নুসরাত নুসিনের কবিতা
আমরা দুজনে রক্তমর্মর ভাঁটফুল
চলো আরো কিছুক্ষণ বটের ছায়ায় বসি।
ফুরিয়ে দেই ধাতু—নিমীলিত,
প্ররোচনা মিশে আছে ছায়ায়।
দু‘একটি সুসংবাদ দেবে না
এই ভবের ম্যাজিশিয়ান।
এখন হীনম্মন্যতাই হিন্দোল—
অবকাশে মিশে থাকে চতুর ধ্যানজ্ঞান।
অথচ বটপাতায় ভার ছড়িয়ে কখনো বলিনি,
আমাকে আরেককাল দেখাও।
মোহ ও মিনারের চূড়ায়
কখনো তাকে
অকস্মাৎ ডাকি নাই।
অবগলনের দিনে কে চেয়ে থাকে?
এখন হীনম্মন্যতাই হিন্দোল—
রক্তমর্মর ভাঁটফুল। ফুটেছে
এই মধ্যাহ্নে।
এরকম কিছু চৈত্রবেলা পেরিয়ে যাচ্ছি যখন
রজনীকান্তের স্যাতস্যাতে নোনা বাড়িটাও
একেকটি হরিৎবেলা গুলিয়ে ফেলছে।
শরীরে—কে কবে রেখেছিল চুমো।
‘আমিতো তোমারে চাইনি জীবনে
তুমি অভাগারে চেয়েছ’
আর পেছনে সব সারি
লালফুল—তরবারি—
রাতের সারি।
আর পেছনে সব মুদ্রা—
মহুয়া মুদ্রা।
লালফুল—তরবারি—
রাতের সারি।
হাঁটা ও না হাঁটার অবাক সাযুজ্য নিয়ে
যাওয়া যায় আজন্ম চত্বর।
আমার সন্ধ্যেবেলা—তোমার হেঁটে আসা
কোনো গমনাগমন নয়,
যেনো কোনো প্রলুব্ধতাকে ঠুকরে চলেছি
কলরবের ভেতর—থেমে থেমে—
দু’পায়ে—
কালিমা ও কলরবের ভেতর—
অযুত, লক্ষ বার।
কি মোহে ফিরছি?
গাছ চায় জল, ফুল চায়…
এরকম ছড়ায়—
কণ্ঠ ও পাঁপড়ির ভাঁজে
শ্বাসবন অধীর হয়—ভেতর।
তোমার বলার গতি—
পিঁপড়েদের বয়ে আনা ধ্বনি—
অনল-ধবল লুকিয়ে,
বিদীর্ণ আলাপ নিয়ে
পাখিরাও ঘরকে ঘাট মনে করে।
তুমি কথা বলো আর নাই বলো
এই বিদীর্ণ ডুমুর প্রান্তরে—
মাঠের ভার নিয়ে
সারস্বত স্বরে—
আমরা দাঁড়িয়েছি সন্ধ্যার মহৎ প্রান্তরে।
আমি জানি, ঠিকানা আমাদের নেবে না।
এ নদীকূলেই তাই লুকিয়েছি ভয়।
আর যা কিছু মনে
এখনো লকলকে তমাল—
বর্ষা এলে গান ধরে—নাম ধরে
ইশারা করে,
আহা! এ চোখ বাহু হতে পারত।
আমি তাকে বলেছি,
সে তো চেতনার বাউল—চোখে
চোখে বিফল।
প্ররোচনা দেয় ছায়ায়।
বরং চলি—আগুনের দিনে স্বেদ লিখি,
তার ডালপালায় চড়ি,
নরম দিন যেকোনো অভিধায়
উড়ে গেছে অভিঘাতে।
দু’একটি পাতাকে অক্ষর ভেবে
কুড়িয়ে নিই।
শূন্যতা আমাকে নেবে—
কলরব তোমাকে নেবে না।
অনর্থক ভূমি খুলে দুজনে বসে থাকি।
ওদিকে ফুটছে বিদ্যুৎ—
বাৎসায়ন।
আর এখানে অধিতবিদ্যার কুসুম—
বিদারক—হু হু বাতাসে
মনে মনে কিছু বাগান করা যেতে পারে।
সুচিকিৎসা বলে, নিজস্ব ভূমি কাটুন
তরবারি দিয়ে—অসুখের দিনে
নিয়মিত দৌঁড়ান।
তরুপোড়া খরস্রোতা বটের কাছে,
নৃত্যমুদ্রা জ্বালিয়ে আরো কিছুক্ষণ বসি
টুংটাং নদীর নিকটে।
আমরা জ্বেলেছি ধূপ? কায়া?
নদী ফাটা হাসির ক্রন্দন।
কোথায় তুমি? তোমাকে কি ছেঁয়ে আছে
বৃহৎ পাংশুল? ঘাটে পড়ে আছে
সাবানফেনা—
গুল্মভরা পাতার জীবন।
জাফরান—
এইসব ফেনা ও ফেন্সির দিনে
আকাশে লক্ষ তারার ব্যঞ্জনা।
বিদ্ধ করে আছে ঘাটের শিহরণ—
ফেনার জাফরান।
শরমের সারঙ্গী বেয়ে—
শরীরের ভেতর ক্ষুদ্র নকশাগুলো
ঘর করে আবডালে—
আরেক দেহে—ঘুঙুর ছলনায়।
কি মোহে ফিরছি
মাছের ইশারায়?
নদীর ভেতর—
কি সুখে খুলছি কবাট
এই ভার্চুয়াল গহবরে—
বার্তা খুলে সে দেখে নাই—
দেখেনি রক্তমর্মর জবাফুল—
তার মরুমর্মর অভিধান।
অবগলনের দিনে কে চেয়ে থাকে?
বিফল মুদ্রা নিয়ে কতকাল?
শিশিরের ভেতর রোদ—
তিতিক্ষা—
পাতার বসন্ত কতকাল থাকে?
কেন নদীর কাছেই দাঁড়াই?
বলেছি
প্রেমের কথা—ঘাটে পড়ে আছে
সাবানফেনা—
কারুকার্যে খচিত।
জলেখাদে অযুত সঞ্চরণ,
বালি পিপাসা—
এ ঘাটে ভিড় করে আছে।