চা কফি এবং আমাদের নির্বাচন
কানাডায় এসে প্রত্যেকের মত আমিও পরিচিত হলাম টিম হর্টনস নামে কফি দোকানের সাথে। গরম, ঠান্ডা কফি গ্রুপের সাথে বেগেল, ডোনাটস এবং মাফিনসহ আরও কিছু। ফাস্ট ফুডের দোকান ম্যাকডোনাল্ডস তো সবার কাছে পরিচিত।
এক সময় ম্যাকডোনাল্ডস কফি গ্রুপ শুরু করলো। এদিকে টিম হর্টনস আবার স্যান্ডউইচ, স্যুপসহ অনন্যা খাবারের মেনু শুরু করলো। এখন দুইটি দোকান একই ধরণের প্রয়োজনীয়তা বিক্রি করে। ব্র্যান্ড অনুরাগী না হলে কেউ কফি বা কোন কিছু খেতে এখন যে কোন জায়গায় যায়।
২৪ ঘন্টার সেবা, ডিসকাউন্ট এবং ড্রাইভ থ্রু ভেদেও মানুষ একটিকে বেছে নেয়। খাদ্য ও পানীয় তালিকায় সংযোজন থামছে না। একটি প্রতিযোগিতা দেখতে থাকি।
নির্বাচন এবং বাংলাদেশ
বাংলাদেশে দুইটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের মধ্যে কিছুটা আদর্শিক পার্থক্যের দাবী আগে থাকলেও নির্বাচনে সেই দাবিটি আর করা যাবে না। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির প্রার্থীদের বিষয়ে।
নির্বাচনে প্রতিযোগিতা থাকবেই। কিন্তু ‘যে কোন মূল্যে প্রতিযোগিতার’ ধাক্কায় উভয় দলে আদর্শগত অবস্থানে প্রার্থী সমন্বয় অভিন্ন। খুব সামান্য পার্থক্য ছাড়া একজন ভোটার সব ধরণের আদর্শের প্রার্থী এই দুই দলে পাবেন। শুধুমাত্র একটি কাল্পনিক পার্থক্য ভেবে ব্র্যান্ড অনুগতরা নিজ নিজ দলে ভোট প্রদান করবেন। আরেকটি প্রতিযোগিতা দেখছি। একটি ব্যবসায়িক, অন্যটি রাজনৈতিক। তবে কোথায় যেন একটি সাদৃশ্য অনুভব করছি।
রাজনৈতিক দলগুলো থেকে মনোনয়ন পেলেন কারা?
নির্বাচনের প্রার্থীদের বৈশিষ্ট্য কী? মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে অনেক বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে দিয়ে জাতিকে বিভক্ত হতে উৎসাহিত করা হচ্ছিল, অথচ এই নির্বাচনে দুই দলেই চেতনা বিরোধী প্রার্থী অংশগ্রহন করছেন!
এছাড়া আনু মুহাম্মদ বলছেন,
“এই দৃঢ়তা নিয়েই এবারের নির্বাচনে সরকারি দলে ও আশপাশে মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন এমন অনেককে যাদের বিরুদ্ধে ব্যাংকঋণ ফেরত না দেওয়া, শেয়ারবাজারে ধস নামিয়ে লাখ লাখ মানুষকে পথে বসিয়ে দেওয়া, মাদক ব্যবসা, খুন ও নদী-বন দখলের অভিযোগ রয়েছে।
এঁরা সবাই এই উন্নয়ন মডেলের প্রধান নায়ক, সুবিধাভোগী ও এই মডেল অব্যাহত রাখার প্রধান শক্তি। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এঁদের ক্ষমতা বৃদ্ধির আয়োজন হয়েছে, এই ক্ষমতা বৃদ্ধি নিশ্চিতভাবেই এই ‘উন্নয়ন’ ধারাকে আরও শক্তিশালী করবে।
সামনে আমরা তাই দেখব আরও সর্বজনের সম্পদ ব্যক্তির হাতে হস্তান্তর, দেখব বন-নদী বিনাশ, দেখব জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, মানুষের প্রান্তিকীকরণ।”(প্রথম আলো, ১১ই ডিসেম্বর’২০১৮)
সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা এবং প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি
মানুষের প্রত্যাশা এবং প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি কী? সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে একটি বৃহৎ গোষ্ঠীর মানুষের পক্ষে নিজের একটি ‘প্রত্যাশা তালিকা’ প্রকাশ করা সম্ভব ছিলো।
প্রার্থীদের পক্ষে সম্ভব ছিলো তাদের সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতিসহ এগিয়ে আসা। নির্বাচন তো জনতার স্বার্থ রক্ষার একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। জানি, আমার এই মতামত অবাস্তব শোনাচ্ছে।
যাইহোক, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিশেবে আমার দুইটি নতুন প্রস্তাবনা আছে।
একটি হলো, এলাকা ভিত্তিক লাইব্রেরী, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্রিক কমিউনিটি সেন্টার করা।
আরেকটি হলো, নির্বাচন পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়াদে প্রতি বছর এলাকার মেয়রদের ব্যাপারে এলাকাবাসীর একটি মূল্যায়নের ক্ষেত্র তৈরী করা।
জনতার মূল্যায়নের এই রেকর্ড পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা যাচাইয়ে ব্যবহার করা হবে।
এছাড়া, আমার প্রত্যাশা তালিকায় আরও থাকছে নারী-শিশু ধর্ষণ প্রতিকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ নির্মূল, বাক-স্বাধীনতা, অতীতের দুর্নীতির স্বীকৃতি-বিচারসহ ভবিষ্যতের দুর্নীতি প্রতিকার।
সুন্দরবন ধ্বংসকারী প্রকল্প ও রূপপুর পারমানবিক প্রকল্পের বিকল্প অনুসন্ধান, তরুনদের বেকারত্ব ও জঙ্গি আকৃষ্টতার সমাধান, নারী কর্মীদের মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়ে নির্যাতন, ধর্ষণের অবসানসহ দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
শিক্ষা ব্যবস্থার সুস্থ্য সংস্কার, পরিবেশ দূষণে সহায়ক নদীনালা, গাছপালা, বন সম্পদ নীতির প্রতিকার, এবং বিদেশে অবস্থানরত ভোটারদের নির্বাচনে অংশগ্রহনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহন।
ভোটারদের প্রত্যাশা তালিকা এবং প্রার্থীদের নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি যখন একটি বিন্দুতে স্বাভাবিক গতিতে মিলিত হয়, তখনই একটি জনস্বার্থমূলক নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরী হয়।
সব প্রার্থী বা দল কি নির্বাচনী প্রচারণায় সমান সুযোগ পাচ্ছে?
নির্বাচন নয়। কিভাবে এবং কি উদ্দেশ্যে নির্বাচন হয় তার উপর নির্ভর করে গণতন্ত্র কতটুকু প্রতিষ্ঠা পেলো। এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং সদিচ্ছা প্রার্থী ও ভোটার দুপক্ষের মধ্যে থাকা গণতান্ত্রিক নির্বাচনের একটি পূর্বশর্ত।