ক্রিকেট বিশ্বে অন্যতম পরাশক্তি হয়ে উঠছে বাংলাদেশ

এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অর্জন, ক্রিকেট বিশ্বে এক নতুন বাংলাদেশের আহ্বান,ক্রিকেট বিশ্বে নতুন পরাশক্তি ক্রিকেট বিশ্বে নতুন পরাশক্তি, তারূণ্য উদ্দীপ্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

আমরা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। এক, ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। দুই, ২০১৫ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত। প্রথম সময়কালে মাঝে মধ্যে আমরা আমাদের সামর্থ্যের সেরা দিতে পারার কারণে কিংবা আশরাফুল, সাকিব, তামিমদের একক পারফরম্যান্সে কিছু ম্যাচ জিতেছিলাম। সে সময় কি আজকের নতুন ক্রিকেট বাংলাদেশের ডাক কেউ শুনতে পেয়েছিলো, বুঝতে পেরেছিলো?   

তবে চিত্রপট পরিবর্তন হয় ২০১৫ সালে মাশরাফির আবার দলে ফেরাতে। কিছু নবীন যোগ হন দলের সাথে। ভারত, সাউথ আফ্রিকা, পাকিস্তানের সাথে দেশের মাটিতে সিরিজ জিতি আমরা। বর্তমানে দেশের মাটিতে বলতে গেলে আমরা সবসময়ই ফেবারিট থাকি।  

কিন্তু আমি কেনো বলছি, ক্রিকেটে এক নতুন বাংলাদেশের উদয় হয়েছে? কারণ, মাত্র শেষ হওয়া এশিয়া কাপ ফাইনাল। বিভিন্ন কারণে এবারের এশিয়া কাপ আমাদের জন্য খুব ভালো খবর বয়ে নিয়ে আসেনি।

প্রথম ম্যাচে তামিম চোট পেলেন। পঞ্চম ম্যাচে সাকিব দলে ছিলেন না। ছয় মাস ধরে ইনজুরি নিয়ে খেলে আসছিলেন। হাতে নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে নিজের সেরাটা দিয়ে যাচ্ছিলেন। পরিণাম “আঙুল ফুলে কলাগাছ।”  আর কিছুদিন দেরি হলে আঙ্গুলটাই নাকি কেটে ফেলে দিতে হতো! ভাবতে পারেন!

সেই এশিয়া কাপে সাকিব-তামিম ছাড়া আমাদের এরকম পারফরম্যান্স কি একটুও অবাক করেনি আপনাদের? এ বছর বাংলাদেশ বিদেশের মাটিতে অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছে এবং আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, বলতে গেলে আমরা সফলই ছিলাম এ বছরটায়।

এই আরব আমিরাতে সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহ্‌ ছাড়া বর্তমান দলের কেউ কখনো খেলেনি। সে হিসেবে আমাদের পারফরম্যান্স অনেক ভালো ছিল। “ঘরের দল” পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে। এশিয়া কাপ ফাইনাল খেললাম টানা দুইবার। হয়তো ট্রফি আনতে পারিনি, তবে ফাইনালে উঠা তো শিখেছি। একদিন ট্রফিও নিয়ে আসবো।   

নতুনদের নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছিল অনেকদিন ধরে। নারীঘটিত কেলোঙ্কারি, ফর্মহীনতায় জর্জরিত তরুণ দল নিয়ে আমরা ছিলাম হতাশ। কিন্তু কিছু তরুণ নিজের জাত চিনিয়েছেন এবার। নিজেদের পারফরম্যান্স দিয়ে জবাব দিয়েছেন সকল সমালোচনার।

বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং এর জায়গাটা খেয়াল করেছেন? দেখবেন যে, আমাদের ছেলেরা যে জায়গাতে বল যাচ্ছে, সে জায়গাতে হাজির। হয় লাফ দিচ্ছে বলের উপর নতুবা শর্টে দাঁড়িয়ে আটকে দিচ্ছেন মূল্যবান(!) সিঙ্গেল।

কারো চেহারা মাথায় আসছে?

ঠিক ধরেছেন, ছেলেটার নাম মেহেদী হাসান মিরাজ। শুধু কি ফিল্ডিং? বোলিংয়ে রান আটকাচ্ছেন। ফাইনালে তো ওপেনিং করে ম্যাশের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করেছেন। অনেকে তাঁর এমন অল-রাউন্ড পারফরম্যান্স দেখে বলছেন, ছেলেটা নেক্সট “সাকিব”।

কিন্তু আমার কাছে যে সে বাংলাদেশের প্রথম “মেহেদী হাসান মিরাজ”!

