মাশরাফির নির্বাচন এবং রাজনীতিতে আসা
উইন্ডিজদের সাথে ওয়ানডে সিরিজ শুরু হওয়ার আগেই একটি অন্য রকমের সংবাদ সম্মেলন করেন মাশরাফি। কিছু ব্যাপার-স্যাপার পরিষ্কার করে নিতে চাচ্ছিলেন সংবাদমাধ্যমের কাছে। কেনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন তারও একটি জবাব দিয়েছিলেন এই সংবাদ সম্মেলনে।
তিনি চাচ্ছিলেন খেলা চলাকালীন কোনো রাজনৈতিক প্রশ্ন যেনো তাঁকে না করা হয় এবং তা সাংবাদিকরা বলতে গেলে কথা রেখেছেন। কিন্তু সমস্যাটা আরেক জায়গায়! এবং তা হচ্ছে আমাদের মানসিকতা।
উইন্ডিজ সফর বেশ দাপটের সাথে জিতেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে “হোপ” শো না চললে হয়তো হোয়াইটওয়াশ করাটাও সম্ভব হতো। তবে যদি সিরিজটি হারতো বাংলাদেশ কিংবা মাশরাফি যদি বাজে ফর্মে থাকতেন তাহলে?
একটা ম্যাচে পা ফসকালেই দোষী হয়ে যেতেন ম্যাশ। এখন তো মানুষ মাশরাফির জন্য নতুন কোটাও আবিষ্কার করে ফেলেছে। কোটার নাম “এমপি কোটা”।
প্রমাণ দেখতে চাইলে মাশরাফির ফেসবুকের হোমপেজের কমেন্টগুলো দেখবেন। প্রমাণ পেয়ে যাবেন, কতটা নিম্নস্তরের হতে পারেন মানুষ।
জবাবটা হাড়ে হাড়ে দিতে জানেন মাশরাফি। প্রথম ম্যাচে মাত্র ৩০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে হোন ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ। নিন্দুকদের জবাব সবসময় এভাবেই দিয়ে আসছেন ম্যাশ।
মাঝে তাঁর কয়েকটা ম্যাচ অফ-ফর্ম যাওয়াতে সবাই তাঁর দলে থাকা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল। টি-২০ থেকে তো এক ধরনের জোর করেই অবসরে যান মাশরাফি।
অথচ বাংলাদেশের পেস বোলারদের মধ্যে ২০১৫ সালের পর সবচেয়ে ইকোনোমিক্যাল এবং সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি মাশরাফি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে মাশরাফির জায়গা
মাশরাফি এই দলে শুধু অধিনায়কত্ব এর জন্য জায়গা পাচ্ছেন না, তিনি তাঁর রোল পালন করে যাচ্ছেন ঠিকই। যতবার মাশরাফির জায়গা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, তার জবাব দিয়েছেন ম্যাশ।
এবার যেমন দিলেন সম্প্রতি তৈরি হওয়া তাঁর নিন্দুকদের প্রতি। যারা কিছু দিন আগেও মাশরাফি মাশরাফি করে পাগল হয়ে হতেন,তারাই মাশরাফির হোম পেজে গিয়ে মানসিকভাবে বিকৃত ব্যক্তির মতো নিজেদের রাগ ঝাড়ছেন।
রাজনীতি এবং মাশরাফি
তাদের চোখে অনেক বড় ভুল করেছেন মাশরাফি। বেইমান হয়ে গিয়েছেন, অপরাধী হয়ে গিয়েছেন মাশরাফি। নৌকায় পা না দিয়ে হয়তো ধানের শীষ কাটলে হয়ত তারা বেশি খুশি হতেন।
কিন্তু এটা কি প্রথম বার? মাশরাফি কথার নয়, কাজের লোক। বীরেন্দর শেবাগ একবার বাংলাদেশকে “সাধারণ” দল হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন।
শেবাগের কপাল পোড়া কারণ মাশরাফি যে এই চ্যালেঞ্জকে ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছিলেন। এরপর থেকেই শেবাগ-মাশরাফি মুখোমুখি হলে অফ-স্টাম্পের বেল উড়াকেই মনে পড়ে আমার।
২০১১ সালের বিশ্বকাপের আগে চোটে পড়ে সেরে উঠেছিলেন ঠিকই কিন্তু কোনো এক রহস্যময় কারণে সেবার আর বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাননি।
২০১১ এর বিশ্বকাপ নিয়ে মাশরাফি প্রায় সময়ই আক্ষেপ করেন। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেলেন না। খেললে হয়তো গ্রুপপর্বে শেবাগের মার খেতে হতো না।
২০১৪ সালকে বলা যেতে পারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে বছর। আফগানিস্তানের কাছে দেশের মাটিতে হার, ‘বি’ দল নিয়ে এসে ভারত আমাদের হোয়াইটওয়াশ করে গিয়েছে, এশিয়া কাপেও ম্লান পারফরম্যান্স।
মুশফিকের ডিফেন্সিভ ক্যাপ্টেন্সি তখন সবারই চোখের শূল। তিনশ’র উপর রান করে পাকিস্তানের কাছে হার, ক্রুশিয়াল মোমেন্টে টালমাটাল বাংলাদেশের হাত ধরলেন এক জাদুকর।
জাদুকর বলবো? নাকি কোনো গ্রিক মিথের নায়ক? অথবা ফ্লুকে লেগে যাওয়া এক সাধারণ খেলোয়াড়?
