বগাকাইন লেক এবং সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কিওক্রাডং ভ্রমণ

বগাকাইন লেক ভ্রমণ

প্রকৃতির লীলাভূমি আমাদের রুপসী বাংলাদেশ। প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে চান ঘুরে আসুন বগাকাইন লেক এবং কিওক্রাডং শৃঙ্গ। টাকা খরচ করে বিদেশ ঘুরার আগে দেশটাকে ভালো করে দেখে নিন। জানুন আমাদের দেশটা কত সুন্দর। 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চমক নিজের চোখে দেখতে চাইলে বান্দরবান জেলায় আপনাকে আসতে হবেদহ্মিনপূর্বাঞ্চলের জেলাটিতে প্রকৃতি তার সৌন্দর্য যেন ঢেলে সাজিয়েছেকি নেই এখানে? দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়শৈলী, ঝর্ণাঝিড়ি, জলপ্রপাত, প্রাকৃতিক লেক আর সবুজের সমারোহে আপনি প্রতি মুহুর্তে বলতে বাধ্য হবেন, আমাদের জন্মভূমি কতটা সুন্দর, কতটা অপূর্ব রুপময়!

আর কারণে বান্দরবানের টুরিস্ট স্পটের সংখ্যা এতো বেশিসত্যি বলতে সংখ্যাটা এতো বেশি যে, বান্দরবানের সব গুলো স্পট ঘুরে ফেলতে অন্তত মাস খানেক সময় লেগে যাবে আপনার

যাই হোক, আজ বান্দরবানের নির্বাচিত দুটি স্পটের যাবতীয় ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য আর টুকিটাকি সব কিছু নিয়েই কথা বলব। লেখায় বিস্তারিতভাবে বলার চেষ্টা থাকবেকোন দুটি স্থান নিয়ে কথা বলছি তা ইতোমধ্যে আশা করি শিরোনামে দেখেই জেনে গেছেন

চলুন শুরু করা যাক

বগাকাইন লেক ভ্রমণ

বগাকাইন লেক পর্ব

প্রথমেই জেনে নেয়া যাক বগালেকের ব্যাপারে কিছু মজার মজার তথ্যবগাকাইন লেক বা বগা লেক নামে পরিচিত প্রাকৃতিক লেকটি বান্দরবানের রুমা উপজেলার অন্তর্গতভূতাত্ত্বিকগণ ধারণা করেন যে, আজ থেকে সম্ভবত ২০০০ বছর আগে মৃত কোনো আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ বা উল্কাপিণ্ড পতনের ফলে লেকটি তৈরী হয়েছিলযদিও এই লেকের ব্যাপারে অনেক উপকথাও প্রচলিত আছে সেই ব্যাপারে আমরা অন্য কোনো দিন কথা বলবো

বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা বলেনভ্রমণ প্রথমে তোমাকে নির্বাক করে দেবে তারপর তোমাকে গল্প বলতে বাধ্য করবে।

ড্রাগন লেক নামে খ্যাত লেকটি ১৫ একরের বিশাল জায়গা নিয়ে তার সৌন্দর্যের জানান দিচ্ছেলেকের গভীরতা ১২৫ ফুট, মিটারে ৩৮ মিটার প্রায়সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২৪৬ ফুট উপরে থাকা এই লেকটি আকাশ, সবুজের চাদরে ঢেকে থাকা পাহাড়, আর নীল জলের অপরুপ সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে পর্যটকদের কাছে হয়ে উঠেছে এতোটা অনন্যনীল জলরাশি সঞ্চয় করে প্রকৃতি যেন তার আপন খেয়ালে তৈরী করেছে এই হ্রদ

নীল জল আর নীল আকাশ মিলে প্রাকৃতির অবিশ্বাস্য এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, আর সাথে চারদিকে ঘিরে আছে সবুজের ছোঁয়া মজার ব্যাপার  হচ্ছে, এই লেকের পানি প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে মাসে ঘোলাটে হয় আর লেকের সাথে সাথে আশেপাশের নদীর পানিও ঘোলাটে রং ধারণ করে কারণ হিসেবে মনে করা হয় এর তলদেশে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ আছে প্রস্রবণ থেকে পানি বের হওয়ার সময় হ্রদের রঙ বদলে যায়আবার স্থানীয় অনেকের মতে, বগালেকের পানি কখনোই কমে নাসত্যতা জানা নেই, তবে অবাক লাগার মত ব্যাপার