ফাইনালের আগে পর্যন্ত একটা খেলোয়াড়কে ট্রল করা হয়েছে প্রচুর। তিনি জবাবটাও দিয়েছেন সেভাবে। খেলেছেন ১২১ রানের অতিমানবীয় ইনিংস। এই তরুণের নাম লিটন কুমার দাস।

শ্রীলঙ্কার সাথে ৩ রানে দুই উইকেট নাই। তামিম বিদায় নিলেন চোটাঘাত পেয়ে। আরেক জন “ট্রলড” প্লেয়ার আসলেন। ২০১৬ সালের টি-টুয়েন্টি পারফরম্যান্স, বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে হয়েছিলেন প্রচুর ট্রলের শিকার। ক্রিজে এসে ধরলেন ম্যাচ।

শ্রীলঙ্কার সাথেই শেষ নয়, ধরেছিলেন পাকিস্তানের সাথে ম্যাচটাও। খেলোয়াড়টির নাম মোহাম্মদ মিঠুন। এই তিন তরুণ এবার নিজেকে নতুনভাবে চিনিয়েছেন।   

২৫ টা ব্যাথানাশক ট্যাবলেট খেয়ে নেমেছেন মাঠে। দুইটা ম্যাচ জেতানো ইনিংস। মুশফিককে নিয়ে নতুন করে আর কি বলব!

আফগানদের সাথে মাহমুদউল্লাহ, ইমরুলের ম্যাচ বাচানো পার্টনারশিপ। মাহমুদউল্লাহর পাকিস্তান ম্যাচে সময়মতো ব্রেক থ্রু। মুস্তার পুরোনো রুপে ফিরে আসা। মাশরাফির স্লগেও বল করে সফল হওয়া। কি ছিলো না এশিয়া কাপে?

ওহ, ফাইনালের কথা তো বললাম না! লিটনের ১২১ রানে ভর করে বাংলাদেশ করেছিল মাত্র ২২২ রান, তাও ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের সামনে। অতঃপর ম্যাশের অসাধারণ ক্যাপ্টেন্সির নমুনা দেখলাম।

২২৩ রানের টার্গেটকে ভারতের সামনে বানিয়ে ফেললেন ২৫০ এর সমান স্কোর। যে ভারত এবার এশিয়া কাপে কোনো দলকেই পাত্তা দিল না, তাদেরই ২২৩ করতে গলদঘর্ম অবস্থা?

ম্যাচ হেরেছি ঠিকই তবে প্রাপ্তি অনেক। এই দল কাউকে ছাড় দিতে জানে না। পায়ে সাত-সাতটা সার্জারির কাটাছেড়া নিয়ে এমন বোলিং-ফিল্ডিং করা, সুপারম্যানের মত লাফ দিয়ে ক্যাচ ধরা মাশরাফি।

পাজরের ভাঙ্গা হার নিয়ে খেলা এক হার না মানা মুশফিক। ভাঙ্গা হাতে তামিমের মাঠে নেমে যাওয়া কিংবা নিয়মিত ব্যাথানাশক দিয়ে ভাঙ্গা আঙুল নিয়ে সাকিবের টানা খেলা। পরবর্তীতে সাকিবের এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে যাওয়া। সাকিব-তামিম ছাড়া পাকিস্তানের সাথে জয়, ভারতের সাথে তুমুল লড়াইয়ে হার। এবার যে টাইগাররা অনেক প্রাপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরেছে।

ম্যাশ বসে পড়েছেন হতাশায়। এ দৃশ্য যে সহ্য করা যায় না। হয়তো এটাই মাশরাফির শেষ এশিয়া কাপ। পেলেন না! হয়তো বিশ্বকাপই জিতে যেতে পারে বাংলাদেশ!  মাশরাফির হাতে উঠবে বিশ্বকাপ কিংবা আবারো হয়তো ক্ষণিকের হতাশায় ডুবে যেতে হবে।

একজন লিটন দাসের উত্থান | পড়তে ক্লিক করুন

কিন্তু মাশরাফির দেখানো পথেই উঠে দাঁড়াবে এই বাংলাদেশ দল। ভারত সম্পর্কে একটি মিথ শোনা যায়। মিথটা এরকম, “ভারতকে জেতা শিখিয়েছেন গাঙ্গুলি আর কাপ জিতিয়েছেন ধোনী।

আমাদের ক্ষেত্রে হয়তো ব্যাপারটা এরকমই হবে। মাশরাফি আমাদের জেতা শেখাচ্ছেন, হয়তো একদিন মিরাজ বিশ্বকাপ হাতে ধরে মাশরাফিকে বলবেন, “ভাই, আমরা পেরেছি, এই নেন ধরেন।”

হয়তো মাশরাফি সেদিন খেলবেন না কিন্তু আনন্দাশ্রুতে চোখ চিকচিক করবে ঠিকই। সেদিন হয়তো কাঁদবেন না তিনি। বড় ভাইরা যে কাঁদতে পারেন না। তাঁরা আগলে রাখেন।  

জানি না, পঞ্চ-পান্ডব থাকা অবস্থায় কোনো মেজর ট্রফি আমরা জিতব কিনা। তবে ক্রিকেট বিধাতার কাছে একটা কাপ তাঁদের পাওনা। তা না হলে যে সত্যি বেমানান লাগবে!  

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top