কওমির ‘দাওরায়ে হাদিস’কে স্নাতকোত্তর স্বীকৃতি কতটা যুক্তিযুক্ত?

কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস, দাওরায়ে হাদিস পেলো স্নাতকোত্তর মর্যাদা, মাস্টর্সের স্বীকৃতি পেলো দাওরায়ে হাদিস,দাওরায়ে হাদিস, কওমি মাদ্রাসা

দাওরায়ে হাদিস’কে স্নাতকোত্তর স্বীকৃতি

হেফাজতে ইসলামের চাওয়া অনুসারে, কওমি মাদ্রাসার “দাওরায়ে হাদিস” স্নাতকোত্তর সমমান স্বীকৃতির আইন পাস হলো জাতীয় সংসদে। গত ১৯ শে সেপ্টেম্বর বুধবার “আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ” এর অধীনে কওমিভিত্তিক দাওরায়ে হাদিস (তকমিল) সনদকে ইসলামিক স্টাডিজ এবং আরবি  স্নাতকোত্তর সমমান বিল ২০১৮ জাতীয় সংসদে পাস হয়।

শাহ আহমদ শফী বলেন, “সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো আমাদের সব শর্ত মেনে দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতি অনুসারে দেশের ওলামায়ে কেরাম ও আমরা দায়িত্বশীলরা যেভাবে চেয়েছিলাম, ঠিক সেভাবেই স্বীকৃতি পেয়েছি।” 

২০১৭ সালের ১৩ই এপ্রিল এ সম্পর্কিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়। সে সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমিপন্থী আলেমদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা দেন।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসাগুলো মূলত নিয়ন্ত্রণ করেন হেফাজতে ইসলাম। এদের চাপেই এই প্রজ্ঞাপন জারি। সামনে নির্বাচন, তাই সব পক্ষকেই খুশি করতে চাচ্ছেন বর্তমান সরকার।

কতটা যুক্তিযুক্ত হলো এই স্বীকৃতি 

কিন্তু এখানে একটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তা হলো, কিসের ভিত্তিতে তাদের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হলো?
কিভাবে, কি কি বিষয়ে কওমি মাদ্রাসায় পড়ানো হয়? সে বিষয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করার কি কোনো প্রতিষ্ঠান আছে? কিংবা বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পর তাদের উপর নজরদারী কে করবে?

কওমির এই সবোর্চ্চ স্তরকে স্বীকৃতি দিলেও দেশজুড়ে তাদের অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কে নিয়ন্ত্রণ করবে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। মূলত এখানে বলা হয়েছে ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ তাদের কওমি সম্পর্কিত কার্যক্রম শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে।

একটি আইন হচ্ছে অথচ সেখানে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই।

তাছাড়া কওমি মাদ্রাসায় কি কি বিষয়ে পড়ানো হয়, তাদের সিলেবাস কি, কারা এটা ঠিক করবে সে ব্যাপারে দীর্ঘদিনের একটা বির্তক তো আছেই।

এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, হেফাজতে ইসলাম যেভাবে চেয়েছিলো ঠিক সেভাবেই আইনটি করা হয়েছে।

বর্তমান সংসদের বিরোধীদল, জাতীয় পার্টির সাংসদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘মনে হচ্ছে এই আইনে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সাধারণত উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আছে, এখানে সে ধরনের কিছু নেই। মনে হচ্ছে চাপের মধ্যে বা যেমন খুশি তেমনভাবে এটি করা হয়েছে। এই বিলটি নিয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে।’

সাধারণত সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস থেকে সবকিছু ইউজিসি নজরদারী করে। কিন্তু এখন বর্তমানে দেশের ছয়টি বোর্ড কওমি মাদ্রাসাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। নিয়ন্ত্রণ মানে কেমন নিয়ন্ত্রণ? তারা কি সিলেবাস ঠিক করে দিচ্ছে? তারা কি পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করছে?

বেশ কয়েকজন সাংসদ এই বিষয়ের উপর জনমত এবং বাছাই কমিটিতে বিলটি পাঠানোসহ বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। কিন্তু পরে এটি কণ্ঠ ভোটে পাস হয় জাতীয় সংসদে। 

মূল ধারায় যুক্ত হলো কওমি মাদ্রাসাগুলো 

কওমি মাদ্রাসাগুলোকে মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রথম ধাপ হিশেবে এটি ভালো। তবে একজন ছাত্র যখন সর্বোচ্চ ডিগ্রি পাচ্ছে তখন কেবল একটি বিষয়ের জ্ঞান দিয়ে তাকে কিভাবে এই ডিগ্রি দেওয়া হয়? যুক্তি, বিজ্ঞান, দর্শন এসব কি তারা পড়েছে? 

