কিডনির সমস্যা কি এবং প্রতিকার করবেন কীভাবে?
ছোটবেলা থেকে আমরা পড়ে আসছি “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল”। স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য মানবদেহের যে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহ সম্পর্কে খেয়াল রাখা দরকার সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কিডনি। আপনার সুস্থ থাকার জন্য জানা দরকার কীভাবে কিডনি রোগের প্রতিকার করতে হয়?
কিডনির আপনার দেহে ফিল্টারের মতো কাজ করে। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি রেখে বর্জ্য বের করে দেওয়ার কাজটি করে কিডনি। তাই নিঃসন্দেহে কিডনি আমাদের দেহের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলোর একটি।
এই কিডনি খারাপ হলে মানুষকে সাধারণত অনেক বেশি ব্যয়বহুল চিকিৎসার শরণাপন্ন হতে হয়। কিডনি অকেজো হলে মানুষ মারাও যায়। তাই আমাদের জানা উচিত কোন অভ্যাসগুলো কিডনির সমস্যা তৈরি করে এবং সে অভ্যাসগুলোর পরিত্যাগ করা। তাই আজ এমন ১০টি বদঅভ্যাস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো যা আপনার কিডনিকে করবে ক্ষতিগ্রস্ত। সবশেষে থাকবে যাদের এই সমস্যা আছে তারা কীভাবে কিডনি রোগের প্রতিকার করবেন?
- প্রস্রাব ধরে রাখা
আপনার কিডনি নষ্ট হওয়ার জন্য এই এক কারণই যথেষ্ট। কারণ প্রস্রাব ধরে রাখলে আপনার ব্লাডারের উপর চাপ পড়ে। এই অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদী হলে কিডনিতে ইনফেকশনের মত ঘটনাও ঘটতে পারে।
বাংলাদেশে এই সমস্যা আরো প্রকট। অপ্রতুল পাবলিক টয়লেট এর একটি প্রধান কারণ। সাম্প্রতিক মহিলাদের বেশি পরিমাণে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ার একটি কারণ হতে পারে এই অভ্যাস। তাই এই অভ্যাস ত্যাগ করা অতীব জরুরি।
- টানা বসে কাজ করা
টানা বসে কাজ করলে তা কিডনীর উপর চাপ প্রয়োগ করে। শারীরিক পরিশ্রম আপনার শরীরকে সতেজ এবং সচল রাখে।
কিন্তু টানা বসে কাজ করলে তা শরীরে মেদ তো জমায়ই তার উপর কিডনীর উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে। এক গবেষণায়, টানা বসে কাজ করা আপনার কিডনী রোগের আশঙ্কা বাড়ায় ৩০% পর্যন্ত।
অতএব, আপনি যদি দিনে ৮ ঘন্টা চেয়ারে বসে কাজ করেন, আপনার সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যায়াম করা জরুরি।
- অতিরিক্ত ব্যায়াম
আগের যুগে মায়েরা বলতেন, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। তেমনি অতিরিক্ত ব্যায়ামও আপনার কিডনীকে করতে পারে অকেজো।
অবাক হচ্ছেন? অবাক হবেন না।“rhabdomyolysis” নামে এক বিরল রোগ হয় অতিরিক্ত ব্যায়ামের কারণে। এ রোগে আপনার পেশিতে সমস্যা হয় এবং পেশির মৃত ফাইবারগুলো আপনার রক্তে ঢুকে যায় যা পরবর্তীতে কিডনী অকেজোর একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- ব্যথানাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার
ব্যথানাশক ওষুধ আমরা কমবেশি প্রায় সবাই খেয়ে থাকি। তবে হালকা ব্যথা হলেই ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া সমস্যা তৈরি করে।
অনেক সময় ব্যথার মাত্রা বেশি হলে বেশি পরিমাণে ব্যথানাশক ওষুধ খেলে তা ধীরে ধীরে কিডনীর ক্ষতি সাধন করে। তাই, ব্যথানাশক ওষুধ শুধুমাত্র খুব ব্যথা করলেই খাওয়া উচিত, হালকা ব্যথায় সহ্য করা ভালো।
- পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া
আপনি যদি আপনার কিডনীকে সুস্থ রাখতে চান, আপনার কিডনীকে আপনার পানি খাওয়াতে হবে। কারণ পানি ছাড়া আপনার কিডনী অচল।
