভ্যাস। কর্মক্ষেত্রে পাবলিক রিলেশন বজায় রাখতে এই অভ্যাসের বিকাশ প্রয়োজন।
এছাড়া এর ফলে আপনি একটি আলাদা পরিচয়ের অধিকারী হতে পারবেন। এই পরিচয় আপনাকে কর্মজীবনে নতুন নতুন পরিবেশে ফার্স্ট ইম্প্রেশন তৈরী করে দিবে। আপনি অন্যদের থেকে ভিন্নভাবে সম্মানিত হবেন।
৯) ছবি আঁকা
ছবি বলতে আমরা বুঝি চিত্রকল্পের মাঝে রঙের মিশ্রণ। অন্য শখগুলোর মতই এটিও আপনাকে স্বকীয়তা দিবে।
অফিসের বিভিন্ন বিজনেস প্রেজেন্টেশনে আপনি নিখুঁতভাবে প্রজেক্ট তুলে ধরতে পারবেন। এর ফলে আপনার অনন্য গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হবে। এছাড়াও ব্যক্তিজীবনের গ্লানি চলে যাবে।
১০) প্রযুক্তি প্রেম
সময়ের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তি। একজন প্রযুক্তিপ্রেমী নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে অবহত থাকেন।
অন্যদিকে, অফিসে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েই চলছে। ফলে অফিসের সবচেয়ে প্রযুক্তিজানা মানুষ হতে আপনার কোন বাঁধা নেই।
জানার খোরাক মেটানোর সাথে কর্মক্ষেত্রে আপনার নিজ অবস্থান মজবুত হয়ে যাবে।
শখ লালন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে আত্মতৃপ্তি রয়েছে। নিজের শখ আর কাজের সংমিশ্রণ আপনাকে একটি সুন্দর কর্মজীবন উপহার দিয়ে পারে।
আপনার সুন্দর কর্মজীবনের জন্যে অভিযাত্রীর পক্ষ থেকে শুভকামনা।
কর্মজীবনে কাজের গতি বাড়ানোর টিপস নিয়ে ভিডিও দেখুন নিচে
Leave a Reply