অনেকে হয়তো বলবেন তাদের স্নাতকোত্তর সমমর্যাদা দিলে ক্ষতিটা কোথায়? সাদা চোখে হয়তো এর প্রভাব চোখে পড়বে না, তবে এর প্রভাব বেশ সুদূরপ্রসারী। যে যতটা পাওয়ার যোগ্য না তাকে সেটা দিলে সেখানে ভালো কিছু আশা করা বোকামী। এতে সমাজের রুট লেভেল থেকে উপর লেভেল পর্যন্ত একটা বৈষম্য তৈরী হয়। 

গত এক দশকে দেশে এ প্লাস আর গোল্ডেন প্লাসের ক্রেজের দিকে তাকালেই এটা সহজেই অনুমেয় যে, আমরা আসলে কতটুকু শিক্ষিত হচ্ছি। এবার ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে খ ইউনিটে পাসের হার মাত্র ১৪ শতাংশ, গ ইউনিটে তো আরো যাচ্ছে তাই অবস্থা।

পাসের হার মাত্র ১০.৯৮ শতাংশ। এটা যে কতটা ভয়ঙ্কর আমরা কি বুঝতে পারছি তা? এ ব্যাপারে সরকার, বিরোধী দল, দেশের বুদ্ধিজীবী মহল, সুশীল সমাজ কারো কোনো মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হয় না। অথচ আমরা দিনদিন একটা নামে মাত্র শিক্ষিত সমাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি!

তাহলে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে না গিয়ে, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়ে, বিজ্ঞান না জেনে শুধুমাত্র ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে স্নাতকোত্তরের সমমর্যাদা নিয়ে লাভ কী? এর থেকে সমাজের, দেশের, পৃথিবীর কি উপকার হবে আমরা বুঝতে পারছি না। 

কি পড়ানো হয় কওমি মাদ্রাসায়? 

এখানে বলা হচ্ছে দাওরায়ে হাদিসকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ এর সমমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ইসলামিক স্টাডিজ পড়েন তারা Sociology of Bangladesh Or Bangladesh Society and Culture এই সাবজেক্ট এবং Political Organization and Political System of UK and USA এই দুইটা সাবজেক্টসহ আরো এরকম অনেক সাবজেক্ট পড়েন।


দাওরায়ে হাদিস যারা পড়েন তাদেরকে কি এসকল সাবজেক্ট পড়ানো হয়?

জাতীয় সঙ্গীত একজন হিন্দুর লেখা, এটি যেহেতু সঙ্গীত সেহেতু গাওয়া হারাম এমন যুক্তিতে তারা যখন জাতীয় সঙ্গীতটি পর্যন্ত গায় না, তখন তাদেরকে যে সিস্টেমে পড়ানো হয় তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

২০ এপ্রিল ২০১৭ সালে বিবিসি একটা রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ১৩ হাজার ৮২৬টি এবং তাতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লক্ষ ৮৮ হাজার ৪৬০ জন।

সংখ্যাটা দেখে বোঝা যচ্ছে একটা বিশাল জনগোষ্ঠী কওমি ভিত্তিক পড়াশোনা করে। সাধারণত ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসরণে বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা চালু হয়েছিলো। 

২০১৫ সালে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি এবং সনদ বাস্তবায়ন কমিটির কো চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলী বলেন, তারা সরকার থেকে কোনোরকম অনুদান এবং অর্থসহায়তা গ্রহণ করেন না এবং তদারকির নামে সরকারের কোনোরকম নিয়ন্ত্রণও চান না।

কওমি শিক্ষার আধুনিকায়ন বা সংস্কারের প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকারের কেউ নয় আলেমরাই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

হাটহাজারির কতপয় নারী বিদ্বেষী তথাকথিত আলেমদের দুই একটা হুমকিতে একটা বিল এভাবে পাস হবে এটা অত্যন্ত দু:খজনক

নিয়ন্ত্রণ চান না মানে কী? এই বিশাল শিক্ষার্থীদের দায়ভার কি সরকারের নয়? এদেরকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং একটি দক্ষ অগ্রসর জনগোষ্ঠীতে পরিণত করা সরকারের দায়িত্ব না তাহলে?

তবে একথা স্বীকার করতে হবে যে, এই বিশাল জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে এই আইনটির দরকার ছিলো। তবে তাদের এই স্নাতকোত্তর সমমানের মর্যাদা আসলে সেইসব কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কতটুকু উপকারে আসবে, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসির মামুন মনে করেন, যুগোপযোগী সিলেবাস না হলে মাস্টার্স সমমান পেলেও কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে না।

একটি আইন মানে আসলে কি? আইনে কি কি থাকতে হয়? সেসব আইন বিশেষজ্ঞ বা যারা আইন প্রণেতা তারাই ভালো বুঝেন । কিন্তু সাদা চোখে দেখলে এর অনেক ত্রুটি ধরা পড়ে বৈকি।

একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এত বিভেদ কেনো? একমুখী বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা নয় কেনো? এখনো কি সময় আসেনি সাহস করে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার?

