আবারো টেস্ট পরাজয়, বাংলাদেশ কি পারবে জাতে উঠতে?

আবার বাংলাদেশের টেস্ট পরাজয়

বাংলাদেশ টেস্ট খেলতে পারে না, এ কথা অনেক পুরোনো কিন্তু বিগত কিছু বছরের সাফল্য আমাদের চোখে পর্দা টেনে দিয়েছিল। সে পর্দা যেনো নিমিষেই ছিড়ে ফেললো জিম্বাবুয়ে। টেস্ট পরাজয় এ যেন বাংলাদেশের অঘোষিত নিয়তি।

গত ১০ বছরেও বিদেশের মাটিতে টেস্ট জিততে না পারা জিম্বাবুয়ে যেনো বাংলাদেশকে মাটিতে নামিয়ে আনলো। গত দুই বছরে জেতা টেস্টের অর্জনকেও ফিকে করে দিয়েছে এই টেস্ট।

গত আট ইনিংসে দলীয়ভাবে ২০০-র বেশি রান করতে পারেনি বাংলাদেশ। বোলাররা ২০ উইকেট নিতে পারলেও ব্যাটসম্যানরা চূড়ান্ত ব্যর্থ। এই টেস্টে তামিম-সাকিব ছিলেন না

কিন্তু গত ছয় ইনিংসে তো ছিলেন। তাই সমস্যাটা তামিম-সাকিবের অনুপস্থিতি নয়। সমস্যা মানসিক স্ট্রেংথ এর অভাব অথবা এই ফরম্যাটই বাংলাদেশের জন্য নয়।

দুনিয়া উলটে যাবে, সূর্য পশ্চিম দিক দিয়ে উঠবে কিন্তু তিনি স্লগ সুইপ করবেনই।

ক্রিকেটে চূড়ান্ত সাফল্য বিশ্বকাপ জেতা হলেও টেস্টের “গদা”-র মূল্য কিন্তু বিশ্বকাপ জেতার সমান সাফল্য ধরে থাকেন অনেক ক্রিকেটবোদ্ধা। গত কিছুদিনে বাংলাদেশের সাদা বলের ক্রিকেটে খুব বেশি সাফল্য যে টেস্ট ম্যাচের সাফল্যের প্রতি আমাদের মনোযোগ কমিয়ে দিয়েছে তা কিন্তু অস্বীকার করা যায় না।

ওয়েস্ট ইন্ডিজে শোচনীয়ভাবে টেস্ট সিরিজ হারলাম, পরবর্তীতে ওয়ানডে সিরিজে পাওয়া সাফল্য তা আমাদের ভুলিয়ে দিল। আমরা হয়তো বারবার ভুলে যাচ্ছি টেস্টে এখনো আমরা পরিণত না।

আবার বাংলাদেশের টেস্ট পরাজয়

ইংল্যান্ডকে আমরা হারিয়েছিলাম স্পিনিং পিচ করে। অস্ট্রেলিয়ার সাথেও সেই রেসিপি ব্যবহার করা হয়েছিল। পরিণাম ছিল ম্যাচ জিতেছি ঠিকই কিন্তু দুই খেলাই আমরা খেলেছি ওয়ানডের মতো করে। সাব্বির-সৌম্যর মতো খেলোয়াড় দলে ঢোকানো হয়েছিল যেন তাড়াতাড়ি রান তুলতে পারে কারণ সবাই জানতো এই খেলা বড়জোড় চারদিনে যাবে।

সাম্প্রতিক টানা ব্যাটিং ব্যর্থতার পরেও বিসিবি চিন্তা করেছিল সিলেটে স্পোর্টিং পিচ করা হবে। এক দিক দিয়ে ভালো হয়েছে। এই হারের দরকার ছিল বাংলাদেশের। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের ব্যাটসম্যানদের দৈন্যদশা

আদর্শ স্পোর্টিং পিচের একটা উদাহরণ হতে পারে সিলেটের পিচ। লাইন-লেংথ ধরে রাখলে পেসাররা সাফল্য পাবে, স্পিনাররাও টার্ন পাবে দ্বিতীয়- তৃতীয় দিন থেকেই এবং ট্যাকনিক্যালি সাউন্ড থাকলে কিছু সময় কাটালে রান পাবে ব্যাটসম্যানরাও।

নারীই যার সফলতার রহস্য, পড়তে ক্লিক করুন

ক্রিকেটের একটা বেসিক নিয়ম আছে। পরিষ্কার করে বলতে গেলে, নিয়মটা ব্যাটিং এর। নিয়মটা এরকম যে, আপনি যদি রান পেতে চান, আউট হবেন না। যত সময় লাগে লাগুক, অধৈর্য হবেন না। তাহলেই রান পাবেন। উদাহরণ হতে পারেন অ্যালিস্টার কুক।

বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা হয়তো সেই নিয়ম মানার ধারে কাছেও যান না। এক বল আগেই একটা চার মারলেন লিটন দাস। চার মেরে হয়তো মনে করলেন পিচে সুইং নেই। এর এক বল পরেই একই লেংথ কিন্তু লাইনের হালকা ডিফারেন্স বুঝে হাফ শট খেলার চেষ্টা করলেন। ফলাফল? পিছনে ক্যাচ। এই এক উদাহরণই যথেষ্ট বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মানসিক অস্থিরতা বুঝাতে।

আবার বাংলাদেশের টেস্ট পরাজয়

ইমরুল কায়েস প্রথম ইনিংসে প্রথম থেকেই নড়বড়ে আচরণ করছিলেন। লাঞ্চের পর প্রথম বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে মিস করেন। পরবর্তীতে ঠিক এক ওভার পরে ইনসাইড এজে স্টাম্প নাই। ফোরথ স্টাম্পের বলে ইমরুলের সমস্যা তো নতুন নয়।

দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হলেন প্যাডেল সুইপ করতে গিয়ে। ৪৩ রান ঠিকই জমা হয়েছিল বোর্ডে।  তাহলে তখন সুইপের দরকার কি খুব ছিল? লিটন যতক্ষণ ব্যাট করেন, ততক্ষণ চোখে একটা প্রশান্তি বয়ে যায়।

কিন্তু লিটন যে বড় অধৈর্য। ম্যাচটা জিততে পারতো বাংলাদেশ যদি ইমরুল-লিটন তাঁদের সেরা খেলা দিতে পারতেন। 

মুমিনুল হক তাঁর সেরা ইনিংসের সবগুলো খেলেছেন চট্টগ্রামে। মাত্র একটা সেঞ্চুরি চট্টগ্রামের বাইরে। তাও তা দেশের মাটিতে। পেস বলে পায়ের কাজ করেন না এ কারণে প্রায় ইনসাইড এজ কিংবা আউটসাইড এজের শিকার হোন।

স্পিন বলে খোঁচা দিয়ে স্লিপে ক্যাচ আউট হওয়াটা যেনো নিয়মিত দৃশ্য। মুমিনুলকে নিয়ে আমাদের দেখা স্বপ্ন কি ভুল ছিলো?

অনেকে বলতে পারেন, মুমিনুলকে ওয়ানডেতে সুযোগ দেওয়া হয় না তাই তাঁর টেকনিকের এই অবস্থা। কিন্তু পূজারা কিংবা আজহার আলী, তাঁরা কেউ তো ওয়ানডে খেলেন না। তাঁর প্রভাব কখনো কি খেলায় এসেছে তাঁদের?

লিটন থাকতেও তাঁর কিপিং করার জেদ কি যৌক্তিক? যেখানে সাঙ্গাকারার মতো কিংবদন্তি তাঁর গ্লাভস ছেড়েছিলেন তিন-চারে নামার জন্য।

সারা বছর বিসিএল কিংবা জাতীয় লিগ খেলে কি লাভ হচ্ছে যদি না টেস্টেই পারফর্ম করতে না পারছেন?

তুষার ইমরানের দলে না থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে অনেক। কিন্তু নাজমুল হাসান শান্ত তো যেখানে খেলেছেন রান করেছেন। পঞ্চাশ এর বেশি এভারেজ নিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা শান্ত আন্তর্জাতিকে রান পাচ্ছেন না।

সমস্যা কোথায়? সমস্যা তো মূলেই। ১৮ বছর পূর্ণ হলো টেস্ট ক্রিকেট এসেছে বাংলাদেশে। ঘরোয়ার মান কি উন্নত হয়েছে?

মাহমুদউল্লাহর ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে হয়তো কোনো প্রশ্ন উঠানো ঠিক হবে না। তবে বাংলাদেশের টেস্ট টিমে মাহমুদউল্লাহর প্রয়োজনীয়তা কি আসলেই রয়েছে? অনেকদিন ধরেই রান করছেন না। রান না করলে আপনি দলে থেকে কি করবেন?

এরকম একজন ফাইটার খেলোয়াড়ের কাছ থেকে আমরা আশা করি অনেক কিছু। সত্যি বলতে গেলে, মাহমুদউল্লাহ এই মুহূর্তে দলে জায়গা পাওয়ার যোগ্য নন। সাদা বলের ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহ যতটা উজ্জ্বল, লাল বলে ততটা ফিকে!

মুশফিক তাঁর স্লগ সুইপকে যতটা ভালোবাসেন, এতটা হয়তো মানুষ তাঁর প্রেমিকাকেও করে না। দুনিয়া উলটে যাবে, সূর্য পশ্চিম দিক দিয়ে উঠবে কিন্তু তিনি স্লগ সুইপ করবেনই।

দ্বিতীয় ইনিংসে স্টেডি লাগছিলেন তিনি কিন্তু তাঁর যে একটা স্লগ সুইপ না করলে মন ভরবে না। সে ভেবে করলেন একটা স্লগ সুইপ এবং ক্যাচ। দৃশ্যটা অপরিচিত না। এই কাজ তিনি করেছেন বহুবার।

আবার বাংলাদেশের টেস্ট পরাজয়

চতুর্থ ইনিংসে ছয় নম্বরে নামা নিয়েও প্রশ্ন উঠাটা কি স্বাভাবিক না? দলে ৩০০ রানের উপর চেজ করছে এবং তিনি চারে না নেমে নেমেছেন ছয়ে। যেখানে তিনি এই টিমের সেরা ব্যাটসম্যান।

লিটন থাকতেও তাঁর কিপিং করার জেদ কি যৌক্তিক? যেখানে সাঙ্গাকারার মতো কিংবদন্তি তাঁর গ্লাভস ছেড়েছিলেন তিন-চারে নামার জন্য।

লিটনকে ওপেনিং খেলানোও একটা ভুল নয় কি? লিটন ছয়ে স্টেডি হয়ে গিয়েছিলেন। ফিফটি রানের ইনিংস আছে কয়েকটি। তারপরো তাঁকে কেনো ওপেনিং খেলিয়ে কনফিডেন্স নষ্ট করা?

জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্ট হারাটা হতে পারে একটা শাপেবর। ভুলগুলো শুধরে ফেলতে হবে এখনি। দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ কাম্য বিসিবির কাছ থেকেও।

বাংলাদেশ থেকে এক-দুইজনকে কাউন্টিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করলে আরো ফলপ্রসূ হবে। টেস্টে ভালো না করলে যে কখনোই জাতে উঠা যাবে না!      

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top