যতবার আঘাত এসেছে তাঁর দিকে, তাঁর মোক্ষম জবাব দিয়েছেন। তাই এবার অনেক আশা নিয়ে বসে আছি যে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।
বিজয়ী নির্বাচিত হয়ে তাঁর আসনের হয়ে কাজ করে তাঁর সমালোচকদের মুখে তালা মেরে দিবেন তিনি।
খেলাকে রাজনীতির সাথে তুলনা কতটা প্রাসঙ্গিক
খেলাটাকে আমরা অনেক সময় খেলা হিসেবে না দেখলেও মাশরাফি সবসময়ই আমাদের খেলা ঘিরে উত্তেজনাকে অন্য কোনো কিছুর সাথে তুলনা করতে না করেছেন।
অনেক সময় আমরা খেলায় হার-জিতকে “রাজনৈতিক জবাব”-এ রূপান্তরিত করি। সেটি করতে তিনি মানা করেছেন তাঁর বেশিরভাগ সাক্ষাৎকারে।
খেলাটাকে শুধুমাত্র খেলা অর্থাৎ বিনোদনের একটা মাধ্যম হিসেবেই দেখতে বলেছেন তিনি।
“আমি শচীন না, আমি ম্যাকগ্রাও না যে আমাকে সবাই মনে রাখবে” এই কথাটি তিনি সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে বলেন। তাঁর এই কথাটি তিনি মানলেও আমরা মানতে পারব না। তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের দিক পরিবর্তনের নায়ক।
পরবর্তীতে ১০ বছর পর হয়তো আরো উন্নত হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট সেই সাথে আমরা মাশরাফিকে আজকের মতো মনে নাও রাখতে পারি।
কিন্তু মাশরাফি নিজেকে খেলায় আটকে রাখতে চাননি, তিনি চেয়েছেন জনগণ সেবার এক মহৎ কাজে নামতে এবং এই কাজে নামতে রাজনীতি থেকে ভালো সুযোগ আর হয় না!
অনেকেই বলতে পারেন, কেনো মাশরাফি দলের হয়ে নির্বাচন করছে? কেনো মাশরাফি নিজের একটি দল খুলে রাজনীতিতে নামলেন না?
মাশরাফির কেন আওয়ামী লীগকে বেছে নিলেন?
আপনারাই বলুন, বাংলাদেশের এই প্রতিহিংসার রাজনীতিতে কি স্বতন্ত্রভাবে রাজনীতিতে নামা সম্ভব? দ্বিতীয় কথা হলো, মাশরাফির নিজেরও ব্যক্তিগত ইচ্ছা আছে। তিনি চেয়েছেন একটি দলের হয়ে লড়তে যে দল তাঁকে হয়তো বেশি কাজ করার সুযোগ করে দিবে।
নির্বাচন যে মাশরাফির খেলায় প্রভাব ফেলে না, তাঁর প্রমাণ তো উইন্ডিজ সিরিজে দিয়ে দিয়েছেন। মাশরাফি তাঁর লক্ষ্য জানেন এবং তা পূরণে তিনি সিদ্ধহস্ত।
তিনি আমার আপনার কথা ভেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি, তিনি এলাকার ছেলে হিসেবে তাঁর নিজের এলাকাকে আরো সুন্দর করে তুলতে চেয়েছেন।
আমি, আপনি কি বলি তা নিয়ে তাঁর মাথাব্যথা নেই, মাথাব্যথা যদি থাকে তাহলে তা নড়াইল-২ আসনের জনগণদের নিয়ে।