সকাল, সন্ধ্যা কিংবা রাত, প্রতি বেলাতেই বগালেক নতুন রূপে ধরা দিবে আপনার কাছেসকালের উজ্জ্বল আলো যেমন বগালেককে দেয় স্নিগ্ধ সতেজ রূপ, আর রাতে আপনি দেখবেন ভিন্ন এক নতুন পরিবেশআকাশে যদি চাঁদের উপস্থিতি থাকে, তাহলে বগালেক হয়ে উঠবে অপূর্ব আর মায়াবী

ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বগালেকে দুইভাবে সমাদৃত বগালেক গন্তব্য হিসেবে যেমন জনপ্রিয়, একই সাথে বগালেক পর্বতারোহীদের কাছে অনেকটাই বেস ক্যাম্পের মতোকারণ যারা রুমা হয়ে ট্রেকিং রুটগুলোতে যেতে চায়, তাদের জন্য বেস ক্যাম্প করার জন্য বগা লেক ভাল অপশন

যাক অনেক কিছু জেনে গেলাম আমরাএখন জেনে নেই, বগালেক যাওয়ার ট্যুরপ্ল্যান

বগাকাইন লেক ভ্রমণ

বগালেক যাওয়ার ট্যুরপ্ল্যান

বাংলাদেশের যেকোন স্থান থেকে বগা লেক ঘুরতে যেতে চাইলে বান্দরবান জেলা শহরে সবার আগে আসতে হবে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ঢাকা থেকে কেউ বগালেকে কীভাবে আসবেন সে ব্যাপারে এবার বলি

ঢাকা থেকে বান্দরবান আসতে হলে আপনি দুইভাবে আসতে পারেন প্রথমত, ঢাকার গাবতলী/শ্যামলী/কলাবাগানসহ অনেক টার্মিনাল আছে যেখান থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে গাড়ি ছাড়ে। সাধারণত সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বাসগুলো ছেড়ে যায়এক্ষেত্রে হানিফ, শ্যামলী, সৌদিয়া, ঈগল, সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাস সহ বেশ কয়েকটি অপশন থাকবে আপনার কাছেএসি, ননএসি উভয় কোচেরই বাস পাবেনটিকেট কেটে বাসে উঠে পড়লে সোজা বান্দরবান নেমে যেতে পারেন

কেউ ট্রেনে যেতে চাইলে তাও যেতে পারেনতবে ভেঙ্গে যাওয়া লাগবেকমলাপুর থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোন আন্তঃনগর ট্রেনে করে আপনাকে আগে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে হবেতারপর সেখান থেকে বাসে করে বান্দরবান তবে বাসে গেলে তুলনামূলকভাবে অনেকটা  সময় কম লাগে বলে বাসে যাওয়াই ভাল

সেন্ট অগাস্টিন বলেন পৃথিবী একটা বই আর যারা ভ্রমণ করে না তারা বইটি পড়তে পারে না।

ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাতের সব বাসগুলো মোটামুটিভাবে সকাল ৭টা থেকে টার মধ্যে পৌছে যায়বাস থেকে নেমে বাস স্ট্যান্ডের পাশে কিছু ভাল মানের হোটেল পাবেন, চাইলে সকালের নাস্তা করে নিতে পারেন নাস্তা শেষ করে সেখান থেকে ১০ টাকা জনপ্রতি অটোবাইকে করে রুমাথানচি বাস স্ট্যান্ডে চলে আসুন

বান্দরবান শহর থেকে রুমা উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৫৫ কি.মি.রুমাথানচি বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রতি দিন ঘন্টা পরপর ৫টি বাস রুমার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়সকাল ৭টা, ৯টা, ১১টা, দুপুর ১টা ৩টাআপনার সময় বুঝে টিকেট করে বাসে উঠে পড়ুনআড়াই ঘন্টা পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে যেতে পৌছে যাবেন রুমা উপজেলায়

বগাকাইন লেক ভ্রমণ

রাস্তায় চোখে পড়বে বান্দরবানে বিশালাকার পাহাড় গুলো আর একই সাথে উপভোগ করবেন বান্দরবানের চোখ জুড়ানো অপার  সৌন্দর্য

যদি পূর্বে ভ্রমণ গাইডের কোন ব্যবস্থা না করে থাকেন, রুমা বাজারে নেমে প্রথমে আপনাকে গাইড খোঁজ করা লাগবেবাজারে স্থানীয় কাউকে বললে পেয়ে যাবেন গাইডের ঠিকানাপ্রতিদিনের জন্যে গাইডকে দিতে হবে বিজিবি দ্বারা নির্ধারিত ৬০০ টাকা