বাংলাদেশের এলোমেলো শিক্ষা ব্যবস্থা 

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, একটি দেশের, জাতির উন্নয়ন নির্ভর সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন তার উপরে। আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভেদ রেখে দিয়েছি। এর ফলে যেটা হচ্ছে সেটা ভয়ানক। আমরা ছোট থেকে বড় হয়ে উঠছি বিভেদ নিয়ে। 

প্রাথমিক শিক্ষার দিকে তাকান, কেউ পড়ছে সরকারী প্রাইমারিতে, কেউ নামকরা কিন্ডার গার্ডেনে আবার কেউ মাদ্রাসায়, কেউবা আবার কওমি ভিত্তিক মধ্যযুগীয় কায়দায়। শুরুতেই একটা বিশাল গলদ রেখে কিভাবে আশা করা যায় এইসব কোমলমতি শিশুরা যখন বড় হবে তখন তাঁরা বিভেদ নিয়ে বড় হবে না!

কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য আমার কষ্ট হয়। তাদের জন্য আমার খারাপ লাগে। তারা সিস্টেমের শিকার। তারা যে কতিপয় ধর্মান্ধ, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন মধ্যযুগীয় ধ্যান ধারনার মানুষের চিন্তা চেতনার কবলে বন্দি তারা সেটা বুঝতেও পারে না।

তাদেরকে একটা ঘোরের মধ্যে রেখে সেই মধ্যযুগীয় কায়দায় পড়ানো হয়। তাদেরকে বুঝানো হয় একটি মাত্র বই দিয়েই সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব। এবং তারা সেটাই বিশ্বাস করে।

নারীদের নিয়ে এদের চিন্তা চেতনা বর্বর, মধ্যযুগীয় এবং অমর্যাদাকর এটা তারা বুঝতে পারে না ।
এর পিছনে যে একটা বিশাল রাজনৈতিক এবং ব্যবসার ব্যাপার আছে সেটাও তারা উপলদ্ধি করতে পারে না। তাদের উপলদ্ধি করতে দেওয়া হয় না। 

অনেকে দাবী করেন কওমি মাদ্রাসার সিলেবাসে গণিত, বিজ্ঞান সব আছে। কিন্তু কেউ দেখাতে পারেনি। গণিত বলতে তাদের কি ধরনের গণিত করানো হয়?

আমি যতটুকু জানি পঞ্চম শ্রেণীর যে গণিত এবং বিজ্ঞান সেই প্রাথমিক জ্ঞানটা শুধু তাদের দেওয়া হয়। শুধু এইটুকু দিয়ে কি তাঁরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবে? তাদেরকে কি অন্যান্য বই পড়তে উৎসাহিত করা হয়? যেমন-সাহিত্যের বই, কবিতার বই। 

উচ্চমাধ্যমিক স্তরে একজন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞানসহ আরো অনেক কিছু পড়তে হয়। যারা আর্টস বা কর্মাস নেয় তারাও বিভিন্ন বিষয়ে পড়েন। এদের সিলেবাসের সাথে কওমি মাদ্রাসার সিলেবাস কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ। এখানে কি সংস্কার জরুরী নয়?

অথচ কওমি মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণকারীরা সংস্কারের কথা শুনলেই ক্ষেপে উঠেন। সংস্কার না করে হয়তো একশ্রেনী উপকৃত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী এতে শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হচ্ছে না, বরং তাঁরা বিশাল একটা ভুল ধারণা নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিচ্ছে।

এতে করে পিছিয়ে পড়ছে সমাজ, পিছিয়ে পড়ছে দেশ। এটি যখন আইনে পরিণত হচ্ছে, তখন এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত সকলের উচিত ছিলো বড়সড় একটা সংস্কার করা। যাতে করে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা প্রকৃতপক্ষে উপকৃত হয় এবং দেশের মূল ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে তাল রাখতে পারে।  

বাড়ছে শিশু ধর্ষণ এবং শিশু নির্যাতন | পড়তে ক্লিক করুন 

কওমি মাদ্রাসার পড়াশুনার স্টাইল, তাদের পাঠ্যসূচি, দেশের সংবিধানের প্রতি তাদের অনাস্থা এবং এর মূল নিয়ন্ত্রণকারী হেফাজতে ইসলামের রাজনৈতিক মাঠের দিকে আসা এবং বির্তকিত ইস্যু তৈরি করা। সব মিলিয়ে বিষয়টিতে জনমত নেওয়া এবং আরো গবেষণার দরকার ছিলো বলে মনে করি।