অল্প পরিমাণেও পানি খাওয়া আপনার জন্য ক্ষতিকর। কারণ পানির মাধ্যমেই কিডনী শরীর থেকে সোডিয়াম এবং ক্ষতিকর পদার্থগুলোকে নিষ্কাশন করে। যদি আপনি নিয়মিত পানি না খান তাহলে কিডনীতে পাথর জমতে পারে।
একজন মানুষের একদিনে পানি খাওয়া উচিত ২-৩ লিটার তবেই আপনি এমন কোনো ঝুঁকিতে থাকবেন না। পানি বেশি করে খান, কিডনী বাঁচান।
- পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
ঘুম আপনার শরীরের সবগুলো অঙ্গকে ঠিক রাখে। পর্যাপ্ত ঘুম হলে দেখবেন আপনার ওই দিন ভালো যাচ্ছে। আপনার দেহ-ঘড়ির উপর কিডনীর অনেক কাজ নির্ভর করে। এই অঙ্গের কলাগুলো তখনই নতুন করে তৈরি হয় যখন আপনি ঘুমান। তাই, আপনি যদি রুটিন অনুযায়ী না ঘুমান তাহলে, এই প্রক্রিয়াতে বাধা পড়ে এবং কিডনীর ক্ষতি হয়। কম ঘুমের কারণে অনেক সময় রক্তনালীরও সমস্যা হয়। রক্ত এক হারে প্রবাহিত হয় না হার্টে। যে কারণে পরবর্তীতে রক্তচাপে ভোগার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
- ডায়েট সোডা
সোডা খেলে আপনার কিডনীতে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করতে পারেন। ২০০৯ সালে, এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল ৩০০০ এর উপর মহিলা যারা দিনে ২ বারের বেশি ডায়েট সোডা পান করেন তাঁদের কিডনীতে সমস্যা হয়। তাই ডায়েট সোডা পরিহার করুন।
- মাংস খাওয়া
মাংস খেলে প্রোটিন বাড়ে। কিন্তু শুধু মাংস খেলে তা আপনার কিডনীর ভয়াবহ ক্ষতি করে। বেশি পরিমাণে মাংস খাওয়া অ্যাসিডিটি বাড়ায় এবং সেই অ্যাসিডিটির প্রভাব আপনার কিডনীতেও পড়ে।
সাধারণত, লাল মাংস আপনার শরীরের জন্য বেশি ক্ষতিকর। মাংস খেলেও খেয়াল রাখতে হবে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি কিংবা ফল আপনার খাদ্যতালিকায় থাকা জরুরি।
- খুব বেশি পরিমাণে চিনি কিংবা লবণ খাওয়া
খাবারের সাথে খাওয়া ৯৫% সোডিয়াম পরিষ্কার করার কাজ করে কিডনী। তাই যদি, আপনি বেশি পরিমাণ লবণ গ্রহণ করেন খাবারের সাথে তাহলে কিডনীকে তার কাজের ক্ষমতা বাড়াতে হয়।
যার ফলে কিডনীর সক্ষমতা কমে যায় এবং প্রচুর পরিমাণে শরীর থেকে পানি টানে যে কারণে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
খুব বেশি পরিমাণে চিনি খাওয়া আপনার স্থুলতা বাড়ায় এবং ডায়াবেটিসের জন্ম দেয়। স্থুলতা এবং ডায়াবেটিস আপনার কিডনি অকেজো হওয়ার প্রধান কারণ।
যদি লবণ এবং চিনি খাওয়ার আদর্শ পরিমাণ জানতে চান তবে জেনে রাখুন দিনে ৩.৭৫ গ্রাম লবণ এবং ২৫-৩৮ গ্রাম চিনি আপনার জন্য বরাদ্দ রাখলেই চলবে। এর বেশি খাওয়ার দরকার নেই।
- সর্দি-কাশিকে অবহেলা করা
সর্দি-কাশি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। যখন শরীরে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ঘটে তখন এন্টিবডি সেগুলো ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালায়।
কিন্তু অনেক সময় ব্যাক্টেরিয়াগুলো কিডনির ফিল্টারিং পার্টে আটকা পড়ে। তখনি কিডনিতে ইনফেকশন হয় এবং আস্তে আস্তে কিডনি অকেজো করে ফেলে। তাই সর্দি-কাশিকে অবহেলা করা উচিত নয়।
কিডনি রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা
কিডনিকে সুস্থ রাখার জন্য আমাদের এই ১০টি ক্ষতিকর অভ্যাস ত্যাগ করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মন ভালো থাকে আর মন ভালো থাকলে দৈনন্দিন কাজগুলো আপনি সঠিকভাবে করতে পারবেন। তাই এই অভ্যাসগুলো যদি এখনো থেকে থাকে তাহলে কিডনি রোগের প্রতিকার করতে তা দ্রুত ত্যাগ করুন এবং সুস্থ থাকুন।