রুমাতে পৌঁছাতে যদি দুপুর হয়ে যায়, তাহলে ভাল হবে দুপুরের খাবারের ঝামেলাটা রুমা বাজার থেকে সেরে নেওয়াবাংলা খাবার যেমন মাছ মাংস সব কিছু পাবেন খাবার শুরু করার আগে গাইডকে বলে রাখুন বিজিবি ফর্ম আর ছাড়পত্র যাবতীয় যেসব কিছু আছে তা রেডি করে ফেলতে

খাবার পর্ব শেষ করেই ফর্ম ফিল আপ করে বিজিবি ভ্রমণ খাতায় নাম ঠিকানা স্বাক্ষর সবকিছু ঝামেলা মুক্ত করে আবার রুমা বাজার চলে আসুনপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন- খাবার স্যালাইন, ট্যাকিং শু, হাল্কা ঔষুধ কিনে চাদের গাড়ি কিংবা ফোর হুউলার জিপ ভাড়া করে ফেলুনএক্ষেত্রে গাইড আপনাকে সাহায্য করবে

নতুন কোনো শহরে একাকী ঘুম থেকে জাগা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আনন্দের অনুভূতি – ফ্রেয়া স্টাক

আসলে ফোর হুউলার জিপ নাকি চাদের গাড়ি ভাড়া করবেন এটা নির্ভর করবে আপনার ট্যুর মেম্বার কতজন তার উপর জন হলে ফোর হুউলার জিপ ভাড়া নেয়াটাই ভালখরচ পড়বে আসা যাওয়া ৪২০০ টাকার মতআর মেম্বার তার বেশি হলে চাদের গাড়ি নেয়া ভালখরচ ৫৩০০ টাকার কিংবা তার কিছু কমবেশ

বলে রাখি, রুমা বাজার থেকে বগালেক এর দূরত্ব ১৭ কি.মি. গাড়ি আপনাকে বগা লেকের পাদদেশের একটা পাহাড়ের নিচে নামিয়ে দিবেজায়গাটার নাম কমলাবাজারএই ১৭ কি.মি. রাস্তার কাজ চলমান রয়েছেতাই  রাস্তার কিছুটা খারাপ অবস্থাতবে রুমাবাজার থেকে কমলাবাজার পর্যন্ত রাস্তা আপনাকে নিঃসন্দেহে রোলার কোস্টারে চড়ার স্বাদ দিবে

মোটামুটিভাবে ঘন্টাপ্রকৃতির রুপ আর সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে রুমা থেকে বগালেকের সে পাহাড়ের কাছে চলে আসবেনগাড়ি থেকে নামার পড়ই আপনার ট্র্যাকিং শুরু

এই পাহাড়ের অন্যপাশেই আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে বগালেকমোটামুটি ৩০৪৫ মিনিট সময় লেগে যাবেপাহাড়ের  উপরে উঠেই আপনার চোখে পড়বে কাঙ্খিত বগালেক তবে আগে আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিতে

লেকের পাড়ে অবস্থিত বিজিবি ক্যাম্পে পুনরায় নাম ঠিকানা এন্ট্রি করে বম পাড়ায় চলে আসুন

বগাকাইন লেক ভ্রমণ

প্রথম রাতটা বগালেকে কাটাতে পারেনথাকার মত কটেজ পাবেন এখানেলেকের কাছেই আছে কটেজগুলোচাইলে সারারাত লেকের কাছে কটেজে শুয়ে বসে আড্ডা দিয়ে পার করে দিতে পারেন অনায়াসেকটেজের ভাড়া জন প্রতি ১০০ টাকাএকটি কটেজ বাড়িতে ১২১৪ জন থাকা যায়

গাইডকে বলে দিন রাতের খাবারের ব্যবস্থা করে ফেলতেস্থানীয় বমদের বাড়িগুলোর বাইরে তারা খুব সুন্দর টেবিল চেয়ারের ব্যবস্থা করে রেখেছেসেখান বসে রাতের খাবার খেয়ে নিতে পারেনখাবার হিসেবে ডিম ডাল ভর্তা মুরগির মাংস সবই পাবেনজনপ্রতি ১২০১৫০ টাকায় হয়ে যাবে

চাইলে আপনারা বারবিকিউের ব্যবস্থা করতে পারবেনলেকের পাড়ে বসার জন্যে খুব সুন্দর ব্যবস্থা করা আছেচাইলে সেখানে বসে খুব কাছ থেকে রাতের বগা লেকের মায়াময় সৌন্দর্য আর স্বর্গীয় রূপ খুব কাছ থেকে দেখে ফেলতে পারেন জ্যোৎস্না রাত হলে তো আপনার ষোলকলা পূর্ণ হয়ে যাবে আশ্বাস দিচ্ছিহতে পারে আপনার জীবনের সেরা রাতের একটি

বগালেকের ব্যাপারে এতোটুকুই থাককারণ এখনো তো কিওক্রাডং বাকি আছে!

