২২ শে মার্চ ২০১২, ২৩৭ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। শেষ ওভারে প্রয়োজন মাত্র ৯ রান। এই রান টপকাতে পারলেই নতুন এক ইতিহাস রচিত হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে।
আমার মনে আছে, এই ম্যাচের জন্য আমাদের স্কুল বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছিলো। বাংলাদেশীদের প্রধান আবেগের খেলা বলতে গেলে ক্রিকেট। আর তাই এখানে কোন অংশে ছাড় দিতে রাজি নই আমরা। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের কথা মনে আছে সবার?
৫৮ এবং ৭৮ রানের সেই বিশাল লজ্জার ধাক্কা কতদিন বয়ে বেড়াতে হয়েছে আমাদের! এখনও মাঝে মাঝে মনে নাড়া দিয়ে উঠে। এর পরই আসলো ২০১২ এশিয়া কাপ। আমরা আবার মনের ভেতর আশার স্বপ্ন বুনতে থাকলাম।
এশিয়া কাপ ২০১২ ফাইনালে ২ রানে হার, তাও আবার পাকিস্তানের সাথে! সেদিন মা আমার সাথে কেঁদেছিলো!
সেবার ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশ এই বড় বড় টিম নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এশিয়া কাপ, তাও আবার নিজেদের ঘরের মাঠেই। ভারত, শ্রীলংকাকে দাঁড়াতেই দেয়নি বাংলাদেশ। সর্বশেষ ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। সেই শেষ ওভারে ২ রানের পরাজয়।
মনে আছে সেদিন বাংলাদেশ টিমের কান্না দেখে আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারছিলাম না। সাকিব, মুশফিক, নাসির, বিজয়দের মুখ ঢেকে কান্নার কথা মনে হলে, এখনও শরীরের লোম দাঁড়িয়ে উঠে। আমার মাও সেদিন খেলা দেখে কেঁদেছিলো।
যারা সত্যিকার ক্রিকেটপ্রেমী তারা কখনোই এমন একটি ম্যাচ দেখে নিজেকে সামলাতে পারবে না। ফাইনালের একটি মঞ্চে এভাবে হার, মেনে নেয়া যায় না, যায় না!
বিশ্বকাপের ব্যর্থতাকে ভুলে সময় এসেছে আমাদের আবার নিজেদের প্রমাণ করার। ঐ ম্যাচ হেরেও বাংলাদেশ নিজেকে ক্রিকেটের নতুন পরাশক্তির দেশ হিসেবে পরিচয় দেয়। এরপর ২০১৮ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। দেশের বাহিরেও সিরিজ জেতার রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। সদ্য উইন্ডিজকে তাদের ঘরের মাঠে ওয়ানডে এবং টি-২০ সিরিজ হারায়। আবারও সামনে সেই এশিয়ার সবচেয়ে বড় আসর, এশিয়াকাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
ক্রিকেট বিশ্বে অন্যতম পরাশক্তি হয়ে উঠছে বাংলাদেশ | পড়তে ক্লিক করুন
এবার যুক্ত হয়েছে ক্রিকেটে আরেক ভয়ংকর দেশ আফগানিস্তান। যে কোন বড় বড় দেশকে হারিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে তারা। সবমিলিয়ে ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান এবং প্লে-অফ থেকে উঠে আসা হংকং, এই ছয় দলের ৫০ ওভারের এশিয়াকাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভ্যানু নিরপেক্ষ দুবাই।
কেমন হতে যাচ্ছে এইবার বাংলাদেশের মিশন?
যদি এই কথা বলতে হয়, তবে অনেক হিসেব-নিকেশ আছে এখানে। কিছু প্লেয়ার ফর্মে থাকলেও অনেক প্লেয়ারের নামের সাথে যুক্ত হয়েছে নারী কেলেঙ্কারি। ফর্মের অভাবে দলের সাথে নেই সাব্বির রহমান, অভিযুক্ত আছেন নারী কেলেংকারিতে। এই নারী কেলেঙ্কারিতে শুধু সাব্বির নয়, জড়িত আছেন বাংলাদেশ টিমের একাধিক তরুণ খেলোয়ার।
সেই রুবেল হোসাইন থেকে শুরু। এরপর একের পর এক ক্রিকেটার যুক্ত হচ্ছেন এতে। সদ্য মোসাদ্দেক হোসেনের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী নারী নির্যাতনের মামলা করেন। এরকম হতে থাকলে ক্রিকেটারদের ইমেজ নষ্ট হতে কতক্ষণ? তবে আশার কথা এই কেলেঙ্কারিতে নেই দলের সিনিয়র খেলোয়াড়রা।
তাই এইসব হিসেব-নিকেশ মাথায় রেখে এবং এশিয়া কাপকে সামনে রেখে সবার আগে দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ৩০ আগস্ট বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ইনজুরির নিয়েই দলের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান খেলছেন।
এদিকে সর্বশেষ সিরিজের দল থেকে বাদ পড়েছেন সাব্বির রহমান ও এনামুল হক বিজয়। অন্যদিকে উইন্ডিজ সফরে থাকলেও এশিয়া কাপের জন্য ডাক পাননি ডানহাতি পেসার আবু জায়েদ চৌধুরী রাহি। এছাড়া দলে ফিরেছেন মোহাম্মদ মিঠুন আলী। ওয়ানডেতে অভিষেক হয়নি এমন ক্রিকেটার আছেন দুইজন। এরা হলেন- নাজমুল হোসেন শান্ত এবং আরিফুল হক। দুজনের টি-২০ অভিষেক হয়েছে অনেক আগেই।
তাহলে চলুন দেখে আসি এক নজরে এশিয়া কাপ এর ১৫ সদস্যের বাংলাদেশ দলঃ
মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহিম, আরিফুল হক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম অপু, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান এবং আবু হায়দার রনি।
সব মিলিয়ে অভিজ্ঞ এবং তরুণদের নিয়ে এবারের টিম গঠন করে বাংলাদেশ। আপনার কি মনে হয়, কেমন হতে যাচ্ছে এবারের এশিয়াকাপ? কমেন্টে লিখুন। বাংলাদেশ কি পারবে দুঃসাধ্য লাখো ভক্তের স্বপ্নের কাপটি ছিনিয়ে নিতে?
ক্রিকেটটা গোল বলের খেলা। তাই যখন তখন যে কোনকিছু হয়ে যেতে পারে। আগে থেকে কিছু বলে রাখা যায় না। এমনও অনেক ম্যাচ আছে যেখানে এক ওভারে খেলার মোড় ঘুরে যায়। ক্রিকেট প্রেমীরা আবারও অধির আগ্রহে বসে থাকবে বাংলাদেশের জয়ে উল্লাস করার জন্য।
এশিয়াকাপ জিতে নিয়ে বাংলাদেশ আবারও প্রমাণ করুক বিশ্বজয়ের ক্ষমতা রাখে তারা। ১৬ কোটি বাংলাদেশীর প্রাণের খেলায় আবার জমে উঠুক বাংলাদেশ ক্রিকেট তথা বিশ্ব ক্রিকেট।
বাংলাদেশ টিমের জন্য রইলো অনেক অনেক শুভকামনা।