কওমি মাদ্রাসাগুলোকে মেইনস্ট্রিমে কিভাবে নিয়ে আসা যায়, বিজ্ঞানভিত্তিক পড়াশুনা কিভাবে তাদের সিলেবাসে অন্তভুর্ক্ত করা যেতে পারে, এর জন্য দরকার ছিলো শিক্ষাবিদদের নিয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা করা।

তা না করে হাটহাজারির কতপয় নারী বিদ্বেষী তথাকথিত আলেমদের দুই একটা হুমকিতে একটা বিল এভাবে পাস হবে এটা অত্যন্ত দু:খজনক।

ভোট ব্যাংক এবং ধর্মীয় চেতনা 

রাজনীতিতে ভোট ব্যাংকের একটা হিশেব থাকবে এবং রাজনীতিবিদরা এটা ভেবে তাদের কিছু কার্যক্রম পরিচালিত করবেন, এটা যেমন সত্য তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের রাজনীতি এবং ধর্মীয় মনোভাবের উর্ধ্বে উঠে কাজ করা দরকার।

সেই জায়গাটি হলো শিক্ষা। আমরা বরাবরই আমাদের শিক্ষার জায়গাটিতে বেখেয়ালি বা বলা যায় ইচ্ছে করেই এদিকটাতে আমাদের নজর যেনো কম! কি ভয়ঙ্কর অবস্থা!  

বিগত কয়েক বছর ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁস, সিলেবাস বারবার চেঞ্জ, শিক্ষানীতি চেঞ্জ থেকে শুরু করে ধর্মীয় আগ্রাসন শিক্ষা ব্যবস্থাকে একেবারে যাচ্ছে তাই অবস্থায় নিয়ে গেছে!

বঙ্গবন্ধুর সময় ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই গঠিত হয় ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’। এটি ‘ ড.কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন’ নামেই পরিচিত। ৩৬ টি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত ছিলো এখানে। সবচেয়ে দু:খজনক ব্যাপার হচ্ছে, এখনো এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।

এরপরে আরো অনেক শিক্ষা কমিশন গঠন হয়েছে। অনেকে অনেক ভাবে এদিক সেদিক করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কেউ ধর্ম, রাজনীতি এসবের উর্ধ্বে উঠে একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক আর্দশ মানের শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে পারেননি বা বাস্তবায়ন করতে পারেননি।

এদিক দিয়ে দেখলে এখন পর্যন্ত সেই ৭২ এর কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবনা গুলোই ছিলো মানসম্মত এবং বিজ্ঞান সম্মত। 

এখন পৃথিবী এগিয়ে গেছে অনেকদূর। বিজ্ঞান এগিয়েছে, মানুষ যুক্তিবাদি হতে শিখছে। কিন্তু দু:খের কথা বাংলাদেশের এক শ্রেণির মানুষদের মাঝে ধর্মীয় কুসংস্কার এখনো গেড়ে আছে।

একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা 

পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা বা শিক্ষানীতি হলো ফিনল্যান্ডের। আমরা তাদের অনুসরণ করতে পারি। আমরা যেহেতু ফিনল্যান্ডের মত উন্নত দেশ নই, সেহেতু আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করতে পারি।

আমার মনে হয় সদিচ্ছা থাকলে আমরা একটি উন্নত একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবো। কিন্তু এর জন্য প্রথমেই যেটা দরকার সেটা হলো, শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে বিজ্ঞান ভিত্তিক, যুক্তি ভিত্তিক।

দুর্নীতির করাল গ্রাস হতে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে মুক্ত করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাজনীতি আর ধর্মীয় আগ্রাসন থেকে মুক্ত করা উচিত।

দরকার হলে প্রথম থেকে আবার ঢেলে সাজাতে হবে। এই জায়গাটিতে আর ছাড় দেওয়া যাবে না।
আমরা যতদিন না এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে পারছি, ততদিন দেশের উন্নয়ন ব্যহত হতে থাকবে।

আর তার উপর যখন কওমির মতো অবিজ্ঞান ভিত্তিক, শিক্ষানীতর সাথে সাংঘর্ষিক একটি বিষয়কে মেইন স্ট্রিমে নিয়ে আসার নাম করে শুধু মাত্র ভোট ব্যাংকের কথা চিন্তা করে যখন বোতলের মধ্যে ভূত ঢুকানোর মত করে সমাধান করা হয়, তখন বিষয়টি উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়ায় বটে।  

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top