বগাকাইন লেক ভ্রমণ

কিওক্রাডং পর্ব

বগালেক ঘুরতে এসে কিওক্রাডং না দেখে চলে যায় এমন নজির খুব কমই আছে বগালেক থেকে তিন বা সাড়ে তিন ঘন্টা হাটাপথ পাড়ি দিতে পারলে পৌঁছে যাবেন বাংলাদেশের তৃতীয় সবোর্চ্চ চূড়া কিওক্রাডংকিওক্রাডং শব্দটি মারমা শব্দ মারমা ভাষায় কেও মানেপাথর‘, কাড়া মানেপাহাড়আর এবং ”ডং” মানেসবচেয়ে উঁচু অর্থাৎ কেওক্রাডং মানে সবচেয়ে উঁচু পাথরের পাহাড়

একটা সময় এটাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া ধরা হততবে আধুনিক গবেষণায় এই তথ্য ভুল প্রমাণিত হয়েছে পরবর্তীতে দেখা যায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া হল সাকা হাপং, দ্বিতীয় অবস্থানে আছে তাজিংডংআর তাই কিওক্রাডংকে এখন তৃতীয় অবস্থানে রাখা হয়েছে

আগে কিওক্রাডং এর উচ্চতা ধরা হত ১২৩০ মিটারঅধুনা রাশিয়া কর্তৃক পরিচালিত SRTM উপাত্ত এবং GPS গণনা থেকে দেখা গেছে এর উচ্চতা ,০০০ মিটারের কম l ৯৬৭ মিটার/৩১৭২ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট পাহাড়টি রুমা উপজেলার আওতায় পড়েছে

যাহোক বগালেকে এক রাত থাকার পর পরদিন সকালে রওনা দিতে পারেন কিওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে সকালবেলা নাস্তা করে (বমদের যে ঘরে রাতের খাবার খেয়েছেন, বলে রাখলে তারাই সকালের নাস্তা তৈরি করে রাখবে) বিজিবি ক্যাম্পে চলে যান

মার্ক টোয়েন বলেছেন – আজ থেকে বিশ বছর পর আপনি এই ভেবে হতাশ হবেন যে, আপনার পক্ষে যা যা করা সম্ভব ছিল তা করতে পারেননি। তাই নিরাপদ আবাস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ুন। আবিষ্কারের জন্য যাত্রা করুন, স্বপ্ন দেখুন আর শেষমেশ আবিষ্কার করুন।

সেখানে আবারো নাম এন্ট্রি করে সাথে বম পাড়া থেকে হাল্কা কিছু স্ন্যাকস নিয়ে নিতে পারেনতারপর শুরু করে দিন ট্র্যাকিংআর হ্যাঁ ব্যাগপ্যাক কিছুটা হাল্কা করে নিনজিনিষপত্র কিছু, যেমন- কাপড় অথবা অন্যান্য কিছু থাকলে গাইডের মাধ্যমে স্থানীয় বম পাড়ায় রেখে যেতে পারেন। তাতে ট্র্যাকিং করতে সুবিধা হবে, কষ্টও অনেকটা কমে যাবে

দীর্ঘ ঘন্টা পর পৌঁছে যাবেন কিওক্রাডংএসকল ক্লান্তি ভুলে যাবেন যখন চূড়া থেকে চারপাশটা দেখবেনরোমাঞ্চ আর এক অজানা ভাল লাগার শিহরণ অনুভব হবে গ্যারান্টি দিচ্ছি আনন্দে উদ্ভাসিত হবেন আপনিজ্বি হ্যাঁ, মোটেও বাড়িয়ে বলছি নাসাদা মেঘ আপনার শরীরকে ছুয়ে যাবেসাদা মেঘ হাত দিয়ে ধরার লালিত স্বপ্নপূরণ হয়ে যাবে একইসাথে

বগাকাইন লেক ভ্রমণ
বগাকাইন লেক

বলে রাখি, কিওক্রাডং যাওয়ার সময় বোনাস হিসেবে পথে পড়বে ছোট বড় চিংড়ি ঝর্ণাপথে পিপাসা পেলে সেখান থেকে পানিও নিয়ে নিতে পারেনমিঠা পানির ঝর্ণাগুলো পানের যোগ্য

যাইহোক, কিওক্রাডং এর চূড়ায় একটা রাত থাকতে চাইলে তারও ব্যবস্থা আছেএখানে বলে রাখি আপনি চাইলে একেবারে চূড়ায় থাকতে পারেন আবার চাইলে পাহাড়ের চূড়া থেকে একটু নিচে মানে দার্জিলিং পাড়াতেও থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে চূড়ায় থাকলে প্রতিরাতের জন্য জন প্রতি পড়বে ৩০০ টাকা, আর দার্জিলিংয়ের পাড়াতে থাকলে পড়বে ২০০ টাকাখাবার ব্যবস্থা বগালেকের মতইগাইড আপনাকে সে ব্যবস্থা করে দিবে

পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত কিওক্রাডং থেকে আবার রওনা দিনচাইলে সকালের খাবার খেয়ে রওনা দিতে পারেনএটাই ভাল কিওক্রাডং উঠতে যতটা কষ্ট, নামা ততটা কষ্টের নাসময়ও কম লাগবে ঘন্টা হাটার পর আবার বগা লেকে পৌছে জিনিষপত্র যা রেখে গিয়েছিলেন তা সংগ্রহ করে নিনচাইলে গোসল করে নিতে পারেন লেকের পানিতেএক্ষেত্রে একেবারে তীরে কয়েকটা ঘাট আছে গোসল করার জন্যঘাট থেকে না যাওয়াই ভালকারণ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যাওয়ার দরুন বিজিবি লেকের পানিতে নামা এখন সম্পূর্ণ  নিষেধ করে দিয়েছে

তারপর পুনারায় বিজিবি ক্যাম্প নাম এন্ট্রি করে বগালেক শেষ বারের মত দেখে পাহাড় থেকে নেমে গাড়িতে উঠে পড়ুনভাড়া করা গাড়িটি আপনাদের জন্য অপেক্ষায় থাকবেগাইডকে যথাসময়ে থাকার জন্যে সেটা নিশ্চিত করুন

রুমা বাজার নেমে চাইলে লাঞ্চ করে নিনক্যাম্পে ফিরে নাম এন্ট্রি শেষ করে বাসে চলে আসুন বান্দরবান৫টায় নেমে কাউন্টার থেকে ঢাকাগামী বাসের  টিকিট কেটে অপেক্ষা করতে থাকুন। সেখান থেকে টার বাসে করে ব্যস্ত নগরী ঢাকায় সকাল টার মাঝে পৌঁছে যাবেন

বগাকাইন লেক ভ্রমণ
বগাকাইন লেক

জরুরী কিছু কথাঃ

/ জামাকাপড় খুব বেশি নেয়ার দরকার নেইযেগুলো না নিলেই নয়, শুধু সেগুলো নিবেনকারণ ব্যাগ বেশি ভারী হলে যাত্রাপথে এই খাড়া রাস্তায় সাথের বোঝা নিয়েই আপনাকে উঠতে হবেব্যাপারটা মোটেও সুখকর হবে না আপনার জন্যে

/ ব্যাগপ্যাক নিবেনহাতে ব্যাগ না নেয়ার জন্যা সাজেস্ট করব

/ ট্র্যাকিং সু অথবা ভাল মজবুত জুতা নিয়ে যাবেনজুতার গ্রিপ ভাল থাকা চাই

/ পানির বোতল নিবেনখুব বেশি বড় নাহ/ লিটারেরযাতে খুব তৃষ্ণা পেলে পানি পান করতে পারেন। সাথে স্যালাইন রাখতে পারলে ভাল

/ বর্ষাকালে গেলে লবন নিবেনকারন বৃষ্টি হলে ভয়ানক জোকের অত্যাচার সহ্য করা লাগতে পারে আপনাকে

/ যদি সম্ভব হয় বান্দরবান আসার পূর্বে ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচার জন্যে ম্যালেরিয়ার টিকা নিয়ে নিন

/ ফার্স্ট এইড হিসেবে হালকা কিছু ঔষধ নিয়ে নিতে পারেন

/ যেহেতু পাহাড়ি এলাকা, তাই মোবাইল বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে চার্জ দেয়ার জন্যে আপনি তেমন কোন সুযোগ পাবেন নাইতাই পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে নিন

/ রোদ এড়ানোর জন্যে গামছা বা ক্যাপ পরে নিতে পারেন

১০/ যেকোন অপচনশীল ময়লা-আবর্জনা পাহাড়ে কিংবা লেকে ফেলে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট না করার অনুরোধ রইল

হ্যাপি ট্রাভেলিং আবার অন্য কোন দর্শনীয় স্থান নিয়ে আপনাদের জন্যে লিখব অভিযাত্রীর পাতায়ততদিন পর্যন্ত ভাল থাকুন,সুস্থ থাকুন। লেখাটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন।

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top